তন্ময় ইমরানের জয়তী সিরিজের 'জোনাকস্নানে জয়তী' পড়বো কেন? আর পড়ে পেলামটাই বা কী? জোনাকস্নানে জয়তী পড়ে যেটা হয়েছে অন্তত আমার ক্ষেত্রে, পড়ার অভ্যাসটা ফিরে পেয়েছি। বই পড়ার ভাল লাগায় আবার ডুবতে পারছি!
পড়ার অভ্যাসটা নস্ট হয়ে গেছিল পুরোপুরিই। একেবারেই । জোর করে বই পড়ার চেস্টা করে যাচ্ছিলাম। শুরু করে থেমে যেতে হয়েছিল বারবার বিভিন্ন কারনে। এই শুরু করি তো, এই থামি! জোনাকস্নানে জয়তী সেই সংকটের সুরাহা করেছে। একটানা গোগ্রাসে গিলেছি জোনাকস্নানে জয়তীকে। শুরু করে আর থামতে হয়নি। থামা যায়নি। জোনাকস্নানে জয়তী পড়া শুরু করে থামা সম্ভব না। আক্ষরিক অর্থেই থামা সম্ভব না। সাচ্চা সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার। অভিভূত!
বাংলায় এমনটা এর আগে পড়া হয়নি, তা হয়ত না বা পড়েছি কি না, মনে করতে পারছি না! কিন্তু জোনাকস্নানে জয়তী বহু বিবেচনায় অনন্য। একনাগাড়ে পড়ে যাওয়াটা প্রাপ্য (Deserve) জোনাকস্নানে জয়তীর।
বাঙ্গালী প্রথম ধাক্কাটা খাবে জয়তীতেই। জয়তীর মত সাহসী রুচিশীল পরিশীলিত স্বাধীন আবার বহুগামী নারীকে ভন্ড ভীরু বাঙ্গালী কিভাবে নেয় বা নেবে সেটাই একটা গবেষণার বিষয় হতে পারে! জয়তী মোহনীয়। জয়তী ন্যাকামি বিহীন। দুই পর্বের দুটি গল্পই তো চমৎকারই না শুধু, পড়তে পড়তে রোমাঞ্চ ঠাসা।
বহু বিচিত্র জটিল মানুষের মন। লিখতে গিয়ে কত বিচিত্র বিষয়ই জানতে হয়েছে লেখককে সেটা ভেবেও অবাক হচ্ছি। সাইকোলজির টার্মগুলো, জানিনা সব যথাযথভাবে ব্যবহার হয়েছে কি না। সেটা বিচারের ভারও পাঠকের না। গল্প বলার ঢংটাও সাবলীল। পাঠককে জটিলতায় পড়তে হয়না। সাবলীলভাবে পড়তে পড়তেই রোমাঞ্চের তুঙ্গের নাগাল পাওয়া গেছে। আরেকটা বিষয়, গল্পের শুরুতে গল্পের শেষটা অনুমান বা আঁচ করা যায়না। এমনকি একটা পর্যায়ে গিয়েও। এটাও দারুন বিষয় বলব। লেখকের মুন্সিয়ানা এখানেই। জয়তীকেই আগাগোড়া চিত্রায়িত করা হয়েছে জয়তীর মত করেই, সযত্নে। জয়তীর জন্য বুকে চিন চিন ব্যাথা বোধ হতে পারে পাঠকের। আরাধ্য নারী না হলেও যদি পাওয়া যেত, এরকম ভাবনার বাঙ্গালী কম না আশেপাশে, সেই বোধে কাতর হতে পারে পাঠক। জয়তীর মত নারীর সাথে জয়তীর মত করে সাবলীল বন্ধুত্ব ক জন বাঙ্গালী পুরুষ রাখতে পারবে সেটাও আরেক গবেষণার বিষয় হতে পারে। জয়তীর জায়গায় জয়তী না হয়ে কোন পুরুষ মনোবিদ হলে হয়ত বাঙ্গালির স্বাচ্ছন্দ্য বেশি হতে পারতো কি? কিন্তু জয়তী থাকায় বাঙ্গালি কতক ক্ষেত্রে অনুভুতিতে বিছানার মত সুখটা পেয়েছে, সেটা পেত না! যতদুর মনে পড়ে, সমরেশের 'জন্মদাগ'র নারী চরিত্রটির পর এই প্রথম বাংলা লেখায় এতো সাবলীল চটপটে দূরন্ত আধুনিক নারী চরিত্র পাওয়া গেল। জয়তীর প্রেমে পড়ে গেছি আসলে। জয়তীর সাথে আর কিছু না হোক বন্ধুত্ব চাই। হেংলা জংলা যা কিছুই হয়ে যাই না কেন তাতে!
ব্যক্তি পর্যায়ে আরো অনেক ভাললাগা কাজ করছে জোনাকস্নানে জয়তী নিয়ে। লেখকের নামের সাথে মিল তো একটা ব্যাপারই। লেখক বহুদূর যাবে, কতদূর তা জানি না, তবে বহুদূর; এক জয়তীতেই যত ভাললাগা কাজ করছে! অদূর ভবিষ্যতে লেখককে ঘিরে অটোগ্রাফ নিতে থাকা হাজারো লোকের ভিড়ে লেখক আমাকে আলাদা করে চিনে নেবে বা লেখকের সাথে সখ্যতা থাকা নিয়ে আমি বুক ফুলাবো ; ভাবতেই সুখ পাচ্ছি। অনিন্দ্য সুখ।
এই সুখের পাশাপাশি বই পড়ার অভ্যেসটা ফিরিয়ে দেবার জন্য লেখককে কে ধন্যবাদ। জোনাকস্নানে জয়তী পাবেন বইমেলায় bpl এর ৫৮৮ -৫৮৯ নম্বর স্টলে।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:৪৩