ইসরায়েলের একটি গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করে বিএনপি এ দেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করছে এবং ক্ষমতায় গিয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করবে—সরকারের কাছে এমন তথ্য রয়েছে বলে দাবি করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো দাবি করেন, ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করে বিএনপি বাংলাদেশকে একটি ‘উন্মত্ত মুসলিম’ দেশ হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পাকিস্তানের নাক গলানোর ব্যাপারে সরকার কী করছে জানতে চাইলে বিস্তারিত বলতে অনীহা প্রকাশ করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, পরিস্থিতি অনুযায়ী উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিয়ে ইসলামাবাদের বিরূপ মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় গত সোমবার সরকার ঢাকায় পাকিস্তানের হাইকমিশনার সুজা আলমকে তলব করে এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছ।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষে পাকিস্তান কমনওয়েলথ মিনিস্টারিয়াল অ্যাকশন গ্রুপে (সিম্যাগ) কথা বলার চেষ্টা করেছিল বলে সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে শাহরিয়ার আলম বলেন, পাকিস্তানের এমন উদ্যোগের বিষয়ে বাংলাদেশ অবগত। বাংলাদেশ ওই বৈঠকে উপস্থিত না থাকলেও উপস্থিত অন্য দেশগুলোর প্রতিনিধিদের কাছ থেকে বিষয়টি জানতে পেরেছে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক দরবারে পাকিস্তানের ওকালতি তাৎপর্যপূর্ণ। জামায়াতের মুখোশ আগেই উন্মোচিত হয়েছে, যতই দিন যাচ্ছে বিএনপির মুখোশও উন্মোচিত হচ্ছে। তারা অব্যাহতভাবে বাংলাদেশকে বিব্রত করার জন্য, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘শুধু তাই নয়, আমাদের কাছে এমনও খবর আছে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করে বাংলাদেশকে একটি উন্মত্ত মুসলিম দেশ হিসেবে উপস্থাপন করে তারা আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছে, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি হবে। এটা যে কত বড় অপরাধ!’
বিএনপিকে নিষিদ্ধ করার বিষয়টি বিবেচনার সময় এসেছে বলে মনে করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে বিএনপির বৈঠক বিষয়ে প্রমাণ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একটা কেন, আমাদের কাছে এ ধরনের অনেক তথ্য আছে; যেগুলো জোড়া দিলে কালই বিএনপিকে নিষিদ্ধ করতে হবে।’
ইসরায়েল ফিলিস্তিনের নাগরিকদের হত্যা ও ভূমি দখল করছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সব সময় স্বাধীন-সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র দেখতে চাই। বাংলাদেশ ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয় না। সে অবস্থান থেকে ইসরায়েলের সঙ্গে যোগাযোগের চিন্তাও করতে পারে না বাংলাদেশ সরকার।’ তিনি দাবি করেন, বিএনপি এ দেশের জনগণের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রাখতে পারছে না। এর আগে বিএনপির বিরুদ্ধে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার পয়সায় নির্বাচন করার অভিযোগ এসেছিল। বাংলাদেশের বাইরে বিভিন্ন জায়গায়, সংসদে, আদালতে পর্যন্ত এগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিএনপির চক্রান্ত ব্যর্থ করতে সরকার কাজ করছে বলে তিনি জানান।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পাকিস্তানের নাক গলানোর বিষয়ে সরকার কূটনৈতিকভাবে কী ব্যবস্থা নিচ্ছে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যখন এ ধরনের ঘটনা ঘটে তখন আমরা সেগুলো বিবেচনায় আনি, সম্পর্ক মূল্যায়ন করি। সামনের দিনে পরিস্থিতি যা উদ্ভব ঘটবে, তারা কী প্রতিক্রিয়া দেখায়, কার্যক্রম করে সেটির ওপর আমাদের প্রতিক্রিয়া নির্ভর করবে। আমরা গভীর দৃষ্টি রাখছি।’
