সে সময় এত কমে দামে জিনিষ পত্র পাওয়া গেলেও উনাদের আলোচনা থেকে বুঝলাম মানুষ খুব বেশি সুখে ছিল না। একবাড়িতে ভাত রান্না হলে আশেপাশের গরিব মানুষেরা ভাতের ফেন(মাড়) নেওয়ার জন্য বসে থাকতো। পুরাতন কাপড় নেওয়ার জন্য গরিব মানুষ একবছর আগে থেকে সিরিয়াল দিয়ে রাখতো,বলতো তোমার এই শার্ট টি যেদিন পুরাতন হবে সেদিন আমাকে দেবে, অন্য কাউকে দিয়ে দিও না কিন্তু তাই আগেভাগেই বলে রাখলাম।।একটাকায় ৫কেজি চাউল পাওয়া গেলেও সেই টাকাটাই ছিল অনেকের কাছেই ছিল অনেক বেশি, তাই মানুষ ক্ষুধার তাড়নায় যবের ছাতু খেতো। এখন আমরা মজা করে খিচুড়ি খাই,সাথে ডিম ভাজি গরুর মাংস ভুনা, বেগুন ভাজি আরো কত কি! তখনকার মানুষ খিচুড়ি খেতো শুধুমাত্র খাবারের খরচ কমানোর জন্য। তখনকার সম্পদশালী মানুষ হচ্ছে যাদের জমি ছিল, গোয়ালে গরু ছিল, পুকুরে মাছ ছিল তারাই। এইসব জমিওয়ালাদের বাড়িতে অনেকেই পেটে ভাতে বছরের পর বছর কাজ করতো।
এই পুরো আলোচনাটাই সেই দুজন মুরব্বী মানুষের কাছ থেকে শোনা। আমি শুধুমাত্র শ্রোতা। এই ঘটনাগুলো শায়েস্তা খাঁর আমলের প্রায় তিনশো বছর পরের ঘটনা। এই ঘটনাগুলো শুনে আমার কিছু উপলব্ধি হল। যেমন শায়েস্তার খাঁ আমলে যতই এক টাকায় আট মণ চাউল পাওয়া যাক, সেই সময়ের প্রেক্ষিতে ওটাই ছিল অনেক বেশি। সেই সময়ের মানুষ আমাদের চেয়ে অনেক কষ্টে ছিল। এখন পুরাতন কাপড় নেওয়ার জন্য কোন লাইন নেই, ভাতের ফেন খাওয়ার জন্য মানুষ অন্যের বাড়িতে বসে থাকে না,এখন আর কেউ যবের ছাতু খায় না,এখন শুধুমাত্র পেটেভাতে কেউ কারো বাড়িতে বছরের পর বছর কাজ করে না ।
এখন যে দরিদ্র মানুষ নেই তা নয়, তবে সেইসব দিনের চেয়ে তুলনামূলকভাবে অনেক কম। তবে সেদিনের মানুষ আমাদের মত যান্ত্রিক ছিল না একে অন্যের প্রতি ভালবাসা ছিল,মায়ামমতা অনেক বেশী ছিল। তখনকার মানুষ প্রাণ খুলে হাসতো, যেটা আমাদের মত মোবাইল জেনারেশনের মধ্যে অনুপস্থিত
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মার্চ, ২০১৮ সকাল ১০:৪৭