আমার চাচা(বাবার চাচাতো ভাই) একজন শক্ত সামর্থ্য পুরুষ ছিলেন। একদিন রাতের বেলা রাস্তাদিয়ে বাড়ি ফেরার সময় উনাকে গোখরা সাপে কামড়ায়। উনি রাতের অন্ধকারে সাপটাকে দেখতে পাননি। ভেবেছিলেন উনাকে চিকা বা ইদুরে কামড়িয়েছে। উনি তাই কামড়ানো জায়গাটি বাধাও প্রয়োজন মনে করেন নি। একঘণ্টা পর উনার প্রচণ্ড পানির পিপাসা পায় উনি নিজেই দুতিন গ্লাস পানি খেয়ে ফেলেন। ততক্ষণে সাপের বিষ সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে, শরীরে জ্বালা যন্ত্রণা শুরু হয়ে গিয়েছে। এরপর চাচা ঘটনাটি দাদীকে(উনার মাকে) বলেন। দাদী ঘটনা শুনে এবং কামড়ের দাগ দেখে বুঝে ফেলেন ওটা সাপের কামড়। তাড়াতাড়ি একটা কাপড় দিয়ে পায়ের হাটুর একটু নিচে বেধে ফেলেন। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে গেছে, সেই রাতেই চাচাকে ওঝার বাড়িতে নেওয়া হয়। ওঝা নানারকম তন্ত্রমন্ত্র পড়ে ফু দিতে থাকেন। কিন্তু কোন কিছুতেই কোন লাভ হয় না। ওঝার বাড়িতেই চাচা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। মাত্র ৫-৬ ঘন্টার একজন শক্ত সামর্থ্য মানুষের মৃত্যু হয়।
গ্রামের রাস্তাঘাট এখন পাকা হয়ে গেছে, গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে এখন বৈদ্যুতিক বাতি জ্বলছে, গ্রামের ছেলেদের হাতে এখন মোবাইলফোন, ইন্টারনেট। সাপও এখন বিলুপ্ত পায় প্রাণী। তবে গ্রামের ঝোপঝাড়ে কিছু সাপ রয়ে গেছে। কিছুদিন আগে শুনলাম গ্রামের একটা ছেলেকে সাপে কামড়িয়েছে। তাকে যথারীতি ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং সে ওঝার ঝাড়ফুকে ভাল হয়ে গেছে। পৃথিবী উন্নত হলেও সাপে কামড়ানো রোগীর ব্যাপারে এখনো সেই আদিযুগের ধ্যানধারনাই রয়ে গেছে।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মার্চ, ২০১৮ সকাল ১০:০১