somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানবতার শত্রু মোসাদ, কাাদের বন্ধু? আপনারা বলেন দেখি।

১৬ ই মে, ২০১৬ রাত ১:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ব্রিটেনের দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকার মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক সংবাদদাতা রবার্ট ফিস্ক ২০০৭ সালের জুলাইয়ে শিকাগো ও জন এফ কেনেডি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই অধ্যাপক স্টিফেন ওয়াল্ট ও জন মেরশিমার গবেষণা প্রবন্ধের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রে ইহুদি তথা ইসরাইলের বিপক্ষে কথা বলা অতি দুঃসাহসিক। শক্তিশালী ইহুদি লবির কারণে মার্কিন নীতি নেতিবাচকভাবে প্রবাহিত হচ্ছে এবং ইহুদিবিরোধী মনোভাব পাকাপোক্ত হচ্ছে খোদ মার্কিন মাটিতেই। মার্কিন প্রধান প্রেস ও টেলিভিশন প্রতিষ্ঠানগুলোতে পেশাদার ব্যক্তিরা বেশ প্রভাবশালী হয়ে আছেন দীর্ঘ দিন ধরে।
সেখানে মিডিয়া ইসরাইলবিরোধী তথ্য প্রদানে খুব কমই সাহসিকতা দেখায়। এ কথা কেউই অস্বীকার করে না যে, বিশালসংখ্যক ইসরাইলি লবি প্রতি ক্ষণে কাজ করে যাচ্ছে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য নীতিকে তাদের মতো করে প্রভাবিত করতে। তিনি আরো উল্লেখ করেন, সঙ্ঘবদ্ধ ইহুদি গোষ্ঠী মার্কিন প্রশাসনে ইসরাইলের হয়ে কাজ করছে। এ রকম একটি সঙ্ঘবদ্ধ গোষ্ঠী হলো ‘এআইপিএসি’ (দ্য আমেরিকান ইসরাইল পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটি)। কংগ্রেস থেকে পেন্টাগন সবখানে তাদের প্রচারণা। তারা সেসব কংগ্রেসম্যানদের টার্গেট করে, যারা অতি সহজে তাদের কথায় দুর্বল হয়ে পড়বে বলে মনে হয়। এই লবির কারণেই এখনো প্রাণ দেয় ফিলিস্তিনিরা একেবারে অসহায়ের মতো। ইহুদি লবির প্রভাবের অন্যতম একটি উদাহরণ হলো হামাস সরকার। কোনেভাবেই এ সরকার সমর্থন পেল না মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। এই ইহুদিদের একমাত্র দখলী ভূখণ্ড ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থার নাম মোসাদ। সারা বিশ্বে এই গোয়েন্দা সংস্থার রয়েছে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। যার মূল লক্ষ হচ্ছে ফিলিস্তিনের মুক্তি আন্দোলন প্রতিহত করা ও মুসলমানদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা। এ গোয়েন্দা সংস্থাটি অসংখ্য গুপ্তহত্যা ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত। পশ্চিমা সাহায্য ও সহায়তাপুষ্ট ইসরাইলের এ গোয়েন্দা সংস্থা পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর জন্যই এখন চ্যালেঞ্জ।
মোসাদ গঠন : আরব লিগের প্রত্যাখ্যানের মুখে দখল ভূমিতে ইসরাইলকে ইহুদি রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয় ১৯৪৮ সালের ১৪ মে। ১৯৪৯ সালের ১৩ ডিসেম্বর Central Institute of Coordination নামে মোসাদের কর্যক্রম শুরু হয়। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে এটি প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৫১ সালের মার্চে। প্রতিষ্ঠার পর থকেই মোসাদকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন রাখা হয়। ইসরাইলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড বেন গুরিয়ান মোসাদ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি মনে করতেন গোয়েন্দাবৃত্তি ইসরাইলের ফার্স্ট ডিফেন্স লাইন। টার্গেট দেশ থেকে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, সন্ত্রাস দমন ও অপারেশনের পর এগুলো গোপন রাখা হচ্ছে মোসাদের প্রধান কাজ। মোসাদ ইসরাইলের প্রধান গোয়েন্দা সংস্থা। এর কাজের রিপোর্ট ও গোয়েন্দা তথ্য সরাসরি ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীকে দিতে হয়। এর নীতিমালা ও কার্যক্রম অনেকটা যুক্তরাষ্ট্রের সিআইএ, যুক্তরাজ্যের এমআই সিক্স ও কানাডার সিএসআইএস এর অনুরূপ। মোসাদের হেডকোয়ার্টার তেলআবিবে। এর কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যা ১ হাজার ২০০। অবশ্য ১৯৮০ সালের শেষ দিকে এ সংখ্যা ২ হাজারের বেশি ছিল। মোসাদ সামরিক সার্ভিস নয়। মিলিটারি র‌্যাংঙ্কিং এখানে প্রয়োগ করা হয় না। যদিও এর অধিকাংশ কর্মকর্তাই ইসরাইলের ডিফেন্স ফোর্সের।
