somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নির্বাচকদের নিয়ে কিছু যৌক্তিক কথা !

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

* ১৯৯৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের নির্বাচকরা মিনহাজুল আবেদীনকে দলে রাখেননি। নিয়মের বাইরে গিয়ে বোর্ড তাঁকে দলভুক্ত করে। ফল, বিশ্বকাপে মিনহাজুলের দারুণ পারফরম্যান্স। বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম জয়ের নায়ক মিনহাজুল।
* ২০০০ সালে অভিষেক টেস্ট। দল থেকে বাদ দেওয়া হলো হাবিবুল বাশারকে। সারা দেশের মানুষের ক্ষোভ-বিক্ষোভ আর মিডিয়ার শক্ত ভূমিকায় হাবিবুল বাশার দলে। বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসের প্রথম ফিফটি এল তাঁর ব্যাটে। তাঁর কাছ থেকেই জানা গেল, টেস্ট ক্রিকেটে ব্যাটিং এমন হাতি-ঘোড়া কিছু নয়। খেলা যায়। বিপক্ষ বোলারদের মারাও যায়।
* ২০১১ বিশ্বকাপ দল। এবার নির্বাচকদের শিকার মাশরাফি। এবারও ক্ষোভ-বিক্ষোভ। কে জানে, হয়তো তাতে দলে ঢুকে যাবেন তিনি। এবং ইতিহাস মাথায় রাখলে বলেই দেওয়া যায় তিনিই সম্ভাব্য নায়ক।

১৯৯৯ সালের শেষভাগ। এডি বারলো এসেছেন বাংলাদেশ দলের কোচ হয়ে। গর্ডন গ্রিনিজ মাত্র গেছেন, তাঁর জায়গায় সে রকম মাপের তারকাদের কারো কারো বাংলাদেশ দলের কোচ হয়ে আসার কথা শোনা যাচ্ছিল, তাঁর জায়গায় কিনা অজ্ঞাতকুলশীল এডি বারলো! বিস্ময়কর সিদ্ধান্ত। ইন্টারনেট ঘেঁটে জানা গেল, তিনি নিষিদ্ধ যুগের আগে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে অল্পবিস্তর খেলেছেন, কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে তাঁর পরিচয় যতটা না সাবেক টেস্ট ক্রিকেটার, তার চেয়ে বেশি ক্রিকেট গবেষক। তবু ইন্টারনেটের এহেন তথ্যে মন ভরে না। দুই-চারটা টেস্ট খেলে এমন কী ক্রিকেট গবেষক হয়ে যাওয়া যায়! আর তা ছাড়া ক্রিকেট তো ল্যাবরেটরির বিষয় নয়, মাঠের মুখোমুখি লড়াই, সেখানে এসব রিসার্চ-ওয়ার্কার দিয়ে কী হবে! বিকেএসপিতে প্রথম দিন কথা বলার সময় একেকটা প্রশ্নে একেকটা করে ভুল ভাঙল। মনে হলো, সত্যিই তো, কোচ তো আসলে গবেষকই হবে। ক্রিকেটে সেটা হয়নি বলেই পুরোপুরি কোচের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি। আর তাই মাঝখানে নানান পদের, নানান জাতের লোকজন ঝামেলা তৈরি করছে। বারলো অনেক কিছু বলেছিলেন, তাঁর ব্যক্তিগত অনেক মতামতের সঙ্গে অনেকে একমত হবেন না, কিন্তু বাংলাদেশে ক্রিকেট দল নির্বাচনের সময় এলেই দেখি স্বর্গীয় এডি বারলোর একটা কথা কত প্রাসঙ্গিক। নির্বাচকদের নিয়ে বারলো বলছিলেন, ‘দেখো ফুটবলের মতো খেলায় একজন কোচই কিন্তু নির্বাচক, সে-ই ঠিক করে তার দলে কারা খেলবে না খেলবে! কারা থাকবে না থাকবে! ক্রিকেটে দল চূড়ান্ত করার জন্য আছে কয়েকজন নির্বাচক। তারা কাজটা কী করে? দলে যে ১৪ জন খেলোয়াড় নির্বাচন করা হয়, তার মধ্যে ১০-১১ জন থাকে অটোম্যাটিক চয়েজ, এদের সাধারণ যেকোনো লোকই দলে নেবে। বাকি যে তিনজন, তাদের নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আলোচনা করে তারা এবং দেখা যায় সেই খেলোয়াড়দের বেশির ভাগই একাদশে খেলে না আর খেললেও তাদের খুব বেশি ভূমিকা থাকে না।’ আমাদের নির্বাচকদের কেউ বিষয়টা এভাবে ভাবেন কি না জানি না, কিন্তু মাঝেমধ্যে মনে হয় ভাবেন! না হলে কেন তাঁরা ১৯৯৯ সালে সেই খেলোয়াড়কে বাদ দেন, যিনি পরে গিয়ে বিশ্বকাপে দলের সেরা পারফরমার হয়ে যান! কিংবা অভিষেক টেস্টে কিভাবে হাবিবুল বাশার বাদ পড়েন, যিনি পড়ে বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসের সফলতম ব্যাটসম্যান হয়ে যান! একবার মোহাম্মদ রফিকের ক্ষেত্রে কোনো গবেষণা ছাড়াই অদ্ভুত একটা গবেষণালব্ধ ফলে পৌঁছে গেলেন নির্বাচকরা। রফিক বড় দৈর্ঘ্যরে ম্যাচে মানে টেস্টে খেলার উপযুক্ত নন, কারণ তাঁর বৈচিত্র্য নেই। কাজেই রফিক কয়েক বছর শুধু ওয়ানডে খেললেন, তারপর কিভাবে কিভাবে যেন একটা সুযোগ পেলেন, সুযোগ পাওয়ার পরের টেস্টেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যান অব দ্য ম্যাচ।
আমরা সবসময়ই নিয়মের পক্ষে থাকতে চাই, নির্বাচকরা দল করবেন, সেই দলই মাঠে খেলবে এটাই নিয়ম। কিন্তু নিয়মটা টিকিয়ে রাখার দায়টা তাঁদেরই সবচেয়ে বেশি, যাঁরা দায়িত্বটা পালন করেন। সেই নিয়মই পৃথিবীতে টিকে থাকে, যে নিয়মটা প্রমাণ করে যে এর ফলে সঠিক এবং লাভজনক কাজটা হচ্ছে। যদি প্রমাণিত হয় যে নিয়মের ফলে বরং সুবিধার চেয়ে সমস্যা বেশি হচ্ছে, তখন নিয়মটার অস্তিত্বই প্রশ্নবিদ্ধ হয়। আমাদের নির্বাচকরা বারবার ভুল করে তাঁদের স্বাধীনতা অক্ষুণœ থাকার বিষয়টাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছেন এবং এখনো ফেলে চলেছেন।
বাংলাদেশের ক্রিকেটে কিছু হাওয়াই কথা হঠাৎ হঠাৎ খুব বাজার পেয়ে যায়। ইদানীং যেমন একটা কথা খুব ছড়িয়ে পড়েছে, বাংলাদেশের ক্রিকেট কি আর এখন সেই জায়গায় আছে যে ইনজুরিগ্রস্ত খেলোয়াড়কে দলে নিতে হবে? ভাবটা এমন যে ক্রিকেটে কখনো কখনো ইনজুরি আক্রান্ত খেলোয়াড়কে দলে রাখার নিয়ম ছিল, এখন নেই। সত্যিটা হলো, ইনজুরিতে পড়া খেলোয়াড়কে কখনোই দলে রাখার সুযোগ নেই। সোজা ভাষায়, শরীর খারাপ থাকলে যেমন আপনি কাজ করতে পারেন না, তেমনি ইনজুরি থাকলে একজন খেলতে পারবে না। কিন্তু যদি দেখা যায় সে খেলতে পারবে বা খেলার সম্ভাবনা আছে এবং সে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়, তখন ইনজুরির দোহাই দেওয়াটা একটা অকারণ অজুহাত। মাশরাফির বিষয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে কারণ মাশরাফি নিজে বলছেন তিনি বিশ্বকাপের আগে সেরে উঠবেন। এসব ক্ষেত্রে খেলোয়াড়ের চেয়ে ফিজিওর কথা বেশি বিশ্বাস করতে হয়। খটকাটা লাগে তখন, যখন দেখা যায় ফিজিও এক মাসেরও বেশি সময় আগে ঘোষণা করে দিচ্ছেন যে মাশরাফি