(স্পয়লার কি না জানি না। কারো দেখা বাকি আছে কি?)
দ্বিতীয় পুরুষ ২য় বার দেখতে হল৷ প্রথমবার দেখে মনে হয়েছিল সিনেমাটির গতি বেশি। খুব দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছিল। লাফিয়ে লাফিয়ে চলছিল। ২য় বার দেখে সেটা আর মনে হল না কেন জানি।
বড় ধাক্কাটা নিঃসন্দেহে নায়কের মানে অভিজিৎ পাকড়াশীর মানে পরমের 'খোকা' পরিচয়টা আমাদের মানে দর্শকের সামনে উন্মোচিত হওয়াটা! নায়কের শুদ্ধতা বিশুদ্ধতা বা নায়কোচিত অতীত না থাকাটা বাংলা সিনেমার দর্শকেরা কিভাবে নেবেন, কিভাবে মুল্যায়ণ করবেন সেটা বুঝে উঠতে পারছি না। নায়কের চরিত্রের কৌলীণ্য আর রাখলেন না সৃজিত দা। এককালের দাগী খুনি সমকামীও নায়ক হতে পারেন! এটা মচৎকার হয়েছে। একেবারে।
দ্বিতীয় পুরুষের শেষাংক দেখে মনে পড়ে গেল কিছুদিন আগে ঢাকায় ঘটে যাওয়া ঢাবির এক ছাত্রীর ধর্ষণের ঘটনার কথা। ধর্ষক হিসেবে চিহ্নিত ও ধৃত 'মজনু' কে অনেকেই ধর্ষক হিসেবে মানতে পারছিলেন না৷ মজনুর শারীরীক শক্তি সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠছিলো তখন৷ সাথে আরেকটা বিষয় আলোচিত হচ্ছিলো- সমাজে মজনুর অবস্থান। ধর্ষণ করার জন্য মজনুর শারীরিক শক্তি সামর্থ্যের অভাবের চাইতে মজনুর মত ছিচকে, এলেবেলে, অপাঙতেয় বা অনেকের চিন্তায় নিচু একজনের দ্বারা ধর্ষিতার শারীরিক শুদ্ধতা(!) নস্ট হওয়াতে অনেকে বেশি কস্ট পেয়েছিলন হয়ত। ধর্ষণ হয়েছে হোক, কিন্তু উচু কারো দ্বারা বা অন্তত শারীরিকভাবে শক্তপোক্ত সামর্থ্যবান কারো দ্বারা ধর্ষণ হলে বোধহয় ধর্ষণটা বিশুদ্ধ হত! বাঙ্গালি এতো কস্ট পেত না!! মজনুর ধর্ষণ করার সামর্থ্য নিয়ে সন্দেহ বা জাত পাত নিয়ে উচ্যবাচ্য করত না। ধর্ষণ ঘটনাটারও কৌলীণ্য বজায় থাকতো!
দ্বিতীয় পুরুষের নায়কের খোকার মত অশুদ্ধ নোঙরা অতীত দেখে বাঙ্গালি দর্শক থ মেরে গেছে নিশ্চিত ভাবে। হজম করা মুশকিল। যেমন মুশকিল ছিল মজনুর ধর্ষক হওয়াটা মানতে পারাটা। সামাজিক মাধ্যমে অনেককেই দেখেছি বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে মজনুর ধর্ষক হবার সম্ভাব্যতা ব্যাখা করতে। দ্বিতীয় পুরুষ পর্দার বিষয়, আপাতত তাই থ মেরে যাওয়া ছাড়া বাঙ্গালির আর কিছু করার নেই। হজম না বদ হজম হবে সেটা পরের বিষয়। তবে, বাংলা সিনেমার নায়কের চরিত্রের কৌলীণ্য নস্ট হওয়ায় বাঙ্গালি শোকাতুর হতেই পারে। একবার ভাবুন তো, নায়িকা মানে রাইমার সাথে খোকা একই বিছানায় শুচ্ছেন! ইশ। ভাবতেই গা রি রি করে উঠছে না? নিতে পাচ্ছেন?
