.
নারী শিক্ষার অগ্রদুত বেগম রোকেয়া ঘরের বাইরে সমাজের বিরুদ্ধে এবং আশাপূর্ণা দেবির বিখ্যাত উপন্যাস "সুবর্ণলতা" এর মূল চরিত্র "সুবর্ণলতা" র মতো অনেক নারী ঘরের ভেতরে পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে নারী শিক্ষার জন্য অনেক লড়াই করেন। অনেক গঞ্জনা অপমান সহ্য করেন। উদ্দেশ্য ছিল একটাই। নারীদের সুস্থ এবং মুক্ত চিন্তার অধিকারী করে তোলা।
.
যাদের শিক্ষা দিক্ষা নেই, তারা সারাদিন পড়ে থাকে শাড়ি গয়না নিয়ে, কুট কাচালী, ঝগড়া ঝাটি নিয়ে, পরচর্চা নিয়ে।
আর একজন শিক্ষিত নারী পরচর্চামুক্ত, হিংসামুক্ত, ঝগড়ামুক্ত, শাড়ি গয়না নিয়ে অহংকার মুক্ত সংসার চালাতে পারে।
এটাই বুঝানো ছিল তাদের লড়াইয়ের উদ্দেশ্য।
.
একজন অশিক্ষিত নারী যদি সেসময় কোন কারণ সংসার হারাতো, তবে তার ভরণ পোষণের দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠতো। বাবা-মা বেচে থাকলে তো আর চিন্তা নেই। কিন্তু না থাকলে তাকে কোন এক গুরুর আশ্রমে পাঠিয়ে দেয়া হতো। এছাড়া সমাজে তার আর কোন আশ্রয় নেই। অনেকে অপমানে আত্মহত্যাও করতো।
অথচ সেই নারী যদি শিক্ষিত হয়, তবে এই "আশ্রয়" নামক শব্দটার পেছনে আর দৌড়াতে হতো না।শিক্ষার জোড়ে একটা কর্মক্ষেত্র, কর্মের জোড়ে অর্থ, আর সেই অর্থের জোড়ে নিজের খাওয়া আর বাসস্থানের দায়িত্ব সে নিজেই নিতে পারতো।
এটাই বুঝানো ছিল তাদের লড়াইয়ের উদ্দেশ্যে।
.
দিন বদলেছে। লড়াই তাদের সফল হয়েছে। কিন্তু কতটুকু হয়েছে, এটাই হচ্ছে এখন দেখার বিষয়।
.
বর্তমানে মা-বাবারা মেয়েদের পড়াশুনা করানোর ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন। কেনো জানেন?? যাতে বিয়ের সময় বায়োডাটায় লিখতে পারে মেয়ে অনার্স পড়ছে, মেয়ে ডাক্তার, মেয়ে শিক্ষিকা। অর্থাৎ একটা ভালো বিয়ে দেবার জন্য।
.
এখনকার মেয়েদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, সার্টিফিকেট সবই আছে ঠিকই, কিন্তু হিংসা, কুট-কাচালী, পরচর্চা,শাড়ি গয়না নিয়ে অন্যের সাথে প্রতিযোগিতা, ঝগড়া ঝাটি কোন কিছুই বন্ধ হয়নি। এসব ব্যাপার পূর্বে যেমন চলছিলো, বর্তমানেও তেমনি চলছে, আশা করি ভবিষ্যতেও অপরিবর্তিত থাকবে।
.
এখন মেয়েদের শিক্ষা আছে ঠিকই, কিন্তু কোন কারণে সংসার হারা হলে "কে খাওয়াবে, কে পড়াবে, আবার বিয়ে হবে তো??? " এই দুঃশ্চিন্তা এখনো পিছু ছাড়েনি।
.
এবার আমার কথা বলি। আজ বাদে কাল হয়তো চাকরী করব। এখনো আমার অবস্থান নিয়ে আমার আম্মুকে মানুষ উস্কায় এই বলে, "আহারে ভাবি, মেয়েটারে শেষ পর্যন্ত এই পথে পাঠাইলেন? মেয়ে মানুষ ভার্সিটি তে পড়লে আজকে একটা প্রাইমারী স্কুলে মাষ্টারি করলেও কোন মতে জীবনটা চলে যেতো", "মেয়ে মানুষ ডাক্তার হওয়াই ভালো। সমাজে একটা সম্মান আছে", "মেয়ে মানুষ শিপের চাকরী করবে?? ভবিষ্যতেরর চিন্তা করতে হবেনা? বিয়ে শাদির একটা ব্যাপার তো আছেই।"
আমার মাথাটা একটু বেশিই গরম। তাই ঘরে আমার সামানে বিয়ের প্রসংগ সাহস করে সহজে কেউ তুলতে আসেনা। কিন্তু আমি বুঝি, বাইরের মানুষ যে কি বিষ আমার জননীর মাথায় ইঞ্জেক্ট করেছে। মুখে না বললে কি হবে, আমি ঠিকই বুঝি, আম্মুও আমাকে নিয়ে ওই একই চিন্তাই করে, আমি ডাক্তার হইলাম না। তাই বিয়ের বাজারে আমার মূল্য নাই। আমার ভালো বিয়ে হবেনা। (হিহিহি)
.
বেগম রোকেয়া যদি আজ এসে দেখতেন, তার মেয়েরা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জন করেছে ঠিকই, কিন্তু স্ব-শিক্ষিত, সভ্য এবং স্ব-নির্ভর কোনটাই হতে পারেনি,
যে উদ্দেশ্যে তিনি শিক্ষার জন্য লড়েছেন, তার কোনটাই সফল হয়নি, বরং শিক্ষা গ্রহণ টা হচ্ছে এখন শুধুই "শো-আপ", তবে নিশ্চিত যে এই শিক্ষার মুখে উনি ঝাটা মারতেন।