আজ ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬।আজ পিলখানা বিডিআর বিদ্রোহের দিন,গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ সালের এমন দিনে সকাল থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা পর্যন্ত এই ৩৬টি ঘণ্টায় দেশের এক কলঙ্কজনক অধ্যায় রচিত হয়,বাংঙালী জাতির সবচেয়ে গর্বের সেনাবাহিনীর ৫৭ জন মেধাবী অফিস্যারসহ ৭৪ জন মানুষের প্রাণ কেড়ে নেওয়া হয় নৃশংসতম হত্যযজ্ঞে মাধ্যমে ।সেই দিনের অনাকাংঙ্খিত ঘটে যাওয়া হত্যাযজ্ঞে ৩৬ ঘণ্টার প্রতিটি মুহূর্ত স্মরণ করে এখনও যেনো কেঁদে ওঠে পিলখানার মাটি-দেয়াল ও বাতাসে ভেঁসে কানে এসে পৌঁছায় সেনা অফিস্যারদের আত্মচিৎকার।
দেখি ফিরে সেই দিনে গিয়ে-কি হয়ে ছিলো ২৫ ফেব্রুয়ারি ;আজিকার দিনে পিলখানার ভিতরে!
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ সালের সকাল ৯টা ২৭ মিনিট। বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) সদরদফতর পিলখানা। দরবার হলে চলমান বার্ষিক দরবারে হঠাৎ বিডিআরের বিপথগামী কিছু সদস্য তাদের দাবি-দাওয়া আদায়ে ঢুকে পড়ে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। দাবি-দাওয়া আদায়ে তর্কের একপর্যায়ে বিদ্রোহীদের একজন বিডিআর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের বুকে আগ্নেয়াস্ত্র তাক করার পরপরই অন্য বিদ্রোহীরা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে দরবার হলে আগত সেনা কর্মকর্তাদের ওপর। এরপর তারা নারকীয় হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে। বিদ্রোহীদের ভয়ঙ্কর সব আগ্নেয়াস্ত্রের বুলেটের নির্মম আঘাতে নিথর হয়ে পড়ে জাতির মেধাবী সন্তানদের দেহ।পুরো পিলখানায় এক ভীতিকর বীভত্স পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। চারটি প্রবেশ গেট নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আশেপাশের এলাকায় গুলি ছুঁড়তে থাকে।
প্রায় ৩৬ ঘণ্টা ধরে নৃশংস ঘটনার ৫৭ জন মেধাবী সেনা কর্মকর্তা, দু’জন সেনা কর্মকর্তার স্ত্রী, ৯ জন বিডিআর সদস্য ও পাঁচজন বেসামরিক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়। পুরো পিলখানায় যেন রক্তস্রোতে নদী বয়ে যায়। কেবল হত্যাযজ্ঞেই থামেনি ঘাতকরা। বিদ্রোহী জওয়ানরা সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করে তাদের পরিবারকেও জিম্মি করে ফেলে।
সেদিন বিডিআরের বিদ্রোহী সদস্যরা পিলখানায় যে হত্যযজ্ঞ চালায়, তা বিশ্বের কোনো বাহিনীর বিদ্রোহের ইতিহাসে পাওয়া যায় না। তাদের হত্যাযজ্ঞের হাত থেকে রক্ষা পায়নি বিডিআর মহাপরিচালকের বাসার গৃহকর্মী, সবজি বিক্রেতা, রিকশা চালক, শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষও।
সাত বছর আগের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানা ও তার আশপাশে দু’দিন দু’রাত কাটানোর সেই দুঃসহ স্মৃতি এখনও তাড়া করে ফেরে বাংলাদেশে মানুষকে। নির্বিচার গুলি আর গ্রেনেডের শব্দ এখনও যেন কারো কানে বাজে।
বিচারের কাযর্ক্রম:- কি করে ভুলিবো তোমাদের ,ভুলিতে নাই পারি,তোমাদের কথা মনে হলে আজ ও নিরবে আমরা চোখ দিয়ে জল ফেলি,আমরা নিরব থাকবো না-তোমাদের হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই ফাঁসি:-
হত্যাযজ্ঞের পর ২৮ ফেব্রুয়ারি লালবাগ থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দু’টি মামলা দায়ের করা হয়। মামলার বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয় ২০১১ সালের ৫ জানুয়ারি। দীর্ঘ প্রায় দু’বছর বিচারিক কার্যক্রম শেষে ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর হত্যা মামলার রায় দেন পুরান ঢাকার আলিয়া মাদরাসার পাশে কেন্দ্রীয় কারাগার সংলগ্ন মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ড. মো. আখতারুজ্জামানের বিচারিক আদালত।
রায়ে তৎকালীন ডিএডি তৌহিদসহ ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড, বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টু ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা তোরাব আলীসহ ১৬১ জনকে যাবজ্জীবন ও বিভিন্ন মেয়াদে ২৬২ জনকে সাজা দেওয়া হয়। বেকসুর খালাস দেওয়া হয় ২৭১ জনকে। এছাড়া, বিচার প্রক্রিয়া চলাকালে মারা যান চারজন।
তবে, এ রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করে খালাস পান ২৭৭ জন। আবার এদের মধ্যে ৬৯ জন আসামির সাজা চেয়ে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। অন্যদিকে দণ্ডপ্রাপ্ত ৪১০ জন আসামির সাজা বাতিল চেয়ে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করেন তাদের আইনজীবীরা। এখন এসব ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি চলছে।
তবে একই ঘটনায় দায়ের করা বিস্ফোরক আইনের মামলাটি গত দুই বছর ধরে একই অবস্থায় রয়ে গেছে।
তখন কে ছিলো বাংলাদেশ সরকারে,
২০০৯ সালের নির্বাচনে আওয়ামীলিগ জয় লাভ করে সরকার গঠন করে। ২৫শে ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্রোহীদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করলে বিডিআর এর সদস্যদের একাংশ আত্মসমর্পণ করে। ২৬শে ফেব্রুয়ারি সকালে দেশের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত বিডিআর ক্যাম্পে উত্তেজনার খবর পাওয়া যায়। ঐদিন প্রধানমন্ত্রী জাতীর উদ্দেশ্যে ভাষণে, বিডিআরকে আবারও তাদের দাবি দাওয়া মেনে নেওয়ার আশ্বাস প্রদান করেন। ২৬শে ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় বিদ্রোহী বিডিআর এর সকল সদস্যগণ তাদের অস্ত্র জমা দেন এবং বাংলাদেশ পুলিশ বিডিআর সদর দপ্তরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
তথ্যসূত্র: বিডি নিউজ,ইত্তেফাক,উইকিপিডিয়া।।