(মূল লেখক:- ডঃ স্টিফেন কার লিওন)
আমি মূল লেখাটির ভাবার্থ যথাসম্ভব সঠিক রেখে অনুবাদ করার চেষ্টা করেছি যদিও অনুবাদের কারনে কিছু কিছু যায়গায় কিছু শব্দের এদিক সেদিক হয়েছে। লেখাটি অনেক বড় হওয়ায় আমি দুই অংশে ভাগ করেছি। আজ প্রথম অংশ দিলাম পরবর্তী পর্বে বাকিটা লিখব।)
"কেনো ইহুদীরা এত বুদ্ধিমান হয়?" ইসরাইলের কয়েকটি হাসপাতালে তিন বছর মধ্যবর্তীকালীন কাজ করার কারনেই বিষয়টি নিয়ে গবেষনা করার চিন্তা আমার মাথায় আসে।
এতে অমত করার কোনই সুযোগ নেই যে, ইহুদীরা ইন্জিনিয়ারিং, সংগীত, জ্ঞ্যান বিজ্ঞান সহ জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই অন্যদের থেকে অনেক অনেক এগিয়ে এবং বিশেষ করে ব্যবসার ক্ষেত্রে। প্রসাধনী, খাদ্য, অস্ত্র, ফ্যাশন, ফিল্ম ইন্ডাষ্ট্রি ইত্যাদি সহ (হলিউড) পৃথিবীর প্রায় সত্তর ভাগের কাছাকাছি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এদের দখলে।
দ্বিতীয় বছর আমি যখন ক্যালিফোর্নিয়া ফেরত যাচ্ছিলাম তখন এই চিন্তা আমার মাথায় আসে যে, স্রষ্টা কেনো তাদেরকে এই বিশেষ ক্ষমতা(বুদ্ধিমত্তা) দিয়ে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। এটা কি নিতান্তই কোনো কাকতালীয় ব্যাপার নাকি ব্যাপারটা মনুষ্যসৃষ্ট? ফ্যাক্টরি থেকে যেমন বিভিন্ন জিনিস বানানো যায় তেমন করে কি বুদ্ধিমান ইহুদী বানানো সম্ভব? সকল তথ্য উপাত্ত সঠিক ভাবে সংগ্রহ করে আমার গবেষনা শেষ করতে প্রায় আট বছর সময় লেগে যায়, যেমন তাদের খাদ্যাভাস, সংস্কৃতি, ধর্ম, গর্ভাবস্থার প্রস্তুতি ইত্যাদি এবং পরবর্তীতে এসব আমি অন্যান্য জাতির সাথে তুলনা করব।
প্রথমেই শুরু করা যাক মহিলাদের গর্ভাবস্থার প্রাকপ্রস্তুতি দিয়ে। ইস্রাইলে প্রথমেই যে জিনিসটা আমার নজড়ে আসে সেটা হচ্ছে গর্ভবতী মায়েরা সবসময় গান বাজনা এবং পিয়ানো বাজাবে এবং তাদের স্বামীদেরকে নিয়ে গানিতের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করবে। গর্ভবতী মহিলারা সবসময় তাদের সাথে গনিতের বই সাথে নিয়ে ঘুরে যেটা দেখে আমি সত্যিকার অর্থেই খুব আশ্চার্যিত হয়েছিলাম। এমনকি আমি নিজেও কয়েকবার তাদের গনিতের সমস্যা সমাধান করে দিয়েছিলাম। আমি একবার একজনকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে এটা কি তুমি তোমার গর্ভের সন্তানের জন্য করছো? তখন সে উত্তর দিয়েছিলো হ্যা এটা আমরা করি যাতে শিশু গর্ভে থাকা অবস্থা থেকেই প্রশিক্ষন নিতে পারে এবং পরবর্তীতে জন্মের পর আরো বেশি মেধাবী হয়ে বেড়ে উঠতে পারে। বাচ্চা প্রসবের আগ পর্যন্ত তারা তাদের এই গানিতিক সমস্যার সমাধান চালিয়ে যায়।
এর পরেই যে জিনিসটি আমি পর্যবেক্ষন করি সেটি হচ্ছে তাদের খাদ্যাভাস। গর্ভবতী মায়েরা আলমন্ড খেজুড় আর দুধ খেতে খুব ভালোবাসে। দুপুরের খাবারের তালিকায় থাকে রুটি এবং মাছ(মাথা ছাড়া), আলমন্ড এবং অন্যান্য বাদাম যুক্ত সালাদ। তারা বিশ্বাস করে যে মাছ হচ্ছে মস্তিষ্কে পুষ্টি সরবরাহ করে অপর দিকে মাছের মাথা মস্তিষ্কের জন্য খারাপ। এছাড়াও গর্ভবতী মহিলাদের কড লিভার খাওয়া ইহুদী সংস্কৃতির একটি অংশ।