কর্মকৌশল : কাজের সুবিধার্থে মোসাদকে আটটি বিভাগে ভাগ করা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য বিভাগগুলো হচ্ছে তথ্য সংগ্রহ বিভাগ, রাজনৈতিক যোগাযোগ বিভাগ, বিশেষ অপারেশন বিভাগ, ল্যাপ বিভাগ, গবেষণা বিভাগ, প্রযুক্তি বিভাগ। তথ্য সংগ্রহ বিভাগ হচ্ছে মোসাদের সবচেয়ে বড় বিভাগ। গুপ্তচরবৃত্তির সময় এর কর্মীরা বিভিন্ন রূপ নেয়। একই কাজে বহুরূপী আচরণ প্রায়ই লক্ষণীয়। এ বিভাগের কাজের প্রধান ক্ষেত্র হচ্ছে কূটনৈতিক ও বেসরকারি কর্মকর্তা। মোসাদের মাঠ পর্যায়ের গোয়েন্দাদের কাটসাস বলে। সিআইএ এ পর্যায়ের গোয়েন্দাদের কেইস অফিসার বলে। ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে ১৩ থেকে ১৪টি অপারেশন এ বিভাগ এক সাথে করতে পারে। এই বিভাগের অধীনে অনেক ডেস্ক আছে। সেখানে একজন করে ভূ-রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে সক্রিয় স্টেশনগুলোর সাথে এই বিভাগ যোগাযোগ রক্ষা করে। রাজনৈতিক যোগাযোগ বিভাগের কর্মীরা দেশের রাজনৈতিক নেতা, অন্য দেশের গোয়েন্দা সংস্থা ও যেসব দেশের সাথে ইসরাইলের কূটনৈতিক যোগাযোগ নেই সেসব দেশের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে। প্রয়োজনে অর্থ ও নারীসহ নানাবিধ সুবিধা দিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে। এ ছাড়া অন্য দেশের কূটনৈতিক ও দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সাথেও এই বিভাগের কর্মীরা ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখে। বিশেষ উদ্দেশ্যে বিভাগকে মোসাদ মেটসাদা (Metsada) বলে। গুপ্তহত্যা, আধা-সামরিক অপারেশন, নাশকতামূলক কাজ, রাজনৈতিক কলহ তৈরি, মনস্তাত্বিক যুদ্ধাবস্থা তৈরি বা প্রোপাগাণ্ডা চালানো এই বিভাগের কাজ। মোসাদ গোয়েন্দা কর্মকাণ্ডের প্রতিদিনের তথ্য এবং সাপ্তাহিক ও মাসিক পর্যবেক্ষণ রিপোর্ট তৈরি করে। গোয়েন্দা তৎপরতা চালানোর সুবিধার্থে বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে ১৫টি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে।
গোয়েন্দা কমিউনিটি : গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, ধারণা ও তত্ত্ব প্রচার, গবেষণা কাজের জন্য ইসরাইলি ইন্টেলিজেন্স কমিউনিটি গঠন করা। ইসরাইলের ভেতরে ও বাইরে কাজ করে এমন সব গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে এই কমিউনিটি গঠন করা হয়। এর বর্তমান প্রধান সদস্য হচ্ছে, আমান, মোসাদ ও শাবাক। মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স, এয়ার ইন্টেলিজেন্স ডিরেক্টরেট, নেভাল ইন্টেলিজেন্স ডিপার্টমেন্ট, ইন্টেলিজেন্স কর্পস, চারটি আঞ্চলিক গেয়েন্দা সংস্থা আমান’র অন্তর্ভুক্ত। মোসাদের কার্যক্রম হচ্ছে দেশের বাইরে। সাবাক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ইসরাইলের অভ্যন্তরে ও দখলকৃত ভূখণ্ডে গোয়েন্দা তৎপরতা চালানোর জন্য। এ ছাড়াও ইসরাইলের পুলিশ বাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সেন্টার ফর পলিটিক্যাল রিসার্স এই কমিউনিটির অন্তর্ভুক্ত। সোভিয়েত ব্লকে ইহুদি ধর্ম প্রচারের দায়িত্বে থাকা নেটিভ ও গোপন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও নিয়ন্ত্রণের জন্য গঠিত লেকেম এই কমিউনিটির অন্তর্ভুক্ত ছিল। নেটিভকে বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন অন্য বিভাগ হিসেবে নেয়া হয়েছে। আর লেকেম বিভাগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অবশ্য এর কার্যক্রম বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয়েছে।
অপহরণ ও হত্যা : ইসরাইলের নিরাপত্তা প্রশ্নে বিভিন্ন প্রচেষ্টা ও কর্মকাণ্ড মোসাদকে গোয়েন্দাবৃত্তিতে সর্বোচ্চ মান দিয়েছে। দুর্ধর্ষ এই গোয়েন্দা সংস্থার মূল লক্ষ্য হচ্ছে ফিলিস্তিনি মুক্তি আন্দোলন প্রতিহত করা ও আরব বিশ্বসহ মুসলমানদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা। ইসরাইল প্রসঙ্গে বিতর্কিত বা রাজনৈতিক প্রশ্ন নিয়ে দীর্ঘস্থায়ী বাদানুবাদ তৈরি হলে এ সংস্থা তার কর্মীদের ওই ব্যক্তি বা সংশ্লিষ্ট কাউকে অপহরণ বা হত্যা পর্যন্ত করত। মোসাদ বরাবরই যেকোনো অপারেশন যুক্তরাষ্ট্রের সিআইএ’র ছদ্মাবরণে করত। এই প্রবন্ধে এমন কিছু ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে যা পাঠকদের মোসাদের অপহরণ কর্মকাণ্ড, হত্যা ও বিভিন্ন ক্রাইম সম্পর্কে জানতে সাহায্য করবে।
