আমার ধারনা আমি আমার জীবনের প্রিয় কর্মটির নাগাল পেয়েছি বা বলা ভাল যে কাজটি আমাকে সবচে বেশি আনন্দ দেয় সেটির নাগাল পেয়ে গেছি।
বইপড়া আর আমার দ্বারা হবেনা। বইপড়ার ঝোঁক আসে আবার চলে যায়। বই পড়তে না পারার আক্ষেপ বড় কস্ট দেয়। কিন্তু বই পড়তে পারলে যে সুখ পাই তারচে ঢের বেশি সুখ পাই চলচ্চিত্র (Movie) দেখলে, আমরা যাকে সিনেমা বলতে অভ্যস্ত সেই সিনেমা দেখলে। একই সুখ পাই মঞ্চে নাটক দেখলে যদিও।
আমার টাইমলাইনে ও ব্লগে যে কিঞ্চিৎ পোস্ট আছে সেখানে চলচ্চিত্র নিয়ে বেশ কটি পোস্ট আছে। বই নিয়ে তেমন নেই বা থাকলেও তুলনায় কম হবে হয়ত। আর এলেবেলে গৎবাধা পোস্ট তো অহরহই করছি।
করোনাকালের চলমান ছুটি বই পড়ে না, কাটছে তাই চলচ্চিত্র দেখে। সব দেখছি। হাতের কাছে সামনে যা পাচ্ছি, সব। কোন বাদ বিচার ছাড়াই। বাংলাভাষী হিন্দী ভাষী সব। ডাবিং করাও। সব। ছাত্র খারাপ তাই ইংরেজি ভাষা তেমন বুঝি না, জানি না। তাই ইংরেজি দেখা হলেও কম দেখা হচ্ছে। আর আমার তো চলচ্চিত্র বোদ্ধা হওয়ার কথা নয় বা দরকারও নেই। আমার দরকার আনন্দটা খুঁজে নেয়া। সেই আনন্দটা যেখানেই পাচ্ছি সেটাতেই ডুব দিচ্ছি। ভাল- মন্দ, ইনটেলেক্ট- নন ইনটেলেক্ট বিচার বিবেচনা ছাড়াই। আনন্দটাই মূখ্য। আমার মনন আমারই কেবলমাত্র। তাই নিঃশঙ্কচিত্তে গ্রোগ্রাসে যা তা গেলা যাচ্ছে। বড়ই আনন্দ। মদ গেলার মত!
ক' দিন দেখেছি রাম গোপাল ভার্মার বেশ কয়েকটা তার মধ্যে প্রায় সব কটাই ছিল মুম্বাই আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ে। আরো হিন্দী মুভি দেখা হয়েছে। আগের দেখা একই মুভি আবারো দেখেছি এরকমও হয়েছে।
উপমহাদেশের বিশেষত ভারত পাকিস্তান শ্রীলংকার রাজনীতি নিয়ে হিন্দি ভাষার বেশ কয়েকটা ভাল মুভি আছে। রাজনীতি বা ইতিহাসের যথাযথ বয়ান নয় সেসব নিশ্চয়, কিন্তু দেখে মজা পাবেন থ্রিলড হবেন। কাজেই দেখতে পারেন এমন মুভি।
কলকাতার বেশ কয়েকটা। সৃজিত, কৌশিক, পাভেল, অরিনন্দম থেকে শুরু করে কমার্শিয়ালও আছে এর মধ্যে। কলকাতার বাংলাভাষী চলচ্চিত্রই ইদানিং বেশি টানছে। কলকাতার মুভি অনন্য উচ্চতায় পৌছে গেছে৷ কলকাতার মুভির দেখে আর্ট ফিল্ম দেখছেন না কমার্শিয়াল ফিল্ম দেখছেন এটা চিন্তা করতে করতেই দেখবেন মুভির ভিতরে কিভাবে যেন সেটে গেছেন!
