নির্মলেন্দু গুণের 'কাম কানন' ও 'নিশিকাব্য' যারা পড়েছেন তাদের কাছে মারজুক রাসেলের 'দেহবণ্টনবিষয়ক দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর' আহামরি কোন কবিতা মনে হবার কথা নয়। মারজুকেরটি বরং কবিতা ও ভাষা হিসেবে 'র (raw)' মনে হবার কথা অথবা কবিতাই হয়নি এমনও মনে হতে পারে।
'দেহবণ্টনবিষয়ক দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর' কবিতা সংকলন। নতুন বা অপ্রকাশিত কোন কবিতা এখানে নেই। বিভিন্ন সময়ে লেখা একই ঢংগের কবিতার সংকলন মাত্র।
নারী পুরুষের আদিমতম সম্পর্ক নিয়ে যুগে যুগে বহু পদ্য গদ্য লেখা হয়েছে। আরো লেখা হবে। পৃথিবী যদ্দিন থাকবে, লেখা হতেই থাকবে৷ বলা বাহুল্য পুরুষেরাই প্রায় একচেটিয়াভাবে এ নিয়ে লিখে যাবে।
এই সম্পর্ক নিয়ে বাংলা ভাষায় গুণ' দার কাম কানন ও নিশিকাব্যই এখন পর্যন্ত সেরা মনে হয়েছে। এতো অনিন্দ্য ও শৈল্পিক প্রকাশ আর পাওয়া যায় না। কোন একটা শব্দকেও অশ্লীল বলার কোন সুযোগ পাইনি। অথচ চরমে চরম!
মারজুক একা নন। মারজুকদের সমসাময়িকদের একটা আলাদা ঢং ও ধাচ আছে। আজিজ কেন্দ্রিক উঠাবসা করা সেই সবদের প্রত্যেকেরই আলাদা আলাদা স্বাতন্ত্র আছে। তৎকালে তাঁদের যারা দেখেছে, কাছে বা দূরে থেকে নিঃসন্দেহে বিমোহিত হয়েছেন। কামু, ফারুকী, আইচ, মারজুক, খোকন, টোকন প্রত্যেকেই অনন্য। সময়ের সাথে সাথে প্রত্যেকেই প্রতিষ্ঠিত। মারজুকের কবিতার চাইতেও মারজুকের গান আমাদের অজান্তেই আমরা বেশি শুনেছি। মারজুকের অভিনয়ও দেখেছি বেশি কবিতার চাইতে। কবিতা এ দেশের গুটি কয়েক মানুষ পড়ে। আর কিঞ্চিৎ পরিমাণ মানুষে বোঝে। এরকম বাস্তবতায় মারজুকের কবিতা বোঝা বা কবিতা হয়ে উঠেনি এই ক্যাচাল তো থাকবেই।
ধারণা করি, মারজুকদের মধ্যে মারজুকই সবচে বেশি তরল, বেশি 'র'। ভাষায় ও বক্তব্যে। একই সম্পর্ক নিয়ে লেখার কারনে গুণ'দাকে গাল মন্দ করার তেমন সুযোগ না থাকলেও মারজুককে যাচ্ছেতাই ভাষায় গালাগালি হজম ও খারিজ হবার ঝুঁকিতে থাকতে হচ্ছে! সেটা মারজুকের অতি তারল্যের জন্যই? যতদুর বুঝি মারজুক আবার তাঁর এই অতি তারল্যকেই নিজস্বতা ও তাঁকে বোঝা কারো সাধ্য নয় এমনটা বানিয়েছেন নিজের কাছে, ভক্ত কূলের কাছে! মারজুকের আরেকটা দাবী - মারজুকের কবিতা গ্রহণে সক্ষম পাঠক তৈরি করতে তাঁর বা তাঁদের ত্রিশ বছর আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে হয়েছে। মারজুকের ভক্ত কূল সংখ্যায় বেশ বড়ই। বেশ সক্রিয়ও। এই ভক্ত কূলকে বইমেলায় পিপড়ার মত কবির পিছন পিছন ছুটতেও দেখছি আমরা। মারজুক বা মারজুক ঘরানার কবিতা মানুষ গ্রহণ করছে, সেটার প্রস্তুতি আগে থেকেই নেয়া। তার মানে এমন কবিতা তাৎক্ষণিক বা স্বতঃস্ফূর্ত না। চেষ্টাকৃত ও আরোপিত। পাঠক তৈরি করা হয়েছে। একটা বিশেষায়িত জনগোষ্ঠী তৈরির সচেতন চেষ্টা সক্রিয় আছে বলা যেতে পারে। এ বিষয়টিও বিশেষভাবে আমলে নেবার মত। বিবেচ্য। মারজুকের কাছে তাহলে এটা একটা আন্দোলনও বটে, ধারণা করি। এই আন্দোলন সফল হবে কি না, মারজুকের কবিতা তাঁর ভক্ত কূলের বাইরে কেউ খাবে কি না সেটা সময়ই ঠিক করুক। কবিতা যারে খায়, প্লেট-সুদ্ধা খায়- মারজুকের দাবী এমনই। মারজুকের কবিতা প্লেট সুদ্ধা খাইলে সাহিত্য হবে, কি হবে না, সেটা বিচারের ভারও সময়ের হাতেই থাকলো।
হেলাল হাফিজ কবিতার জন্য জীবনটাই আরেক রকম করে ফেলেছেন। এক সময়ে মাদ্রাসায় পড়ুয়া সাত ঘাটের পানি খাওয়া মারজুক তাঁর কবিতার জন্য কী করবেন সেটা দেখার অপেক্ষায় রইলাম।
পাঠক হিসেবে দু মলাটে ছাপার অক্ষরের সবকিছু পড়া নেশা ও কর্তব্য হওয়া উচিত। না হলে পাঠক হওয়া যায় না!
তাই, 'দেহবণ্টনবিষয়ক দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর' পড়ুন। অতঃপর আস্তাকুড়ে ফেলুন বা সমালোচনা করুন অথবা স্পীকটি নট থাকুন!
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মার্চ, ২০২০ সকাল ১০:৩৮