পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগটি গালগল্প ও গুজবভিত্তিক ছিল। সম্প্রতি এমন আদেশ দিয়েছে কানাডার সুপ্রিম আদালত। অন্টারিও সুপ্রিম আদালতের বিচারক ইয়ান নরডেইমার আদেশে স্পষ্টভাবেই বলেন, “অভিযোগের সমর্থনে যেসব তথ্য প্রদান করা হয়েছে তা অনুমানভিত্তিক, গালগল্প আর গুজব ছাড়া কিছু নয়।”
ফলে কথিত ঘুষ প্রদানের জন্য অভিযুক্ত এসএনসি-লাভালিনের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট কেভিন ওয়ালেস, প্রতিষ্ঠানটির আন্তর্জাতিক প্রকল্প বিভাগের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট রমেশ শাহ ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডীয় ব্যবসায়ী জুলফিকার ভূঁইয়া এ মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন।
একই সঙ্গে পদ্মা সেতু প্রকল্পের দুর্নীতি থেকে কলঙ্কমুক্ত হল বাংলাদেশ, দেশের সরকার ও সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। কিন্তু পদ্মা সেতুতে কথিত দুর্নীতির অভিযোগে দেশ ও সরকারের ইমেজ, দেশের অর্থনীতি ও উন্নয়ন পরিকল্পনার যে অপূরণীয় ক্ষতি হল, সেটি ইচ্ছা করলেই পুষিয়ে নেওয়া যাবে না।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এত দিনে দেশের দারিদ্র্য বিমোচনে এই স্বপ্নের সেতু বড় ভূমিকা পালন করত। নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু হলে এতদিনে পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হয়ে যেত। আমাদের প্রবৃদ্ধিও আটের ঘরে যেত। সেতুটি সত্যিকার অর্থেই দেশের উন্নয়নশীল কর্মকাণ্ডের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করত।
দুর্ভাগ্যজনক হলেও এটি সত্য যে, দেশের কথিত একটি সুশীল মহল ও শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি গণমাধ্যম দিনের পর দিন ‘পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি’ নামক গালগল্প সুকৌশলে জনগণকে খাইয়েছে। প্রথমে জনগণের মধ্যে একটি ‘পারসেপশন’ তৈরি করে এবং আস্তে আস্তে গোয়েবলসীয় ফর্মুলায় সেই পারসেপশনকে সত্যের কাছাকাছি নিয়ে যায়।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতির অভিযোগ মিথ্যা ও গালগল্পনির্ভর, তা আজ যদি কানাডার আদলতে প্রমাণিত না হত, বাংলাদেশের শত শত আদালতে অভিযোগটি সত্য নয় প্রমাণিত হলেও সরকারকে কেউ বিশ্বাস করত না। তখন বলা হত, দেশের বিচারবিভাগ নির্বাহীবিভাগ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এমন রায় দিয়েছে। সবচেয়ে মজার বিষয়, কানাডায় আদালতের রায় প্রকাশ হওয়ার পরও সরকারবিরোধী সুশীল সমাজ ও বিএনপির সমস্বরে বলছে, “হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প, অবশ্যই দুর্নীতি হয়েছে।”
আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারের ১৫.২ অনুচ্ছেদে পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। সেই লক্ষ্যে ২০১১ সালে সরকার সাড়ম্বরে ঋণদাতা সংস্থাগুলির সঙ্গে চুক্তি করে। ২০১১ সালের ২৮ এপ্রিল পদ্মার বুকে ভাষা শহীদ বরকত ফেরিতে হয় বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান। সেই অনুষ্ঠানেই সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনগোজি ওকোনজো ইউয়েলা দুর্নীতি ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছিলেন।