দক্ষিণ আমেরিকায় মোসাদ : অনেক দিন থেকে নাজি ওয়ারে অভিযুক্ত এডল্ফ ইচম্যানকে খুঁজছিল মোসাদ। ১৯৬০ সালে আর্জেন্টিনায় তার খোঁজ পাওয়া যায়। ওই বছরের ১১ মে মোসাদের এজেন্টদের একদল টিম তাকে গোপনে আটক করে ইসরাইল নিয়ে আসে। তার বিরুদ্ধে উত্তর ইউরোপে ক্যাম্প গঠন ও পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করে ইহুদিদের হত্যার অভিযোগ আনা হয়। ইসরাইলের আদালতে একটি সাজানো বিচারের মাধ্যমে তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়। একই অভিযোগে জোসফ মেনজেলকে আটকের চেষ্টা ব্যার্থ হয়। ১৯৬৫ সালে নাযি ওয়ারে অভিযুক্ত লাটভিয়ার বৈমানিক হার্বার্টস কুকার্সকে উরুগুয়ে থেকে ফ্রান্স হয়ে ব্রাজিল যাওয়ার পথে মোসাদের এজেন্টরা হত্যা করে। ১৯৭৬ সালের ২১ সেপ্টেম্বর বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও কূটনৈতিক এবং চিলির সাবেক মন্ত্রী অরল্যান্ডো লেটেলারকে ওয়াশিংটন ডিসিতে গাড়িবোমায় হত্যা করে চিলির ডিআইএনএ’র এজেন্টরা। পরবর্তী সময়ে জানা যায়, এটি ছিল মোসাদের একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তার সাথে তার সহকারী রনি কার্পেন মোফিট্টও খুন হন। রনি কার্পেন ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।
পশ্চিম ইউরোপে মোসাদ : ১৯৬০ সালে ফ্রান্সের মিরেজ ফাইভ জেড বিমানের প্রযুক্তিগত দিকের বিভিন্ন দলিল চুরি করে নেয় মোসাদ। পরে ইসরাইল ওই প্রযুক্তিকে আরো উন্নত ও যেকোনো আবহাওয়ার উপযোগী করে জে-৭৯ নামের ইলেক্ট্রিক টার্বোজেট ইঞ্জিন তৈরি করে। ফ্রান্স শিপইয়ার্ডে পাঁচটি মিসাইল বোট দিতে ফ্রান্সের সাথে চুক্তি করে ইসরাইল। কিন্তু ১৯৬৯ সালের ফ্রান্সে বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞার আগে ইচ্ছাকৃতভাবে মিসাইল বোট সরবরাহ করেনি মোসাদ। ১৯৬৮ সালের একটি ঘটনা। ইসরাইলের একটি শিপে ২০০টন ইউরেনিয়াম অক্সাইড সরবরাহ করতে একটি কার্গো বিমান যাত্রা শুরু করেছিল। জার্মানি কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিমানটি তাদের রাডারের বাইরে চলে যায়। পরে তুরস্কের একটি পোর্টের রাডারে এটি ধরা পড়লে ওই কার্গো বিমান থেকে বলা হয় পথ হারিয়ে তারা এ দিকে চলে এসেছে ও তাদের জ্বালানি ফুরিয়ে গেছে। গালফ থেকে জ্বালানি নিয়ে তারা আবার ফিরে যাবে। পরে তার নিরাপদে ওই ইউরেনিয়াম অক্সাইড ইসরাইলের একটি শিপে খালাস করে। এটি ছিল লেকেম ও মোসাদের একটি যৌথ অপারেশন। এটি অপারেশন প্লামব্যাট নামে পরিচিত। ইউরেনিয়াম অক্সাইড পারমাণবিক বোমার কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ১৯৭২ সালে মোসাদ জার্মানির বিভিন্ন টার্গেট ব্যক্তির কাছে পত্রবোমা পাঠিয়েছিল। চিঠি খুললেই বোমা ফুটবে ও সে মারা যাবে। অধিকাংশ চিঠিই পাঠানো হয়েছি নাজি যুদ্ধে অভিযুক্ত এলোস ব্রানারের কাছে। অবশ্য মোসাদের এ প্রচেষ্টা জানাজানি হয়ে যায় এবং ব্যর্থ হয়।
পূর্ব ইউরোপ : যুদ্ধে নিঃশেষিত বসনিয়া হার্জেগোভিনিয়ার রাজধানী সারাজেভো থেকে বিমান ও স্থলপথে ইহুদিদের ইসরাইলে স্থানান্তর করা হয় মোসোদের পরিকল্পনায়।
মিসর ও সিরিয়া : টার্গেট দেশ মিসরে ওলফগ্যাং লজের নেতৃত্বে গোয়েন্দা মিশন পাঠায় মোসাদ ১৯৫৭ সালে। ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত তিনি মিসরে গামাল আবদেল নাসেরের সামরিক বাহিনী ও তার যুদ্ধোপকরণ ও কৌশল জানতে গোয়েন্দা তৎপরতায় নেতৃত্ব দেন। ১৯৬৪ সালে লজের চেয়ে বড় মিশন নিয়ে মিসরে গোয়েন্দা তৎপরতা শুরু করেন মোসাদের আর এক স্পাই ইলি কৌহেন। তার সহযোগিতায় ছিল হাই প্রোফাইলের বেশ কয়েকজন স্পাই। ইলি কৌহেন ১৯৬৫ সালের জানুয়ারিতে সিরিয়ায় রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে তথ্য পাঠানোর সময় হাতেনাতে গ্রেফতার হন। মিসর ও সিরিয়ায় মোসাদ উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন রেডিও লিঙ্ক স্থাপন করেছিল। ১৯৬৭ সালে আরব-ইসরাইল যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে ইসরাইলের বিপক্ষে ছিল মিসর, জর্দান ও সিরিয়া। এই যুদ্ধটি সিক্স-ডে ওয়ার নামে পরিচিত। যুদ্ধ শেষ হলেও এর রেশ ছিল দীর্ঘ দিন। ১৯৬৯ সালের ১৯ জুলাই মিসরের ছোট দ্বীপ গ্রিন আয়ারল্যান্ডে ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্স আকস্মিক হামলা চালায়। মোসাদ এই অভিযানের নাম দেয় অপারেশন বালমাস সিক্স। পরবর্তী সময়ে অনেক ইসরাইলি ইহুদি ও পর্যটকরা সিনাই হতে মিসর আসে অবকাশ যাপনের জন্য। মোসাদ নিয়মিত এসব পর্যটকের নিরাপত্তা দেখভালের জন্য গোয়েন্দা পাঠাত। ধারণা করা হয় এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৬ সালে লেবানন যুদ্ধ সঙ্ঘটিত হয়।
