somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রূপান্তরের যাত্রা – পর্ব ১

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

Bismillahir Rahmanir Rahim

Rabbish rahli sadri wa yas-sir li amri wahloul uqdatam mil-lisaani yafqahu qawli.
O my Lord! expand me my breast; Ease my task for me; And remove the impediment from my speech, So they may understand what I say[20:25-28]

জীবনের অনেক স্বপ্ন বা ইচ্ছা আমার পূরণ হয়নি। সে জন্য মাঝে মাঝে দুঃখবোধ হলেও নিজেকে বুঝাই যে, আল্লাহ্‌ যা করেন তা ভালোর জন্যই করেন। আলহামদুলিল্লাহ্‌, কিছু জিনিস আল্লাহ্‌ আমাকে না চাইতেই দিয়ে দিয়েছেন। আবার কিছু স্বপ্ন পূরণ করে দিয়েছেন একেবারে সারপ্রাইজ দিয়ে। আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে তেমনই একটি সারপ্রাইজ গিফট হচ্ছে আমার হজ্জে যাওয়া।

ছোটবেলায় হজ্জের দিন সৌদি চ্যানেল থেকে বিটিভিতে সরাসরি হজ্জ দেখাতো। আরবিতে কি সব বলতো, কিছুই বুঝতাম না। শুধু মানুষ দেখতাম। আর ‘লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক’ ধ্বনি শুনতাম। কেমন সুর করে ,ছন্দ দিয়ে সবাই একসাথে বলতো, খুব ভালো লাগতো শুনতে। ছোট থেকে শুনতে শুনতেই দোওয়াটা মুখস্ত হয়ে গিয়েছিল। প্রতি বছর আমি আগ্রহ নিয়ে হজ্জ দেখি।

যখন বড় হলাম, তখন একদিন শুনলাম যে, ইব্রাহীম (আঃ) যখন হজ্জের জন্য সবাইকে ডাক দিয়েছিলেন, তখন যার যার কানে সেই ডাক পৌছিয়েছে তারাই নাকি শুধু হজ্জে যাবে। এই কথা শোনার পর থেকেই শুধু মনে হতে লাগলো যে, ‘ আমার কানে সেই ডাক কি পৌছিয়েছে?’ প্রতিবার কোন না কোন পরিচিত লোক হজ্জে যান আর আমার মনে হয় এই লোক ডাক শুনেছেন। তখন নিজের কথা চিন্তা করি।

দিন যায় আর আকর্ষন বাড়তে থাকে। আমার স্বামীর সাথে কত প্ল্যান করি। সে বলে, আগে উমরাহ্‌ করে সব দেখে আসবে, তারপর পরেরবার হজ্জ করতে যাবে। আমি বলি, আগে হজ্জ করবো, তারপর যত ইচ্ছা ততবার উমরাহ্‌ করবো ইন শা আল্লাহ্‌। এই নিয়ে কত মনমালিন্য। অথচ দুইজনের কারোই হজ্জ বা উমরাহ্‌ করার সামর্থ্য হয়নি। চিন্তা করলে এখন হাসি আসে। আমি প্রতিদিন দোওয়া করতে থাকি, আল্লাহ্‌ হজ্জ করার তৌফিক দাও প্লিজ।

একটা সময় আমার হজ্জ করা ফরয হয়ে যায়। কিন্তু আমার স্বামীর তখনও হজ্জ ফরয হয়নি। আবার আমার এমন অবস্থাও নেই যে, দু’জনে মিলে যেতে পারবো। মন খুব খারাপ থাকে। মাহরাম ছাড়া তো যেতে পারবো না। আল্লাহ্‌র কাছে দোওয়া করি। প্রতিবার ভাবি, এ বছরই বুঝি যেতে পারবো। কিন্তু যাওয়া আর হয় না। হজ্জের দিন টেলিভিশন দেখি আর চোখ দিয়ে পানি পরে।

