চৌকাঠ উপন্যাসে দেখানো হয়েছে নোমান চৌধুরী ধনী,দয়ালু এবং নিঃসঙ্গ একজন মানুষ। দুটি ছেলে সায়ান এবং আয়ান দেশের বাইরে থাকেন। স্ত্রীর মৃত্যুর পর নোমান চৌধুরী একা হয়ে পড়েন। উনার দুঃসম্পর্কের আত্মীয় আজিজ সাহেব সংসারে টানাপোড়নের কারণে উনার বাড়িতেই পরিবারসহ আশ্রিত। আজিজ সাহেব একছেলে দুই মেয়ে, আজিজ সাহেব মানুষ হিসেবে মোটেই সুবিধের নন,একটা ছোট চাকুরী করতেন, টানাপোড়নের সংসার, একসময় ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে আজিজ সাহেবের চাকুরী চলে যায়। এরপর আজিজ সাহেবের ছেলে অয়নের টিউশনির টাকায় তাদের সংসারের খরচ চলে । আজিজ সাহেবের তিনটি ছেলে মেয়েই খুবই মেধাবী।অয়ন বুয়েটের স্টুডেন্ট, দুই মেয়ে নিশি আর মিতুল। নিশির পড়াশুনায় খুব বেশি মন নেই, নিশির ধ্যান জ্ঞান নাচ শেখায়। ছোটমেয়ে মিতুলও পড়াশুনায় খুব ভাল। নোমান চৌধুরী সাহেব আজিজ সাহেবের এই তিনটি ছেলেমেয়েকে খুবই ভালবাসেন। আজিজ সাহেবের স্ত্রী নাজমা বেগম ছেলেমেয়েদের পড়াশুনার ব্যাপারে খুবই সিরিয়াস। তিনি চান ছেলে অয়ন ইনজিনিয়ার হয়ে সংসারের হাল ধরুক। অয়ন পড়াশুনার ভাল হলেও অয়নের ইচ্ছা লেখক হওয়ার। নোমান চৌধুরী সাহেব অয়নকে লেখক হওয়ার ব্যাপারে উৎসাহ যোগাতেন, এমনকি নিজের টাকায়ও অয়নকে বই বের করে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু অয়ন সোনাদাদুর(নোমান চৌধুরী) টাকায় বই বের করতে রাজী হয়নি। অয়ন বাংলাবাজারে গিয়ে প্রকাশক খুঁজতে থাকে।
উপন্যাসের আর একটি চরিত্র হচ্ছে রহমত মিয়া। রহমত মিয়া নোমান চৌধুরীর খুবই বিশ্বস্ত ভৃত্য। নোমান সাহেবের ছেলেমেয়েরা দেশের বাইরে থাকায় রহমত মিয়াই চৌধুরী নোমান চৌধুরী সাহেবের দেখাশুনা করে । রহমত মিয়ার বাবা মুনসুর চোরা, একবার চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে, জেলের ভিতরেই কিছু খুনিদের হাতে নিহত হয়। রহমতের মা ছেলেকে চোরের ছেলে অপবাদ থেকে বাঁচাবার জন্য বগুড়া থেকে ময়মনসিংহ নানার বাড়ি নিয়ে আসেন। রহমতের মা তার নয় বছর বয়সে মারা যায়। এরপর রহমত বিভিন্ন বাড়ি কাজ করে নিজের পেট চালাতে থাকে। একসময় রহমত জরিনা সুন্দরীর প্রেমে পড়ে যায়। রহমত জরিনা সুন্দরীর বাবার কাছে জরিনাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। জরিনার বাবা রহমতকে বিশেষ স্নেহ করতেন তাই রহমতের প্রস্তাব মেনে নেয়। রহমতকে একটি দোকানও করে দেন তিনি। বেশ ভালই চলছিল রহমত এবং জরিনার সংসার,তাদের সংসারে মতি মিয়া নামের একটি ছেলের জন্ম হয়।কিন্তু দেড় বছরের মতিকে রেখে তার মা জরিনা চেয়ারম্যানের ছেলের সাথে পালিয়ে যায়।এরপর থেকে বাপ ছেলে মিলেই সেই দোকান চালাতো,রহমত মিয়া আর বিয়ে করেনি ছেলের কথা ভেবে। ছেলে একটু বড় হলে ছেলেকে দোকান বুঝিয়ে দিয়ে রহমত মিয়া চলে আসেন নোমান চৌধুরী সাহেবের দেখাশোনার কাজে।
ওদিকে আজিজ সাহেবের ছেলে অয়ন বুয়েটের ক্লাশ বাদ দিয়ে হন্যে হয়ে তার উপন্যাসের প্রকাশক খুঁজতে থাকে। কিন্তু কেউই নতুন লেখকের উপন্যাস প্রকাশ করতে রাজী নয়। অয়ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বিশিষ্ট উপন্যাসিক মনসুর চৌধুরীর কাছে তার উপন্যাসের ফটোকপি পাঠায়। মনসুর চৌধুরী সাহেব অয়নের উপন্যাস পড়ে মুগ্ধ হন, এবং একজন প্রকাশককে সুপারিশ করেন নতুন লেখক অয়নের বই প্রকাশের জন্য।
অয়ন একসময় বুঝতে পারে তার জন্য লেখক হতে চাওয়ার বিলাসিতা মানায় না। অয়ন ক্লাসে যায় কিন্তু ততদিনে অনেক দেরী হয়ে গেছে তার সহপাঠীদের চেয়ে সে অনেক পিছিয়ে পড়েছে। অনেকদিনের অনিয়মের ফলে অয়ন জন্ডিসে আক্রান্ত হয়ে খুবই অসুস্থ হয়ে পড়ে । ওদিকে বইমেলায় অয়নের বই খুবই ভাল চলছিল।
বইটির শেষ অংশে রহমত মিয়া নোমান চৌধুরী কাছ থেকে জানতে পারেন মুনসুর চোরা নামে এক ব্যক্তি নোমান চৌধুরীর শ্বশুর বাড়িতে চুরি করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়ে। নোমান চৌধুরীর শ্বশুরবাড়ির লোকেরা তাকে জেলে দিয়েছিল তার পরের কাহিনী নোমান চৌধুরী জানেন না। তখন রহমত বুঝতে পারে নোমান চৌধুরীর বর্ণিত মনসুর চোরাই তার বাবা। এই বিষয় জানার পর রহমত মিয়া নিজেই নিজের বুকে ছুরি চালিয়ে আত্মহত্যা করে।
উপন্যাসের কাহিনী এখানেই শেষ। হুমায়ুন আহম্মেদের স্ত্রীর কাছ থেকে যেমন আশা করেছিলাম উপন্যাসটি ততটাই ভাল লেগেছে আমার কাছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মার্চ, ২০১৮ সকাল ১০:১৯