ছোট একটা গল্প দিয়ে শুরু করি। মনে করুন, সমবয়সী দু'জন
ছেলে, খেলতে গিয়ে দু'জন একই সাথে একই অপরাধ
করল। দু'জনের বাড়িতেই নালিশ গেলো। বাড়ি ফেরার পর যা
হলঃ
১ম জনঃ সে বাড়ি ফেরার পরপরই শুরু হল একটা ছোট খাট ঝড়।
"অসভ্য ছেলে!! যেখানে যায়, সেখানেই গন্ডগোল
করে। আমাদের মতো আরো কয়েকটা ফ্যামিলি
আসেপাশে আছে। কয়টা ছেলের নামে তাদের মা-বাবার
কাছে বিচার যায়?? শুধু তোর নামে কেনো নালিশ আসে??
তোর মতো কুসন্তান পেটে ধরে ভুলে করছি। তুই
কোন দিন মানুষ হবিনা, হবি একটা অমানুষ।" সেই সাথে দু'চার ঘাও
পড়লো য়ার পিঠের উপর।
২য় জনঃ সে বাড়ি ফেরার পর তার মা বাবা তাকে শান্ত গলায়
ডেকে বলল, "বাবা, তোমাকে আমরা অনেক ভালো বাসি।
আমরা বিশ্বাস করি আমাদের ছেলে কখনোই খারাপ পথে
যাবেনা।খারাপ কাজ করবেনা। কিন্তু আজকে তোমার নামে
বাসায় অভিযোগ আসছে। আমরা তোমাকে বকাও দেবনা,
মারধোরও করবনা। শুধু একটা কথাই বলব, যদি সত্যিই কিছু করে
থাকো, তবে আর কখনো করবানা। আমরা চাইনা আমাদের
ছেলেকে কেউ খারাপ বলুক। আর যদি ভবিষ্যতে আবারো
এমন করো, তাহলে কিন্তু সত্যিই শাস্তি দিব।
এখন বলেন তো এই দুজনের মধ্যে কোন ছেলেটা
নিজেকে শুধরে নিবে?? আমার মতে অবশ্যই
দ্বিতীয়জন।কারন সে সেই সুযোগ টা পাবে।সে উপলব্ধি
করতে পারবে যে সে ভুল করছে। তার মা বাবার সম্মানের
অবমাননা করছে, যা তার করা উচিত হয়নি। এবং তাদের ভালোবাসা ও
বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে আর কখনোই খারাপ পথে
যাবেনা।
অপরপক্ষে প্রথম জন তো এত কিছু উপলব্ধি করার
সুযোগটাই পেলোনা। কারন শুরু থেকেই সে দেখল তার
মা বাবা তাকে ভালোবাসা র বদলে কু সন্তান হিসেবে বিবেচনা
করছে। এবং তাদের দৃঢ় বিশ্বাস সে অমানুষ হবে। তাহলে সে
কেনো নিজেকে শুধরাবে??? বরং আরো জেদ করে
নিজেকে কুপথে পরিচালনা করবে।
.
.
এতক্ষন যা বললাম, সেগুলা কেবলি কিছু উপমা। এবার আসল
প্রসংগে আসি।
.