প্রারম্ভিক পর্যায়ে সরকার বিশ্বব্যাংককে পদ্মা সেতু প্রকল্পে জড়াতে চায়নি। এই প্রকল্পে এডিবি ঋণদাতা সংস্থাগুলির কনসরটিয়াম প্রধান হওয়ার কথা ছিল। বিশ্বব্যাংক স্বতঃপ্রণোদিত হয়েই ১২০ কোটি ডলার ঋণ দিয়ে পদ্মা সেতুতে যুক্ত হতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। সেনাসমর্থিত তৎকালীন কেয়ারটেকার সরকার ও পরবর্তীতে ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনা সরকার এডিবিকে প্রকল্পের সামনে রেখেই আলোচনা এগিয়ে যাচ্ছিল। যাহোক, ২০১১ সালে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে লিড ডোনার হয় এবং একই বছরের শেষ দিকে কথিত দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন স্থগিত রাখে। এমতাবস্থায় বাংলাদেশের স্বপ্নের সেতু প্রকল্পটি আটকে যায়।
পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ সরকার সরাসরি প্রত্যাখ্যান করলেও তাতে লাভ হয়নি। সরকার বিশ্বব্যাংককে প্রকল্পে রাখতে নানা তৎপরতা শুরু করে। তাতেও লাভ হয়নি। বিশ্বব্যাংক ২০১২ সালের মাঝামাঝি সময়ে সরকারের সঙ্গে ঋণচুক্তিটি বাতিল করে। এরপরও সরকার বিশ্বব্যাংককে প্রকল্পে ফেরাতে বহু চেষ্টা করে; কিন্তু ফলাফল শূন্য।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের সংযুক্ত হওয়ার পর থেকে যদি সংস্থাটির ভূমিকা পর্যালোচনা করা হয়, এটি হলফ করেই বলা যায় যে, সংস্থাটি একটি উন্নয়নশীল দেশের জনগণের সঙ্গে স্রেফ মশকরা করেছে। সংস্থাটির যখন যা ইচ্ছা তা-ই সরকারকে করতে বলেছে। সরকার আপ্রাণ চেষ্টা করেছে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রকল্পে কোনো ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ যেন না থাকে। সরকারের এই দুর্বল জায়গাটিতে বিশ্বব্যাংক দেশীয় কিছু মীরজাফরের পরামর্শে বারবার আঘাত করেছে। দেশীয় চরদের পরামর্শে বিশ্বব্যাংক একটি উন্নয়নশীল দেশের জনগণের ভাগ্য নিয়ে খেলায় মেতে উঠেছিল।
সরকারের ভেতরের কেউ ভাবতেই পারেনি যে, শেষ অব্দি বিশ্বব্যাংক প্রকল্পে আসবে না। তবে ড. মশিউর রহমান এক সাক্ষাৎকারে স্পষ্টই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, পদ্মা সেতু হোক আর নাই হোক, বিশ্ব ব্যাংক ফিরছে না এবং না ফেরার জন্য এমন একটি ভুয়া অভিযোগ সামনে নিয়ে আসা হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের শর্ত মেনে তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এমনকি একজন সৎ আমলা হিসেবে ক্যারিয়ার শেষ করলেও ড. মশিউর রহমানকে কলঙ্কিত হতে হয়েছে। পদ্মা সেতু প্রকল্পের ইন্টেগ্রিটি অ্যাডভাইজর ড. মশিউর রহমানকেও বাধ্যতামূলক ছুটিতে চলে যেতে হয়েছে, সেই সঙ্গে সেতু বিভাগের সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকেও।
