১৮১৫ সালে ১৮ই জুন বেলজিয়ামের ওয়াটার লু নামক স্থানে সংগঠিত হয়েছিল ওয়াটারলুর যুদ্ধ । ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্ট এই যুদ্ধে দুইটি সম্মিলিত শক্তি যথা, ডিউক অব ওয়েলিংটনের অধীন ব্রিটিশ সেনাবাহিনী এবং গাবার্ড ভন বুচারের অধীন পার্শিয়ান সেনাবাহিনীর নিকট পরাজিত হয়েছিলেন ।বহুকাল ধরে নেপোলিয়ান অনেক যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিলেন। সেসবের মধ্যে কিছু কিছু যুদ্ধে তিনি অত্যন্ত সফলতার সাথে বিজয় অর্জন করেছেন আবার অনেক যুদ্ধে হেরে তার কতৃত্বও হারান। তিনি যখন ইউরোপের বেশির ভাগ দেশ দখল করেন ঠিক তখনই ইউরোপের সমস্ত দেশ মিলে ফ্রান্স তথা তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। কিন্তু তখন এত বিশাল সৈন্যবাহিনীর সাথে লড়াই করার সামর্থ্য ছিল না নেপোলিয়ানের। কারন তার কিছুদিন আগেই রাশিয়া আক্রমণের পর ভয়াবহ শীতে আক্রান্ত হয়ে তার অধিকাংশ সৈন্য বাহিনী মারা গেছিল,তাই তিনি সেই যুদ্ধে অংশ নিতে পারতেন না। অপর পক্ষে বিরোধি পক্ষ খুব দ্রুত প্যারিসকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে,অমন অবস্থায় নেপোলিয়ানের কিছুই করার ছিল না। সবশেষে তার সৈন্যরাও তাকে এলবা দ্বীপে নির্বাসনে দিয়ে দেয়।
নেপোলিয়ানের অবর্তমানে ফ্রান্সের রাজসিংহাসনে বসলেন বুরবো পরিবারের অষ্টাদশ লুই। নতুন করে তিনি রাজতন্ত্র প্রতিষ্টা করেন আবার ফ্রান্সকে পুনরুৎজীবীত করতে লাগলেন। কিন্তু ফ্রান্সের জনগন অষ্টাদশ লুই এবং তার এই নতুন শাসনব্যবস্থাকে মোটেই খুশি মনে স্বীকার করে নেয়নি। বরং দেশে এক অরাজকতা শুরু হল। এলবা দ্বীপে অবস্থান কালে নেপোলিয়ান দেশের সেই খারাপ অবস্থার কথা শুনে দেড় হাজার সৈন্য নিয়ে প্যারিসে উপস্থিত হলেন। এদিকে রাজা লুই এই খবর পেয়ে তার সৈন্যবাহিনীকে পাঠান নেপোলিয়ানকে বন্দি করার জন্য। কিন্তু ফ্রান্সের সেনাবাহিনী নেপোলিয়ানের ব্যক্তিত্ব ও সাহসিকতা এবং আকর্ষনীয় শক্তিতে মুগ্ধ হয়ে লুইয়ের পক্ষ ত্যাগ করে নেপোলিয়ানের পক্ষে যোগ দিল। আবার এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ১৮১৫ সালে ফ্রান্সের রাজসিংহাসনে আবার প্রত্যাবর্তন ঘটে নেপোলিয়ানের।কিন্তু ১৮১৫ সালের মার্চ মাসে নেপোলিয়ানের সেই প্রত্যাবর্তনের ফলে মোটেই খুশি হল না ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলি। তারা নেপোলিয়ানকে বিতারিত করবার জন্য নানা চক্রন্ত করতে থাকল। এক পর্যায়ে তারা আবারো বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে আক্রমণ করল ফ্রান্সকে। সেই আক্রমণের মূল হোতা ছিলেন ডিউক অব ওয়েলিংটন তিনি এবং পার্শিয়ার সৈন্যবাহিনী মিলে ওয়াটার লুর প্রান্তরে পরাজিত করেন নেপোলিয়ানকে। আর সেই যুদ্ধই ওয়াটার লুর যুদ্ধ। সেই যুদ্ধের চার দিন পর অর্থাৎ ২২শে জুন নেপোলিয়ান পদত্যাগ করেন ও প্যারিস ত্যাগ করেন এবং এর ৭দিন পর সম্মিলিত বাহিনী প্যারিস প্রবেশ করে।
যে তিনটি সৈন্য বাহিনী অংশ নিয়েছিল তারা হল নেপোলিয়ানের আর্মি-ডু-নর্ড, ওয়েলিংটনের ব্রিটিশ সেনাবাহিনী এবং বুচারের অধীন পার্শিয়ান বাহিনী। ফরাসি সৈন্য বাহিনীর অধীনে ছিল ৬৯,০০০ সৈন্য। যার মধ্যে ৪৮ হাজার পদাতিক সৈন্য, ১৪ হাজার ছিল অশ্বারোহি সৈন্য. ৭,০০০ গোলা ও কামান সহিত এবং ২৫০ জন বন্দুক সহ ছিল । ডিউক অব ওয়েলিংটনএর অধীন ছিল প্রায় ৬৭০০০ সেনাবাহিনী। যার মধ্যে ৫০,০০০ ছিল পদাতিক সৈন্য, ১১,০০০ অশ্বারোহি সৈন্য ,৬,০০০ কামান সহিত এবং ১৫০ জন বন্দুক সহিত।
যুদ্ধ প্রান্তরটি বেলজিয়ামের ওয়াটার লু শহর থেক ২ কিলোমিটার দুরে এবং বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলস থেকে ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। বর্তমানে এই প্রান্তরকে আরো আকর্ষনীয় করে তুলা হয়েছে। এই মাঠের ঠিক মধ্যেখানে রয়েছে একটি ছোট খাট ধরণের টিলা। যার চূড়া আলো করে আছে ২৮টন ওজনের একটি বিশাল ধাতব সিংহ মূর্তি।
তথ্যসূত্র; ইন্টারনেট বাংলা পিডিয়া।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৫:২৭