** আজকাল দেখা যায়, শোনা যায়, হিন্দি সিরিয়াল দেখার কারণে
তাদের গালাগাল দিয়ে, টিজ করে তাদের জাত-গুষ্টি উদ্ধার
করছে। সিরিয়াল দেখে নারীরা কুটকাচালী শিখে। আর দুই
দিন পর পর নতুন নতুন ড্রেস কেনার বায়না ধরে।
সেই ড্রেসের দাম যদি হয় সাধ্যের মধ্যে তাহলে হয়ত
উপার্জনক্ষম ব্যাক্তিটি তা,কিনে দিতে পারেন। আর না হলে
পারেন না। না পারলে আপনার বোন বা স্ত্রী বা মেয়ের
রাগ /অভিমান হয়।। অনেক সময় ঝগড়া ঝাটি হয়। সেই সময় যদি
আপনিও মাথা গরম করে তাদের তালে তাল দিয়ে ঝগড়া করেন
এবং তাদেরকে খারাপ কথা শুনাতে থাকেন, তাহলে কিন্তু তারা
কখনোই বুঝতে পারবেনা যে তারা ভুল করছে এবং
নিজেদের শোধরাতে হবে। বরং আপনি যেভাবে তাদের
তালে তাল দিয়ে ঝগড়া করবেন, তারাও কিন্তু সেভাবেই সেই
কাজটিই চালিয়ে যাবে।ব্যাপারটা তখন আর ন্যায়-অন্যায়, পারগতা-
অপারগতা প্রতিষ্ঠার চেয়ে ঝগড়ায় কে জিতবে আর কে
হারবে তার প্রতিযোগিতায় চলে যাবে। কাজের কাজ কিসসু
হবেনা!!!!
.
অথচ আপনি যদি নিজের মাথা ঠান্ডা রেখে তাদের মাথায় হাত
বুলিয়ে ঠান্ডা গলায় তাদের বোঝান যে, আপনার অতটা সামর্থ্য
নেই এতো টাকা দিয়ে একটা ড্রেস কেনার।আর তার জন্য
যেন তারা মন খারাপ না করে, আপনাকে ভুল না বুঝে। তাদের
বুঝাবেন, তাদের আব্দার রাখতে না পেরে আপনারাও মন খারাপ
হচ্ছে।তাহলে দেখবেন, তারাও আপনাকে বুঝতে পারবে।
আপনার প্রতি তাদের যে ভালোবাসা শ্রদ্ধা, কোনটাই
কমবেনা। এবং পরবর্তী তে আর কোনদিন এসব ব্যাপারে
ঝগড়া ঝাটি করবেনা।এবং এরকম একটা আবদার করার আগে দশবার
ভাববে যে আপনার সামর্থ্যে কুলাবে কি না।
.
.
আর সেই সাথে তার চোখে আংগুল দিয়ে এটাও বুঝিয়ে
দিবেন যে,প্রতি বছর সিরিয়ালের famous অভিনেত্রী দের
নামে যে ড্রেস গুলো বের হচ্ছে তা সম্পুর্ণ ধোঁকাবাজি
ছাড়া আর কিছুই না।
.
প্রথম যখন এই ড্রেস গুলো জিপ্সি এবং আনারকলি নামে
বাংলাদেশে আসে, তখন ড্রেসগুলোর দাম ছিল অনেক
বেশি। সবার সামর্থ্য ছিলনা, এইগুলো কেনার জন্য।যার ফলে
অসংখ্য ড্রেস কেনা হয়না।ঈদ কিংবা পুজা শেষে ড্রেস
গুলোকে স্টকে জমা রাখা হয়।পরবর্তী বছরে ঈদ কিংবা
পুজাতে আবারো সেই একই ড্রেস নতুন কোন সিরিয়ালের
নতুন কোন অভিনেত্রীর নামে বাজারে ছাড়া হয়।অনেক
সময় দেখা যায়, ড্রেসগুলো ইন্ডিয়া থেকেও আমদানিকৃত না।
বাংলাদেশেরই তৈরি।অথচ নাম দিচ্ছে "অমুক সিরিয়ালের অমুক
অভিনেত্রী র ড্রেস।"
আর এই ধোঁকাবাজি টা খুব সহজেই করতে পারছে কারণ জিপসি,
আনারকলি, গুঞ্জন, ঝিলিক,কিরন্মালা, পাখি-সব গুলো ড্রেসই এক
রকম। আর বোকা মেয়েরা চোখ বন্ধ করে এসব বিশ্বাস
করে ধোঁকা খাচ্ছে।