কড়া নজরদারিতে আসলাম চৌধুরী : চট্টগ্রাম থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করার অভিযোগ ওঠার পর বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীকে কড়া নজরদারিতে রেখেছে পুলিশ। জেলা পুলিশ কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, আসলাম চৌধুরীকে কড়া নজরদারিতে রাখা হয়েছে। যেকোনো সময় তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকের খবরে বলা হয়, ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে মিলে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীসহ সাতজন। এঁদের মধ্যে চট্টগ্রামের একজন সাংবাদিক রয়েছেন বলেও সংবাদে উল্লেখ করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা পুলিশের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘আসলাম চৌধুরী বড্ড বেশি বেড়ে গেছেন। তিনি অতীতে নাশকতায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। সেটা ছিল দেশের অভ্যন্তরে। আর এখন দেশের বাইরে গিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই এমন একটি দেশের এজেন্টের সঙ্গে বৈঠক করেছেন সরকার উৎখাত করার পরিকল্পনা করতে। এমতাবস্থায় তাঁর ধৃষ্টতা দেশবিরোধী। তাই তাঁকে আর ছাড় নয়।’
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এ কে এম হাফিজ আক্তার কালের কণ্ঠকে বলেন, আসলাম চৌধুরীকে কড়া নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। পুলিশ সতর্ক আছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আসলাম চৌধুরীর দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি বিশেষ শাখার মাধ্যমে ইমিগ্রেশন পুলিশে যাবে। সেই বিষয়ে আমি বিস্তারিত জানি না।’
‘সব সময় তো নজরদারিতেই আছি’ : পুলিশের কড়া নজরদারিতে থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি তো সব সময়ই কড়া নজরদারিতেই আছি।’ তাঁর অবস্থান বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন আমি ঢাকায় আছি। চট্টগ্রামে এসে দেখা হবে, কথা হবে।’
ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করার অভিযোগ প্রসঙ্গে আসলাম চৌধুরী বলেন, ‘গত মার্চ মাসে আমি যখন ব্যবসায়িক সফরে ভারতে গিয়েছিলাম, তখন পরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে ছবি তুলেছি। আমি কোনো মিটিংয়ে ছিলাম না।’
বিএনপি ক্রমেই জটিল ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে। দলটিতে পদ ও মনোনয়ন বাণিজ্য এখন রমরমা। আর এর বিরুদ্ধে প্রচণ্ড সোচ্চার হয়েছেন দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা প্রায় একযোগে ওই বাণিজ্যের অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্য তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন। অনেকেই এ ঘটনাকে সিনিয়র নেতাদের এক রকম বিদ্রোহ বলে মনে করছেন। ঘটনার আকস্মিকতায় প্রচণ্ড বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তাৎক্ষণিকভাবে তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত না নেওয়া হলেও বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখছেন বলে বিএনপি সূত্রে জানা গেছে।
একপর্যায়ে দিল্লিতে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এক এজেন্টের সঙ্গে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীর বৈঠক বিষয়ে আলোচনা হয়। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদসহ সিনিয়র কয়েকজন নেতা বলেন, এ ঘটনায় রাজনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে বিএনপি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত। লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান একে আরেকটি তাইওয়ান ঘটনার পুনরাবৃত্তি বলে উল্লেখ করেন। খালেদা জিয়া এসব বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, আসলাম চৌধুরীকে ডেকে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। পরে তাঁকে চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে তলব করে ওই বৈঠক বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়।