আমি যখন রাতের খাবারের দাওয়াতে অংশ নিতাম তখন দেখতাম তারা সবসময় মাছ খেতে খুব পছন্দ করত এবং মাংশ পরিত্যাগ করত। তাদের বিশ্বাসমতে মাছ এবং মাংশ দুটি একসাথে খেলে তা শরিরের কোনো কাজে লাগে না। অপর দিকে সালাদ এবং বাদাম তাদের খাদ্য তালিকায় অবশ্যই থাকবে, বিশেষ করে আলমন্ড।
তারা যে কোনো প্রধান আহারের আগে ফল খাবে। তারা বিশ্বাস করে যে যদি প্রধান আহারের পরে ফল খাওয়া হয় তবে তা নিদ্রার উদ্রেগ ঘটাবে যা পাঠ গ্রহনের ক্ষেত্রে বাধার কারন হয়ে দাড়াবে।
ইস্রাইলে ধুমপান করা নিষিদ্ধ। যদি আপনি তাদের বাসার অতিথি হয়ে থাকেন তবে বাসার ভিতরে ধুমপান করা থেকে বিরত থাকবেন নাহলে তারা খুব বিনিতভাবে তাদের বাসার বাইরে গিয়ে ধুমপান করবার অনুরোধ জানাবে। ইসরাইলী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের মতে, ধুমপান মস্তিষ্কের কোষগুলোকে ধীরে ধীরে ধ্বংশ করে দেয় এবং শরীলের জ্বীন এবং ডিএনএ কে ক্ষতিগ্রস্থ করে ফলে বংশপরম্পরায় ত্রুটিযুক্ত মস্তিষ্কের কোষযুক্ত বাচ্চা জন্মগ্রহন করবে।(এখানে একটা জিনিস খেয়াল করবেন যে, পৃথিবীর বড় বড় সব সিগেরেটের কম্পানিগুলো কাদের সেটা আপনারা আশা করি ভালো করেই জানেন.....)
বাচ্চারা কি খাবার খাবে সেটা সবসময় তাদের পিতামাতা ঠিক করে দেয়। প্রথমে ফল খাবে এরপর প্রধান খাবার খাবে যেমন রুটি মাছ এর পর কড লিভারের তেল খাবে। আমার দেখা মতে প্রত্যেকটি ইহুদী বাচ্চারই সাধারনত তিনটি ভাষার উপর দখল থাকে - হিব্রু, আরবী এবং ইংরেজী। শিশুকাল থেকেই প্রত্যেকটি বাচ্চাকে ভায়োলিন এবং পিয়ানো বাজানোর প্রশিক্ষন দেওয়া হয়।
তারা বিশ্বাস করে এতে করে তাদের আইকিউ লেভেল এর বৃদ্ধি ঘটে এবং বাচ্চারা মেধাবী হয়ে বেড়ে উঠে। জিউস বিজ্ঞানীদের মতে, সঙ্গীতের কম্পন মস্তিষ্কের কোষগুলোকে উদ্দীপিত করে। একারনেই ইহুদীদের মাঝে এত মেধাবী মানুষ দেখা যায়।
ক্লাশ এক থেকে ছয় পর্যন্ত তাদেরকে গনিত এবং ব্যাবসাশিক্ষা শিখানো হয়। বিজ্ঞান তাদের এক নম্বর পছন্দের বিষয়। ইহুদি বাচ্চারা কিছু বিশেষ ক্রিয়ায় অংশগ্রহন করে যেমন, দৌড়, ধনুবিদ্যা এবং শুটিং। তারা মনে করে শুটিং এবং ধনুবিদ্যা তাদের মস্তিষ্ক্যকে সঠিক ভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষেত্রে সাহায্য করে।
উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান শিক্ষার উপর বিশেষ জোড় প্রদান করা হয়। এসময় তারা বিভিন্ন জিনিস বানানোর চেষ্টা করে থাকে এর মধ্যে সবধরনের প্রযেক্ট থাকে। যদিও তাদের বানানো কিছু কিছু জিনিস অনেক হাস্যকর এবং ব্যবহার অযোগ্য লাগতে পারে। কিন্তু সব কিছুতে গুরুত্বের সাথে মনোযোগ দেওয়া হয় বিশেষ করে যদি সেটা হয় যুদ্ধোপকরন, ঔষধ কিংব যন্ত্রবিজ্ঞান। যে সকল প্রকল্প বা ধারনাগুলো সফলতা পায় সেগুলোকে উচ্চবিদ্যাপিঠগুলোতে পাঠিয়ে দেওয়া হয় আরো ভালো ভাবে গবেষনা করবার জন্য। ------ (চলবে.......)
দ্বিতীয় পর্ব পড়তে Click Here
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ৩:৫৮