বিজ্ঞান হল ব্যাপক অর্থে জ্ঞান অর্জনের জন্য ব্যবহৃত একটি বিশেষ শব্দ যা আধুনিক যুগের আগে অনেক ঐতিহাসিক সভ্যতার মধ্যে বিদ্যমান ছিল । আধুনিক বিজ্ঞান তার পদ্ধতিতে স্বতন্ত্র এবং তার ফলাফলের মধ্যে সফল, তাই এটি এখন সংজ্ঞায়িত করে যে বিজ্ঞান শব্দটি কত কঠোর অর্থে ব্যবহৃত হয়।বিজ্ঞান শব্দটি উৎপত্তিগত অর্থে এক ধরনের জ্ঞান বুঝাতো কিন্তু বিজ্ঞান সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জন বুঝাতো না । বিশেষ করে এটি ছিল এক ধরনের জ্ঞান যা মানুষ একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে এবং শেয়ার করতে প্রয়োজন হত । উদাহরণস্বরূপ, প্রাকৃতিক বিষয়গুলির জ্ঞান সম্পর্কে রেকর্ড ইতিহাসের অনেক আগেই সংগৃহীত হয়েছিল এবং জটিল বিমূর্ত ধারণাগুলির উন্নয়ন ঘটেছিল । এটি জটিল ক্যালেন্ডার নির্মাণ, কৌশলগত উপায়ে বিষাক্ত উদ্ভিদকে খাবার উপযোগী করে তৈরি করার কৌশল এবং পিরামিডের মতো ভবনগুলি নিয়ে গবেষণা করার কাজে ব্যবহৃত হত । যাইহোক, এই ধরনের জিনিসগুলির জ্ঞানের মধ্যে কোন সঙ্গতিপূর্ণ বিশিষ্ট পার্থক্য তৈরি করা হয়নি যা প্রতিটি সম্প্রদায়ের মধ্যে সত্য এবং অন্যান্য ধরনের সাম্প্রদায়িক জ্ঞানের মতো যেমন -পৌরাণিক কাহিনী এবং আইনি ব্যবস্থা ।আর এখন আমরা এই আধুনিক যুগে এসে সেই বিজ্ঞান নামক জ্ঞান ভাণ্ডারের যন্ত্রটিকে মানুষকে কিভাবে মারা যায় সেই পথে নিয়ে যাচ্ছি।
সংক্ষিপ্ত তার কিছু উদাহারণ তুলে ধরলেই আমরা বুঝতে পারবো বিজ্ঞান আমাদের কত ক্ষতি করছে ।
(*) আগে শুনতাম মানুষ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বা বেশি দূরের কোন ভ্রমণে গেলে হয়ত পায়ে হেটে নয়ত ঘোড়া বা গরুর গাড়ি ব্যবহার
করত ।আর এখন এই আধুনিক যুগে এসে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন যন্ত্রাঅংশ তৈরি করে গাড়ি বিমান রকেট আরো কত কি তৈরি করেছেন,যার
সঠিক হিসেব মানুষের রাখার সাধ্য নেই। আর ওই সব যন্ত্রাঅংশের গাড়িগুলোর কালো ধোয়া আমাদের চারোপাশের পরিবেশকে যেমন করে
তুলছে দূষীত তেমন কেড়ে নিচ্ছে অকাল কত মানুষের জীবন ।আমাদের এই পরিবেশ দূষিতর কারনে অকাল শিশুদের প্রাণহানী।
(*) আগের যেমন আজ থেকে একশত বা দেড়শত বছর আগে একেকজন মানুষ কম হলেও একশত ত্রিশ থেকে প্রায় একশত ষাট বছর
পযন্ত বেঁচে থাকতো,আর এখন এই আধুনিক যুগে এসে আমাদের গড় আয়ু দাঁড়িয়েছে পঞ্চাশ কি ষাট বছর ।আহা!রে এই আধুনিক যুগের
বিজ্ঞান যা আমাদের জীবনের ৯৯ থেকে ১০০ বাজিয়ে ছাড়ছে ।
(*)আদিযুগ অর্থাত সেই পাথুরে যুগের মানুষেরা খেত টাটকা শাকসবজী এবং টাটকা ফলমূল।যা শুধু টাটকাই নয় ছিল বিষ মুক্ত,আর
টাটকাতো দূরের কথা যাই খাচ্ছি সবই বিষ যুক্ত খাবার ।
দেখুন কম্পিউটার আমাদের যে ভাবে শরীরের যে ক্ষতি করছে,আমাদের শরীরে এক জায়গয়া বসে থাকার জন্য তৈরি হয়নি। সে সব সময় সচল থাকবে এমনই হওয়া উচিত। কিন্তু এমনটা না করে আমরা কাজের জন্য বহুক্ষণ একভাবে কম্পিউটারের মধ্যে মুখ ঢুকিয়ে বসে থাকি। ফলে শরীরের স্বাভাবিক ছন্দ বিগড়ে যেতে শুরু করে। একে একে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে মরণ রোগ।একাধিক গবেষনায় দেখা গেছে কেউ যদি দিনে ১০ ঘণ্টা বসে থাকেন তাহলে শরীরের যা ক্ষতি হয় তা ১ ঘণ্টা শরীরচর্চা করেও মেটানো সম্ভবনা।কিন্তু আজকালকার দিনে যে বেশিরভাগ মানুষকেই বসে কাজ করতে হয়। তাহলে কি তারা চাকরি ছেড়ে বাড়ি বসে থাকবেন? একদমই না। শুধু একটা কথা মাথায় রাখবেন। কখনো একটানা বসে বেশি কাজ করা যাবে না।কম পক্ষে একটানা২-৩ ঘণ্টা কাজ করার পর কম করে হলেও১৫ মিনিট হাঁটতে হবে,না হলে খবর আছে কিন্তু। আর যদি এমনটা করতে না পারেন তাহলেই দেখা দেবে জটিল সব রোগ।
দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলে কোলোন, ব্রেস্ট এবং এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। বেশি সময় বসে থাকলে শরীরে ইনসুলিনের উৎপাদন বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে বৃদ্ধি পায় কোষেদের জন্মহারও।আর তার ফলে ক্যান্সার সেল জন্ম নেওয়ার সম্ভাবনাই বেশি বাড়ে। শিধু এখানেই শেয না দেহ সচল না থাকলে শরীরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের মাত্রাও কমে যায়। সেই কারণেও কিন্তু ক্যান্সার রোগের প্রকোপ বৃদ্ধির আশঙ্কা আছে। কারণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এই মারণ রোগকে আটকাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।
(*)মানুষ এই আধুনিকযুগে দ্রুতগতিতে একজন অপরজনের সাথে যোগাযোগ কথা বলার প্রধান মাধ্যম হচ্ছে মোবাইল ।এক কথায় বর্তমানে আমরা মোবাইল ছাড়া একবারেই অচল, কিন্তু আমরা কি কেও একবার এর জন্যও ভেবে দেখেছি যে এই মোবাইল আমাদের আসলে কতটা ক্ষতি করছে ? ঘণ্টার পর ঘণ্টা নিশ্চিন্তে কথা বলে থাকি মোবাইলে।অথচ লুকিয়ে আছে কত বিপদ ডেকে আনতে পারে ?
১) বিজ্ঞানীদের মতে, একটি পরমানবিক চুল্লির যে বিপদ তার থেকে মোটেও কম নয় এই ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড এর ক্ষতি। যাদের করোটি যত পাতলা, তাদের মোবাইল এফেক্ট তত বেশি। ব্রেন টিউমার থেকে শুরু করে নার্ভাস সিস্টেম ব্রেকডাউন, হার্ট অ্যাটাক সব কিছুরই সম্ভবনা বেড়ে চলেছে।
২) মোবাইল ফোন ব্যবহার এর ফলে আমাদের মস্তিস্কের একটা অংশ উত্তপ্ত হয়ে উঠে। তার ফলে মস্তিষ্কের টিস্যু গুলি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। মগজেও থাকে তার প্রতিক্রিয়া।
৩) ঝড়ের সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে সমূহ বিপদ দেখা যেতে পারে।
৪) বুক পকেটে মোবাইল রাখলে হার্টের সমস্যা হবার সম্ভবনা বেশি থাকে।
৫) ইয়ার ফোন ব্যবহার না করে, কানের গোড়ায় রেখে মোবাইল এ বেশি কথা বললে কানে কম শোনা এমনকি বধিরতার আশঙ্কা পর্যন্ত থাকতে পারে।
৬) বন্ধ্যাত্ব বাড়ছে। অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার করলে মুখে ক্যানসার বা মেলিগনানট টিউমার এর ঝুঁকি বাড়ে।
৭) শিশুদের মস্তিস্কের কোষ নরম বলে তাদের মারত্মক ক্ষতি হচ্ছে। বিজ্ঞানী হাইল্যান্ড দেখিয়েছেন, তড়িৎ চুম্বকীয় দূষণের কারনেই শিশুরা এপিলেপসি ও অ্যাজমায় ভুগছে।
৮) লেফ সেলফড তথ্য-প্রমানের ভিত্তিতে সুদৃঢ় হয়ে যথেষ্ট জোরের সঙ্গে বলেছেন, সেলফোন এর প্রতিটা কল আমাদের মস্তিস্কের ক্ষতি করে। এমন কি প্যাসিভ স্মকারদের মত যে লোকটা মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে না কিন্তু মোবাইল ব্যবহারকারির কাছে রয়েছে সেও ক্ষতি গ্রস্থ হচ্ছে। ফ্রান্সে সান্তিনি আর সুইডেন এ সানডস্তরম আর মাইলড এর সমীক্ষার ফলাফল লেফ সেলফড এর বক্তব্য কে আরও সুদৃঢ় করে তোলে। এঁদের সমীক্ষা অনুযায়ী, সেলফোন ব্যবহারকারি, ২৫% পর্যন্ত বিভিন্ন স্নায়বিক সমস্যায় ভুগছেন। যেমন, মাথাঘোরা, ক্লান্তি, স্মৃতি শক্তি হ্রাস, মাথা ঝিম ঝিম করা, ক্লান্তি ।
এইটুকেই আমরা বোঝতে পারি আসলে বিজ্ঞান দিনে দিনে আমাদের কত বড় বড় সর্বনাশ ডেকে আনছে ।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে আগস্ট, ২০১৭ সকাল ৮:১২