১।সৌদী আরব
২।ভুটান
৩।যুক্তরাজ্য
৪।সোয়াজিল্যান্ড
৫। লেসোথো
৬।মরক্কো
৭।ব্রুনেই
৮।কম্বোডিয়া
৯। কুয়েত
১০।থাইল্যান্ড
১১। সংযুক্ত আরব আমীরশাহী
১২।মালয়েশিয়া
১৩। জরডন
১৪।ওমান
১৫।কাতার
১৬। বাহরিন
১৭ এন্ডরা
১৮।বেলজিয়াম
১৯।ডেনমারক
২০। স্পেন
২১। লিতচেন্সটাইন
২২। লুক্সেম্বারগ
২৩।মোনাকো
২৪। নরওয়ে
২৫। নেদারল্যান্ড
২৬। টোঙগা
সৌদি আরব এর কিছু সংক্ষিপ্ত পরিচিতি।
আল'আরবিয়া অথবা আসসা'উদিয়া,যা সাধারনত্ব আমাদের সকলের কাছে এবং সে দেশেও সরকারিভাবে সৌদি আরব সাম্রাজ্য নামেই পরিচিত। আয়তনের দিক দিয়ে পশ্চিম এশিয়ার সবথেকে বড় আরব দেশ যার আয়তন প্রায় ২১,৫০,০০০ বর্গ কিমিঃ। যেটি আলজেরিয়ার পরে আরব বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। তার উত্তরে জর্ডান ও ইরাক আর উত্তরপূর্বে কুয়েত অবস্থিত আর কাতার ও বাহরাইন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত পূর্বে অবস্থিত আর দক্ষিনে ওমান দক্ষিনপুর্বে আর ইয়েমেন ।
সৌদি আরব মূলত চারটি সতন্ত্র অঞ্চল হেজাজ, নজদ ও আল হাসা পুর্বাঞ্চলীয় আরব এবং আসির দক্ষিণাঞ্চলীয় আরব নিয়ে গঠিত। আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ ১৯৩২ সালে সৌদি আরব সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ১৯০২ সালের শুরুতে রিয়াদ এবং তার পুর্ব পুরুষের রাজ্য দখলসহ ধারাবাহিক যুদ্ধের মাধ্যমে চারটি অঞ্চলকে একত্রিত করেন এবং একটি রাষ্ট্রে পরিণত করেন। দেশটি পুরোপুরি রাজতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পরিচালিত হয় এবং আইনের ক্ষেত্রেও ইসলামি আইনের অনুসরণ করা হয়। ইসলামের দুই পবিত্র মসজিদ মসজিদুল হারাম এবং মসজিদে নববীর কারণে এই দেশটাকে দুই পবিত্র মসজিদের দেশ বলা হয়। পৃথিবীর এক নাম্বার তেল উৎপাদনকারী ও রপ্তানিকারক দেশ এবং পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম হাইড্রোকার্বন মজুদকারি। এই তেলের কারণে দেশটির অর্থনীতি যেমন বাড়ছে তেমনিভাবে এর মানব সম্পদ উন্নয়ন সূচকেও উপরের দিকে তাছাড়াও একমাত্র আরব দেশ হিসেবে জি ২০ প্রধান অর্থনৈতিক শক্তির সদস্য। আর দেশটি তার নিজ অর্থনীতিকে কর্পোরেশন কাউন্সিল ফর দ্য আরব স্টেটস অব দ্য গালফ জিসিসি এর মধ্যে ডাইভারছিফাইড করছে। পৃথিবীর চতুর্থ সামরিক খরচ দেশটি বহন করেন । দেশটিকে মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষমতাধর দেশ হিসেবে ধরা হয়।দেশটি জিসিসি ও ওআইসি এবং ওপেক এর সদস্য।
