গতকাল দুপুর ৩টার দিকে হঠাৎ করেই আমার বাসার কলিংবেল বেজে উঠলো। দরজা খুলে দেখলাম চিকনা মত একলোক দাড়িয়ে আছে, চোখে চশমা, পায়ে কেডস হাতে বিশাল বড় বড় দুইটা কাটুন। জিজ্ঞাসা করলাম কি চাই? লোকটার উওর দিল, আপনাদের বাসায় মালের অর্ডার আছে বলে বিশাল একটি কাটুন ধরিয়ে চাইলো। আমি বললাম কিসের অর্ডার? এরমধ্যে আমার বউ দরজার কাছে এসে হাজির। আমার বউ বললো এটাইতো সেই লোক যে কয়েকদিন আগে জোর করে বাসার মধ্যে ঢুকে পড়েছিল এবং বলেছিল কার্ড করতে এসেছি। আরো বলেছিল আপনাদের আশেপাশের সব বাসার কার্ড করা শেষ,আপনার নাম বলেন,মোবাইল নাম্বার বলেন। আমার বউয়ের তখন সন্দেহ হয়েছিল,তাই দরজা খুলে ব্যাপক চিল্লাচিল্লি শুরু করেছিল, এবং তখন বাধ্য হয়েই লোকটি বেরিয়ে গিয়েছিল। যা কয়েকদিন আগেই আমাকে জানিয়েছিল।
লোকটি বললো এই বাসায় শাহনাজ পারভিন থাকে না? আমি তখন লোককে বাড়িওয়ালার বাসা দেখিয়ে দিয়ে বললাম ওই বাসায় যান ওখানে থাকতে পারে বলে দরজা আটকিয়ে দিলাম। মনে মনে বললাম, এবার বুঝবা বাছাধন, কত চালে কত মুড়ি। কিছুক্ষণের মধ্যেই শুনলাম বাড়িওয়ালা আন্টি বাঘিনীর গলায় জেরা করছেন কিসের অর্ডার আমিতো কোন অর্ডার দেইনি, এইলোককে কে ঢুকতে দিয়েছে?এই দারোয়ান কোথায়?এরই মধ্যে দারোয়ানের আগমন, দারোয়ান বললো আমিতো দরজা লাগিয়ে দিয়ে দোতলার খালিবাসাটা পরিষ্কার করছিলাম তখন কেউ বের হওয়ার সময় দরজা খুলে রেখে গেছে সেই সুযোগে এইলোক ঢুকে পড়েছে। আমি তখন আগুনে ঘি ঢেলে দেওয়ার উদ্দেশ্য নিচে নামলাম এবং বললাম গত বুধবার এইলোক জোর করে মিথ্যা কথা বলে আমার বাসায় ঢুকে পড়েছিল। লোকটি তখন আমাকে রীতিমত হুমকি দিতে লাগলো, নিচে আসেন আপনাকে দেখাচ্ছি জোর করে ঢুকা কাকে বলে।
আন্টি চিৎকারে আশপাশের মানুষ জড় হয়ে গেল। এলাকার সিকিউরিটি গার্ডরাও হাজির। সেই ফেরিওয়ালা তখন বিভিন্নজনকে ফোন করতে লাগলো কিন্তু একঘণ্টা পার হয়ে গেলেও তাকে বাঁচাতে কেউই আসলো না। আন্টি থানায় ফোন দিলেন। দশ মিনিটের মধ্য পুলিশের ওসি হাজির। লোকটি নানারকম ইনিয়ে বানিয়ে পুলিশকে মিথ্যা কথা বলতে লাগলো। আমার পাশের ফ্লাটের মহিলা পুলিশকে জানালো ওনার বাসায়ও এইলোক জোর করে ঢুকে পড়েছিল উনি ভয়ে একপ্যাকেট চানাচুর এবং এক প্যাকেট মাংশের মশলা কিনেছেন।
শুরু হয়ে গেলে পুলিশের উওম মধ্যম,গরমগরম চড়, কিল, ঘুসি। পকেট সার্চ করে কিছু টাকা পয়সার পাশাপাশি একটি মলমের কৌটাও পাওয়া গেল। কাটুনের মধ্যে চানাচুর, নুডুলস,চকলেট, মশলার পাশাপাশি অনেকগুলো স্পেও আবিষ্কার করলো পুলিশ । এরই মধ্য লোকটা চেয়েও তিনগুণ মোটা সাইজের এক মহিলার আগমন। মহিলাটি বেশভূষা বেশ ভালই, চুলে কালার করা। মহিলা হাওমাউ করে কাঁদতে লাগলো আমার স্বামীরে ছাইড়া দেন। পুলিশের সন্দেহ আরো বেড়ে গেল।ওসি বললো চল তোদের দুইটারে থানায় নিয়ে যাই। অতঃপর দুজনকেই পুলিশ ধরে নিয়ে গেল। এরপরের ঘটনা আপাতত জানা নেই, পুলিশ আটকে রেখেছে নাকি ছেড়ে দিয়েছে?
ঘটনাটি শেয়ার করার উদ্দেশ্য হচ্ছে সবাইকে সচেতন করা। আমার বউয়ের মত অনেক মহিলাই দিনের বেলায় একা বাসায় থাকেন। এ ধরনের প্রতারকরা দুপুরবেলা বাসার বিভিন্ন মালামাল বিক্রি করার কথা বলে সুযোগ বুঝে চোখে মলম বা স্পে দিয়ে অজ্ঞান করে বাসার দামী মালামাল লুটে নিয়ে যায়। আশাকরি এই ঘটনা জানার পর সাবধান থাকবেন।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ১০:৩৮