ঝিক ঝিক ঝিক...! ঝিক ঝিক ঝিক...!
ট্রেন আসছে।
ছেলেটি রেল লাইনে দাঁড়িয়ে আছে , হাতে সিগারেট । সিগারেট তার সব থেকে পুরনো বন্ধু। সবাই তাকে ছেড়ে চলে যায় কিন্তু এই ধোঁয়ার কুণ্ডলী সব সময় জড়িয়ে রাখে। এককথায় তার কষ্টের সময়ের সাথী।
তাই শেষ বারের মত সে সিগারেটে টান দিতে দিতে ভাবল এই শেষ সিগারেট, আর ছুঁয়ে দেখা হবে না এই বন্ধুকে ।
দূর থেকে ট্রেনের হর্নের শব্দ শুনতে পাচ্ছে সে। এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে আর নয়। যেখানে কেউ তাকে বোঝে না, কেউ ভালবাসে না । যে পৃথিবীতে তার ভালবাসার কোন মর্যাদা নেই , সেই পৃথিবীতে আর একটা মুহূর্তও না।
সব কষ্টের অবসান হবে আজকে!!
সে জানে আত্নহত্যা করা মহা পাপ। কিন্তু কি করার আছে! মরতে যে হবেই। এই বুক ভরা কষ্ট নিয়ে বেঁচে থাকার মানে হয় না। সে তাকিয়ে দেখছে ট্রেনটা আসছে , তারপর কিছু সময়ের নিরবতা ।
অতঃপর ট্রেনটা চলে গেল।
ঝিক ঝিক ঝিক...! ঝিক ঝিক ঝিক...!
ঝিক ঝিক ঝিক...! ঝিক ঝিক ঝিক...!
ঝিক ঝিক ঝিক...! ঝিক ঝিক ঝিক...!
পরের দিন ছেলেটিকে ঠিক ই দেখা গেলো। সাদা কাপড়ে , কিছুটা চনমনে ভাবে লোকমান মামার দোকানে বসে চা-সিগারেটের সঙ্গ নিচ্ছে সে ।
“আমিও পাগল! কি করতে গেছিলাম কাল। এগুলা মানুষ করে! কেউ ভালবাসে নাই তাই কি মরতে হবে । কেউ কি ভালবাসে না ? বাবা-মা-ভাই-বোন কিংবা বন্ধুরা??
যে মানুষ সারা দিন খেটে টিউশন ফি দেয়, যে মানুষ সকাল ৬ টায় উঠে নাস্তা বানায় ,যাতে ছেলের না খেয়ে যেতে না হয়। যে মানুষটা ভাল-খারাপের শাসন করে। যে মানুষকে আমি ভাল-খারাপ শিখাই, আর সেই সব মানুষ যারা কখনো একা থাকতে দেয় না, নিজের সিগারেটের শেষ টান পর্যন্ত শেয়ার করে, দিন নাই রাত নাই সারাদিন জ্বালায়। আমি মরলে তাদের কেমন লাগত একবার ও কি ভাবি নাই?
আমার কাটা লাশ দেখতে কেমন লাগত। নাহ এই সব ভেবে লাভ নাই। যাই ভার্সিটির দিকে যাই।“ আনমনা হয়ে ভাবতে ভাবতে ছেলেটি চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিয়ে একটা মুচকি হাসি দিল।
এত কিছু ভাবার পর এখনো কষ্ট হয়। এখন ও ভালবাসাটা বেঁচে আছে। এখনও রাত হলে ভালবাসার টাইম লাইন দেখে চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। এখনও তার পুরনো মেসেজ পড়ে অশ্রু ঝরে দুনয়ন জুড়ে । এটাই কি তবে বাস্তবতা , তবে হ্যা , এটা নির্মম সত্য এবং বাস্তব ।