জেএমবির একটি অংশ বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে সক্রিয় থাকলেও অন্য অংশটি ‘চুরি-ছিনতাইয়ে’ ব্যস্ত। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম গতকাল বৃহস্পতিবার এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।
মনিরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশকে যারা জঙ্গি রাষ্ট্র বানাতে চায়, সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চায়, তারাই তাদের (জেএমবির একাংশ) অর্থের জোগানদাতা বলে গোয়েন্দারা অনেকটাই নিশ্চিত। সম্প্রতি পুলিশের অভিযানে ঢাকা-চট্টগ্রামে জেএমবির কয়েকটি জঙ্গি আস্তানার সন্ধান মেলার খবর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ফলাও করে জানালেও মনিরুল ইসলাম বলেন, মূলত উত্তর বঙ্গেই তাদের বর্তমান ঘাঁটি বলে তথ্য রয়েছে।
জেএমবির যে অংশটি দেশকে অস্থিতিশীল করতে সক্রিয়, তাদের অর্থ জোগানদাতারা বাংলাদেশকে জঙ্গিরাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করার চেষ্টায় রয়েছেন বলেও দাবি করেন মনিরুল ইসলাম। ঢাকার কামরাঙ্গীরচর থেকে সন্দেহভাজন তিনজনকে গ্রেফতারের পর তাদের নিয়ে অভিযানের সময় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দুই জঙ্গি নেতা নিহত হওয়ার ঘটনা সবিস্তারে তুলে ধরতে গতকাল সাংবাদিক সম্মেলন করে ডিবি। সেখানেই মনিরুল ইসলাম জেএমবির তত্পরতার হালের খবর জানিয়ে বলেন, বুধবার রাতে নিহত এবং গ্রেফতার- সবাই জেএমবিতে আমির মুফতি সাইদুর রহমানের বিরোধী পক্ষ।
মনিরুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে জেএমবিতে দুইটি গ্রুপ আছে। একটির নেতা মাওলানা সাইদুর রহমান। ময়মনসিংহের ত্রিশালে পুলিশ ভ্যানে হামলা, ভারতে বোমা হামলায় তারা জড়িত ছিল। এখন চুরি, ছিনতাই ছাড়া তাদের তেমন কোনো তত্পরতা নেই। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট একসঙ্গে সারা বাংলাদেশে বোমা হামলা চালিয়ে আলোচনায় এসেছিল জেএমবি। পরে দলটি নিষিদ্ধ হয়। দলের আমির শায়খ আবদুর রহমান, বাংলাভাইসহ শীর্ষ নেতাদের মৃত্যুদণ্ডও কার্যকর হয় ২০০৭ সালে।
জেএমবিতে সক্রিয় অংশটি শায়খ আবদুর রহমান ও বাংলাভাইয়ের পথ অনুসরণ করছেন জানিয়ে মনিরুল বলেন, শায়খ আবদুর রহমানের মৃত্যুর পর এরা চুপচাপ হয়ে গিয়েছিল। এরপর ধীরে ধীরে সক্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করে। এই গ্রুপে শিবিরের বেশ কিছু সদস্য রয়েছে। যুদ্ধাপরাধীর বিচার বাধাগ্রস্ত করতে ও সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে তারা তত্পর হয়ে উঠছিল। বুধবার যাদের গ্রেফতার করা হয়, তাদের মধ্যে দুইজন তিন মাস আগে পুরান ঢাকায় শিয়াদের সমাবেশে বোমা হামলায় জড়িত ছিল। নিহত একজন গাবতলীতে ছুরিকাঘাতে এএসআই হত্যাকাণ্ডের আসামি।
তিনি বলেন, জেএমবির এই অংশটি একসময় রাজধানীর আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় পরিচয় গোপন করে বাসা ভাড়া নিয়ে লক্ষ্য স্থির করে আক্রমণের পরিকল্পনা করত। গোয়েন্দারা এখন পর্যন্ত ১৪টি আস্তানার সন্ধান পেয়েছে। এরা (জঙ্গি) দুই মাসের মৌলিক প্রশিক্ষণ নিয়ে টার্গেট ঠিক করে। একেকজন একেক টার্গেট বাস্তবায়ন করতে কাজ করে। বগুড়ায় শিয়া মসজিদে হামলার পর সম্প্রতি রাজশাহীতে আহমদিয়া মসজিদে আত্মঘাতী হামলার বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। তবে জেএমবিতে ‘আত্মঘাতী’ হামলাকারী সদস্য নেই বলে দাবি করেন মনিরুল। রাজশাহীতে যেই ঘটনাটি ঘটেছিল, তার জন্য এরা প্রস্তুত ছিল না। তারা নিজেদের আত্মঘাতী বলে জাহির করলেও দলের জন্য ততটা নিবেদিত নয়।
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:১৭