বিশ্বব্যাংকের খবরদারি ও নসিহতের নহর এখানেই শেষ হয়নি। সরকারকে কিছু আমলার বিরুদ্ধে মামলা পর্যন্ত করতে বাধ্য করেছে। বিনাদোষে কয়েকজন আমলাকে জেলে যেতে হয়েছে। জেলে যেতে হয়েছে সচিব মোশাররফ হোসেনকে। এক বছর জেল খাটতে হয়েছে। একটি উন্নয়নশীল দেশের উন্নয়নপ্রত্যাশী দর্শনের সঙ্গে এর চেয়ে নির্লজ্জ মিথ্যাচার আর কী হতে পারে! মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গত মাসের ১৪ তারিখের একনেক সভায় বলেছেন, “একজন সচিব তার জীবনে যে মূল্যবান সময় নষ্ট করল, তার সেবা থেকে দেশকে বঞ্চিত করা হল, একটা মিথ্যা অভিযোগ থেকে… অহেতুক একটা মিথ্যা অপবাদ দেওয়া।”
তারপরও বিশ্বব্যাংক থেমে থাকেনি। বিশ্বব্যাংক এমন কোনো ফেলনা প্রতিষ্ঠান নয়। সংস্থাটির ইন্টেগ্রিটি বিভাগ কোনটি সত্যিকারের দুর্নীতি আর কোনটি দুর্নীতি নয়– সে ব্যাপারে ভালো করেও ওয়াকিবহাল। মূলত বিশ্বব্যাংক পরিকল্পনা করেই পদ্মা সেতু প্রকল্পে লিড ডোনার হয়। সংস্থাটির উদ্দেশ্যই ছিল, প্রকল্পে দুর্নীতি হচ্ছে এমন একটি জনপ্রিয় কেচ্ছা গাইয়ে দেশের জনগণকে উসকে দেওয়া এবং সরকারকে বড় ধরনের চাপে ফেলে দেওয়া। বিশ্বব্যাংক লিড ডোনার থেকে সরে যাওয়ায় বাকি সংস্থাগুলি প্রথা অনুযায়ী প্রকল্প থেকে সরে যায়।
যাহোক,মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতির অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে পদ্মা সেতু নিজেদের অর্থায়নে করার ঘোষণা দিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন:
“পদ্মা সেতু করার জন্য দেশে আমাদের ১৬ কোটি মানুষ আছে, ৮০ লাখ প্রবাসী আছে। বাংলার মানুষ সারা জীবন কি অন্যের সাহায্যে চলবে? নিজের পায়ে দাঁড়াবে না? আত্মনির্ভরশীল হবে না? পদ্মা সেতু আমরা করবই।”
নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু করার ঘোষণা দেওয়ার পরেও সরকার বিশ্বব্যাংককে ফেরাতে চেষ্টা করে। বিশ্বব্যাংক কয়েকটি শর্ত দেয়। তাদের শর্ত অনুযায়ী মন্ত্রীর অপসারণ ও কর্মকর্তাদের ছুটিতে পাঠানো সবই হল। বিশ্বব্যাংক আবারও পদ্মা সেতু প্রকল্পে ফেরার ঘোষণা দিল। তারপরও বিশ্বব্যাংক টালবাহানা চালিয়ে যায়।
সংস্থাটি প্রকল্পে ফেরার পরপরই দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে। দুদকের তদন্তে বিশ্বব্যাংক পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব হাতে তুলে নেয়। মজার বিষয় হল, দুদক প্রাথমিক তদন্তে কোনো দুর্নীতির প্রমাণ পায়নি। তারপরও দুদক একটি মামলা করতে বাধ্য হয়। শুধু তাই না, দুদক জানায়, “ঘুষ লেনদেন না হলেও তার একটি ষড়যন্ত্র হয়েছিল এবং তাতে সাত ব্যক্তির জড়িত থাকার প্রমাণ তারা পেয়েছে।”
এখানে প্রশ্নটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দুদক আসলেই কি কারো জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছিল? নাকি বিশ্বব্যাংক, সরকারবিরোধী কয়েকটি প্রথম সারির পত্রিকা ও দেশে বিদেশী চর, যারা ‘সুশীল’ নামে পরিচিত তাদের পরিচালিত প্রোপাগান্ডার হাত থেকে বাঁচার জন্য এবং দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্পের স্বার্থে ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে– এমনটা বলতে বাধ্য হয়েছিল?
