ইউনূস সরকার সব সংস্কার কিংবা কাজ করতে পারবে না ,সেটা নিয়মিতর নিয়ম মেনে নিতে হবে । রাজনৈতিক দলগুলো , যে কালচার তৈরি করে গেছে সেটা এই সরকার আমূলে বদলে দিতে পারবে না । ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ,কিছু সিলেক্টিভ কাজ করতে হবে ,আবার কিছু কাজ দ্রুত করতে হবে । কিছু পয়েন্টে সেগুলো নিয়ে আলোচনার বিষয়বস্তু ।
১। সেন্টমার্টিন ইস্যুতে নমনীয় হওয়ার প্রয়োজন আছে
এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে ,সেন্টমার্টিনের পরবিশেগত গুরুত্ব। এই প্রবাল দ্বীপ রক্ষা করা সকলের দায়িত্ব,সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে,তা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে । কিন্তু এসবের বাইরে আমাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থানকে বিশেষ বিবেচনায় আনোয়ন অতিব জুরুরি। এসব ইস্যু সামনে এনে নগর জীবনে অশান্তি বাড়ছে। আন্দোলনকারীরা চট্রগ্রামের মহা গুরুত্বপূর্ণ সড়কের ডলফিন মোড় পর্যন্ত অবরোধ করেছে।ঢাকা এখন কার্যত অচল,প্রতিদিন কোন না কোন আন্দোলন,দাবি নিয়ে মহড়া চলছে। ঢাকা হয়ে উঠছে আন্দোলনের নগরী। নগর জীবনে জন-অসন্তোষ বাড়লে , এই সরকারকে ব্যর্থতার দিকেই নিয়ে যাবে। স্বৈরাচারের মত কঠোরও হতে পারছে না , সেটা আশাও করি না ,যদি সে দাবিগুলো যৌক্তিক হয় ।
সেন্টমার্টিন রক্ষায় ব্যাপক জনসচেতনতা মূলক প্রচারণা করা যেতে পারে । পরিবেশের ক্ষতি হয় ,এমন কাজে বেশি পরিমাণে অর্থ দণ্ড বাড়ানো যেতে পারে সাথে আইনও থাকবে । হোটেল মালিকদের একটি নীতিমালার আওতায় আনা যায় । ব্যবসা করলে বিশেষ কিছু সুবিধা পাবে ,আবার নীতিমাল ভঙ্গ করলে দৃশ্যমান তিরস্কার ইকো -ট্যুরিজম নিয়ে কাজ করতে পারে।
২। পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ
পরিবেশের ক্ষতি এবং পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ বটে। তবে প্রান্তিকদের দেশে এসব বাস্তবায়ন করতে হলে সরকার শক্তিশালী হতে হবে । সবচেয়ে বড় কথা , পলিথিনের বিকল্প ভোক্তা পর্যায়ে তুলে দিতে হবে আগে , পনিথিন আমদানিতে শুল্ক বাড়াতে হবে , সাথে পরিবশে বান্ধব ব্যাগ উৎপানে সরকারি প্রণোদনা দিয়ে নতুন শিল্প স্থাপন করা দরকার । যখন পলিথিন থেকে সহজলভ্য বিকল্প জনসাধারণ থেকে পেয়ে যাবে,তখন বাজার থেকে অটো পলিথিন বিলুপ্তি হবে । সময় ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার বিকল্প নেই । এত দ্রুত সময়ে এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন আকাশ-কুসুম কল্পনা। মনে রাখতে হবে ,আমরা জাতি হিসাবে এখনও অসচেতন , আইন মানতে অনীহা ব্যাপক ।
৩। অটো রিকসা চালকদের ইস্যু
মহাসড়কে অটো রিকসা নিষিদ্ধ সমর্থন করি। তবে অলিতে গলিতে ,ছোট ,সরু সড়কে রিকসা চলুক । পুরোপুুরি নিষিদ্ধের বিরোধী।
