রাজিয়া সুলতানা যিনি ছিলেন,সুলতান ইলতুতমিশের কন্যা এবং তিনিই ছিলেন এই ভারতবর্ষের প্রথম নারী শাসক। তিনি একাধারে একজন ভাল প্রসাশক এবং সেনাপতি ছিলেন । তাছাড়াও যুদ্ধক্ষেত্রে একজন দক্ষ সৈন্য হিসেবেও তার পরিচিতি ছিল। সুলতান ইলতুতমিশের সবথেকে যোগ্য পুত্র সুলতানের জীবদ্দশায় মৃত্যু বরণ করলে সুলতান তার কন্যা রাজিয়া সুলতানাকে দিল্লির শাসক হিসেবে মনোনিত করে যান। যখনই ইলতুতমিশের রাজধানী ছাড়তে হত, তিনি তখন তার কন্যা রাজিয়া সুলতানাকে শাসনভার বুঝিয়ে দিয়ে যেতেন। রাজিয়া ছিলেন সুলতানের জ্যেষ্ঠা কন্যা, বুদ্ধিমতী ও যুদ্ধবিদ্যায় পটু।সুলতানের মৃত্যুর পর তার আরেক পুত্র রোকনুদ্দিন ফিরোজ দিল্লির শাসন কেড়ে নেন এবং প্রায় সাত মাসের মত শাসন করেন। ১২৩৬ সালে দিল্লির জনগনের সাহায্য নিয়ে রাজিয়া সুলতানা তার ভাইকে অপসারণ করে ক্ষমতায় আরোহন করেন।রাজিয়া সুলতানা সম্রাজ্যে শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেন। শাসনকার্য দৃঢ়ও ভাবে পালন করার জন্য তিনি নারীত্বের আবরণ পরিত্যাগ করেন এবং পুরুষের পোশাক গ্রহণ করেন। এই পোশাকে তিনি জনসম্মুখে, প্রশাসনে এবং যুদ্ধক্ষেত্রে আসতেন। ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসেবে রাজিয়া জালাল উদ্দিন ইয়াকুত নামক একজন ইথিওপিয়ান দাসকে নিয়োগ দেন। ইয়াকুতকে তিনি অত্যন্ত বিশ্বাস করতেন। এর ফলে তুর্কিরা রাজিয়ার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে নামেন। ১২৩৯ সালে লাহোরের তুর্কি গভর্নর বিদ্রোহ করে। রাজিয়া তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলে, গভর্নর প্রথমে পালিয়ে যান এবং পরে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তারপর ভাতিন্ডার গভর্নর বিদ্রোহ করেন। রাজিয়া যখন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত হচ্ছিলেন তখন তার তুর্কি কর্মকর্তারা তাকে ক্ষমতা থেকে অপসারন করে এবং তার ভাই বাহারামকে সুলতান ঘোষণা করে। রাজিয়া ভাতিন্ডার গভর্নরকে বিয়ে করে তার সাহায্যে ক্ষমতা ফিরে পাবার চেষ্টা করেন। কিন্তু রাজিয়া সুলতানা পরাজিত হন এবং পলায়ন করেন। নারী হওয়ার কারনে এবং প্রকাশ্যে পর্দাপ্রথার বিরোধী হয়ে শাসনকাজ পরিচালনা করার জন্যে উলেমা ও প্রভাবশালী শ্রেনীর বিরাগভাজন হয়েছিলেন তিনি। তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র অব্যাহত ছিল। এরকম নানান ষড়যন্ত্রের একটি অংশ ছিলো চল্লিশ জন ক্রীতদাসদের সমন্বয়ে গঠিত চল্লিশ চক্র বা তার্কান-ই-চিহালগানী। ১২৪০সালে পলায়নকালে তার একজন ভৃত্য যে কিনা এই চক্রের অন্তর্ভুক্ত ছিল তাকে খাদ্যে বিষ দিয়ে হত্যা করে। এই ভৃত্যই তাকে আশ্রয় দিয়েছিল।
রাজিয়া সুলতানার সমাধিস্থল নিয়ে বিতর্ক আছে। একটি মত অনুসারে তার দেহ হরিয়ানার কোইথালে সমাধিস্থ আছে, অপরদিকে মনে করা হয় তার সমাধি পুরোনো দিল্লীর বুলবুল-ই-খানা মহল্লায় আছে। পুরোনো দিল্লীর সমাধিটি বর্তমানে ভারতীয় পুরাতত্ব সর্বেক্ষণ দ্বারা সংরক্ষিত হলেও অত্যন্ত অবহেলিত এবং অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় বিদ্যমান।
তথ্যসূত্রঃইন্টারনেট।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ২:০০