যদি দুদক প্রমাণ পেয়েছে বলতে বাধ্য হয়ে থাকে, সেটি খুবই দুঃখজনক। দেশের স্বার্থে আমরা কয়েকজন মানুষকে দুর্নীতিবাজ হিসেবে চিহ্নিত করে জেলে পাঠাতে বাধ্য হয়েছি। আর বিশ্বব্যাংক ও দেশের কথিত ‘অান্না হাজারেরা’ নীরবে আনন্দে বগল বাজিয়েছেন। কানাডার রায়ের পর সরকারের একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী জানালেন, বিশ্বব্যাংক তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনকেও রিমান্ডে নেওয়ার জন্য চাপ দিয়েছিল।
এতকিছুর পরও সংস্থাটিকে সরকার প্রকল্পে ধরে রাখতে পারেনি। তবে পদ্মা সেতু প্রকল্পে সংস্থাটির প্রবেশ, দুর্নীতির অভিযোগের নাটক মঞ্চায়ন ও দেশের সরকারের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের প্রাতিষ্ঠানিক আচরণ বিশ্লেষণ করলে দুটি ধারা স্পষ্ট দেখতে পাওয়া যায়। একটি ধারা হল, যে কোনোভাবেই হোক প্রকল্পে দুর্নীতি হয়েছে সেটি প্রমাণ করাই ছিল সংস্থাটির মূল লক্ষ্য। প্রকল্পে বিশ্বব্যাংককে রাখতে আবুল হোসেনের মন্ত্রিত্ব থেকে সরে দাঁড়ানো ও কয়েকজন আমলাকে জেলে পাঠানোর সরকারি সিদ্ধান্তগুলি দুর্নীতি কিংবা দুর্নীতির ষড়যন্ত্র হয়েছে বলে সরকারকে পরোক্ষভাবে মানতে বাধ্য করেছে বিশ্বব্যাংক। দ্বিতীয়ত, প্রকল্পে অর্থায়নের ক্ষেত্রে সংস্থাটি আন্তরিকতার অভাব। সংস্থাটির কাছে পদ্মা সেতু হওয়ার চেয়ে গালগল্পনির্ভর দুর্নীতির কেচ্ছার অজুহাতে পদ্মা সেতু না হওয়ার বিষয়টিই প্রাধান্য পায়।
ফলে এটি সহজেই অনুমানযোগ্য যে, বিশ্বব্যাংক কেবল সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য দেশের ১৬ কোটি মানুষের সঙ্গে চারটি বছর মশকরা করেছে। সংস্থাটি দেশীয় কিছু চরের ব্যক্তিস্বার্থের জন্য একটি বায়বীয় অভিযোগ উত্থান করে। বিশ্বব্যাংক এবং দেশীয় চরেরা ভালো করে বোঝে, একটি দুর্নীতিপ্রবণ সমাজে সরকার কতটুকু নাজুক অবস্থায় থাকে।
যাহোক, বিশ্ব ব্যাংক চলে যাওয়ার পর শেখ হাসিনা সরকার দেশীয় অর্থায়নেই প্রকল্প শুরু করে। বাংলাদেশ প্রবল আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে। পদ্মা সেতু এখন বাংলাদেশের আগামী অর্থনীতির বাস্তবতা। বছর দেড়েকের মধ্যেই খুলে যাচ্ছে পদ্মা সেতুর দ্বার।
কানাডার সুপ্রিম আদালতের রায়ের পর সরকার, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী এবং দলের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়ায় আসে। বিএনপির মতো দু-একটি গুজবনির্ভর রাজনৈতিক দল এবং কথিত সুশীল ছাড়া বাকি সবার প্রতিক্রিয়া মোটা দাগের মধ্যে পড়ে। সবাই সরকারকে বিশ্বব্যাংকের কাছে জবাব চাইতে বলে। কেউ কেউ বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা এবং বাংলাদেশে সংস্থাটির নিজস্ব দুর্নীতি খতিয়ে দেখতে সরকারকে আহ্বান জানানো হয়।
তবে যাদের স্বার্থে ও পরামর্শে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের এত বড় ক্ষতি করল তাদের ব্যাপারে আমাদের আলোচনাটি তেমন গতি পাচ্ছে না। যারা এই কাজটি করিয়েছে তাদের দোষ বিশ্বব্যাংকের তুলনায় ছোট করে দেখা হচ্ছে। যেমনভাবে আমরা মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতার জন্য কেবল পশ্চিমা দেশগুলিকে দায়ী করি। যারা নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে পশ্চিমাদের হাতে-পায়ে ধরে, যুদ্ধের খরচ দিয়ে হলেও প্রতিবেশীর বাড়িতে বোমা নিক্ষেপ করা জন্য পশ্চিমাদের চাপ দেয় তাদের দোষ আলোচনাতেই আনতে চাই না।
