যতদুর মনে পড়ে, ২০১৫ সালে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা তাঁদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ধর্মঘট বা কর্মবিরতি পালন করে বিশ্ববিদ্যালয়টির ইতিহাসে প্রথম সেশনজট তৈরি করেন!
বাংলাদেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়েই কম বেশি সেশনজট আছে৷ কয়েকটা বিশ্ববিদ্যালয়ে দল মত নির্বিশেষে বিশেষগোষ্ঠীর পছন্দসই ভিসি না পেলে ভিসির প্রতি লাগাতার অনাস্থা ও চরম অসহযোগীতার নজিরও আছে৷ বিগত ক বছরের চিত্র যদিও ভিন্ন বটে! বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রথম সেশনজট কাদের দ্বারা, কাদের কারনে তৈরি তা নিয়ে সমীক্ষা হতে পারে৷ বেরোবি'র মত একেবারেই নবীন ও সেশনজট মুক্ত থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম সেশনজট তৈরির জন্য বেরোবি'র শিক্ষকেরা পুরুষ্কৃত হবেন কি না, সেটা সমীক্ষা হলে জানা যেত৷ যতদুর মনে পড়ে একই কারনে সেই সময়ে প্রথমবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা নিতে দেরি হয়েছিল বেরোবি'র, সবার শেষে ভর্তি পরীক্ষা নিয়েছিল বেরোবি। ন্যায্য দাবী দাওয়া আদায়ের বহু বিচিত্র পথ ও পন্থা থাকা স্বত্বেও খারাপ নজির সেশনজট তৈরী করা সেই শিক্ষকদের গাল মন্দ নিন্দা করে অনেকেই বিস্তর লেখালেখি করেছিলেন, বেরোবি উদ্ধারে শহর থেকেও লোকজন বেরোবি'র ক্যাম্পাসে গিয়েছিলেন সেই সময়ে!
বেরোবি'র প্রায় জন্মলগ্ন থেকেই সব ধরনের নিয়োগ থেকে শুরু করে সবকিছুতেই সীমাহীন দুর্নীতি ও অনিয়মের খবর পত্রিকায় পড়তে পড়তে আমরা ক্লান্ত ৷ বেরোবি'র ভিসির পদে আসীনরা সব সময়ই নেতিবাচক খবরের জন্য পত্রিকার পাতা জুড়ে থাকেন!
বাংলাদেশে এখন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যাধিক্যের মতই প্রায় প্রতি জেলাতেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের রীতিমত ধুম পড়েছে৷ গণহারে ও পপুলিস্ট চিন্তা থেকে স্থাপিত এসব বিদ্যালয় আদতে বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠতে পারছে কিনা দেখা দরকার! স্বনামধন্য সাবেক ২২ কলেজের পড়াশুনার পরিবেশ ও মানও এসব নতুন স্থাপিত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহুগুণে ভাল এমনটা বলে থাকেন অনেকে।
নেতিবাচক খবরের জন্য কুখ্যাতি অর্জনকরা বেরোবি আবারো দেশি বিদেশি আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে এবং বলাবাহুল্য এবারো সেই নেতিবাচক খবরের জন্যই! তবে প্রথাগত দুর্নীতি, অনিয়ম ও ভিসি কেন্দ্রিক নেতিবাচকতার বাইরে এবার ভিন্ন ও গুরুতর মাত্রার নেতিবাচকতা যুক্ত করেছেন বেরোবি'র কতিপয় শিক্ষক৷ বিরতিহীন ও লাগাতার এতো সব নেতিবাচকতার কারনে এই অঞ্চলের মানুষদের বা বিশ্ববিদ্যালয়টি পরিচালনার সাথে যুক্তদের বুদ্ধিবৃত্তিক সক্ষমতা বা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত স্পর্কাশতর প্রতিষ্ঠান পরিচালনার যোগ্যতা আদৌও আছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যেতে পারে, এমন কথাও বলছেন অনেকেই। উলুবনে মুক্তো ছড়ানোর মত হয়েছে কি না বেরোবি'র প্রতিষ্ঠা, এমনতর চরম অমর্যাদাকর মতামতও তুলে ধরতে বাধছেনা অনেকের!
মহান বিজয় দিবসে বেরোবি ক্যাম্পাসে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে বেরোবি'র কতিপয় শিক্ষক তাঁদের ভাষায় জাতীয় পতাকা সদৃশ্য ব্যানার হাতে ছবি তোলার পর থেকে দেশি বিদেশি সংবাদ মাধ্যমে তুমুল সমালোচনা হচ্ছে। জাতীয় পতাকা অবমাননার দায়ে মামলাও হয়েছে ইতোমধ্যে৷ ছবিতে দেখা যায় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার ন্যায় গাঢ় সবুজ জমিনের মাঝে চারকোনাকৃতি লাল অংশ এবং সেই ব্যানার বা পতাকার নিচের অংশ শিক্ষকদের পায়ের সমতলে ভূমিতে। অভিযুক্ত শিক্ষকদের ভাষায় জাতীয় পতাকা সদৃশ্য সেই ব্যানার কে বা কারা এনেছেন সেটি তাঁরা জানেন না এবং ছবি তুলবার সময় তাঁরা অতটা খেয়াল করেন নি!
ছবিতে যা দেখা গেছে, সেটা স্পষ্টতই বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার বিকৃত রুপ। মাঝের গোল লাল বৃত্তের জায়গায় চারকোনাকৃতির লাল অংশ। পতাকার নিচের অংশ পায়ের সমতলে ভূমিতে৷ রংপুর জেলা প্রশাসনও প্রাথমিকভাবে জাতীয় পতাকা বিকৃতির সত্যতা পেয়েছেন তদন্তে৷ বিজয় দিবস কেন শুধু, যে কোন দিনেই হোক না কেন, অভিযুক্ত শিক্ষকদের ভাষ্যকে সঠিক বলে মেনে নেয়া হলেও জানতে চাই, জাতীয় পতাকা সদৃশ্য ব্যানারের সাথে সম্পৃক্ত হতে হবে কেন? তাঁদের দেয়া বিবৃতির ভাষাতেই জানতে চাই, বিজয় দিবসে জাতীয় পতাকার জায়গায় জাতীয় পতাকা সদৃশ্য ব্যানার হাতে কেন ? যে ব্যানারে আবার কোন বক্তব্য বা লেখা কিছুই নেই! এটা কেমন ব্যানার? বিজয় দিবসে জাতীয় পতাকা হাতে ছবি নেই কেন? যে কেউ যা তা কিছু একটা আনলো আর দাঁত কেলিয়ে ছবি তুলতে দাঁড়িয়ে যাবেন কেন? দাঁত কেলিয়ে ছবি তুলেছেন ভাল কথা৷ ছবি তোলার পর দেখেছেন, দেখে ভুল বুঝে ক্ষমা চেয়ে বিবৃতি দিলেন না কেন? উল্টো ব্যানার দাবী করে বিবৃতি দিলেন! এর আগেও বেরোবি'র শিক্ষকদের একটি সংগঠন সাংবাদিকরা কোন খবর পরিবেশন করতে পারবেন আর পারবেন না, সেটা নিয়ে আপত্তিকর বিবৃতি দিয়েছিলো! ভুল বোঝার উপলব্ধি ও ক্ষমা চেয়ে নিজেদের সমুন্নত রাখার বোধটুকু নেই কেন?
ঘটনার প্রেক্ষিতে ব্যক্তির তরফে মামলা হয়েছে যা অনভিপ্রেত৷ কোন ধরনের মামলা কে বা কারা দায়ের করতে পারবেন তার সুনির্দিষ্ট নীতিমালা আছে। জাতীয় পতাকা বিকৃতি ও অবমাননায় বলা যায় ষোল কোটি মানুষই সংক্ষুব্ধ৷ ষোল কোটি মানুষকে নিশ্চয় এই বিষয়ে ষোল কোটি মামলা দায়েরের এখতিয়ার দেয়া যেতে পারে না, যদিও তাঁরা প্রত্যেকেই সংক্ষুব্ধ। কাজেই সংক্ষুব্ধ হলেই, পক্ষভুক্ত হলেও মামলা দায়েরের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এই সস্তা কাজও বন্ধ করা দরকার৷ এসব উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সস্তা মামলা আদতে মুল অপরাধকেই প্রকারন্তরে লঘু করে তোলে, দোষীর বিচার ও শাস্তি অনিশ্চিত করে৷ তাই, রাষ্ট্রকেই এসব বিষয়ে দায়িত্ব নিয়ে আইনী সুরাহা নিশ্চিত করতে হবে৷ রাষ্ট্রের মর্যাদা ও পতাকা সমুন্নত রাখার দায় ও কর্তব্য প্রথমত ও প্রাথমিকভাবে রাষ্টযন্ত্রেরই এটা ভুললে চলবে না!
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ৮:০০