somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জানা না জানা বৌদ্ধধর্মের ইতিহাস (৪র্থপর্ব )

০৩ রা জুলাই, ২০১৭ রাত ২:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


জানা না জানা বৌদ্ধধর্মের ইতিহাস (৩য়পর্ব )
মহাযান শাখার পরিব্যপ্তি খৃষ্টপরবর্তী ১ম থেকে ১১শ শতাব্দি
কিছু শতাব্দির মধ্যেই, বৌদ্ধ ধর্মের মহাযান শাখা বিকশিত হতে থাকে এবং তা ভারত থেকে ছাড়িয়ে এশিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব অংশ, মধ্য এশিয়া, চীন, জাপান, কোরিয়া এবং সর্বশেষ খৃষ্ট পরবর্তী ৫৩৮ সালে জাপানে এবং ৭ম শতাব্দিতে তিব্বতে প্রচারিত হতে থাকে।

১ম থেকে ১০ম শতাব্দির মাঝে মহাযান বৌদ্ধ শাখার পরিব্যাপ্তি
কুষাণ সাম্রাজ্যের সমাপ্তির পর বৌদ্ধ ধর্ম গুপ্ত সাম্রাজ্যে খৃষ্ট-পরবর্তী ৪র্থ থেকে - ৫ম শতাব্দি বিকশিত হতে থাকে। সেই সময় ভারতের বর্তমান বিহার প্রদেশের নালন্দায় মহাযান শাখার অধ্যয়নের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠে। নালন্দায় প্রতিষ্ঠিত মহাযান শাখার এই বৌদ্ধ অধ্যয়ন কেন্দ্রটি বহু শতাব্দি ধরে বৃহত্তর ও প্রভাবশালী বৌদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পরিচিত ছিল এবং নাগার্জুনের মতো বৌদ্ধ পন্ডিত ছিল উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। গুপ্ত সাম্রাজ্যে বিকশিত বৌদ্ধ শিল্পকলা পরবর্তীতে সুদূর চীন দেশেকেও প্রভাবিত করেছিল।


