যখন মৃত্যুর পথ বেছে নিয়েছি, তখন কেউ একটু বাঁচতে বললে ভীষণ কষ্ট হয়। ভীষণ।
আমার ভেতর তোলপাড় অবস্থা
যন্ত্রণা খুইয়ে খুইয়ে বেরুচ্ছে
যন্ত্রণার ভাষাগুলো এত মজবুত যে
ঈশ্বরকে অপমান করে এখন অবলীলায় মৃত্যুকে মেনে নিতে পারি।
না, কেউ বুঝবে না।
কারো বুঝে নেবার কথাও না। শুধু আন্দাজে কতগুলো ঢিল ছুড়তে পারবে আমার কবরচাপা অনুভূতিগুলোর ওপর।
যিনি জানেন, যাঁর আন্দাজ করতে হয় না- তাঁর ওপরই আমার সমস্ত আক্ষেপ।
এই আক্ষেপ নিয়ে আমি তাঁর কাছেই চলে যেতে চাই।
জাহান্নাম যদি থাকে, তাহলে
সেটা হতেও নিকৃষ্ট কোনো জায়গায়
আমি যেতে চাই,
তবুও এই সুন্দর পৃথিবীতে বেঁচে মরে থাকতে চাই না।
কষ্ট একটা হালকা শব্দ।
অর্থ না বুঝেই মানুষ অন্যের কষ্টে আহা করে।
আমার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হবে না।
চোখের পানি কত সস্তা!
মন চাইলেই কষ্টের সাথে সঙ্গম করে
আর ঝরে ঝরে পড়ে।
আমি ঢেকে যেতে চাই
চিরতরে।
আমার আত্মার এত যন্ত্রণা দেখে
মায়াই লাগছে।
মুক্তি কোথাও নেই।
আপন নীড়েও না,
পরের আশ্রমেও না।
মুক্তি একটা ভ্রম সৃষ্টিকারী শব্দ।
তবুও, ভ্রমগুলো আমাকে জাপটে ধরে,
বলে- ''এভাবে হার মেনে নিও না।
চিন্তা করো সেই দুটি মানুষের কথা,
যাঁরা শুধু তোমাকে পৃথিবীতেই আনেননি,
বাঁচিয়েও রেখেছেন একটা মায়ার ঘরে-
যেখানে তুমি এতটা বছর নির্ভয়ে খেলেছো!''
কিন্তু আমার মন বিগলিত হয় না
একটা ওড়নার দিকে চোখ পড়ে
যেটা মাথায় দিয়ে ঈশ্বরের পানে দু'হাত উঠে যেতো,
ফ্যানটার দিকে চোখ পড়ে,
রান্নাঘরে রাখা ছুরিটার কথা মনে পড়ে,
দরজার ছিটকিনিটার দিকে চোখ পড়ে।
দিনের আলো থাকতেও
ঘরে ফেরার উৎসব থাকতেও
আমার চোখের সব পর্দা বন্ধ হয়ে যায়।
আমি অগ্রসর হতে থাকি,
এটা-ওটা ছুড়ে ফেলি
প্রবল আক্রোশে।
একটা পাকা অভিনয়ের মত
পরিপূর্ণ হতে থাকে আমার সমস্ত সংলাপ।
কখনো চোখ মেলি,
বন্ধ করি,
কল্পনাতেই ইতিমধ্যে নিজেকে
দশবার খুন করে ফেলি।
জঘন্য অবস্থা মনের,
ভীষণ জঘন্য।
আমি আর কখনো সামনে আসতে চাই না।
আমি আর কখনো কোনো কথা লিখতে চাই না।
আমাকে দেখার কিছুই নেই,
আমি অসুস্থ নই।
আমাকে জানার কিছুই নেই,
আমি ভীড়ের মানুষ নই।
আমার দেয়া সমস্ত কথা আমি উঠিয়ে নিচ্ছি
নির্লজ্জের মত।
আমাকে ভুল কিংবা শুদ্ধ- বুঝে নেবার কোনো সুযোগই আমি আর রাখতে চাই না।
আজকাল আমি কারো কোনো কথার ধারে কেটে টুকরো টুকরো হয়ে যাই না,
এজন্যই আমার এত স্পর্ধা।
আমি যা বলেছিলাম, তার চেয়ে বেশি সেগুলোকে অনুভব করেছিলাম।
এখন সব অতীত।
আলো ক্ষণিকের, কারণ সে অমূল্য।
এই পৃথিবী, সমস্ত সৃষ্টি- অন্ধকারেরই গর্ভজাত সন্তান,
কিন্তু ঈশ্বর কোমল ও দয়ার দিকপাল
তাই, দয়া দিয়ে তিনি আমার মত অসংখ্য নিকৃষ্ট মানুষের জন্য
ক্ষণিকের সূর্যকে তৈরি করে দিয়েছেন।
ব্যর্থ আমরা, যারা এই ক্ষণিকটাকে উপভোগ করতে পারি না!
আমরা হতভাগা। আমি হতভাগা।
হতভাগার কোথাও না কোথাও জায়গা হবার দরকার হয়
আমার জায়গাটাও সেখানে নির্ধারিত।
মানুষ আসবে-
মানুষ যাবে-
নিয়মের কারাগারে থেকেও মানুষ সমস্তকিছুতেই উৎসবের গন্ধ খুঁজে নেবে।
আমার বাড়িতে আজ মানুষ আসবে- আমাকে দেখতে,
আসুক।
আমার বন্ধ নিঃশ্বাসের অজুহাতে
তাদের শোক-আহাজারির উৎসবটাও মন্দ হবে না।
চলতে থাকুক।
বিশ্রীভাবে চলতে থাকুক এসব নির্বোধ আবেদন-আলাপন-সমবেদনার অভিনয়।
চলতে থাকুক গোপনে গোপনে যাবতীয় সব ফ্যাসাদ।
গলার জোর যতদিনে উঠে যাবে দেয়ালে পিঠ ঠেকবার পর,
ততদিনে অনেক আমি'র এভাবেই মৃত্যু হয়ে যাক!
আমার আর লিখতে ভাল লাগছে না।