"অমুক নামের একজন ভাইয়া/আপুকে চিনি যিনি
লেখাপড়ায় খুবই ভালো। বিদেশ থেকে PHD Degree
নিয়ে আসছেন। এর কয়েকদিন পরই মারা যান। উনাকে
দেখে সত্যিই অনেক খারাপ লেগেছিল। দুনিয়ার
পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করার জন্য কি প্রাণান্ত
চেষ্টা ছিল তার। পেয়েছে অনেক সম্মান। কিন্তু
ভোগ করে যেতে পারেননি কিছুই। তাই কি লাভ
দুনিয়ার পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য এতো কষ্ট
করে??? এই ফলাফল কি পরকালে কোন কাজে
আসবে???"-এই ধরণের দু'একটা পোস্ট আমি পড়েছি।
নিঃসন্দেহে লেখাটা ভালো ছিল। ধর্মকে সঠিক
ভাবে মেনে চলতে, ও পরকালের পরোক্ষায় উত্তীর্ণ
হওয়ার জন্য এটা যথেষ্ট উৎসাহমূলক একটি পোস্ট। তবে
শুধু একটা ব্যাপার আমার কাছে ঠিক মনে হয়নি।
দুনিয়াতে টিকে থাকতে হলে অবশ্যই আমাদের
দুনিয়ার জগতের দিকেও মন দিতে হবে। আল্লাহ তো
কোথাও বলেননি, সব কাজকর্মের কথা ভুলে গিয়ে,
লেখা পড়া বাদ দিয়ে সারাদিন শুধু নামায পড় আর
জায়নামাজে বসে তজবীহ গুণো, তাইলেই সোয়াব
পাবা।।। পরকালের জন্য কিছু করতে হলে অবশ্যই
ইহকালে সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকতে হবে। ইহকালে
টিকে থাকতে হলে পেটে দানা পানির যোগান
দিতে হবে। এইদানা পানির যোগান দিতে হলে
অবশ্যই কাজ করতে হবে। আর কাজ করতে হলে অবশ্যই
শিক্ষা থাকতে হবে। এখন অনেকেই হয়তো বলবেন
এতো বেশি কাজের কি দরকার?? কোন মতে পেটের
যোগানটা,দিতে পারলেই তো চলে।। আমি বলব
দরকার আছে। খাদ্য গ্রহণ ছাড়াও বাসস্থান এর দরকার
আছে। ঘর বাড়ি যদি নাই-ই থাকে তাহলে কি খোলা
আকাশের বসে বছরের পপর বছর কাটিয়ে দেয়া যায়???
পুরুষ দের সমস্যা না হতে পারে কিন্তু মহিলাদের
পর্দার জন্য অবশ্যই প্রয়োজন। আর এই বাসস্থান
তৈরির জন্য অর্থের প্রয়োজন। আর এই অর্থের যোগান
সম্ভব কাজের মাধ্যমে। আর ভালো ও সম্মান জনক
কাজ করতে হলে শিক্ষা প্রয়োজন।
এই খাদ্য আর বাসস্থান ছাড়াও ধর্মটাকে মানতেও
শিক্ষার প্রয়োজন।ইসলাম ধর্মে বলা আছে, বিয়ে
করা মানে দ্বীনের অর্ধেক টাই পালন করা।আর
তাছাড়া বিয়ের মাধ্যমে মানুষ অনেক খারাপ কাজ
থেকে বিরত থাকতে পারে। আজকাল অনেক
ছেলেদেরই বিয়ের ব্যাপারে গা ছাড়া একটা ভাব
দেখা যায়।বিয়ে করতে চায়না। কেনো চায়না
জিজ্ঞেস করলেই বলে উপার্জন নাই, তাই। অথবা
থাকলেও একটা সংসার চালানোর পক্ষে যথেষ্ট না।
কিন্তু গার্ল ফ্রেন্ড থাকে। বিবাহ পরবর্তী কাজ তখন
এই গার্ল ফ্রেন্ড দিয়ে মেটানো হয়। আর তাছাড়া
গার্ল ফ্রেন্ড চালাতে তো আর সংসার চালানোর
মতো খরচ হয়না। সুতরাং বিয়ে করতে হলে ভালো
উপার্জন করতে হবে। ভালো উপার্জন করতে হলে
ভালো চাকরী করতে হবে।আর ভালো চাকরী পেতে
হলে ভালো শিক্ষার প্রয়োজন।
আর ইসলাম ধর্মে নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলকেই
শিক্ষা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। কারণ শিক্ষা যদি
নাইই থাকে আমরা ধর্ম গ্রন্থ ও হাদীসের বই গুলো
পড়ব কিভাবে??? আর পড়তে যদি নাই-ই পারি তবে
ধর্মটাকে জানব কিভাবে???
এখন হয়তো অনেকেই বলবেন, ধর্ম গ্রন্থ পড়তে জানতে
হলেতো PHD degree নেয়ার দরকার হয়না। সাধারণ
অক্ষর জ্ঞান টুকু অথবা মোটামুটি পড়াশুনা জানলেই
চলে। এতো সার্টিফিকেট কিংবা PHD এর দরকার
হয়না।আমি বলব দরকার হয়। ধর্মে অনেক সময় অনেক
বাণী পরোক্ষভাবে থাকে, যার আসল অর্থ গুলা অনেক
সময় আমরা বুঝতে পারিনা। সাধারণ আলেম সমাজ
মাঝে মাঝেই সেগুলোর ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে থাকেন।
কিন্তু PHD করা একজন ইসলামিক স্কলারই বলতে
পারবেন সেসব বাণীর আসল মানে ও ব্যাখ্যা।
সুতরাং দুনিয়ার অর্জনকৃত সার্টিফিকেট, ভালো
রেজাল্ট পরকালে কোন কাজে আসবেনা, এসব বলে
মানুষকে অনুতসাহিত করাটা উচিত নয়। বরং বলা
উচিত দুনিয়াতে একটি সুন্দর, সুস্থ, ও সভ্য জীবন
যাপনের জন্য উচ্চ শিক্ষার পাশাপাশি পরকালের
পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য সঠিক ভাবে ধর্ম চর্চা
করা। কারণ এই দুটার একটাকে বাদ দিয়ে আরেকটা
কখনো সম্ভব না।undefined