এর আগে বেশ কয়েকবার দেখতে বসেও দেখা হয়নি। আজ শেষ করা গেল। NEWTON কি শুধুই কর্তব্যনিষ্ঠ ক্ষেপাটে সরকারি কর্মচারীর আখ্যান? না কি ভারতীয় এস্টাব্লিশমেন্টের নেতিবাচক ভাবমূর্তিরও বয়ান?
হিন্দু মাইথোলজির গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দন্ডকারণ্য। সেই দন্ডকারণ্যে প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে ভোট নিতে যাওয়া কেবলমাত্র অতি কর্তব্য ও সময়নিষ্ঠ সরকারি কর্মচারী নিউটন কুমারের গল্প নয় এই NEWTON ।
ভোট কেন্দ্রে পৌছে স্কুল ঘর বা পাশের বাড়ি ঘর পোড়া, বিধ্বস্ত দেখতে পায় নিউটন কুমার। কে পোড়াতে পারে আগুনে এর উত্তর কৌশলে এড়িয়ে যায় আত্মা সিং। কে পুড়িয়েছে তাতে কী যায় আসে জানায় সে৷ আত্মা সিং ভারতীয় আর্মির কমান্ডার সেখানকার। ভোট গ্রহণের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করার দায়িত্ব তারই।
আত্মা সিং শুরু থেকেই নিউটন কুমার কে নিরুৎসাহিতই করেনি শুধু, রীতিমত ভয় দেখিয়ে আসছিলো যেন সেখানে ভোট নিতে যাওয়া না হয়। প্রিজাইডিং অফিসার নিউটন কুমারের আদেশ পদে পদে লঙ্ঘন করছিলো ভারতীয় বাহিনী। মাওবাদী বা নকশালবাদীদের হামলার আশংকা ব্যক্ত করা হচ্ছিল বার বার । নিউটন কুমারের উপলব্ধি কিন্তু উল্টো। কোন আশংকাই সে বোধ করেনি। নিজের দায়িত্ব পালন করাকেই একমাত্র কাজ হিসেবে জেনেছে সে। মাওবাদী জুজুর ভয় দেখিয়ে ভারতীয় বাহিনীর দ্বারাই ভয়ের আবর্ত তৈরি করে রাখা হয়েছে নিউটন কুমারের অভিব্যক্তি এমনই। এস্টাব্লিশমেন্ট কিভাবে মিডিয়াকে ধোকা দেয়, মিডিয়া কিভাবে এস্টাব্লিশমেন্টের কাছে বোকা বনে যায় তার চমকপ্রদ কিন্তু নগ্ন রুপ এই NEWTON এ পাবেন। পুরো মুভিতে মাওবাদীর উপস্থিতি খুবই অল্প সময়ের জন্য হলেও মাওবাদীদের দায়ও কম না। শেষে এসে নিউটন কুমারের অস্ত্রধারণ অতি নাটকীয়। নিউটন কুমারের ভাষায় শুধুমাত্র Duty পালনের জন্য কেউ অস্ত্র ধরছে, এটা বারাবারি। আমরা নিতে পারিনা বাস্তব জীবনে এতোটা, পর্দায় দেখে ভুরু উঁচু করা ছাড়া। নিউটন কুমার ঘড়ির কাটায় সময় মেনে দায়িত্ব পালন করেন। তার পুরস্কার ভারতীয় এস্টাব্লিশমেন্ট তাকে দিয়েছে বৈকি। মানপত্র ধরিয়ে দিয়েছে একটা। পুরুস্কার সে আরো একটা পেয়েছে বৈকি, ভারতীয় আর্মির হাতে গণধোলাই। বাহিনীগুলোর সম্মতির বাইরে গেলে অতিকর্তব্য পরায়ন কাউকেও যে ধোলাই না দিয়ে ছাড়া হয় না, ছাড় পায় না, তারই হিসেব নিউটন কুমারের ধোলাই।
ছত্রিশগড়ে চলমান মাওবাদী সংকটে ভারতীয় এস্টাব্লিশমেন্টের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ নিউটন কুমারকে স্থানীয় নারী মালকো নেতাম এর সাথে অন্তত চিন্তাগত সাযুজ্য খুঁজে পেতে দেখি আমরা। নিপীড়িত সেই নারীর মত সেখানকার আদিবাসীদের দুঃখ দুর্দশার কারন বুঝলেও, অক্ষম অসহায় নিউটন কুমারকে আফসোস ও অক্ষম ক্ষোভ প্রকাশ করে নিজের উপর অর্পিত দায়িত্ব রোবোটিকভাবে পালন করে যেতে দেখি। আর বিশাল ব্যায়ের ভারতীয় নির্বাচন আদতে একটা প্রহসন, সবচে বড় গণতন্ত্রের দাবী করা ভারতীয় গণতন্ত্র ফাঁকাবুলিই শুধু। তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানো হয়েছে NEWTON এ। ভুয়া এ্যাম্বুশ করে শুধু নিউটন কুমারের দায়িত্ব পালন করাকেই বাধাগ্রস্ত করা হয়নি শুধু, ভোট দিতে আসা অসহায় সরল আদীবাসীদের সাথে প্রতরণা প্রবঞ্চনা শঠতাও করা হয়েছে। আদীবাসীরা এভাবেই যুগের পর যুগ প্রতারিত হয়ে আসছে। ছত্রিশগড়ের সেই অঞ্চলের জনগনের জীবন তাই বলছে৷
কিন্তু এই NEWTON ভারতীয় এস্টাব্লিশমেন্টের ছাড়পত্রই পায়নি শুধু, NEWTON তৈরিতে ছত্রিশগড়ের বনমন্ত্রী, কালেক্টরেট, পুলিশের দপ্তর, সাবেক নির্বাচন কমিশন, স্থানীয় রাজনৈতিক দল সবাই সহযোগীতা করছে। কেন করেছে? আর ওদের সেন্সরবোর্ড এতো সাহস পায় কোথায়? যারা বানায় তারাই বা কোথায় পায় এতো সাহস?
ভারতীয় গণতন্ত্র ফাঁকাবুলি হলেও প্রাকারন্তরে নিজেদের ন্যাংটো করে দেখাবার সাহস ভারতীয় এস্টাব্লিশমেন্ট অন্তত এক্ষেত্রে দেখিয়েছে। কিন্তু আমরা?
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪৪