এক কথায় অসাধারণ। ৭২-৭৫ সময়টা নিবিড়ভাবে না এলেও, সেই সময়ের অসঙ্গতি অস্বস্তি বোঝাতে কার্পণ্য করা হয়নি। মুভিটির সাথে প্রাসঙ্গিকভাবে যতটা আসা উচিত ততটাই এসেছে। সেই বিবেচনা থেকেই হয়ত প্রথম দফায় সেন্সর ছাড়পত্র পায়নি মুভিটি!
টালমাটাল সময়ে সব হারায়। ময়নাও হারিয়েছে। মহৎ প্রেম শুধু কাছে টানে না দূরেও ঠেলিয়া দেয় শরৎ চন্দ্রের কথাটা আবারো সার্থকতা পেয়েছে। জাতির জীবনে দূর্যোগ আফজাল ময়নার জীবনেও দুর্যোগ এনেছে। বাঙ্গালি বিউটি পরিচ্ছন্ন, গোছানো ছবি। এই ছবি এদেশের মানুষ তেমন একটা দেখেনি বলেই জানি। আমার জানায় ভুলও হতে পারে। তাই হয়ে থাকলে বলতে হবে, এই ছবি না চলাই প্রমাণ করে এদেশের দর্শক তৈরি হননি ভাল ছবি দেখার জন্য। মুভিটির নির্মাতা পরিচালক ও নায়কের চরিত্রে অভিনয় করা রাহশান নূর অবশ্য জানিয়েছেন আমেরিকায় অন্তত পাঁচ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে মুভিটি।
উইকিপিডিয়া জানাচ্ছে, বাঙ্গালি বিউটি মুভিটি প্রচার নিষিদ্ধ করে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১২টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্রটি এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে বক্স অফিসে সর্বকালের সর্বাধিক উপার্জনকারী বাংলা ভাষার চলচ্চিত্র। সময় গড়ালে আপীল বোর্ড সেন্সর বোর্ডের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিলে চলচ্চিত্রটি বাংলাদেশে মাত্র দুটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় এবং পরবর্তীতে ছবিটি 'মানজালা মেই নু' নামে চীনে তিন হাজার প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। ভাবা যায়!
ভাল মুভি তৈরি হচ্ছে না তাই দর্শকের রুচি গড়ে উঠছে না। আবার ভাল দর্শক নেই সেকারনেও ভাল মুভি হচ্ছে না। ব্যাপার টু ওয়ে রাস্তার মত হয়তবা৷ একে অপরের পরিপূরক।
৭২/৭৫'র প্রেক্ষাপটে বানানো বাঙ্গালি বিউটি আধুনিক ছবি। দৃশ্যায়ণে যথাসম্ভব চেস্টা করা হয়েছে সেই সময় তুলে ধরার। সেট, পোষাক, আনুষাঙ্গিক সব কিছুতেই সযত্নে চেষ্টার আন্তরিক ছাপ চোখে পড়ার মত। বাস্তবতার কারনেই মধুর ক্যান্টিন, রাস্তাঘাটের বাস সেই সময়ের আবহে করা যায়নি হয়ত। বাজেটও একটা বড় ব্যাপার হয়ত এক্ষেত্রে। বড় লগ্নি করা গেলে হয়ত ৭৫ সালে ঢাকার রাস্তায় এখনকার বাস চলতে দেখা যেত না। তবে এতে করে মুভির মুল গল্পের সাথে দর্শকের একাত্ব হতে বাধা তৈরি হবার কোন সম্ভাবনা নেই।
মাঝে মধ্যেই ফেসবুকে আফগানিস্তানের ষাটের দশকের ও বর্তমান সময়ের নারীদের জীবন যাপনের তুলনামুলক চিত্রের ছবি দেখতে পাওয়া যায়। সময় আগালেও দেখা যায় আফগানিস্তান পিছিয়েছে, আফগানিস্তানের নারীরা পিছিয়েছে। বাঙ্গালি বিউটি যে সময়ের গল্প সেই সময়কার নারীদের জীবন ও পোষাক অনেক বেশি মার্জিত পরিশীলিত ও আধুনিক ছিল বলতে হবে। আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে সদ্য স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী রাজপথের আন্দোলনের পাশাপাশি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে পর্যন্ত অংশ নিয়েছিলেন। এতো কথা বলার কারন, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের নারীরা সক্রিয় প্রগতিশীল রাজনীতি ও মুক্তিযুদ্ধের ধারাবাহিকতায় বেশ আধুনিক মনস্ক ছিলেন কী পোষাকে কী জীবন যাপনে সেটা বাঙ্গালি বিউটিতে যথাযথভাবে এসছে বলতে হবে। সেই তুলনায় এখন দেদার ফেসবুক ব্যবহার করা আর বহুসংখ্যায় পার্লারে যেতে পারা নারীর জীবন যাপনে ও পোষাকে পুরুষতন্ত্র কতটা জেকে বসেছে বা নারী কতটা আধুনিক হতে পেরেছেন সেই মূল্যায়ণ এখনকার সমঝদার নারীদেরই করতে হবে। এখনকার যুবকরাও হয়ত পিছিয়েছে৷ সহজেই সবকিছু পায়। প্রেম ও প্রেমিকাকে সহজেই পায় হয়ত। নিজেদের নিয়ন্ত্রণের বাইরের কোন কারনে একে অপরকে হারানোর বেদনা হয়ত এখনকার প্রেমিকযুগলকে পেতে হয় না। সেরকম মননও তো আর নেই এখন। আফজাল কে চেস্টা করেও ব্যর্থ হতে হয়েছে। ৭৫'র মহা দূর্যোগ আফজাল ময়নার জীবনও বিপর্যস্ত করেছে।
রাহশান নূরের অদ্ভুত accent এ বাংলা উচ্চারণ ভালই লেগেছে। গান নাচ দারুন পরিশীলিত। টয়াকে মানিয়েছে ভাল, সেই সময়ের পোষাকে আচরণে। সবকিছু মিলায়া বেশ ভাল অনুভুতি দেয় রাহশান নূরের প্রথম কাজ এই বাঙ্গালি বিউটি।
বাঙ্গালি বিউটির মত আরো মুভি দেখতে চাই। অদ্ভুত accent এ রাহশান নূরের মুখে বাংলা শুনতে চাই আরো।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুন, ২০২০ বিকাল ৫:৫৩