সূত্র মতে, বৈঠকে উপস্থিত স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বিএনপিতে পদ ও মনোনয়ন বাণিজ্য বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি তুলে বলেছেন, ‘সততার প্রতীক জিয়াউর রহমানের দল এখন ডুবন্ত জাহাজ। আমি এ জাহাজের একজন যাত্রী।’ খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করে এ জাহাজকে রক্ষার দায়িত্ব আপনার। শ্যুট দেম; আপনি তাদের দল থেকে বের করে দেন।’
সূত্র মতে, মাহবুবের এই দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদও বলেন, ‘হ্যাঁ মাডাম, শ্যুট দেম। আপনি নিজে তদন্ত করে তাদেরকে দল থেকে বের করে দেবেন। জিয়াউর রহমানের দল এভাবে চলতে পারে না।’ মওদুদ আরো বলেন, ‘আমরা এমনিতেই অত্যন্ত নাজুক অবস্থার মধ্যে আছি। এ অবস্থায় এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরো ভয়ংকর হবে।’
সূত্র মতে, বৈঠকের একপর্যায়ে স্থায়ী কমিটির দু-একজন সদস্য ছাড়া প্রায় সবাই পদ ও মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তোলেন। খালেদা জিয়া একপর্যায়ে বলেন, ‘আমি কিছু কিছু জানি।’ তবে সরকারের লোকেরা এসব পত্রপত্রিকায় লেখাচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। একপর্যায়ে তিনি বলেন, সরকারের এজেন্টরা এসব করাচ্ছে। স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্য তখন দলের ওই এজেন্টদের খুঁজে বের করার দাবি তোলেন।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা কালের কণ্ঠকে জানান, একমাত্র গয়েশ্বর চন্দ্র রায় তদন্ত কমিটি গঠনের বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, তদন্ত কমিটি গঠন করা হলে সাংবাদিকরা আরো বেশি লেখার সুযোগ পাবেন। তদন্তে একজনের কথা উঠে এলে লেখা হবে ১০ জনের কথা। সূত্র মতে, এ পর্যায়ে গয়েশ্বরকে থামিয়ে দিয়ে মওদুদ আহমদ বলেন, ‘তুমি ওদের ডিফেন্ড করো না। এতে দলের ক্ষতি হবে।’ আলোচনার এ পর্যায়ে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এসব নিয়ে এরই মধ্যে দলের বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে গেছে।
জানতে চাইলে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি তদন্ত কমিটি গঠনের পক্ষেও ছিলাম না, বিপক্ষেও ছিলাম না।’ তাঁর মতে, ‘তদন্ত কমিটি গঠনের ব্যাপারে যাঁরা জোর দিয়েছেন, তাঁরাই বাইরে ছড়াচ্ছেন আমি বিরোধিতা করেছি বলে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্থায়ী কমিটির বৈঠকের ব্যাপারে বাইরে কথা বলায় নিষেধ আছে। জানতে চাইলে স্থায়ী কমিটির অন্য সদস্যরাও কথা বলতে রাজি হননি। মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমি আমার মতামত দলীয় ফোরামের আলোচনায় দিয়েছি। বাইরে এ নিয়ে কথা বলা ঠিক হবে না। তবে পদ ও মনোনয়ন বাণিজ্য হচ্ছে, এ কথা সবাই বলছে। তাই এগুলো খতিয়ে দেখতে তদন্তের দাবি ওঠা স্বাভাবিক।’
উল্লেখ্য, বিএনপিতে পদ বাণিজ্য (কমিটিতে টাকার বিনিময়ে পদ) ও মনোনয়ন বাণিজ্য (ইউপি ও পৌর নির্বাচনের মনোনয়ন) চলছে বলে গত কয়েক দিনে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। বিশেষ করে মনোনয়নের সঙ্গে জড়িত দলের একজন সহদপ্তর সম্পাদকের ব্যাংক স্টেটমেন্ট ফাঁস হওয়ার ঘটনায় দলের মধ্যে প্রচণ্ড তোলপাড় সৃষ্টি হয়। সংশ্লিষ্ট ওই ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমেই মনোনয়নের টাকা লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। আর অভিযোগের ওই আঙুল তোলা হয় মনোনয়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নেতাদের দিকে।
