প্রশংসা যেমন মানুষ কে উৎসাহ দেয়, তেমনি অতি
প্রশংসা মানুষের মেরুদন্ড টাকে ভেংগেও দেয়।
যে মেয়ে টা সব সময় মাথায় ঘোমটা দিয়ে মাথা
নিচু করে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যায়, ন্যায় হোক-অন্যায়
হোক, মা বাবার সব কথা মাথা পেতে মেনে নেয় আর
"লক্ষী শান্ত শিষ্ট মিষ্টি মেয়ে" হিসেবে প্রশংসা
পায়, আর লোকেরা তাদের নিজের সন্তান্দের দেখিয়ে বলে, "দেখেছো আপুটা কত ভদ্র। এই আপুটার মত হতে চেষ্টা কর।", সেই মেয়েটা মাথা তুলে কখনো এই ধরণীর
সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেনা।নিজের পছন্দ-
অপছন্দ, ইচ্ছা-অনিচ্ছা, শখ-আহ্লাদ এর কথা বলতে
পারেনা; পাছে লোকে তাকে খারাপ বলে, মা
বাবার অবাধ্য মেয়ে বলে, সেই ভয়ে।
অথচ ভালোভাবে পরিচালনা করলে এই মাথা তুলতে
না পারা মেয়েটা ই হয়তো একদিন সংসারের,
সমাজের অথবা দেশের মাথা হতে পারতো।
ছেলেকে তার বাবা মা পাঠ্য বইয়ের বাইরে
অন্য কোন বই পড়তে দিতো না, পাছে ছেলের
পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ হয় সেই ভয়ে, বন্ধু দের
সাথে মিশতে দিতে চাইতো না, যদি ছেলে বখাটে
হয়ে যায় সেই ভয়ে, দেশের নেতাকে নিয়ে কিংবা
দেশোদ্রোহীকে নিয়ে লেখা, দেশের দুর্দশা
কিংবা স্বাধীনতা নিয়ে লেখা কোন কবিতা স্কুল
কলেজ লাইফে আবৃত্তি ককরতে দিতোনা, পাছে
ছেলে রাজনীতির বেড়াজালে আটকে যায়!! অথবা
নির্দিষ্ট কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষে কথা বলছে
ভেবে তাকে শত্রু বানিয়ে দেয়,তার ক্ষতি করে, সেই
ভয়ে!!!! ছেলে কিছু বলতনা। চুপচাপ মেনে নিত। ছেলেকে কারো সাথে মিশতে দিতনা, খেলতে দিতনা।ছেলেও খেলার জন্য কোন প্রতিবাদ করতনা। চুপচাপ ঘরের বারান্দায় বসে অন্যের খেলা দেখত।।বেচারার"খেলতে চাই, খেলতে চাই" বলে মন কাঁদতো, তবু চক্ষু না, যদি আব্বু-আম্মু ধরে মার দেয় সেই ভয়ে। আর এএসব দেখে লোকজন তাদের সন্তান্দের বলতো, "দেখেছো তোমার এই ভাইয়াটা কত শান্তশিষ্ট। বাবা-মার বাধ্য ছেলে।বাবা-মা যা বলে, তাই শুনে।এই ভাইয়ার মত হতে শেখো। মা বাবার দোয়াও পাবা, জীবনে অনেক বড়ও হবা।"
অন্যায় দেখলে যে ছেলে চুপ করে এড়িয়ে যায়
আর "ভদ্র- নির্ভেজাল ও বাবা মায়ের বাধ্য সন্তান"
হিসেবে লোকের প্রশংসা পায়, সেই ছেলেটাও কোন
দিন বদনামের ভয়ে, যেসব প্রশংসা সে পেয়েছে তা
নষ্ট হয়ে যাবে সেই ভয়ে গলা তুলে প্রতিবাদ করেনি।