দেশটি রাষ্ট্র বা রাজতান্ত্রিক পদ্ধতিতে শাসিত করা বা নিয়মন্ত্রন করা হয়।তাই সৌদি আরবে রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড বা নির্বাচনের ব্যবস্থা নেই। ১৯৯২ সালে রাজকীয় ফরমানের মাধ্যমে চালু করা মৌলিক আইন অনুযায়ী বাদশাহকে অবশ্যই শরিয়ার প্রয়োগ করতে হবে এবং এতে কুরআন ও সুন্নাহকে রাষ্ট্রের সংবিধান হিসেবে গ্রহণ করা হয়। সংবিধান হিসেবে কোরআনকে গ্রহন করা হলেও এখানে রাজতন্ত্রই বিদ্যমান। প্রথা অনুযায়ী ঐতিহ্যবাহী গোত্রীয় সম্মেলন মজলিসে প্রাপ্ত বয়স্ক যেকোনো ব্যক্তি বাদশাহর কাছে আবেদন করতে পারে। দেশের বেশির ভাগ অঞ্চলই মরুভূমি। দেশের সবচেয়ে বড় মরুভুমির নাম রাব-আল-খালি। আর দেশটির পশ্চিমাংশ উর্বর। সৌদি আরব এর মূল অর্থনীতি পেট্রোলিয়াম ভিত্তিক বাজেটে রাজস্ব মোটামুটি ৭৫% এবং রপ্তানি আয়ের ৯০% তেল শিল্প থেকে আসে।
আরবি ভাষা সৌদি আরবের সরকারি ভাষা। এখানকার ৮০% এরও বেশি লোক আরবি ভাষায় কথা বলেন। তাছাড়াও সৌদি আরবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত অভিবাসী সম্প্রদায় আছে যেগুলিতে বহু বিদেশী ভাষা প্রচলিত। এই সম্প্রদায়গুলিতে ফিলিপাইন দ্বীপপুঞ্জ, ভারতীয় উপমহাদেশ, ইরান, ইত্যাদি দেশের ভাষাগুলি প্রচলিত। আন্তর্জাতিক কর্মকাণ্ডে ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করা হয়।
ভূটান এর সংক্ষিপ্ত পরিচিতিঃ
ভূটান হলো দক্ষিণ এশিয়ার রাজতন্ত্র দেশ। দেশটি ভারতীয় উপমহাদেশে হিমালয় পর্বতমালার পূর্বাংশে অবস্থিত। ভূটানের উত্তরে চীনের তিব্বত অঞ্চল অবস্থিত আর দক্ষিণ পূর্ব ও পশ্চিমে ভারত। ভূটান সার্ক র একটি সদস্য রাষ্ট্র। ভূটানের রাজধানীর নাম থিম্ফু।অতীতে ভূটান পাহাড়ের উপত্যকায় অবস্থিত অনেকগুলি আলাদা আলাদা রাজ্য ছিল। ১৯০৭ সাল থেকে ওয়াংচুক বংশ দেশটি শাসন করে আসছেন। ১৯৫০এর দশক পর্যন্ত ভূটান একটি বিচ্ছিন্ন দেশ ছিল। ১৯৬০এর দশকে ভারতের কাছ থেকে অর্থনৈতিক সাহায্য নিয়ে দেশটি একটি আধুনিক রাষ্ট্রে রূপান্তরিত হতে শুরু করে। তবে এখনও এটি বিশ্বের সবচেয়ে অনুন্নত দেশগুলির একটি। ভূটানের অধিবাসীরা নিজেদের দেশকে মাতৃভাষা জংকা ভাষায় দ্রুক ইয়ুল বা বজ্র ড্রাগনের দেশ নামে ডাকে।
ভূটানের প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কে সেখানে প্রচলিত পৌরাণিক কাহিনীর চেয়ে বেশি সুস্পষ্ট কিছু জানা যায় না। এখানে হয়ত খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ অব্দেও বসতি ছিল তবে ৯ম শতকে এখানে তিব্বতি বৌদ্ধধর্মের প্রচলনের পরেই এলাকাটির সম্পর্কে আরও জানা যায়। সেসময় বহু তিব্বতি বৌদ্ধ ভিক্ষু পালিয়ে ভূটানে চলে আসেন। ১২শ শতকে এখানে দ্রুকপা কাগিউপা নামের বৌদ্ধধর্মের একটি ধারা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এটিই বর্তমানে ভূটানের বৌদ্ধধর্মের প্রধান রূপ। ভূটানের বৌদ্ধ মন্দির এবং ধর্মশিক্ষালয় দেশটির রাজনৈতিক ইতিহাসের উপর সবসময় প্রভাব ফেলেছে।