কানাডার সুপ্রিম আদালতের রায়ের পর আবুল হোসেনের প্রতিক্রিয়াটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি তাঁর সময়ে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে চীনে সাক্ষাতের বরাত দিয়ে জানান যে, তিনি (বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট) তখন আমাকে বলেছেন, “আমি বুঝতে পারছি, পদ্মা সেতু ও আপনি ষড়যন্ত্রের শিকার। বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তারা বাংলাদেশের গণমাধ্যম ও বিশিষ্ট কতিপয় লোকের কথায় প্রভাবিত হয়েছেন। এ জন্য আমি অনুতপ্ত।”
প্রধানমন্ত্রীও একনেকে সভায় বলেন, “একজনের স্বার্থে আঘাত লাগায়” বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে প্রকল্প থেকে সরে যায়। তবে সম্প্রতি সংসদে তিনি স্পষ্ট করেই বলেন, “হিলারি ক্লিনটনকে দিয়ে পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন আটকেছিলেন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং তাতে বাংলাদেশের এক সম্পাদকেরও ভূমিকা ছিল।”
তবে প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের প্রতিক্রিয়াটি দেশের সাধারণ মানুষদের প্রত্যাশার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তিনি বলেন, “এটা লজ্জাজনক যে, আমাদের সুশীল সমাজের একটা অংশ দ্রুত আমাদের সরকারের বিরুদ্ধে ও বিশ্বব্যাংকের পক্ষে অবস্থান নেন। তারা বেশ কয়েকজন পরিশ্রমী, সম্মানিত যোগ্য মানুষের গায়ে কালিমা লেপন করেছেন… যারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়, তারা দেশপ্রেমিক নয়।”
তিনি ওইসব কথিত সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের মাফ চাওয়ার জন্য আহ্বান জানান।
কানাডার আদালতের রায়ের পর বাংলাদেশের সরকারের উচিত হবে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা। দেশীয় যেসব সুশীল ও গণমাধ্যম পদ্মা সেতুর অর্থায়নে কোনো না কোনো ফর্মে বিরোধিতা করেছে কমিটি তাদের ভূমিকা তদন্ত করে জনগণকে অবহিত করুক। পাশাপাশি, একটি বিদেশি সংস্থার সঙ্গে কথিত দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে দেশের ইমেজ নষ্ট করা ও অর্থনৈতিক সুবিধা থেকে দেশকে বঞ্চিত করার কর্মটি রাষ্ট্রদ্রোহের পর্যায়ে পড়ে কি না, সেটিও বিবেচনায় নেওয়া উচিত। যদি সেটি রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড হয়ে থাকে, তাহলে সরকারের উচিত হবে তদন্ত সাপেক্ষে বিশ্বব্যাংকের দেশীয় সহযোগীদের আইনের আওতায় আনা।
কারণ সত্যিকার অর্থেই এই কথিত সুশীলরা সমাজের জন্য ভয়ংকর। এখনই পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে তারা আরও বড় ধরনের দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হতে পারে।
সূত্র
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মার্চ, ২০১৭ ভোর ৬:৪৮