পক্ষান্তরে কমিটি গঠনে গুলশান কার্যালয়ে চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস এবং নয়াপল্টন কার্যালয়ে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ প্রভাব বিস্তার করছেন বলে অভিযোগ ওঠে। বলা হয়, কমিটি গঠনে দলটির সিনিয়র নেতাদের সম্পৃক্ত না করায় তাঁরা প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ। তাঁদের সঙ্গে এমনকি সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গেও কমিটি গঠন নিয়ে খালেদা জিয়ার দূরত্ব তৈরি হয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর বের হয়।
এ পরিস্থিতিতে মূলত সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে দূরত্ব কমাতেই হঠাৎ করে স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডাকেন খালেদা জিয়া। উপস্থিত নেতাদের তিনি জানান, স্থায়ী কমিটিতে আপনারা সবাই থাকবেন। পাশাপাশি ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গেও তাঁর কোনো দূরত্ব হয়নি বলে জানান তিনি। বলেন, গতকাল (রবিবার) তারেকের সঙ্গে কথা হয়েছে তাঁর।
সূত্র মতে, বৈঠকে অনেকটা অপ্রাসঙ্গিকভাবেই মহানগরী বিএনপিকে চার ভাগ করে আবার কেন্দ্রীয় মহানগরী বিএনপির পৃথক আরেকটি কেন্দ্রীয় কমিটি করার প্রস্তাব করেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তবে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বলেন, উত্তর ও দক্ষিণে মেয়র নির্বাচন হয় এবং এরই মধ্যে বিএনপি সে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। সুতরাং এখানে চারটি কমিটি বা পৃথক কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের প্রয়োজন নেই। এ ছাড়া এটি গঠনতন্ত্রের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, দলে কেন্দ্রীয় কমিটি কয়টি থাকে? তিনি প্রস্তাব দেন, দুই মহানগরী কমিটি কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে দায়ী থাকবে। আলোচনার এই পর্যায়ে খালেদা জিয়া গয়েশ্বরের প্রস্তাব সরাসরি নাকচ করে দিয়ে জানান, মহানগরী দুই ভাগ হবে।
সূত্র মতে, তারেক রহমানের ক্ষমতা বৃদ্ধিবিষয়ক গয়েশ্বরের আরেকটি প্রস্তাবও বৈঠকে নাকচ হয়ে যায়।
আসলাম চৌধুরীকে নিয়ে আলোচনা : ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এক এজেন্টের সঙ্গে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীকে জড়িয়ে খবর প্রকাশিত হওয়ার ঘটনা নিয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদসহ সিনিয়র কয়েকজন নেতা এ বিষয়ে বলেছেন, একটি জাতীয় দৈনিকে এ-সংক্রান্ত খবর ও ছবি প্রকাশিত হওয়ায় রাজনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে বিএনপি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান একে আরেকটি তাইওয়ান ঘটনার পুনরাবৃত্তি বলে উল্লেখ করেন। আলোচনাকালে মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর রায় বলেন, পত্রিকায় ছবি নানাভাবে ছাপা যায়। মওদুদ আহমদ এ পর্যায়ে বলেন, সঠিক বা বেঠিক যাই হোক, এ ঘটনা খতিয়ে দেখা উচিত। খালেদা জিয়া এর সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, আসলাম চৌধুরীকে ডেকে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। সূত্র মতে, স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পরে আসলাম চৌধুরীকে ডেকে একটি জাতীয় দৈনিকে তাঁকে জড়িয়ে খবরের বিষয় জানতে চাওয়া হয়। আসলাম বলেন, দিল্লিতে তিনি ব্যবসায়ী হিসেবে গিয়েছিলেন। সেখানে কিভাবে বা কারা তাঁর ছবি তুলেছে এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।
আসলাম চৌধুরী বলেন, ‘চেয়ারপারসন আমাকে সতর্কভাবে চলতে বলেছেন। তবে আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে কিছু বলেননি।’
উল্লেখ্য, বিগত বিএনপি সরকারের সময় বাংলাদেশে তাইওয়ান সেন্টার করার অনুমতি দিয়ে চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক নষ্ট করে বিএনপি। সে সম্পর্ক আজও স্বাভাবিক হয়নি।
সুত্রঃ
১
২
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মে, ২০১৬ ভোর ৬:৩০