ইরান : ইসরাইল ইরানকে বড় ধরনের হুমকি মনে করে। মোসাদ মনে করে ২০০৯ সালের মধ্যে ইরান পারমাণবিক শক্তিধর দেশে পরিণত হবে। যদিও অনেকের ধারণা এই সালটি হবে ২০১০। সম্প্রতি মোসাদের ডিরেক্টর মীর দাগান তার এক বক্তৃতায় এ কথা স্বীকারও করেছেন। ফলে মোসাদের তৎপরতা ইরানে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। সিআইএ এ কাজে মোসাদকে সহযোগিতাও করছে। ২০০৭ সালের ১৫ জানুয়ারি ইরানের পারমাণবিক বিজ্ঞানী ড. আরদেশির হোসেনপুরকে হত্যা করে মোসাদ। মৃত্যুর ছয় দিন পর আল কুদস ডেইলি তার নিহতের খবর প্রচার করে। প্রথম দিকে তিনি গ্যাস বিষক্রিয়ায় মারা গেছেন বলে ধারণা করা হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা সে দেশের প্রভাবশালী পত্রিকা ওয়াশিংটন পোস্টের কাছে এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। ওয়াশিংটনের প্রাইভেট গোয়েন্দা সংস্থা স্ট্রাটফোর হোসেনপুরকে মোসাদের টার্গেট ছিল বলে উল্লেখ করে। অবশ্য মোসাদ এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। হোসেনপুর ছিলেন ইরানের একজন জুনিয়র সহকারী অধ্যাপক। ২০০৩ সাল থেকে ইরানে মোসাদের হয়ে কাজ করতেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী রেজা আসগারি। তিনি মোহাম্মদ খাতামি প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সময়ে ইরানের সহকারী প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছিলেন। ইরানের বর্তমান প্রেসিডেন্ট তাকে সরকারের কোনো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে বসাননি।
ইরাক : সিআইএ’র সহায়তায় ইরাকে বাথ পার্টির শীর্ষনেতা আরিফ রহমান ও পরবর্তী সময়ে সাদ্দাম হোসেন ক্ষমতায় এলেও ইরাককে বিশ্বাস করত না ইসরাইল। এজন্য ইরাকে ইসরাইলের গোয়েন্দা তৎপরতার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। ইরাকে সিআইএ মোসাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে। ইরাকে অনেক বড় অপারেশন চালায় মোসাদ। এর একটি হচ্ছে ১৯৬৬ সালে। মিগ-২১ জঙ্গি বিমানের পাইলট ছিলেন খিষ্টান বংশোদ্ভূত মুনির রিদফা। ১৯৬৬ সালে তাকে বিমানসহ কৌশলে ইরাক থেকে ইসরাইল নিয়ে আসে মোসাদ। তার কাছ থেকে অনেক তথ্য সংগ্রহ করা হয়। ব্যবহার করা হয় ইরাকবিরোধী প্রচারণায়। সংবাদ সম্মেলন করে ইরাকে খ্রিষ্টান নিধনের প্রচারণাও চালানো হয়। ১৯৭৮ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত ইরাকের অসরিক নিউকিয়ার রিঅ্যাক্টরের (নিয়ন্ত্রিত নিউকিয়ার শক্তি উৎপাদনের জন্য যন্ত্রবিশেষ) স্পর্শকাতর কিছু বিষয়ে গোয়েন্দা তৎপরতা চালায়। এই অপারেশনের নাম দেয়া হয় অপারেশন স্ফিঙ্কস। ইরাক এই গবেষণা সম্পন্ন করতে পারলে পারমাণবিক গবেষণায় বিশ্বের যেকোনো দেশের চেয়ে অগ্রবর্তী থাকত। মোসাদ মনে করেছিল এখনই যদি এই প্রোগ্রাম ধ্বংস করা না হয় তাহলে শিগগিরই গবেষণা সেন্টারে পারমাণবিক অস্ত্রের কাঁচামাল সরবরাহ করা হবে। এ জন্য ১৯৮১ সালের ১৭ জুন এফ-১৬ এ যুদ্ধ বিমানে বিপুল গোলাবারুদসহ একটি ইউনিটকে পাঠানো হয় ইরাকের এই প্রকল্প ধ্বংস করে দেয়ার জন্য। ইরাক কিছু বুঝে ওঠার আগেই বোমা হামলা করে অসরিক নিউকিয়ার রিঅ্যাক্টরের ব্যাপক ক্ষতি করে। ইরাক পরে আর এ প্রকল্পটি অব্যাহত রাখতে পারেনি। এই হামলাটি অপারেশন অপেরা নামে পরিচিত। কানাডার বিজ্ঞানী গিরাল্ড বুল বিভিন্ন দেশে স্যাটেলাইট গবেষণায় কাজ করতেন। ইরাক স্যাটেলাইট উন্নয়ন প্রোগ্রাম ‘প্রজেক্ট ব্যবিলন’-এর ডিজাইন করলে তাকে ১৯৯০ সালের ২২ মার্চ বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে তার বাড়ির বাইরে গুলি করে হত্যা করে মোসাদ।
ইতালি : ইসরাইলের পারমানবিক প্রোগ্রামের গোপন তথ্য ব্রিটিশে পাচার করার কারণে ১৯৮৬ সালে ইতালির রাজধানী রোম থেকে ইসরাইল নাগরিক মোডাচাই ভ্যানুনুকে অপহরণ করে ইসরাইল নিয়ে আসে মোসাদ। পরে তাকে জেলে ঢুকানো হয়।