অথচ যদি সঠিক ভাবে তাকে পরিচালনা করা হতো,
তাহলে হয়তো এই ছেলেই একদিন হতে পারতো
ন্যায়ের পথের প্রদর্শক, নীতি নৈতিকতার সব চেয়ে
বড় আদর্শ।
যদি সত্যিই গলা তুলে কেউ কখনো ভুলেও প্রতিবাদ করেছে অথবা "খেলতে যাবই যাবো" বলে জিদ করেছে, তখনই শুরু হয়েছে উস্কে দেয়া সুশীল সমাজের গালাগাল। তারা সমালোচনা করে এই বলে, "দেখছেন অমুক ভাইয়ের মেয়েটা কত খারাপ!!! কিভাবে মুখে মুখে তর্ক করে????" অথবা "অমুক ভাইয়ের ছেলেটা মা বাবার অবাধ্য ছেলে। অনেক বেয়াদপ।এসব ছেলেদের ভবিষ্যত অন্ধকার।" (হুহ) এমন ভাবে কথাগুলো বলে, যেন প্রতিটা সন্তানের ভবিষ্যত লিখেন তার মা-বাবা কিংবা পাড়া-প্রতিবেশীরা, সৃষ্টি কর্তা না। তাই তারাই জানে তা উজ্জ্বল নাকি অন্ধকার।
আমি ঘোমটা দেয়া কিংবা ভদ্র মানুষের মতো
মাথা নিচু করে হাঁটার বিপক্ষে বলছি না। বলছিনা
সব উগ্র উশৃং্খল হয়ে যাও। বাবা মায়ের অবাধ্যও হতে
বলছিনা সব সময়। শুধু বলছি একটু সাহস বাড়িয়ে
নীতিবান হতে। সমালোচকদের সমালোচনাকে বুড়ো
আংগুল দেখিয়ে নিজেকে শক্ত সামর্থ্য করতে,
মেরুদন্ডটাকে সোজা করে দাঁড়াতে ও সঠিক পথে
চলতে হলে যেসব সঠিক কাজ করা উচিত, তার সবই
করতে হবে। নিজের ভবিষ্যত গড়ে তোলার দায়িত্ব অন্যের হাতে না দিয়ে নিজের ভবিষ্যত নিজেই গড়ে তোল।
জানি অনেকেই এই কঠিন কাজটা করতে
চাইবেনা বদনামের ভয়ে। নিজের বদনামের পরোয়া
না করলেও বাবা মায়ের বদনাম হবে সেই ভয়ে ভদ্র
সভ্য বেশধারী ভীতু সেজে সকলে চলবে। সত্যিকার
অর্থে "ভদ্র " কেউই হবেনা।
প্রশংসা ও বদনাম- দুটি "নীরব ঘাতক।" এরা একে
অন্যের পরিপুরক।প্রশংসার লোভ আর বদনামের ভয়
মানুষকে ভীতু ও লাজুক করে তোলে, তার মাঝে
সংকোচ বোধের জন্ম দেয়।এই দুটি ঘাতকের ভয়ে
মানুষ ধীরে ধীরে সব কিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে
নেয়।আর এভাবে গুটিয়ে নিতে নিতে একটা সময়
দেখা যায় অপার সম্ভাবনা ময় প্রতিভা গুলো প্রকাশ
প্রাপ্তির অভাবে কালের স্রোতে ভেসে যাচ্ছে,
তলিয়ে যাচ্ছে অতল গহবরে। কিংবা প্রকাশ করতে
পারার সুযোগ না পাওয়ার ক্ষোভের আগুনে জ্বলতে
জ্বলতে একটা সময় ভস্ম হয়ে যায়। অবশেষে পড়ে থাকে
নিঃশেষ হয়ে যাওয়া একটা দেহ খন্ড মাত্র, যার
প্রাণ থাকে, কিন্তু প্রানে সজীবতা থাকেনা। এক
কথায় "মানব রোবট", যাকে নিয়ন্ত্রণ করার রিমোট
থাকে অন্যের হাতে।undefined