ডুবন্ত একটা জাহাজ, শুধু মাস্তুল দেখা যায়। আর কিছু না। বাসা থেকে বের হয়ে যে ডাকাতিয়া নদী, তার ঠিক অপর তীরেই ডব্লিউ রহমান জুট মিল। মিলের সামনেই, নদীতে জাহাজটা। অনেক মিথ ছিল জাহাজটাকে নিয়ে। অমুকে নদী পার হতে গিয়ে এটা দেখেছে, সেটা দেখেছে। কিন্তু সেই মিথগুলোকে নিয়ে নাড়াচাড়া করার মতো আমাদের অমন বয়স ছিলো না। আমরা ঘর থেকে বের হতে, স্কুলে আসতে যেতে, বিকেলে নদীর পাড়ে বসতে গেলেই সে বয়সে কোনো না কোনো ভাবে এই জাহাজটির কথা চলে আসতে। অমুক মুক্তিযোদ্ধা দেড় মাইল দুর থেকে সাঁতরে এসে মাইন দিয়ে ডুবিয়েছিলো। আবার আরেক দল বলতো: না, না। বোমা মেরে। আবার এই জাহাজ ডুবলে ভয়ে কোন কোন রাজাকার পালিয়েছিলো, কাদেরকে ধরে ধরে মারা হয়েছিলো এই নিয়ে বচসা হতো। বাজিও হতো। কোন পক্ষই জিততো না। আমরা সন্ধ্যায় এইসব গল্প মাথায় করে বাড়ি ফিরতাম। যেতে যেতে বহুকিছু চিন্তা হতো। ঐ এলাকার চারপাশে আমরা যারা যারা থাকতাম, তারা এই জাহাজটাকে নিয়ে কত কত বচসা করেছি,একে ঘিরেই আমাদের সাইকিতে কী করে মুক্তিযুদ্ধ ঢুকেছে তার বিবরণ আজ আর দেয়া সম্ভব নয়।
আজ শুনি জাহাজটাকে কেটে কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। জানি না, এই সিদ্ধান্তের কারণ কী! ঐ নদী তো সংকীর্ণ ও হয়নি আগে থেকে। যা থাকার তাই আছে। তাহলে?
এটাকে চাঁদপুরের মানুষ থামাতে পারবে কী না জানি না। কিন্তু , আগামীবার লঞ্চঘাট থেকে বাসায় ফেরার সময় যখন ঐ রাস্তাটা পার হবো, যখন সন্ধ্যার সেই নিঃসঙ্গ, রহস্যময় জাহাজটার মাস্তুলটুকু আর দেখা যাবে না, তখন একটা দীর্ঘ শোচনায় মনটা ভরে উঠবে। এই জাহাজের সাথে আমাদের কতই না স্মৃতি, বিস্মৃতি; এসবকিছূ ফেলে জাহাজটি এবার সত্যিই আমাদের একা করে রেখে যাবে!
রিলেটেড পোস্ট:
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই অক্টোবর, ২০০৮ রাত ১২:৪২