somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাম্প্রদায়িকতা এবং আজকের মুসলিম বিশ্ব

০৯ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৫:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মুসলমান হিসেবে একটা বিষয় আমার কাছে খুব দৃষ্টি কটু মনে হয়। ফেসবুকে, এমনকি সরাসরিও অনেককে হিন্দুদের "মালাউনের বাচ্চা" বলে গালি দিতে শুনেছি। আমি মালাউন শব্দটার অর্থ জানিনা। আমার মতো অনেকেই হয়ত আছেন, যারা এর অর্থ জানেননা। কিন্তু গালি টা দেয়ার সময় বেশ জোর গলাতেই দেন।
হিন্দুদের মন্দির ভাঙ্গা, কক্সবাজারে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী দের উপর অত্যাচার করা- এরকম কাহিনী অনেক শুনেছি।
আমার প্রশ্ন হলো, গালাগাল দিয়ে আপনারা কি প্রমাণ করতে চান??? আপনারা একজন ঈমানদার ব্যক্তি? সত্যিকারের মুসলমান?? আপনারা আপনাদের ধর্মকে অনেক ভালোবাসেন??
যদি তেমনটাই ভেবে থাকেন, তবে আমি বলবো, আপনারা আসলে বোকা। কেনো জানেন??
আচ্ছা, কখনো কি ভেবে দেখেছেন, এসব কাজ করে আমরা আসলে আমাদের ধর্মকেই ছোট করছি??
কিভাবে??????
আমরা যখন কাউকে গালি দেই, বা তার ধর্মকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করি, তখন কিন্তু সেই মানুষটা আমাদের উপর ক্ষুব্ধ হয়। তারপর রেগে গিয়ে সেও আমার ধর্মকে গালি দিয়ে কথা বলে। এমনও হতে পারে, তার মুখের ভাষা আপনার মুখের ভাষার চাইতেও খারাপ। আপনি তখন কি করবেন?? কিভাবে ঠেকাবেন তাকে?? গায়ে হাত তুলবেন?? কেইস করে দিবেন তার নামে সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগে?? রাতের অন্ধকারে গোপনে গিয়ে তার ঘর জ্বালিয়ে দিবেন??? মন্দির ভেঙ্গে দিবেন??
আমি এসব করা মানে অন্য ধর্মাবলম্বী দের বুঝানো আমার ধর্মই আমাকে এসব করতে উৎসাহ দিয়েছে। কিন্তু আসলেই কি তাই-ই????
এসব করার আগে একবার ভেবে দেখবেন, তাকে আপনার ধর্ম নিয়ে নোংরা মন্তব্য করার সুযোগ কিন্তু আপনিই দিয়েছেন। সে নয়, পরোক্ষভাবে আপনি নিজেই আপনার ধর্ম টাকে অপমান করলেন।
আরেকটা ব্যাপার, ধর্ম ধর্ম করে করে যারা এসব গালাগাল, ভাংচুর, হত্যার সাথে লিপ্ত, তারা কি ধর্মের ফরয ও সুন্নত কাজ গুলো, যেমন সময় মত ৫ওয়াক্ত নামায পড়া, কুরান পড়া, রোযা রাখা, যাকাত দেয়া, হজ্জ পালন করা, ঘুষ আদান-প্রদান না করা, জিনা-ব্যভিচার না করা, মিথ্যা না বলা, মৃত মা বাবার কবর প্রতিদিন না হলেও সপ্তাহে একবার হলেও জিয়ারত করা- এসব নিষ্ঠার সাথে করছেন??
যদি করতেন, তবে গালিগালাজ করে নিজের আমলনামা নষ্ট করতেন না।
যদি মুসলিম হিসেবে ধর্মীয় অনুশাসন গুলো মেনে চলতে না পারেন, তবে আপনিই আপনার ধর্মকে অবহেলা করছেন। অর্থাৎ ছোট করছেন।
যেই মানুষ নিজেই তার নিজের ধর্মকে ছোট করে রাখে সেই মানুষ কিভাবে আশা করে অন্য ধর্মাবলম্বী তার ধর্মকে সম্মান করবে??
একটা হাদিসে পড়েছিলাম, নবীজী (সঃ) একবার দাঁড়িয়ে এক কাফেরের লাশকেও সালাম দিয়েছিলেন (উৎসটা মুখস্থ নেই)।আমাদের নবীজী কে ইহুদী কাফেররা অনেক কষ্ট দেয়া সত্ত্বেও যদি তিনি এই টুকু সম্মান দেখাতে পারেন, তবে আমরা কেনো এতো কাঁদা ছোঁড়াছুড়ি করি?? আমরা নিঃশ্চয় উনার চেয়েও বড় ইমানদার ব্যক্তি হয়ে উঠিনি??
আমার লেখা পড়ে হয়ত অনেকেই বলবেন, আমি অমুসলিমদের হয়ে দালালী করছি।
কিন্তু না, আমার নিজের কাছেও খুব কষ্ট লাগে যখন দেখি, অমুসলিম রা কেউ আমার ধর্মটাকে অপমান করে। ইসলাম ধর্মাবলম্বী দের অনেক অত্যাচার করে। সেই খারাপ লাগা থেকেই বলছি, অন্যকে অপমান করে নিজেকে অপমানের সুযোগ করে দেয়া উচিত নয়।