ভারতের দক্ষিনের ও হলিউডের ইংরেজি ভাষী বাংলায় ডাবিং করা মুভিও দেখতে বেশ লাগলো। জেমসবন্ড, মিশন ইমপসিবল সিরিজ তো আমরা অহরহই দেখি। এ্যাভেঞ্জার্স ট্যাভেঞ্জার্স দেখা হয়নি বটে। পত্রিকায় পড়েছিলাম ছবি সহ, সম্ভবত এ্যাভেঞ্জার্স দেখার জন্য স্টার সিনেপ্লেক্সের টিকিটের লাইন বসুন্ধরা সিটির ৮ তলা থেকে গড়াতে গড়াতে পান্থপথ-কাওরানবাজারের রাস্তা অবধি এসছিলো। আমার দুর্ভাগ্য সেই মুভি দেখার কোন আগ্রহ আমি কেন জানি বোধ করিনি।
বাংলাদেশের মুভিও দেখা হয়েছে বেশ কটা। ঢাকা অ্যাটাক আবারো দেখেছি। আয়নাবাজি দেখবো আবারো। বেঙ্গলি বিউটি দেখা হয়েছে। অসাধারণ লেগেছে। বেঙ্গলি বিউটি এদেশের মানুষের পছন্দ না হওয়াতে প্রশ্ন তোলা যেতে পারে এদেশের মানুষের আদতে ভাল চলচ্চিত্র দেখার রুচি তৈরি হয়েছে কি না! বেঙ্গলি বিউটির আগাগোড়াই সব কিছু ভাল লেগেছে। এরকম আরো দরকার আমাদের।
কমার্শিয়াল হিসেবে খ্যাত মারদাঙ্গা মুভি দেখতেও ভাল লাগে। লুতুপুতু প্রেমের মু্ভি আর সেভাবে ভাল লাগেনা। প্রেমে বড় দাগা খেয়েছি, প্রেমের কারনেই নিগৃহীত হয়েছি- হচ্ছি, সেকারনেই হয়ত। তারপরেও দেখি প্রেমের মুভি। সর্বভুক তো। মারদাঙ্গা মুভি দেখার সময় নিজেকে বিচলিত মনে হয়। অতি উত্তেজনায় ভুগি। নিজের জীবনের সংকটগুলো যদি মুভি দেখানো পথে ও পন্থায় নিরসন করা যেত বা হয়ে যেত! কতই না ভাল হত। আমি যদি হতে পারতাম সেই নীতিবাগিশ ও মহাশক্তিমান নায়ক! কতই না ভাল হত। জীবন কত মোহনীয় অনিন্দ্য সুন্দর হত তাহলে। জীবনের সব কলংক বেদনা ব্যর্থতা এক লহমায় উবে যেত! আহা। টিপিক্যাল কমার্শিয়াল মুভিগুলো দেখা শেষে আমার হতাশা বাড়ায় দেয়। কেননা সেই সব মুভির মত আমার জীবনের সংকটগুলো আড়াই বা পৌনে বা সাড়ে তিন ঘন্টায় নিরসন হয় না তো৷ তাই।
আমরা এক জীবনে অনেক জীবন যাপন করতে চাই সেকারনেই মুভি দেখি। দেখে তৃপ্তি পাই। আমার কথা না। ভারতীয় হিন্দিভাষী প্রয়াত এক অভিনেতার কথা। আমারো তাই মনে হয়। আমি, আমরা আসলে বহু জীবন যাপন করতে চাই, কিন্তু আমাদের জীবন তো একটাই। একারনেই বোধহয় চলচ্চিত্র আমাকে এভাবে টানে। কত ভুল, যদি শোধরানোর উপায় থাকতো জীবনে, তাহলে সবাই-ই ভুল শোধরাতো। উপায় নাই তাই এক জীবনেই বহু জীবন চাই।
তখন ইউটিউবে এতো বেশি মুভি পাওয়া যেত না। বাংলাদেশের গুলো আরো কম। হাতে গোনা। আমজাদ হোসেনের 'ভাত দে' দেখার জন্য হাপিত্যেশ করছিলাম। কারন বশতঃ শাহবাগের ফিল্ম আর্কাইভের পদস্থ একজনের সাথে আগে থেকে পরিচয় ছিল যিনি আবার ওখানকার পুরাতন চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর সাথেই জড়িত ছিলেন যেটা পরে জেনেছিলাম, তাঁকে পর্যন্ত অনুরোধ করেছিলাম 'ভাত দে' দেখার ব্যবস্থা করে দেবার জন্য। কথা দিয়েছিলেন। পরে ইউটিউবে পেয়েছিলাম 'ভাত দে' । 'ভাত দে' তে শবানাকে যত অনন্য লেগেছে দেখতে আর কোন মুভিতে তেমনটা লাগেনি আমার অন্তত। গান তো অসাধারণ। 'ভাত দে'র গল্প জীবনের গল্প।
আমরা এখন যে অবস্থায় আছি বা যাচ্ছি তাতে করে 'ভাত দে' খুবই প্রাসঙ্গিক। আসুন ভাত দে দেখি আবারো, ক্ষুধা ও জীবনের মূল্য বুঝি - উপলব্ধি করি৷ করোনাকালে ব্যক্তি পর্যায়ে ঘরে থাকাটাই শ্রেষ্ঠ সহযোগীতা মানুষের তরে। আরেকটা হতে পারে, এই করোনা কালে নিজের পাশাপাশি প্রয়োজনে অন্যের মুখেও যেন দু মুঠো ভাত জোটে সেই ব্যবস্থা নিশ্চিতে অবদান রাখা। 'ভাত দে' দুটোরই উপলব্ধি দেবে আপনাকে, আমি নিশ্চিত
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:৪৩