১৬১৬ সালে নগাওয়ানা নামগিয়াল নামের এক তিব্বতি লামা তিনবার ভূটানের উপর তিব্বতের আক্রমণ প্রতিহত করলে ভূটান এলাকাটি একটি সংঘবদ্ধ দেশে পরিণত হতে শুরু করে। নামগিয়াল বিরোধী ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলিকে পদানত করেন । একটি ব্যাপক এবং সুক্ষ্ম বিবরণসমৃদ্ধ আইন ব্যবস্থা প্রচলন করেন এবং একটি ধর্মীয় ও সিভিল প্রশাসনের উপর নিজেকে একনায়ক বা শাবদ্রুং হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। তার মৃত্যুর পর অন্তর্কোন্দল এবং গৃহযুদ্ধের কারণে পরবর্তী ২০০ বছর শাবদ্রুঙের ক্ষমতা সীমিত হয়ে পড়ে। ১৮৮৫ সালে উগিয়েন ওয়াংচুক শক্ত হাতে ক্ষমতা প্রয়োগে সক্ষম হন এবং ভারতের ব্রিটিশ প্রশাসনের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলেন।
১৯০৭ সালে উগিয়েন ওয়াংচুক ভূটানের রাজা নির্বাচিত হন এবং সে বছর ডিসেম্বরের ১৭ তারিখ সিংহাসনে আরোহণ করেন। তার উপাধি ছিল দ্রুক গিয়ালপো অথবা ড্রাগন রাজা। ১৯১০ সালে রাজা উগিয়েন এবং ব্রিটিশ শক্তি পুনাখার চুক্তি স্বাক্ষর করে যেখানে ব্রিটিশ ভারত ভূটানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাক না গলানোর প্রতিশ্রুতি দেয়। উগিয়েন ওয়াংচুক ১৯২৬ সালে মারা গেলে তার পুত্র জিগমে ওয়াংচুক পরবর্তী শাসক হন। ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীনতা লাভের পর ভূটানকে একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে গণ্য করেন। ১৯৪৯ সালে ভূটান ও ভারত একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন যেখানে ভূটান ভারতের কাছ থেকে বৈদেশিক সম্পর্কের ব্যাপারে পথনির্দেশনা নেবার ব্যাপারে সম্মত হন এবং পরিবর্তে ভারত ভূটানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করার প্রতিশ্রুতি দেন। ১৯৫২ সালে জিগমে ওয়াংচুকের ছেলে জিগমে দর্জি ওয়াংচুক ক্ষমতায় আসেন। তার আমলে ভূটান পরিকল্পিত উন্নয়নের পথে এগোতে থাকে এবং ১৯৭১ সালে জাতিসংঘের একটি সদস্য রাষ্ট্রে পরিণত হয়।
তার সময়েই ভূটানে একটি জাতীয় সংসদ নতুন আইন ব্যবস্থা ও রাজকীয় ভূটানি সেনাবাহিনী এবং একটি উচ্চ আদালত প্রতিষ্ঠা করা হয়।
১৯৭২ সালে ১৬ বছর বয়সে জিগমে সিঙিয়ে ওয়াংচুক ক্ষমতায় আসেন। তিনি আধুনিক শিক্ষা, সরকারের বিকেন্দ্রীকরণ, জলবিদ্যুৎ উৎপাদন, পর্যটন এবং পল্লী উন্নয়নের মত ব্যাপারগুলির উপর জোর দেন। তিনি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের পাশাপাশি জনগণের সামগ্রিক সুখের একজন প্রবক্তা ও উন্নয়ন সম্পর্কে তার দর্শন কিছুটা ভিন্ন এবং এই ভিন্নতার কারণেই তিনি আন্তর্জাতিক পরিচিত পেয়েছেন। তার আমলে ধীরে ধীরে ভূটান গণতন্ত্রায়নের পথে এগোতে থাকে। ২০০৬ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি রাজার পদ ছেড়ে দেন এবং তার ছেলে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক ভূটানের রাজা হন। ২০০৮ সালের ১৮ই জুলাই ভূটানের সংসদ একটি নতুন সংবিধান গ্রহণ করেন। সেই ঐতিহাসিক দিন থেকে ভূটানে পরম রাজতন্ত্রের সমাপ্তি ঘটে এবং ভূটান একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্র এবং সংসদীয় গণতন্ত্রে পরিণত হয়।