এখন হয়ত অনেকেই বলবেন, অমুসলিমরা রা তো সব সময় পাল্টা জবাবেই আমাদের ধর্মকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করেনা। অনেক সময় তো তারা নিজ থেকে এসব নোংরামি শুরু করে থাকে। হ্যাঁ, আমি আপনার সাথে একমত। কিন্তু আমার কথা হলো, তার ধর্মীয় শিক্ষা কেমন আমি জানিনা, তবে আমার ধর্ম তো আমাকে শিখায়নি অন্য ধর্মকে অপমান করতে?? যেখানে ইসলাম ধর্মে সরাসরি বলা আছে নিজের ধর্মকে মেনে চলতে, সে সাথে অন্য ধর্মকে সম্মান করতে, সেখানে আমি আপনি কে, এসব উগ্র আচরণ করার??? আমরা কখন কেমন আচরণ করবো, কেমন সিদ্ধান্ত নিব, কিভাবে চলবো, তার একটা গাইড লাইন হাদিস কুরানে দেয়াই আছে। সে অনুযায়ী চলুন না??
যদি বলেন, জিহাদের কথা, তবে আমি বলবো, জিহাদ আমাদের জন্য অবশ্যই ফরজ হয়ে গেছে। তবে যেভাবে আমরা করছি সেভাবে না। মুসলিম দেশ গুলোর দিকে তাকান। মুসলমান দের করুণ পরিণতি নিঃশ্চয় দেখতে পাচ্ছেন?? যেখানে আমার জাত ভাইয়েরা প্রতিটা মুহূর্ত জীবনটা কে হাতের মুঠোয় নিয়ে দিন পার করছে, রক্ত ঝরাচ্ছে, যেখানে কান পাতলে এখন আহাজারি শোনা যায়, সেখানে আমরা মুসলিম রা চিন্তা করি, কিভাবে লাখ টাকা থেকে কোটি টাকার পাহাড় বানানো যায়, কিভাবে ফ্যান ছেড়ে ঘরে এসির ব্যবস্থা করবো, শত টাকা নয়, হাজার টাকার ড্রেস কিনবো, মোজাইক করা নয়, টাইলস করা বাড়ি বানাবো, একটা নয় সমাজে দম্ভ নিয়ে চলার জন্য কয়েকটা জমির মালিক হবো, আর সুযোগ পেলে হয় বারে যাবো, না হয় রুমের ভেতরেই পর্ণ মুভি ছেড়ে দিয়ে নিজের চাহিদা মিটাবো। সেই মানুষ গুলাই আবার জিহাদ জিহাদ করে লাফাচ্ছি!!! কত অদ্ভুদ, তাই না!!!! অথচ আমাদের কি উচিত না সারা বিশ্বের সকল মুসলিমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সত্যিকার অর্থে জিহাদে ঝাঁপিয়ে পড়া??? কিন্তু আমরা তা করার সাহস কেউ রাখিনা। সাহস রাখি কেবল মূল্যহীন কাজ করে ঝামেলা বাড়াতে।
ভারতে হিন্দি সিরিয়াল গুলো কিন্তু তাদের ধর্মীয় কার্যক্রম গুলোকে তুলে ধরার মাধ্যমে সূক্ষ ভাবে ধর্ম প্রচার করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। শুধু কি তাই-ই?? এর পাশাপাশি তারা ইসলাম ধর্মটাকে terrorist হিসেবে তুলে ধরার আপ্রাণ চেষ্টায় থাকে।শুধু সিরিয়াল নয়, কিছু চলচিত্রতেও খারাপ হিসেবেই মুসল্মানদের রিপ্রেজেন্ট করা হয়। যেনো যত খারাপ মুসলান রা-ই!! "কেয়া পাতার নৌকো"- এই সিরিয়ালটা একটা সময় খুব দেখতাম। সেখানে বাংলাদেশী মুসলিম দের যেভাবে রিপ্রেজেন্ট করা হয়, তা দেখে আমার সত্যিই খুব খারাপ লেগেছিল।এর পর থেকে ঘেণ্যায় সিরিয়াল দেখা ছেড়ে দেই। আমরা একদিকে জিহাদ জিহাদ করে চিতকার করি, অন্যদিকে ইন্ডিয়ান কালচারের সাথে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছি। এক কথায় আমরা double standard।
অনেক কিছু নিয়েই রাস্তা ঘাটে আমরা আন্দোলনে নামি। কখনো কি ইসলাম ধর্মকে মিডিয়ার মাধ্যমে অপমান করার জন্য ভারতের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছি কেউ? ভারত না হোক, ভারতীয় চ্যানেলের বিরুদ্ধেও রাস্তাঘাটে জোরালো কোন আন্দলনে কাউকে নামতে দেখেনি। তবে মুখ বুঝে অপমান সহ্য করে কিসের জিহাদের জন্য আপনারা এতো উতলা?
কখনো কি ভেবে দেখেছেন, সারা বিশ্বে আজ মুসলমান দের কেনো এই করুণ পরিণতি? কারণ আমরা মুসল্মানরা ঐক্যবদ্ধ না।অন্যান্য ধর্মাবলম্বী দের গালাগাল না দিয়ে তাদের সম্মান করুণ। কারণ তাদের কাছ থেকে শিক্ষণীয় আছে, কিভাবে নাটক, সিনেমার, মিডিয়ার সাহায্যে সুন্দর ভাবে নিজের ধর্মকে প্রচার করা যায়, কিভাবে ধর্মের জন্য ঐক্যবদ্ধ হতে হয়।
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ফলাফলে বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তা নেই

