আমরা বাংগালি রা যে হুজুগে বাংগালি, সব সময় সব ক্ষেত্রেই তা
প্রমাণ করি। যা করি হুজুগের বশত করি।
এই যে, কিছুদিন আগে সরকার ঘোষণা দিল ইসলাম ধর্ম টাকে
বাতিল করার, তা শুনে মুসলমান আম জনতার সেন্টি মেন্টে
অনেক বড় একটা ঘা লাগল। আর তাই তো সবাই হুমড়ি খেয়ে
পড়লো এসবের বিরুদ্ধে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়া নিয়ে,
মিটিং মিছিল করা নিয়ে। এসব কাজ করার আগে কেউ একবারো
ভাবলো না, আমাদের রাষ্ট্রে কি ইসলাম ধর্ম আদৌ আছে????
আমরা কিসের জন্য লড়াই করছি???
.
.
.
১. আমরা মুসলমান নারীরা সেজে গুঁজে পয়লা বৈশাখে যাই,
31st night এর Open Heart Concert (এমন কিছু একটা বলে) এ
যাই, হই-হুল্লোড় করি, গান গাই, স্টেজে উঠে নৃত্য
পরিবেশন করি। আর যদি দর্শক হই, তাহলে বন্ধু এবং
বান্ধবীদের সাথে নাচা-নাচী করি। অথচ ইসলাম ধর্মের নিয়ম
অনুযায়ী বছরের প্রথম দিন উদযাপন করা একেবারেই হারাম।
অস্বীকার করব না, এই হারাম কাজের সাথে যে আমিও জড়িত।
.
.
২. এসব অনুষ্ঠানে আমাদের সাজ সরঞ্জাম এর উপাদান হয় পেট
দেখানো ও বুক ভাসানো পাতলা শাড়ি, বডি ফিটিং থ্রী পিচ, হিপ
দেখানো টাইট প্যান্ট ও সেই সাথে ছোট শার্ট বা ফতুয়া বা
টি-শার্ট।আর মুখে আছে আটা-ময়দা-সুজি, চোখের গর্জিয়াস
সাজ, ঠোঁটে টক টকে লিপিস্টিক। যা একজন পর পুরুষ কে
আকৃষ্ট করার জন্য যথেষ্ট। যেটা ইসলামে র নিয়ম অনুযায়ী
এক ধরণের জিনা। অথচ তারপরো আমরা সেসব করে যাচ্ছি।
অস্বীকার করবনা, আমিও যে এসবের সাথে কিছুটা জড়িত।
.
.
৩.এবার আসি ছেলেদের প্রসংগে। ইসলামিক নিয়ম অনুযায়ী
ছেলেদের প্যান্ট পরার নিয়ম পায়ের গোঁড়ালীর উপরে।
অথচ সভ্য মুসল্মান ছেলেরা নিজেদের আরো সভ্য ও
স্মার্ট, হ্যান্ডসাম প্রমাণ করার জন্য পশ্চিমা কালচার অনুরণ করে
প্যান্ট পরে হিপ থেকে ৩-৪ আংগুল নীচে। এবং যখন উপুড়
হয়ে এই দ্বি-খন্ডিত হিপ টা সকলের চোখের সামনে
মেলে ধরে, তখন তা দদেখে লজ্জায় আস্তাগফিরুল্লাহ
পড়তে পড়তে রাস্তা পার হতে হয়। অন্য দিকে পায়ের নিচে
প্যান্ট এর দুই পায়া ছেঁচড়া তে ছেঁচড়া তে ছিঁড়ে ই যায়,
যেনো এই ছিঁড়ে যাওয়াটা লজ্জার নয়, ফ্যাশনের ব্যাপার।
এইভাবে প্যান্ট বা পায়জামা পড়ে যদি কোন ছেলে মসজিদে
গিয়ে নামায পড়ে, সেই নামায কি আদৌ কবুল হবে??? তার
নিজের টা হবেই না, বরং তার পেছনের কাতারে যে ভদ্র
লোকেরা থাকবে, তাদেরও সেই হিপ থেকে মনযোগ
নষ্ট হবে।
.
.
৪. ইসলামের বিধান অনুযায়ী, ডান হাতে খেতে হয়। অথচ
আমরা মুসলিম রা যখন বড় বড় রেস্টুরেন্ট এ যাই তখন চামচ
দিয়ে খাই।
না। চামচ টা কোন সমস্যা না। সমস্যা চমচ দিয়ে খাওয়ার নিয়ম
টাতে। জানেন তো সেটা কি???? সেখানে বাম হাত, ডান হাত
দুটো এক সাথে ব্যাবহার করতে হয়। এটা ও পশ্চিমা নিয়ম।
কখনো কি কোন মুসলমান এসবের বিরুদ্ধে কথা
বলেছে????? নাহ। বলে নি। কারণ স্ট্যান্ডার্ড নষ্ট হয়ে
যাবে তাই।
অস্বীকার করবনা, এই স্ট্যান্ডার্ড নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ে যে
আমিও চামচেই খাই।
.