বুদ্ধ ও বোধিসত্ত্ব, পাল সাম্রাজ্য, একাদশ শতাব্দিতে
হুন জাতির আক্রমণ এবং মিহিরকূলের অত্যাচারের পর থেকে ৬ষ্ঠ শতাব্দি থেকে ভারতে বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাব দূর্বল হয়ে পরে।৭ম শতাব্দিতে ভারত ভ্রমণের সময় বিখ্যাত চৈনিক পর্যটক ও অনুবাদক হিউয়েন সাঙ উল্লেখ করেন যে, বৌদ্ধ ধর্ম সেই সময় অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিল নাড়ু, বিজয়ওয়াড়া তথা সমস্ত দক্ষিণ ভারতে ব্যাপক জনপ্রিয় ছিল। তিনি নেপালে জনমানবশূণ্য বৌদ্ধ-স্তুপের বর্ণনা ও গৌড় রাজ্যের রাজা শশাঙ্ক কর্তৃক বৌদ্ধ নিপীড়নের কথা উল্লেখ করলেও, সেই একই সময়কালীন সময়ে রাজা হর্ষবর্ধন কর্তৃক বৌদ্ধ ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতার ভূয়শী প্রশংসা করেন। হর্ষবর্ধনের শাসনামলের সমাপ্তির পর অনেক ছোট ছোট রাজ্যের উত্থান ঘটে যা পরবর্তীতে গাঙ্গেয়ত্রেয় উপত্যকায় রাজপুত জাতির উত্থান ঘটায় এবং বৌদ্ধ-রাজবংশেরও সমাপ্তি ঘটে। কিন্তু পরবর্তীতে বাংলা অঞ্চলে পাল সাম্রাজ্যের উত্থানের পর থেকে বৌদ্ধ-রাজবংশ পুনরায় তাদের গৌরব ফিরে পায়। হিন্দু সেন রাজবংশ কর্তৃক পাল রাজ্য আক্রমণের আগ পর্যন্ত বৌদ্ধ ধর্ম পাল সাম্রাজ্যের অধীনে বিকশিত হয়ে বাংলা অঞ্চল হতে ৭ম থেকে ১২শ শতাব্দি পর্যন্ত সিক্কিম, ভূটান এবং তিব্বত পর্যন্ত ছড়িয়ে পরে। পাল রাজবংশের শাসনামলে বহু মন্দির ও বৌদ্ধ-শিল্পকলা বিকশিত হয়েছিল।হিউয়েন সাঙ্গ আরও উল্লেখ করেন যে, তার পরিভ্রমণের সময় তিনি অনেক বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের হিন্দু ধর্ম ও জৈন ধর্মে ধর্মান্তরীত হতে দেখেছেন। কেননা দশম শতাব্দিতে পাল রাজবংশের পরাজয় ও বৈষ্ণবীয় মতবাদ উত্থানের ফলে ভারতীয় উপমহাদেশে বৌদ্ধ ধর্ম বিলুপ্ত হতে থাকে।
দ্বাদশ শতাব্দির শেষের দিকে বিহারে মুসলিম শাসন পাকাপোক্ত হওয়ার পর থেকে মধ্য ভারতে বৌদ্ধ ধর্ম বিলুপ্ত হতে থাকে এবং অনেক বৌদ্ধ ধর্ম বিশ্বাসীরা সেই সময় ভারতের একেবারে উত্তরের দিকে অর্থাৎ হিমালয়ার অঞ্চলগুলোতে এবং একেবারে দক্ষিণে শ্রীলঙ্কার দিকে স্থানান্তরিত হতে থাকে। পাশাপাশি ভারতবর্ষে সেই সময় অদ্বৈত মতবাদ ও ভক্তি আন্দোলনের পুনরুত্থানের এবং সুফিবাদের আগমনের ফলে ধীরে ধীরে বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাব হ্রাস পায়।
মধ্য এশিয়া
বুদ্ধের সময়কাল থেকেই মধ্য এশিয়া বৌদ্ধ ধর্ম কর্তৃক প্রভাবিত ছিল। থেরবাদ গ্রন্তগুলোতে উল্লেখানুযায়ী, ব্যাকট্রিয়া রাজ্য থেকে তাপাস্‌সু ও ভাল্লিকা নামক দুই ভাই বুদ্ধের সাথে দেখা করেন এবং ব্যাকট্রিয়া রাজ্যে ফিরে গিয়ে তারা বৌদ্ধ মন্দির নির্মাণ করেন। চীন, ভারত ও পারস্যের মধ্যে মধ্য এশিয়া বহু বছর ধরে সংযোগ স্থাপন করে চলেছিল। খৃষ্টপূর্ব ২য় শতাব্দিতে হান সাম্রাজ্যের সম্প্রসারণের ফলে পশ্চিমাংশকে এশিয়ার হেলেনিস্টিক সভ্যতার আরো নিকটবর্তী করে তুলে; যার মধ্যে গ্রিক-ব্যাকট্রিয় সাম্রাজ্য বিশেষ উল্লেখযোগ্য। উত্তরের দিকে বৌদ্ধ ধর্মের পরিব্যাপ্তি এই ধর্মকে তার অনুসারী বৃদ্ধি করতে বিশেষ সহায়তা করে, এমনকি মধ্য এশিয়ার বৌদ্ধ রাজ্যগুলোতেও। রেশম পথ অঞ্চলের অনেক শহরে এখনও বৌদ্ধ স্তূপ ও মঠের সন্ধান পাওয়া যায়। ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, এই বৌদ্ধ মঠগুলো পূর্ব এবং পশ্চিম থেকে আসা-যাওয়াকারি পর্যটকদের জন্য পান্থ-পথ হিসেবে সেই সময়ে ব্যবহৃত হতো।খৃষ্টপূর্ব ২য় ও ৩য় শতকে থেরবাদ ও মহাযান শাখা সম্মিলিতভাবে পাকিস্তান, কাশ্মীর, আফগানিস্তান, উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও তাজিকিস্তানে ছড়িয়ে পড়ার পূর্বে, সর্ব প্রথম ইরানে থেরবাদ মতাদর্শ প্রচারিত হয়। উল্লেখিত এই দেশগুলো পূর্বে গান্ধার, ব্যাকট্রিয়, মার্জিয়ানা, সোগ্‌দা রাজ্য হিসেবে পরিচিত ছিল, যেখান থেকে পরবর্তীতে চীনে বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারিত হয়েছিল। সবার আগে ব্যাকট্রিয় রাজ্যই সর্ব-প্রথম খৃষ্টপূর্ব ৩য় শতাব্দিতে বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাবে আসে। তবে ব্যাকট্রিয় রাজ্যে বৌদ্ধ ধর্মই একক ধর্ম ছিল না। বৌদ্ধ ধর্মের পাশাপাশি সেখানে জরাথুস্ট্রবাদ, হিন্দু ধর্ম, ইহুদী ধর্ম, মানি ধর্ম , তেংগ্রী ধর্ম, ওঝা ধর্ম এবং আরো অনেক স্থানীয় সুসংগঠিত নয় এমন ধর্মের অনুসারীর অস্তিত্ব পাওয়া যায়।
৭ম শতাব্দি পর্যন্ত নিকায়বাদি বৌদ্ধ পন্ডিতরা মধ্য এশিয়া ও চীনে ছিল। আর সেই সময়েই মহাযান বৌদ্ধ শাখা উক্ত অঞ্চলগুলোতে প্রভাবশালী হয়ে উঠে। আর যেহেতু মহাযান বৌদ্ধ শাখা নিকায়বাদদর্শী নয় তাই সর্বাস্তিবদিন এবং ধর্মগুপ্তক মধ্য এশিয়ার মঠগুলোতে প্রাধান্যরূপে থেকে যায়।অনেকগুলো বৌদ্ধ রাজবংশ উভয় মধ্য এশিয়া এবং সম্রাট কণিষ্কের শাসনামলে ভারতীয় উপমহাদেশে সমৃদ্ধি লাভ করলেও ৫ম শতাব্দিতে হুন জাতির আক্রমণের পর থেকে রাজা মিহিরকূলের শাসনামলে বৌদ্ধরা নির্যাতনের শিকার হয়। চেঙ্গিজ খান কর্তৃক মঙ্গোল জাতির আক্রমণের মধ্য দিয়ে বৌদ্ধ ধর্ম আবারো আশার আলো দেখতে পায় এবং ইলখানাত এবং চাগাতাই খানাত নামক মঙ্গোল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হলে ত্রয়োদশ শতকে এশিয়াতে বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাব বাড়তে থাকে। কিন্তু ১০০ বছরের মধ্যে উক্ত বৌদ্ধ মঙ্গোল সাম্রাজ্যের অধিপতিরা ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয় এবং ইসলাম গ্রহণ করার পর থেকে তারা এশিয়া জুড়ে তাদের রাজ্যগুলোতে ইসলাম ধর্ম প্রচার করতে থাকে। শুধুমাত্র পশ্চিমের মঙ্গোলরা এবং ইয়ুয়ান রাজবংশ লোকেরা তাদের বৌদ্ধ ধর্মের বজ্রযান শাখা অরক্ষিত রাখে।
পারস্য
বৌদ্ধ ধর্ম বর্তমান তুর্কমেনিস্তান দেশের মার্ভ শহরে যেগুলো পূর্বে পারস্য সাম্রাজ্যের অধীভুক্ত ছিল, সেসব অঞ্চলগুলোতে প্রচারিত হয়েছিল। একটি সোভিয়েত প্রত্নতাত্ত্বিক দল মার্ভ শহরে অবস্থিত গিঅরকালা অঞ্চলে খনন করেএকটি বৌদ্ধ ভজনালয়, একটি বিশাল বৌদ্ধ ভাষ্কর্য ও একটি মঠ আবিষ্কার করেন।পারস্য জাতি বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারে সরাসরি যুক্ত ছিল। বস্তুত আন শিগাও নামক একজন পারস্য রাজকুমার চীনে বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছিলেন এবং তিনি ভারতীয় উপমহাদেশের অনেক বৌদ্ধ-গ্রন্থ চৈনিক ভাষায় রূপান্তরিত করেছিলেন।