ফিলিস্তিনের কয়েকটি অভিযান : মিউনিখ ম্যাসাকারে অভিযুক্ত ইসারাইলের নাম দেয়া ব্লাক সেপ্টেম্বরের সদস্যদের ফিলিস্তিনে ১৯৭২ সালে হত্যা করা হয়। এই অপারেশনের নাম দেয়া হয় অপারেশন র‌্যাথ অব গড। ১৯৭৩ সালের জুলাইয়ে নিরপরাধ আহমেদ বৌচুকিকে তার গর্ভবতী স্ত্রীর সাথে হাঁটার সময় হত্যা করা হয়। তাকে ব্লাক সেপ্টেম্বরের অভিযুক্ত আলী হোসেন সালামেহর আশ্রয়দাতা মনে করা হয়েছিল। ১৯৭৮ সালে হত্যা করা হয় পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইন নেতা ওয়াদি সাদাদকে। ১৯৭৯ সালে হত্যা করা হয় পিএলও’র আসসাদিকা নেতা জুহাইর মুহসিনকে। ফাতাহ নেতা আবু জিহাদকে ১৯৮৮ সালে হত্যা করে টুনিস রেইড নামের ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্সের এক সদস্য। ফিলিস্তিনের ইসলামিক জিহাদ নেতা ফাতি শিকাকিকে হত্যা করা হয় ১৯৯৫ সালে। ১৯৯৭ সালে আম্মানে হামাসের এক সহযোগী সংগঠনের মিছিলে হামাস নেতা খালেদ মাশালকে বিষক্রিয়ার মাধ্যমে হত্যা করতে এজেন্ট পাঠিয়েছিল মোসাদ। তাদের দু’জনকে জর্দানে আটক করা হয়েছিল। তাদের কাছে ছিল কানাডার জাল পাসপোর্ট। এ বছরই প্রায় ৭০জন ফিলিস্তিনি মুক্তির বিনিময়ে হামাস নেতা শেখ আহমেদ ইয়াসিনকে তাদের হাতে তুলে দেয়ার জন্য পিএলওকে চাপ দিয়েছিল মোসাদ। এ সময় আহমেদ ইয়সিন ফিলিস্তিনে বন্দী ছিলেন। এর সাত বছর পর ২০০৪ সালে তিনি যখন মুক্তি পান তখন ইসরাইল হেলিকপ্টার থেকে গোলা নিক্ষেপ করে তাকে হত্যা করে। তিনি ফিলিস্তিনে ইসলামের মূল ধারার নেতৃত্ব দিতেন। একই বছর গাড়িবোমায় হত্যা করা হয় হামাসের অপর নেতা ইয ইল-দীন শেখ খলিলকে। ২০০৬ সালে লেটারবোমা পাঠানো হয় দ্য পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইন নেতা বাসাম আবু শরীফকে। তিনি পিএলও’র প্রেস অফিসার ছিলেন। অবশ্য ১৯৭২ সালে মোসাদের লেটার বোমায় তিনি চারটি আঙ্গুল ও একটি চোখ হারিয়েছিলেন।
অপারেশন স্প্রিং অব ইয়ুথ : ১৯৭৩ সালের ৯ রাতে ও ১০ এপ্রিল ভোরে লেবাননে বিমান হামলা চালায়। একই সময় ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্সের স্পেশাল ফোর্স ইউনিট বৈরুত, সিডন ও লেবাননে পিএলও’র টার্গেটকৃত নেতাদের খুঁজছিল ও সম্ভাব্য স্থানে হামলা করছিল। এই অপারেশনের নাম দেয়া হয়েছিল অপারেশন স্প্রিং অব ইয়ুথ।
আফ্রিকা অঞ্চলে মোসাদের অপারেশন : ১৯৮৪ সালে মোসাদ ও সিআইএ ইথিওপিয়ার ইহুদিদের সহায়তার জন্য যে অপারেশন পরিচালনা করে তার নাম দেয়া হয় অপারেশন মোসেস। ১৯৭৬ সালে উগান্ডায় এয়ার ফ্রান্স ফাইট ১৩৯ বিমান ছিনতাই করেছিল মোসাদের এজেন্টরা। বন্দী মুক্তির জন্য তারা এই বিমান ছিনতাই করেছিল। এটি অপারেশন অ্যান্টাবি নামে পরিচিত।
৯/১১-এর দায় : নাইন ইলেভেনের দায় কার এ বিতর্ক এখনো শেষ হয়নি। যদিও সিআইএ’র এক সময়ের বিশ্বস্ত ওসামা বিন লাদেন ও তালেবানকে এ ব্যাপারে অভিযুক্ত করা হয়েছে। আর এর শাস্তি হিসেবে দখল করে নেয়া হয়েছে ইউরেনিয়ামসমৃদ্ধ দেশ আফগানিস্তান। ইসরাইল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে ২০০১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর জেরুজালেম পোস্টের ইন্টারনেট সংস্করণে বলা হয়, হামলাকালীন ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ও পেন্টাগনে ৪ হাজার ইহুদি কাজ করত। কিন্তু বিমান হামলায় মাত্র একজন নিহত হয়েছে। পরে আরো দু’জনের নিহতের কথা বলা হয়। ওই দিন এত বিপুলসংখ্যক ইহুদি কিভাবে নিরাপদে ছিল তার জবাব আজ পর্যন্ত কেউ দিতে পারেনি বা দেয়নি। অথচ যে সময় ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলা হয়েছে প্রতিদিন ওই সময়ে অনেক ইহুদি অফিসে উপস্থিত থাকত। ব্যতিক্রম শুধু হামলার দিন। সিআইএ বরাবরই এই হামলায় মোসাদের স¤পৃক্ততা অস্বীকার করে আসছে। তবে মোসাদ এই হামলার পরিকল্পনাকারী নয় এর পক্ষে গ্রহণযোগ্য কোনো প্রমাণ সিআইএ বা মোসাদ দেয়নি। নাইন ইলেভেন সম্পর্কে লন্ডনের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য ইনডিপেনডেন্টের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক সংবাদদাতা রবার্ট ফিস্ক বলেছেন, ‘৯/১১ সম্পর্কে যে সরকারি ভাষ্য দেয়া হয়েছে তার সামঞ্জস্যহীনতা নিয়ে আমি ক্রমেই উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়ছি। এটা স্পষ্ট নয়, পেন্টাগনে হামলা চালানো বিমানের অংশগুলো (ইঞ্জিন ইত্যাদি) কোথায় গেল? ইউনাইটেড-৯৩ বিমানের (যা পেনসিলভানিয়ায় বিধ্বস্ত হয়েছে) সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার মুখ কেন বন্ধ করে দেয়া হলো? এই বিমানের ধ্বংসাবশেষ কেন কয়েক মাইল দূরে ছড়িয়ে ছিল? একটি মাঠে বিধ্বস্ত হওয়ার পর এটির তো অখণ্ড থাকার কথা ছিল।’