.
৫. আল্লাহ বলেছেন, আযান শুনলে যেনো সকল কাজ
কর্ম ছেড়ে আগে নামাযের দিকে ধাবিত হই। কিন্তু আমরা বলি,
"থাক! আরো অনেক সময় আছে। পরে পড়ে নিবো
আরকি।" এই বলে নিজের কাজে মন দেই। অস্বীকার করবনা
যে, আমিও এই কাজটা করি।
.
.
৬.রমযান মাস হল রহমতের মাস। এই রহমতের মাসে আমরা
খাদ্য দ্রব্যের দাম বাড়িয়ে দেই। ভেজাল খাবার দিয়ে ব্যবসা
করি।
.
.
৭.দুই ধরণের আলেমের বসবাস আমাদের সমাজে বেশি।
একদল-যারা ধর্মের যে টুকু অংশ মানলে নিজের স্বার্থ সিদ্ধি
হবে, কেবল মাত্র সেই টুকুই মানে। তারই ফতোয়া দিয়ে
বেড়ায়।
আরেকদল-অতি ধর্ম ভক্তি দেখাতে গিয়ে, ধর্মে যা বলা
হয়নি, তাও মানতে যায়। নিজেরাই নিয়ম বানায়। যেগুলো কে
"বিদা-আত" বলে।
এই দুই-এর কোন টাই ইসলাম দ্বারা সমর্থিত না। অথচ আমরা
সাধারণ জনগণ এসবের বিরুদ্ধে কথা না বলে এগুলো কেই
অন্ধ ভাবে বিশ্বাস করি অথবা দেখেও না দেখার ভান করে
এড়িয়ে যাই।
.
.
৮.ইসলামের আঈন অনুযায়ী ধর্ষণ কারীর শাস্তি মৃত্যু দন্ড।
এই পর্যন্ত কয়জন ধর্ষণ কারীকে এই দেশে মৃত্যু দন্ড
দেয়া হয়েছে???
.
.
৯. যে মহিলা পরকিয়া/জিনা করবে তারও কঠিন শাস্তি আছে।
সম্ভবত অর্ধেক মাটি চাপা দিয়ে দূর থেকে পাথর নিক্ষেপ।
অথবা বেত্রাঘাতে মৃত্যু দন্ড।আর এই দেশে কোনায়
কোনায় পতিতালয় খুঁজে পাওয়া যাবে। বেশি দূরে যাবনা। সংসদ
ভবন, যে খানে বিভিন্ন আঈন কানুনের বিল পাশ হয়, তার পাশেই
আছে পতিতালয় যেটা নাকি সরকার দ্বারা পার্মিটেড। এটা ওপেন
সিক্রেট। সবাই জেনেও জানেনা।
.
.
এতক্ষণ ধরে এতো এতো বক বক করলাম, আমরা যে
হুজুগে বাংগালী তা প্রমাণ করার জন্য। বাংলা দেশ কখনো ই
ইসলামিক রাষ্ট্র ছিলনা। এই দেশের আঈন কানুন, সামাজিক নিয়ম
কোন টাই ইসলাম পন্থি ছিলনা। তাই সেই দেশের সরকারের
"দেশ থেকে ইসলাম বাতিল এর ঘোষণা "টা যেমন অযৌক্তিক
ও হাস্যকর, তেমনি এই ঘোষণা শোনার পর হুজুগে র বশত
মিটিং মিছিল করাটাও অযৌক্তিক ও হাস্য কর।
.
.
তারপর ও এমন একটা ঘোষণা দেয়ার পেছনে কারণ কি??? কারণ
টা সরকারই ভাল বলতে পারবে।
.
.
এদেশের সরকার ও জনগণের সম্পর্ক টা TOM & JERRY এর
সম্পর্কে র মত। jerry যেমন Tom কে উস্কানি দিয়ে দৌড়ে
পালায় এককোণে চুপ করে ঘাপটি মেরে বসে হাসে আর
মজা দেখে, বাংলাদেশ সরকারও একেক বার একেক টা উলোট
পালট ঘোষণা দিয়ে জনগনরে উস্কায় দিয়া চুপ করে মজা
দেখে।undefined