রাজধানীর ইস্কাটনে শফিক রেহমানের বাসায় তল্লাশি চালিয়ে দুইটি ফাইল ও দুইটি পাসপোর্ট (একটি বাংলাদেশি, অপরটি ব্রিটিশ) জব্দ করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পুলিশের দাবি, জব্দকৃত ফাইল দুইটি যুক্তরাষ্ট্রে প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যা চেষ্টার পরিকল্পনার অভিযোগ সংক্রান্ত ‘এফবিআইয়ের নথি’। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে রিমান্ডে থাকা শফিক রেহমানকে সঙ্গে নিয়ে ডিবি পুলিশ তার বাসায় গিয়ে স্ত্রী তালেয়া রহমানের উপস্থিতিতে ওইসব নথি ও পাসপোর্ট জব্দ করে।
শফিক রেহমান, যার বাসা থেকে আজ এফবিআই এর এই নথি উদ্ধার হয়েছে
https://assets.documentcloud.org/documents/1679722/thalernyus.pdf
ঘন্টাখানেক পর রাজধানীর মিন্টো রোডের মিডিয়া সেন্টারে ব্রিফিং করে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটি) প্রধান, অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম। তিনি জানান, রিমান্ডে জয়কে হত্যা চেষ্টার পরিকল্পনার বিষয়ে একাধিক বৈঠকে যোগ দেয়ার কথা স্বীকার করেছেন শফিক রেহমান। তিনি জিজ্ঞাসাবাদে যুক্তরাষ্ট্রে এক এফবিআই এজেন্টের কাছ থেকে পাওয়া কিছু নথি নিজের বাসায় রাখার কথাও জানান। সেই সূত্র ধরেই তার বাসায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তল্লাশি চালান।
এদিকে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যাচেষ্টার ষড়যন্ত্র মামলা তদন্তের জন্য মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তিন সদস্যদের একটি প্রতিনিধি দল শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছে।
গত শনিবার শফিক রেহমানকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয় ডিবি পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার ছিল রিমান্ডের তৃতীয় দিন।
এদিকে শফিক রেহমানের স্ত্রী তালেয়া রেহমান ইস্কাটনের বাসায় সাংবাদিকের বলেন, ডিবি পুলিশ শফিক রেহমানকে দুপুরের দিকে বাসায় নিয়ে এসেছিল। পুলিশ বাসার শয়ন কক্ষসহ বিভিন্ন রুমে তল্লাশি চালায়। তার উপস্থিতিতে ডিবি পুলিশ দুইটি ফাইল ও দুইটি পাসপোর্ট নিয়ে গেছে।
তালেয়া রহমান বলেন, তল্লাশি শেষে বাসার এক রুমে একান্তে শফিক রেহমানের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। কী কথা হয়েছে—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুরোটাই পারিবারিক। তবে শফিক রেহমান তাকে বলেছেন, ‘সহসা হয়তো জামিন পাব না। সাবধানে থেকো।’
জিজ্ঞাসাবাদের নামে ডিবি পুলিশ শফিক রেহমানকে মারধর করেছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তালেয়া রহমান বলেন, মারধর করা হয়নি বলে শফিক রেহমান তাকে জানিয়েছেন।
ব্রিফিংয়ে মনিরুল ইসলাম আরো যা বলেন
মহানগর পুলিশের মুখপাত্র মনিরুল ইসলাম বলেন, এফবিআই সদস্যকে ঘুষ দেয়ার মামলায় যুক্তরাষ্ট্রে সাজাপ্রাপ্ত জাসাস নেতার ছেলে রিজভি আহমেদ সিজার এফবিআই সদস্যের মাধ্যমে জয় কোথায় থাকতেন, তার গাড়ি নম্বর, গাড়ির ধরন, তিনি কোথায় কোথায় যেতেন—এসব তথ্য সংগ্রহ করে ফেডারেল এক্সপ্রেস কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে দৈনিক আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের কাছে পাঠান। তিনি বলেন, ঘটনাস্থল যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র, তাই সেখানে গিয়ে অধিকতর তদন্ত করলে আরও বিস্তারিতভাবে জানা যাবে। তিনি বলেন, মাহমুদুর রহমানের কাছে আর কী ধরনের তথ্য আছে তা জানতে তাকে রিমান্ডে আনার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে। আদালত আগামী ২৫ এপ্রিল এ বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য করেছে।
