বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কি? এমন প্রশ্ন উঠলে আরেকটি প্রশ্ন করা হবে- কোন নির্বাচন। এখন স্থানীয় সরকারের নির্বাচনও দলীয় প্রতীকে, দলীয় মনোনয়নে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলটি অংশ নিয়েছে। কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তারা প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে। এবার বিএনপির যিনি প্রার্থী, তিনি বর্তমান মেয়র। পাঁচ বছর আগে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হয়েছিলেন। তবে এ 'অপরাধে' বিএনপি তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছিল। দলের মধ্য থেকেও নানাভাবে তার বিরোধিতা ছিল। দেখা গেল, নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করেছেন তিনি। সে সময়ে বিএনপি নেতৃত্ব রাজপথের আন্দোলনে শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাত করতে পারবে- এমন ধারণা নিয়ে গুঞ্জন চলছিল। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের আগে বরিশাল, সিলেট, রাজশাহী, খুলনা ও গাজীপুরে তারা জয়ী হয়। ২০০৯ সালে বিপুল জনপ্রিয়তা নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিজয় উৎসবের রঙ শুকাতে না শুকাতেই চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সদ্য বিএনপিতে যোগ দেওয়া আওয়ামী লীগের একজন নেতৃস্থানীয় কর্মীর কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছিলেন চট্টগ্রামের রাজনীতি ও সামাজিক জীবনে মহীরুহ হিসেবে পরিচিত তিনবারের নির্বাচিত মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী। এসব নির্বাচনের ফল থেকে বিএনপি মনে করতে থাকে- জনসমর্থন তো ঢের আছে। শেখ হাসিনার সরকারকে নির্বাচনে নয়, বলপ্রয়োগেই উচ্ছেদ করা যেতে পারে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন তারা বর্জন করে। একই সঙ্গে যাবতীয় আয়োজন চলে নির্বাচন ভণ্ডুল করার। একই ইস্যুতে আন্দোলনে সক্রিয় ছিল জামায়াতে ইসলামী। তাদের অবশ্য লক্ষ্য ছিল যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত দলীয় নেতাদের বিচার কার্যক্রম বানচাল করে দেওয়া। কিন্তু আন্দোলনের মাধ্যমে লক্ষ্য অর্জনে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী, উভয় দল ব্যর্থ হয়। সংসদে টেকনিক্যালি জয়ী হওয়ায় আওয়ামী লীগও তার জনসমর্থন কী পর্যায়ে রয়েছে তার নজির স্থাপন করতে পারছিল না। তারা ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভার নির্বাচনে খুব যে ভালো ফল করেছে, সেটা বলা যাবে না। অনেক আসনে অনিয়ম-কারচুপি হয়েছে। ফলে নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকাণ্ডও প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এমন প্রেক্ষাপটেই আওয়ামী লীগের মুখ রক্ষা করেন নারায়ণগঞ্জের সেলিনা হায়াৎ আইভি। তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে বিপুল ভোটে জয়ী হন। এ নির্বাচনে তার প্রতিপক্ষ ছিল বিএনপি এবং তারা সর্বশক্তি দিয়েই নির্বাচন যুদ্ধে নেমেছিল। বলা যায়, বিএনপি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠের অবস্থা যাচাই করতে নারায়ণগঞ্জকে টেস্ট কেস হিসেবে নিয়েছিল। তাদের ধারণা ছিল, আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা শামীম ওসমান তাদের জন্য ট্রয়ের ঘোড়া হয়ে উঠবেন। বাস্তবে সেটা হয়নি। কুমিল্লা তাদের জন্য আরেকটি টেস্ট কেস। সেখানে তাদের দলীয় শক্তি আছে। বিভেদও আছে। এ বিভেদ আওয়ামী লীগে সম্ভবত আরও বেশি। তবে বিএনপির সুবিধা তাদের প্রার্থী বর্তমান মেয়র। দেখা যাক, কে হারে কে জেতে। নতুন নির্বাচন কমিশনের জন্যও এটা টেস্ট কেস। আওয়ামী লীগ নিশ্চয়ই চাইবে কুমিল্লার মেয়র পদটি দখলে নিতে। তবে একই সঙ্গে স্বচ্ছ ও অবাধ নির্বাচনও নিশ্চিত করতে হবে। নারায়ণগঞ্জের মতো নির্বাচন দেখতে চাইবে দেশবাসী। এতে যদি তারা সফল হয় এবং একই সঙ্গে বিজয় ছিনিয়ে আনতে পারে তাহলে বলতে পারবে জোর গলায়- ভোটের হাওয়া ঘুরছে। অন্যথা হলে দলের মধ্যেও শঙ্কা তৈরি হবে একাদশ জাতীয় সংসদের ফল নিয়ে। বিএনপি নির্বাচন করবে কি করবে না, সেটা নিয়ে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা গণমাধ্যমে, সভা-সমাবেশে অনেক কথা বলছেন। বিএনপি নেতারাও বলছেন। এসব সুলক্ষণ। রাজনীতিতে তর্কর্-বিতর্ক সর্বদা কাঙ্ক্ষিত। এটা জাতীয় সংসদের ফোরামে হলেই সবচেয়ে ভালো। একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর নিশ্চয়ই আমরা সেটা দেখতে পাব।
সুত্র
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ২:০৪