২২ শে শ্রাবণের সিক্যুয়াল হয়ে থাকলে দ্বিতীয় পুরুষ সে মাত্রার আতেল বা আর্টিস্টিক সিনেমা হয়ে উঠতে পারেনি। শেষের চমক দিয়ে পুরো সিনেমার আতলামি প্রতিষ্ঠা করা যায়না। পুরো সিনেমায় পুলিশের আচরণ বা ভুমিকা যাচ্ছে তাই। পরপর হওয়া খুন তিনটি কত সময়ের ব্যবধানে হয়েছে সেটার ধারণা না দিলেও কলকাতার বুকে ২০১৯ এ এসে একই খুনি পরপর তিন তিনটে খুন করার সুযোগ পেয়ে যাবে এটা বাস্তব সম্মত মনে হয় নি৷ খুনিকে ধরার পদ্ধতি ও ব্যাপারটিও সিনেমার স্পিরিটের সাথে যায় না৷ একেবারেই সাদামাটা ঠেকেছে। ১ম বা ২য় খুনের পর খুনির চেহারার স্কেচ করা সম্ভব হয়নি এটাও ঠিক নেয়া যাচ্ছে না।
Rehabilitation ব্যাপারটা প্রতি কেমন কেমন একটা অনুভুতি এনে দিলো সিনেমাটি৷ পুনর্বাসন বিষয়টা আদতে কী? কখন কাদের করতে হয় পুনর্বাসন এই চিন্তা ভাবাচ্ছে৷ খোকার Rehabilitation মানে অভিজিৎ পাকড়াশীর Rehabilitation তো খোকা মানে অভিজিৎ পাকড়াশীর জ্ঞাতসারেই ঘটেছে৷ কোন এ্যামনেসিয়ার ঘটনা নেই বা ছিল না। ডাক্তার বাবু এত বড় ভুল করলেন! ২য় খোকা মানে পল্টনের করা খুনগুলোর ঘটনার ডিএনএ প্রোফাইলিং আসল খোকা মানে অভিজিৎ পাকড়াশী সচেতনভাবেই করাচ্ছিলেন তাই।
পুলিশের ডিআইজি Rehabilitation করার মহান ব্রত নিয়ে খোকার মত ১৫ -১৬ বছরের দাগীকেই পেলেন! এক দাগীর পুলিশ রেকর্ড গায়েব করে হলেও তাকেই Rehabilite করতে হবে?
চিকেন চাউমিন আর চিলি ফিস খাওয়া খোকার জেনেশুনে জ্ঞাতসারেই অভিজিৎ পাকড়াশী হয়ে উঠাটা পোয়েটিক জাস্টিস বটে! পল্টন কে খুনের পর তাই চিকেন চাউমিন আর চিলি ফিস খেয়েই নিজেকে পাল্টাবার বা বলা ভাল সমাজকে ধোকা দেবার কবিতাটা শেষ করেছে খোকা অর্থাৎ অভিজিৎ পাকড়াশী!
গান ভাল হয়েছে, সিনেমাটোগ্রাফি নিয়ে কথা হবে না। চোখের উপর বাড়তি কোন চাপ দেয়নি সিনেমার পর্দা।
বোঝা যায়, পরিচালকের যাবতীয় মনযোগ শেষের দৃশ্যে ছিল। কিন্তু শেষের দৃশ্য পর্যন্ত সিনেমার যাত্রাটি যথোপযুক্ত ছিল না সব সময়।
মিথিলার সাথে বিয়ের পর সৃজিতে এপার বাংলার লোকজনের উৎসুক্য নিঃসন্দেহে বেড়েছে৷ ছ্যা ছ্যা করার জন্য হলেও সৃজিতে আমাদের আগ্রহ আরো বেড়েছে। তাই হয়ত আতশিকাচ দিয়ে দেখছি এখনকার সৃজিতকে। অনেকের সাথে সুর মেলাতে হচ্ছে তাই, দ্বিতীয় পুরুষ সৃজিতের সিগনেচার হয়ে উঠে নি!
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মার্চ, ২০২০ সকাল ১১:৪৮