তথ্যসূত্র ইন্টারনেট


সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুলাই, ২০১৭ রাত ২:১৬
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দেশনায়ক তারেক রহমানকে সম্পৃক্ত করার নেপথ্যে  

লিখেছেন এম টি উল্লাহ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৮


আগেই বলেছি ওয়ান ইলেভেনের সরকার এবং আওয়ামীলীগের যবনায় জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পৌনে একশ মামলা হলেও মূলত অভিযোগ দুইটি। প্রথমত, ওই সময়ে এই প্রজন্মের নিকট উপস্থাপন করা হয়েছিল দেশনায়ক তারেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পকে নিয়ে ব্লগারদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



**** এডমিন টিমের ব্লগারেরা আমাকে বরাবরের মতোই টার্গেট করে চলেছে, এভাবেই সামু চলবে। ****

ট্রাম্পের বিজয়ে ইউরোপের লোকজন আমেরিকানদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী শংকিত; ট্রাম্প কিভাবে আচরণ করবে ইউরোপিয়ানরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পের বিজয়, বিশ্ব রাজনীতি এবং বাংলাদেশ প্রসংগ

লিখেছেন সরলপাঠ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২১

ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশে বা দেশের বাহিরে যে সব বাংলাদশীরা উল্লাস করছেন বা কমলার হেরে যাওয়াতে যারা মিম বানাচ্ছেন, তারাই বিগত দিনের বাংলাদেশের ফ্যাসিস্টের সহযোগী। তারা আশায় আছেন ট্রাম্প তাদের ফ্যাসিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠেলার নাম বাবাজী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩১

এক গ্রামীণ কৃষক জমিদার বাড়িতে খাজনা দিতে যাবে। লোকটি ছিলো ঠোটকাটা যখন তখন বেফাস কথা বা অপ্রিয় বাক্য উচ্চারণ করে ক্যাচাল বাধিয়ে ফেলতে সে ছিলো মহাউস্তাদ। এ জন্য তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×