মোসাদের ইয়াসির আরাফাত কানেকশন : ফিলিস্তিন মুক্তি আন্দোলনের নেতা ইয়াসির আরাফাত কী মোসাদ বা সিআইএ’র হয়ে কাজ করেছেন এমন প্রশ্ন প্রচলিত আছে। ইসরাইলকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিতে ইয়াসির আরাফাতকে বিভিন্নভাবে প্ররোচিত করেছে সিআইএ। এ জন্য বৃদ্ধ বয়সে এক খ্রিষ্টান নারীকে বিয়ে দেয়া হয়েছিল ইয়াসির আরাফাতের সাথে। বিয়ের পর তিনি ইসরাইল প্রশ্নে অনেক নমনীয় ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় শান্তিচুক্তি হয়েছিল ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যে। শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়েছিল তাকে। জাতীয়তাবাদী নেতা ইয়াসির আরাফাতকে নমনীয় হতে মোসাদ সিআইএ’র সহায়তা নিয়েছে। তার মৃত্যুকে অনেকে হত্যাকাণ্ড বলছেন।
১৯১৪ সালে ইউরোপে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে ইহুদিদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের এক অপূর্ব সুযোগ সৃষ্টি হয়। তারা ড. ওয়াইজম্যানের নেতৃত্বে লন্ডনে কাজ শুরু করে দেয়। ওয়াইজম্যান ম্যানচেস্টার গার্ডিয়ান পত্রিকা, রথশিল্ড পরিবার ও লয়েড জর্জের সমর্থনে লর্ড বেলফুরের সহানুভূতি লাভ করেন। ইহুদিরা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অটোম্যান সাম্রাজ্যের পতনের পর ফিলিস্তিনে ইহুদিদের আবাসভূমি স্থাপনের ব্যাপারে মিত্রপক্ষের অঙ্গীকার চাচ্ছিল। ব্রিটেন প্রথমে তাদের উগান্ডায় বসতি স্থাপনের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু তারা ফিলিস্তিন ছাড়া অন্য কোথাও যেতে অস্বীকৃতি জানায়। ইতোমধ্যে ড. ওয়াইজম্যান কৃত্রিম উপায়ে এসেটিলিন আবিষ্কার করে ব্রিটিশের যুদ্ধ প্রচেষ্টায় অবদান রাখেন। ব্রিটেন যখন বুঝতে পারে যে, ফিলিস্তিনে প্রতিষ্ঠিতব্য আবাসভূমি সুয়েজ খালের পাশে অবস্থিত হবে বলে এর ভৌগোলিক অবস্থানগত গুরুত্ব বৃদ্ধি পাবে এবং ব্রিটেনের প্রভাব বলয়ে থাকবে তখন পররাষ্ট্র সচিব লর্ড বেলফুর আশ্বস্ত হন। ১৯১৭ সালের ২ নভেম্বর বেলফুর ঘোষণার মাধ্যমে ইহুদিদের জন্য ফিলিস্তিনে জাতীয় আবাসভূমি প্রতিষ্ঠা করা হয়। আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ইহুদিরা শুরু করে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা। এই চেষ্টারই সামান্য কিছু অংশ এই প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে। আধিপত্য বিস্তারের অংশ হিসেবে বর্তমানে তারা ব্রিটেনের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে বেশি বন্ধু বলে মনে করে। মোসাদের কার্যক্রম যেখানে সরাসরি করা সম্ভব নয়, সেখানে তারা সিআইএ’র মাধ্যমে তাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের চেষ্টা চালায়। সিআইএ মোসাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যেতে চাইলেও খুব কমই যেতে পেরেছে। তারাও মোসাদের কাছে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা। বিশ্বের প্রভাবশালী পত্রিকা ও নিউজ এজেন্সি ইহুদিদের নিয়ন্ত্রণে থাকায় মোসাদের অপকর্ম সাধারণত গণমাধ্যমে আসে না।
মোসাদের প্রধানরা
রিউভেন শিলোয়াহ : দায়িত্বকাল- ১৯৫১ সালের ১ এপ্রিল থেকে ১৯৫২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর। সম্ভ্রান্ত ইহুদি পরিবারে জন্ম নেয়া এই রিউভেন শিলোয়াহ বাল্যকালেই পারিবারিক ধর্মীয় বন্ধন ছিন্ন করেন। ইসরাইলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড বেন গুরিয়ানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু শিলোয়াহ মোসাদ প্রতিষ্ঠার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। মোসাদ প্রতিষ্ঠার আগে তিনি Central Institute of Coordination-এর ডিরেক্টর ছিলেন। তারও আগে তিনি ওয়াশিংটন ডিসিতে ইসরাইল দূতাবাসে অ্যাডভাইজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