ভূটান হল একটি রাজতন্ত্র বিশিষ্ট দেশ। এখানে বর্তমানে রাজতন্ত্র বিদ্যমান। আগেই বলেছি ভূটানে অতীতে একটি পরম রাজতন্ত্র প্রচলিত ছিল। বর্তমানে এটি একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্র। আর ভূটানের রাজা যার উপাধি ড্রাগন রাজা তিনি হলেন রাষ্ট্রের প্রধান। মন্ত্রীদের একটি কাউন্সিল রাষ্ট্রের নির্বাহী কার্য পরিচালনা করেন। সরকার এবং জাতীয় সংসদ উভয়ের হাতে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা ন্যস্ত। তাছাড়াও যে খেনপো উপাধিবিশিষ্ট দেশের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা রাজার সবচেয়ে কাছের পরামর্শদাতার একজন। ২০০৭ সালে একটি রাজকীয় আদেশবলে রাজনৈতিক দল নির্মাণের উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়া হয়।
ভূটানের আয়তন প্রায় ৪৬,৫০০ বর্গকিলোমিটার।থিম্পু এর রাজধানী শহর এবং এটি দেশের মধ্য পশ্চিম অংশে অবস্থিত। অন্যান্য শহরের মধ্যে পারো, ফোয়েন্ত্শোলিং, পুনাখা ও বুমথং উল্লেখযোগ্য। ভূটানের ভূপ্রকৃতি পর্বতময়। উত্তরে সুউচ্চ হিমালয় পর্বতমালা, মধ্য ও দক্ষিণভাগে নিচু পাহাড় ও মালভূমি এবং দক্ষিণ প্রান্তসীমায় সামান্য কিছু সাভানা তৃণভূমি ও সমভূমি আছে। মধ্যভাগের মালভূমির মধ্যকার উপত্যকাগুলিতেই বেশির ভাগ লোকের বাস। ভূটানের জলবায়ু উত্তরে আল্পীয় মধ্যে নাতিশীতোষ্ণ এবং দক্ষিণে উপক্রান্তীয় জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত হয়। স্থলবেষ্টিত দেশ ভূটানের আকার, আকৃতি এবং পার্বত্য ভূ-প্রকৃতি সুইজারল্যান্ডের সদৃশ বলে দেশটিকে অনেক সময় এশিয়ার সুইজারল্যান্ডও ডাকা হয়।
বহির্বিশ্ব থেকে বহুদিন বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে ভূটান প্রাণী ও উদ্ভিদের এক অভয়ারণ্য। এখানে বহু হাজার দুর্লভ প্রজাতির প্রাণী এবং উদ্ভিদ দেখতে পাওয়া যায়। ভূটানের প্রায় ৭০% এলাকা অরণ্যাবৃত।
ভূটানের রাষ্ট্রীয় মুদ্রা গুলট্রাম এবং এর বিনিময় হার ভারতীয় রুপীর সাথে সম্পর্কিত । ভূটানের অর্থনীতি বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুদ্র অর্থনীতিগুলির একটি। এটি মূলত কৃষি ও বনজ সম্পদ নির্ভর অর্থনীতি। ভূটানের জনসংখ্যার প্রায় ৬০% এই দুই ধরনের পেশায় জড়িত।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মে, ২০১৬ রাত ২:২৪