২০০৩ সালে আব্বু আর আম্মু হজ্জ করে আসলো। তখন আমার হজ্জ ফরয হয়নি। হলে চলে যেতাম তাঁদের সাথে। এর মাঝে টাকা পয়সা আমি খরচ করে ফেলেছি। হজ্জ ফরয হয়ে বসে আছে আর এখন টাকাও নেই। মন আরো খারাপ থাকে। ২০১১ সালে আমার ছোট দুই ভাই, তানভির আর তাপস হজ্জে যাবে বলে ঠিক হয়। খুব কম সময়ের মাঝে তারা এই সিদ্ধান্ত নেয়। যদিও তানভিরের তখনো হজ্জ ফরয হয়নি, কিন্তু তাপসের হজ্জ ফরয হয়ে গিয়েছে। আম্মু তখন তানভির আর তাপসকে বললো, ‘তানিয়ার তো হজ্জ ফরয হয়ে গিয়েছে। যেহেতু তানভিরের হজ্জ ফরয হয়নি তাহলে তানিয়াই তাপসের সাথে যাক। সে তো মাহরাম ছাড়া যেতে পারবে না’। আমার ভাইয়েরাও দেখল যে আম্মু তো খারাপ কিছু বলেনি। তারাও রাজি হয়ে গেলো। এরপর আম্মু আমাকে ফোন দিল। আমি তো শুনে মহা খুশী। খুশীর চোটে আমার হার্টবিট এত বেড়ে গিয়েছিল যে আমার পাশে যদি সে সময় কেউ থাকতো তাহলে অবশ্যই তা শুনতে পেতো।

ফোন রাখার পর মন খারাপ হয়ে গেলো। শুধু মনে হলো, হায় আল্লাহ্‌ ! আমি আমার স্বামীর সাথে যেতে পারবো না ? আবার ভাবলাম যে হজ্জ ফরয তো আমার হয়েছে। আমি যদি এখন হজ্জে না যাই, তাহলে তো আল্লাহ্‌র কাছে আমাকেই জবাব দিতে হবে। আর নবীজী (সাঃ) তো বলেই দিয়েছেন যে কারো যদি হজ্জ ফরজ হয়, আর সে যদি তা পালন না করে মারা যায়, তাহলে সে ইহুদী হয়ে মারা যাক বা নাসারা হয়ে মারা যাক উনার কিছুই যায় আসে না।

আমি জানি, আমার স্বামী আমার কোন কাজে বাধা দেয় না। এ ব্যাপারেও সে কোন বাধা দিবে না। কিন্তু তার অনেক মন খারাপ হবে। তার স্বপ্ন আমাকে সাথে নিয়ে হজ্জ করা । সেদিন সে অফিস থেকে বাসায় আসলে আমি তাকে আম্মুর আর আমার সিদ্ধান্তের কথা জানালাম। তাকে বুঝালাম যে, ‘দেখো, হজ্জ ফরয আমার। তুমি যদি বাধা দাও তাহলে তুমি গুনাহর ভাগীদার হয়ে যাবে। তাছাড়া টাকা-পয়সা সব সময় হাতে থাকে না। শরীরটাও যে সবসময় আমার ভালো থাকবে তারও কোন গ্যারান্টি নেই। আর আমার সব খরচ এখন আম্মু দিয়ে দিবে। এটা তো আমার জন্য বিশাল একটা সাপোর্ট’। সে শুধু বললো, ‘ঠিক আছে তুমি হজ্জে যাও। কিন্তু আমি যখন হজ্জে যাবো আমি একাই যাবো’। বুঝলাম অনেক অভিমান নিয়ে কথা বলছে। আমি বড় হাসি দিয়ে বললাম, ইন শা আল্লাহ্‌, আল্লাহ্‌ তোমার সাথে আমার যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিবেন।

আম্মু কে সাথে সাথে ফোন দিলাম। বললাম যে, আম্মু, হজ্জে যাচ্ছি ইন শা আল্লাহ্‌। এরপর আমি ছিলাম এক ঘোরের মাঝে। আমি জানলাম আমার হাতে সময় আছে প্রায় দুই মাসের মত। এর মাঝে আমাকে এজেন্সির সাথে কথা বলতে হবে ,অফিস থেকে পারমিশন নিতে হবে, ছুটি নিতে হবে । হজ্জের ব্যাপারে লেখাপড়া করতে হবে, প্রশিক্ষন নিতে হবে, হজ্জের যাওয়ার জন্য জামা কাপড় সহ আনুসাঙ্গিক জিনিসপত্র কিনতে হবে, ডাক্তারের সাথে কথা বলতে হবে, ইত্যাদি হাজারো কাজ। সবচেয়ে বড় কথা এজেন্সি আমার ভাইয়ের বদলে আমাকে নিবে কিনা। আমি এত এক্সাইটেড যে কি বলবো। নিজেরি বিশ্বাস হতে চাচ্ছে না যে হজ্জে যাচ্ছি। তানভির দৌড়াদৌড়ি করে এজেন্সির সাথে সব কিছু ঠিক করার চেষ্টা করতে লাগলো। সে শুধু বললো, ‘আপু ,দোওয়া করতে থাকো। সব ঠিক হয়ে যাবে ইন শা আল্লাহ্‌’। যতক্ষন পর্যন্ত কনফার্ম না হই ততক্ষন পর্যন্ত কাউকে বলতেও চাচ্ছিলাম না।