ইসার হারেল : বর্তমান বেলারুশের এক ধনকুবের সন্তান ইসার হারেল। গোয়েন্দাবৃত্তির ক্ষেত্রে তাকে স্পাইমাস্টার বলা হতো। তার একটি ভিনেগারের কারখানা ছিল। এটি তাকে তার নানা দান করেছিলেন। সোভিয়েত ইউনিয়ন তাদের সম্পত্তি দখল করে নিলে অনেকটা খালি হাতে তারা লাটভিয়ায় চলে আসেন। আসার পথে সোভিয়েত সৈন্যরা তাদের সুটকেস চুরি করে নেয়। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াকালীন তার মধ্যে ইহুদি চেতনা তৈরি হয়। ১৬ বছর বয়সে ইসরাইলের ইমিগ্রান্ট হন। এ সময়ে তিনি কৃষিকাজ করতেন। ১৯৫২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর তাকে মোসাদের ডিরেক্টর হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এর আগে তিনি মোসাদ ও শাবাকের হয়ে বিভিন্ন দেশে কাজ করেছেন। ১৯৬৩ সালে তিনি মোসাদ ছেড়ে রাজনীতিতে যোগ দেন এবং ইসরাইলের পর্লামেন্ট মেম্বার নির্বাচিত হন।
মির অমিত : ১৯৬৩ সাল থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত মোসাদের ডিরেক্টর ছিলেন। ১৯৫০ সালের শেষের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিজনেস স্কুল থেকে বিজনেস ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬১ সালে তিনি ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্সে মেজর জেনারেল হিসেবে যোগ দেন। তার সময়ই মোসাদের কার্যক্রম বিশ্বে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। মোসাদের হাই প্রোফাইলের স্পাইদের শীর্ষ সারির ইলি কৌহেনকে তিনি তৈরি করেন। সিআইএ’র সাথে গভীর সম্পর্কও তার সময় ঘটে।
ভি যামির : ১৯৬৮ সাল থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত মোসাদের ডিরেক্টর ছিলেন পোল্যান্ড বংশোদ্ভূত ভি যামির। সাত মাস বয়সে ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত ফিলিস্তিনে বাবা-মায়ের সাথে তিনি চলে আসেন। ১৮ বছর বয়সে যামির সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। আরব-ইসরাইল যুদ্ধ শেষের কিছুদিন পর তাকে সাউদার্ন কমান্ডের কমান্ডার করা হয়। মোসাদের ডিরেক্টর হওয়ার আগে তিনি লন্ডনে কর্মরত ছিলেন। তার সময় মিউনিখ হত্যাকাণ্ড, ইওম কিপুর যুদ্ধ সঙ্ঘটিত হয়।
ঈঝাক হোফি : ১৯৭৪ সাল থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত মোসাদের ডিরেক্টর ছিলেন। তার জন্ম তেলআবিবে। মোসাদের প্রধান হওয়ার আগে তিনি ইসরাইলের ডিফেন্স ফোর্সের জেনারেল ছিলেন। আরব-ইসরাইল যুদ্ধে তিনি একটি গ্রুপের কমান্ডার ছিলেন। ১৯৭৩ সালে ঈওম কিপুর যুদ্ধে তিনি ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলের কমান্ডার ছিলেন। অবসর নেয়ার আগ পর্যন্ত ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্সের নর্দার্ন কমান্ডের চার্জে ছিলেন তিনি। মিলিটারি থেকে অবসর নেয়ার পর তাকে মোসাদের ডিরেক্টর করা হয়। ১৯৭৬ সালের জুলাই মাসে উগান্ডার ইনতিবি বিমানবন্দর থেকে ফ্রান্স এয়ারের একটি বিমান ছিনতাই হলে ইসরাইলের যাত্রীদের উদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন হোফি।
নাহুম আদমনি : জেরুজালেমে জন্ম নেয়া নাহুম আদমনি মোসাদের ডিরেক্টর ছিলেন ১৯৮২ সাল থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত। হাগানা ইন্টেলিজেন্স ব্রান্সের অধীনে তিনি আরব-ইসরাইল যুদ্ধে অংশ নেন। যুদ্ধের পর তিনি ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ায় লেখাপড়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। সেখান থেকে ১৯৫৪ সালে ফিরে এসে আবার ইসরাইলি ইন্টেলিজেন্স কমিউনিটিতে যোগ দেন। কিছুদিন পর তাকে ঈঝাক হোফির ডেপুটি নিয়োগ দেয়া হয়। তার সময় যুক্তরাষ্ট্রে মোসাদ গোয়েন্দা তৎপরতায় জোর দেয়। ২০০৬ সালের ইসরাইল-লেবানন দ্বন্দ্বে তিনি গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা কাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
শাবতাই শাভিত : ১৯৬৪ সালে মোসাদে যোগ দিয়েছিলেন শাবতাই শাভিত। এর আগে ১৯৫৮ থেকে ১৯৫৯ সালে তিনি সাউদার্ন কমান্ডের মিলিটারি গভর্নর ছিলেন। ১৯৮৯ সালে তাকে মোসাদের ডিরেক্টর জেনারেল করা হয়। তিনি এ পদে দায়িত্ব পালন করেন ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত। মোসাদ থেকে অবসর নেয়ার পর হার্জলিয়ার ইন্টারডিসিপ্লিনারি সেন্টারের ইনস্টিটিউট অব কাউন্টার টেরোরিজমের চেয়াম্যান ছিলেন তিনি। এ ছাড়াও তিনি ইসরাইলের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের অ্যাডভাইজার, সাব-কমিটি অব ইন্টেলিজেন্স’র অ্যাডভাইজর, কমিটি ফর ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ন্যাশনাল সিকিউরিটি ও টাস্ক ফোর্স ফর ফিউচার প্রিপারডনেস অ্যাগেইনস্ট টেরোরিজমের সদস্য ছিলেন।