এই রাষ্ট্র আমাদের চাকরি নিশ্চিত করতে পারছে না ,যারা নিজের কর্মসংস্থান করছে ,তাদের পেটে লাথি মারা অন্যায় । এমন কিছু করা যাবে না , যাতে দরিদ্র মানুষদের জীবনে আরও দারিদ্রতা নেমে আসে। দরিদ্র মেহনতি মানুষরা এখনও তিন বেলা ভালো খাবারের সন্ধানে ঘুমহীন রাত কাটে । সেখানে ভালো শিক্ষা ,স্বাস্থ্য,বিনোদন স্বপ্নের মতো । নিয়ন্ত্রণহীন রিকসা কিভাবে বন্ধ করা যায় কিংবা নিয়ন্ত্রণ করা যায় ,সেটা নিয়ে আলোচনা -গবেষণা হোক ।
৪। হকার উচ্ছেদ
আগে হকারদের বিকল্প স্থান দিতে হবে। এর পরেই উচ্ছেত অভিযানে সফলতা আসবে। যে দেশে এ্যাম্বুলেসের মত যানের আলাদা লেন নেই , যেখানে ফুটপাতের জন সাধারণের হাঁটার অধিকার অপেক্ষাকৃত তুচ্ছ দাবি । নিম্ন আয়ের মানুষ হকারদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে নি , বড় পরিসরে অভিযোগও করেনি । বিরাট জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান হয়েছে এখানে , অতিরিক্ত মুনাফালোভী ব্যবসায়িদের থেকে রক্ষা পাচ্ছে জনসাধারণ । মধ্যবিত্ত থেকে দরিদ্র ,নিম্ন মধ্যবিত্তের ঈদের মার্কেট এই হকারদের কাছেই হয় । অর্থনীতিতেও অবদান রাখছে। বাস্তবায়নযোগ্য কাজ করা উচিত। আগের কোন সরকারই এইসব লোক দেখানো অভিযানের সফলতা আনতে পারিনি । বরং হকারদের নিয়ে যে ,বাণিজ্য হয় ,সেটা বন্ধ করুন। কোন সরকারই সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে নাগরিকদের হাঁটার রাস্তার সমস্যার সমাধান করেনি।
এসিরুমে বসে সিদ্ধান্ত দেওয়া যায় সহজে ,এর প্রভাবটা কতটা নিধারুন সেটা ভাবা দরকার।
সব কাজ করতে গেলে কোন কাজই হবে না । এসব করে ,সরকার নিজেই নিজের চাপসৃষ্টি করছে। আর অন্যসব চাপ ,দাবি-দাওয়া তো আছেই । এসব কাজে আড়াল পড়ে যাচ্ছে ,জুলাই জুড়ে হত্যাযজ্ঞের বিচার ,সংষ্কারসহ গুরুত্বপূর্ণ
কাজ। এরই মাঝে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগসহ নানান স্বার্থান্বেষীমহল সুযোগ নিচ্ছে এবং নিবে। পতিত ফ্যাসিস্টদের এখন একটাই চাওয়া ,আমরা যেন ভিন্ন টপিকে ব্যস্ত থাকি ,হচ্ছেও সেটা। যদি না , হত্যার বিচার না হয় , বিগদ ১৫ বছরের দুর্নীতির বিচার না হয় ,এবং প্রয়োজনীয় ,জুরুরি সংস্কার না হয় , তাহলে ইউনূস সরকার বাংলাদেশের জনগণ ব্যর্থতার বৃত্তেই রাখবে। মনে রাখতে হবে এবারের প্রেক্ষাপট পুরো ভিন্ন। এটা বিরাট সুযোগ সংস্কারের । কোন রাজনৈতিক দল সেগুলো করতে পারবে না , পারেনি আগেও । আমরা বিশ্বাসঘাতকতার আর দৃষ্টান্ত চাই না ।
সবার আগে গুরুত্বসহকারে যে কাজগুলো অবশ্যই করা প্রয়োজন বলে মনে করি । বাজার নিয়ন্ত্রণ,সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া, আইন শৃঙ্খলনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা , বিচার নিশ্চিত করা । এগুলো ঠিকঠাক ভাবে করতে পারলে , রাজনৈতিক দলগুলোর দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার দাবি পালে পানি পাবে না । সৃজনশীল ও দায়িত্বশীল পদক্ষেপেরে জায়গায় প্রচুর ঘাটতি রয়েছে নানান সেক্টরে।
এই সরকার ব্যর্থ না হোক , সেই কামনা করি । তবে অন্যায় কোন কিছুও সমর্থন করবো না ।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:৪০