এরপর শুরু হলো মিরাকেলের উপর মিরাকেল। এজেন্সি রাজি হয়ে গেলো। মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে অফিস থেকে দেড় মাসের জন্য ছুটি পেয়ে গেলাম। এজেন্সি ভুল ঠিকানা দেওয়াতে পুলিশ ভেরিফিকেশনের সময় ঝামেলা হওয়ার আগেই আল্লাহ্‌ সেই সমস্যারও সমাধান করে দিলেন। শুধু আমার জন্য কিছু ভাইয়েরা কষ্ট করলেন। এর মাঝে আর্থিক সমস্যা দেখা দিল। সেটারও সমাধান হয়ে গেলো।

হজ্জের প্রথম শিক্ষা হচ্ছে – আল্লাহ্‌ যদি কারো ভালো চান বা কাউকে ভালো কিছু দিতে চান, সেটা তিনি দিবেনই দিবেন। আল্লাহ্‌ আপনার জন্য চেয়েছেন, আর আপনি তা পাবেন। সারা দুনিয়ার মানুষ বিপক্ষে থাকলেও বা বাধা হয়ে দাঁড়ালেও কোন লাভ নেই। কারো কোন ক্ষমতা নেই আল্লাহ্‌র চাওয়াকে নষ্ট করতে।
১টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ড. ইউনুসের সরকার..........দীর্ঘ সময় দরকার!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ০৭ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:২৫



সম্প্রতি জাতীয় নাগরিক পার্টির সারজিস আলম ড. ইউনুস সম্পর্কে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছে। সে মোটাদাগে যা বলতে চেয়েছে তা হলো, ড. ইউনুসের আরো পাচ বছর ক্ষমতায় থাকা উচিত। অত্যন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেমন মুসলিম ??

লিখেছেন আরোগ্য, ০৭ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ২:০৫



বিলাসিতায় মগ্ন মুসলিম জাতি তার আরেক মুসলিম ভাইয়ের নির্মম হত্যার সংবাদ শুনে কেবল একটি নিঃশ্বাস ছেড়ে নিজেদের রাজভোজ আর খোশগল্পে মনোনিবেশ করে। হায় আফসোস! কোথায় সেই মহামানব যিনি বলেছিলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবাবিল পাখি আরবদেরকে চর্বিত তৃণের ন্যয় করবে! ছবি ব্লগ

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৯


ফিলিস্তিনকে বোমা মেরে ছাতু বানিয়ে ফেললো ইসরাইল, অর্ধলক্ষ মানুষকে পাখি শিকারের মতো গুলি করে হত্যা করলো তারপরও মধ্যপ্রাচ্যের এতোগুলো আরব রাস্ট্র শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছে আর ভাবছে আমার তো কিছুই... ...বাকিটুকু পড়ুন

=সাদা ফুলের মতই হউক তোমার মন= (ছB Bloগ)

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৩:৪৭

০১।


=মন রাখো সাদা ফুলের মত পবিত্র=
যত কুঠিলতা দূর করো, মন করো সাদা নয়নতারার মত,
তুমি হতে থাকবে দূর দুঃখ যত।

০২। =মন করে নাও সাদা=
হিংসাগুলো করো দূর
মন উঠোনে করবে বিরাজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহনা (বোনাস পর্ব)

লিখেছেন সামিয়া, ০৭ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৪:০৮



চারদিক হাততালিতে ভরে উঠলো।
বর্ষা আপু চিৎকার করে বলে উঠলো, "ইশান-অহনা!! অফিস কাপল অফ দ্য ইয়ার!!"
বুলবুল ভাই অহনাকে বললেন, “এখন বলো আসলেই সাগরে ঝাঁপ দিবা, না এই হ্যান্ডসাম যুবকটারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×