লিখেছেন মেঠোপথ২৩, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২১

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ফলাফলে বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তা নেই

ট্রাম্প হচ্ছে একজন আপাদমস্তক বিজনেসম্যান। কমলা হ্যা্রিস যেহেতু ইন্ডিয়ান বংশোদ্ভূত তাই ইন্ডিয়ান ভোটার টানার জন্য সে নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ টেনে জাস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

চট্রগ্রামে যৌথবাহিনীর ওপর ইসকনের এসিড হামলা সাত পুলিশ আহত।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৪৩

এসিড নিক্ষেপে আহত পুলিশ সদস্য



চট্টগ্রামে পুলিশের ওপর ইসকন সমর্থকদের হামলা ও এসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় সাত পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানব সভ্যতা চিরতরে ধ্বংস হবে কি করে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৬



সে এক বড় অদ্ভুত বিষয়।
চিন্তা করে দেখুন এত দিনের চেনা পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। বিশাল বিশাল ইমারত ভেঙ্গে যাবে, গুড়িয়ে যাবে। মানুষ গুহা থেকে বেরিয়ে আজকের আধুনিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসকন

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৭


INTERNATIONAL SOCIETY FOR KRISHNA CONSCIOUSNESS যার সংক্ষিপ্ত রূপ হলো ISKCON এর বাংলা অর্থ হল আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ। যে সংঘের ঘোষিত উদ্দেশ্য হল মানুষকে কৃষ্ণভাবনাময় করে তোলার মাধ্যমে পৃথিবীতে প্রকৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পের বিজয়, বিশ্ব রাজনীতি এবং বাংলাদেশ প্রসংগ

লিখেছেন সরলপাঠ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২১

ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশে বা দেশের বাহিরে যে সব বাংলাদশীরা উল্লাস করছেন বা কমলার হেরে যাওয়াতে যারা মিম বানাচ্ছেন, তারাই বিগত দিনের বাংলাদেশের ফ্যাসিস্টের সহযোগী। তারা আশায় আছেন ট্রাম্প তাদের ফ্যাসিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×