খেলতে পারবে না। শরীরবৃত্তীয় কিছু নিয়ম আছে, সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কিন্তু নিয়মের কিছু ব্যতিক্রমও আছে। মাশরাফি তেমনই ব্যতিক্রম। হাঁটুতে ছয়টি অস্ত্রোপচার করিয়ে যিনি দিব্যি বল করে যেতে পারেন, সেই তিনি দৌড়াচ্ছেন, ব্যাট করছেন, ছোট রান-আপে বলও করছেন এবং এক মাসও বাকি; তখন এমন রিপোর্ট প্রশ্ন তৈরি করে। সেই প্রশ্নের উত্তর জানতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে সত্যিই ডাল মে কুচ কালা! কারণ ফিজিও সরাসরি সংবাদমাধ্যমকে বলছেন, ‘সে খেলতে পারবে না আমি এ রকম কিছু বলিনি। তোমাদের ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে।’ কেন ভুল তথ্য দেওয়া হলো এবং ভুল তথ্য দিয়ে আবার কেন মাছের মায়ের পুত্রশোকের মতো মাশরাফির জন্য নির্বাচকরা মায়াকান্না কাঁদছেন, সেই প্রশ্নের কোনো উত্তর মিলছে না। এত যখন দরদ, তখন কেন তাঁকে ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দলের সঙ্গে রাখা হলো না (ওই তারিখ পর্যন্ত চাইলে এক-দুজন বেশি খেলোয়াড় তালিকায় রাখা যায়), সে পর্যন্ত সময় আমরা নিতেই পারতাম আর তত দিনে সন্দেহ যা আছে তার সব দূরও হয়ে যেত! একদিকে তাঁর জন্য কান্না, অন্যদিকে দরজা শক্ত খিল দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া-এই লুকোচুরি প্রশ্নের জন্ম দেয়। প্রধান নির্বাচক আবার বলছেন, মাশরাফি ফিট হলে বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ এখনো আছে। এটাও বিস্ময়কর বক্তব্য। কারণ এখন দলে কাউকে ঢোকাতে হলে এই ১৫ জনের একজনকে ইনজুরিতে পড়তে হবে। ধরা যাক, মাশরাফি ইনজুরি থেকে সেরে উঠলেন, তখন কি নির্বাচকরা প্রার্থনায় বসবেন যে অমুক যেন ইনজুরিতে পড়ে! তখন যদি একজন ব্যাটসম্যান ইনজুরিতে পড়েন, তাহলে কী হবে? ব্যাটসম্যান হিসেবে মাশরাফিকে দলে ঢোকানো হবে? একটা প্রবাদ মনে পড়ছে। কারা যেন জলঘোলা না করে খেতে পারে না।
মাশরাফির অদ্ভুতুড়ে অধ্যায় বাদ দিলে বিশ্বকাপে আরেকজন ক্রিকেটারকে মিস করতে পারে বাংলাদেশ। অলক কাপালি। ব্যাটিং পাওয়ার প্লে আর বোলিং বৈচিত্র্যের জন্য অলককে রাখলে দারুণ হতো। কিন্তু নির্বাচকদের প্রায় মুখস্থ দলে অলকের জায়গা নেই, তবে তাঁর জন্যও আফসোস আছে, ‘প্রায় দুই বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নেই। এখন বিশ্বকাপে হঠাৎ...কী আর করা যাবে!’ শুনে এক সাবেক জাতীয় ক্রিকেটার হাসতে হাসতে বলছিলেন, ভাই ওকে দলে না নিলে ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলবে কী করে? সে তো আর নিজে একটা দল বানিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলে ফেলতে পারে না!
তা যা-ই হোক, এবার নতুন একটা নির্বাচনী শিক্ষাও হলো আমাদের। আমরা জানলাম, কাউকে দলে না নেওয়ার যুক্তি হলো সে অনেক দিন ধরে দলে নেই!

কালের কণ্ঠ
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×