গ্রামের ফসলের মাঠগুলো এ সময় খালি থাকে, সেই খোলামাঠেই আয়োজন করা হয় ঘৌড়দৌড় প্রতিযোগিতা । ২০-৩০ ঘোড়া এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার একটা অমানবিক বিষয় আছে। ঘোড়াদৌড়ের সময় আট থেকে দশ বছরের শিশুদের ঘোড়ার সাওয়ার করা হয়। অনেকটা সেই উটের জকির মত। অনেক বাচ্চা ঘোড়া থেকে পড়ে বড় ধরনের ব্যথা পেতে দেখেছি। মেলা অয়োজক কমিটি বিজয়ীদের মধ্যে ১ম ২য় ৩য় পুরস্কার তুলে দেন। মেলায় বাশ,মাটি, কাঠের তৈরি খেলনার পাশাপাশি বিভিন্ন তৈজসপত্রও পাওয়া যায়। এছাড়া কসমেটিক্স, নানা রকম মিষ্টি, কাঠের আসবাবপত্রও পাওয়া যায়।
একসময় জুয়া খেলাও ছিল এই মেলার অন্যতম একটি আকর্ষণ,এবার প্রশানের হস্তক্ষেপে জুয়া বন্দ হয়েছে।তবে জুয়ার মত ছোটখাটো কিছু আয়োজন রয়ে গেছে।
সন্ধ্যার পর শুরু হয় ঐতিহ্যবাহী জারী গানের আসর। এই আয়োজন তিনদিন ব্যাপি হয়। নড়াইল জেলায় এমনিতেই অনেক গুনি বাউল শিল্পিদের জন্মস্থান। বিজয় সরকার,মোসলেম বয়াতি তাদের মধ্যে অন্যতম। উনাদের কিছু শিষ্য এখনো জারি গানের ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছেন। রাত দশটার পর শুরু হয় জারিগান, সারারাত ধরে চলতে থাকে জারিগানের আসর। গ্রামের পুরুষ মহিলারা সারারাত উপভোগ করে এই জারিগান। কয়েকশত বছরের পুরানো ঐতিহ্যবাহী এই মেলাকে কেন্দ্র করে গ্রামবাসীর মধ্য আনন্দের স্রোত বয়ে যায়। গ্রামের বাচ্চারা কয়েকমাস আগে থেকে মেলার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে। ছোট বেলায় আমরা কয়েকমাস আগে থেকেই টাকা জমাতাম মেলার জন্য। মেলা উপলক্ষে দুরদুরন্ত থেকে আত্মীয়স্বজনরা আশপাশের গ্রামের বিভিন্নবাড়িতে এসে ভিড় জমায়। প্রত্যেক বাড়িতেই ঈদের মতই উৎসবের আবহ তৈরি হয়। যাদের পুকুর আছে তারা জাল দিয়ে পুকুর থেকে বড় মাছটি ধরেন। ঈদের মত গ্রামে গরু জবাই হয়। মেলা উপলক্ষে গ্রামের বাচ্চারা ঈদের সেলামীর মতই বড়দের কাছ থেকে কিছু টাকা পেয়ে থাকে। মানে প্রকৃত উৎসব বলতে যা বোঝায় তার সব অনুসঙ্গই আছে এ মেলায় আমাদের গ্রামের এই মেলায়। আগামীতে সকলকে নিমন্ত্রন আমাদের এই বৈশাখী উৎসবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৪:২১