২০১৫ সালে পল্টন থানায় দায়ের করা মামলায় জয়কে হত্যার ষড়যন্ত্রে বিএনপির হাইকমান্ড যুক্ত রয়েছে বলে উল্লেখ করা আছে।
হত্যা পরিকল্পনার এজাহারে বিএনপির হাইকমান্ড পর্যায়ে কেউ জড়িত রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সেই হাইকমান্ড নেতা তারেক রহমান কিনা— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম বলেন, তারেকের সঙ্গে সিজার বা দণ্ডপ্রাপ্ত অন্য কারও যোগাযোগ ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া লন্ডন, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের আর কেউ জড়িত আছে কিনা তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
শফিক রেহমানের বাসায় তল্লাশি আদালতের অনুমতি নিয়ে করা হয়েছে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম বলেন, ফৌজদারি মামলায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা যে কোন স্থানে তল্লাশি চালাতে পারেন।
কি আছে নথিপত্রে
জব্দকৃত নথিপত্র সম্পর্কে মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ডিবির উপ-কমিশনার মাশরুকুর রহমান খালেদ বলেন, শফিক রেহমানের নিজের হেফাজতে রাখা সজীব ওয়াজেদ জয় সংক্রান্ত প্রাথমিক কিছু তথ্য, বাড়ি, গাড়ির নম্বর, কোথায় থাকেন এসব এবং আরও গোপনীয় কিছু নথিপত্র পাওয়া গেছে। শফিক রেহমান এসব সংরক্ষণ করে রেখেছিলেন। গোয়েন্দারা এগুলো জব্দ করেছে।
তিনি আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে এক এফবিআই এজেন্টের কাছ থেকে পাওয়া নথি নিজের কাছে রাখার কথা শফিক রেহমান স্বীকার করার পরই তার ভিত্তিতে পুলিশ তাকে নিয়ে তার বাসায় অভিযান চালায়।
মাশরুকুর রহমান খালেদ বলেন, শফিক রেহমান রিমান্ডে জানিয়েছেন, এফবিআই এজেন্ট রবার্ট লাস্টিক এর কাছ থেকে এ নথিপত্রগুলো যোগাড় করে তিনি নিজের কাছে সংরক্ষণ করেছিলেন।
তিনি আরো বলেন, শফিক রেহমান রিমান্ডে বলেছেন, তার কাছে তথ্য রয়েছে। তিনি নিজে না গেলে বাসা থেকে তা উদ্ধার করা যাবে না। সেজন্যে তাকে সঙ্গে নিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ কনফেডিনশিয়াল নথিপত্র উদ্ধার করে তা জব্দ করেছে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাসা থেকে নথিপত্র শফিক রেহমানের স্ত্রী তালেয়া রহমানের উপস্থিতিতে জব্দ করা হয়। এ সময় বাসার যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছে তদন্ত দল
সজীব ওয়াজেদ জয়কে যুক্তরাষ্ট্রে অপহরণ ও হত্যাচেষ্টার ষড়যন্ত্র মামলা তদন্তের জন্য মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার মাশরুকুর রহমান খালেদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল খুব শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছে। অপর দুই সদস্য হলেন গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার রাজীব আল মাসুদ ও মামলার তদন্ত সিনিয়র সহকারী কমিশনার হাসান আরাফাত।
উল্লেখ্য, জয় সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য পেতে এফবিআই এজেন্ট লাস্টিককে ঘুষ দেওয়ার অপরাধে ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী জাসাস নেতা মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনের ছেলে রিজভী আহমেদ সিজারের কারাদণ্ড হয়।
এ নিয়ে ২০১৫ সালের ৩১ মে রাজধানীর পল্টন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে পুলিশ, যা পরে মামলায় রূপান্তরিত হয়। ওই মামলাতেই গত শনিবার শফিক রেহমানকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। সূত্র
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে এপ্রিল, ২০১৬ ভোর ৬:৩৮