দানি ইয়াতুম : রাজনীতিবিদ দানি ইয়াতুম মোসাদের ডিরেক্টর ছিলেন ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত। তিনি লেখাপড়া করেন গণিত, পদার্থ বিজ্ঞান ও কম্পিউটার বিষয়ে হিব্রু ইউনিভার্সিটি অব জেরুজালেমে। ১৯৬৩ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত তিনি ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্সে কাজ করেন। মোসাদের ডিরেক্টর হওয়ার আগে তাকে ইসরাইলের কেন্দ্রীয় কমান্ড মেজর জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি দেয়। মোসাদের প্রধান থাকাকালীন তিনি প্রধানমন্ত্রী এহুদ বারাকের সিকিউরিটি অ্যাডভাইজরের দায়িত্বও পালন করেন। রাজনীতিতে যোগ দেয়ার পর ২০০৩ সালে তিনি পার্লামেন্ট মেম্বার নির্বাচিত হন।
ইফরাইম হেলভি : ইফরাইম হেলভি তিনি ছিলেন মোসাদের নবম ও ইসরাইলি ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের চতুর্থ প্রধান। তিনি মোসাদের ডিরেক্টর ছিলেন ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত। যুক্তরাজ্যের এক কট্টর ইহুদি পরিবারে তার জন্ম। ১৯৪৮ সালে তিনি ইসরাইল আসেন। ১৯৫৭ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত Central Institute of Coordination তিনি মান্থলি সার্ভে নামের একটি পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। এটি ইসরাইলের চিফ অ্যাডুকেশন অফিসার বের করতেন। ১৯৬১ সালে তিনি মোসাদে যোগ দেন।
মির দাগান : মোসাদের বর্তমান ডিরেক্টর হচ্ছেন মিলিটারি ব্যক্তিত্ব মির দাগান। ২০০২ সাল থেকে তিনি এ পদে দায়িত্ব পালন করছেন। তার জন্ম ১৯৪৫ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নে। ১৯৫০ সালে তার পরিবার ইসরাইল আসেন ও তেলআবিবের বাত ইয়মে বসবাস শুরু করেন। ১৯৬৩ সালে মির দাগান ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্সে যোগ দেন। ইউনিভার্সিটি অব হাইফা থেকে তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ব্যাচেলর ডিগ্রি নেন। সূত্র

সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০১৬ রাত ১:২৮
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দেশনায়ক তারেক রহমানকে সম্পৃক্ত করার নেপথ্যে  

লিখেছেন এম টি উল্লাহ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৮


আগেই বলেছি ওয়ান ইলেভেনের সরকার এবং আওয়ামীলীগের যবনায় জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পৌনে একশ মামলা হলেও মূলত অভিযোগ দুইটি। প্রথমত, ওই সময়ে এই প্রজন্মের নিকট উপস্থাপন করা হয়েছিল দেশনায়ক তারেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পকে নিয়ে ব্লগারদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



**** এডমিন টিমের ব্লগারেরা আমাকে বরাবরের মতোই টার্গেট করে চলেছে, এভাবেই সামু চলবে। ****

ট্রাম্পের বিজয়ে ইউরোপের লোকজন আমেরিকানদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী শংকিত; ট্রাম্প কিভাবে আচরণ করবে ইউরোপিয়ানরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পের বিজয়, বিশ্ব রাজনীতি এবং বাংলাদেশ প্রসংগ

লিখেছেন সরলপাঠ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২১

ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশে বা দেশের বাহিরে যে সব বাংলাদশীরা উল্লাস করছেন বা কমলার হেরে যাওয়াতে যারা মিম বানাচ্ছেন, তারাই বিগত দিনের বাংলাদেশের ফ্যাসিস্টের সহযোগী। তারা আশায় আছেন ট্রাম্প তাদের ফ্যাসিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠেলার নাম বাবাজী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩১

এক গ্রামীণ কৃষক জমিদার বাড়িতে খাজনা দিতে যাবে। লোকটি ছিলো ঠোটকাটা যখন তখন বেফাস কথা বা অপ্রিয় বাক্য উচ্চারণ করে ক্যাচাল বাধিয়ে ফেলতে সে ছিলো মহাউস্তাদ। এ জন্য তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×