দেশটা আমাদেরই। তাই কিছু করতে চাইলে শুরুটা আমাদেরকেই করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে থেকে কোন লাভ নেই। তার কি-ই বা করার আছে বলুন। সতেরো কোটি জনগনকে যে এই ছোট্ট দেশটা দিনে কয়েকঘন্টা হলেও বিদ্যুৎ দিতে পারছে তাও কিন্তু প্রশংসার দাবিদার। বদলাতে হবে আমাদেরকে, দেশের জনগনকে। তাহলেই আমরা পারবো লোডশেডিং এবং পানি সংকট কমাতে। আমরা একবার জাগরিত হলে প্রধানমন্ত্রীর কিছু একটা করার থাকবে।
আমরা কিভাবে অপচয় করছি মূল্যবান বিদ্যুতের? উত্তর খুজতে চাইলেই পাওয়া যাবে এই প্রশ্নের জবাব। আমি এই পোস্টে আপনাদের টিভির লাল লাইট বন্ধ করে রাখতে কিংবা স্পিকারের সবুজ বাতিটিকে নিভিয়ে রাখার কথা বলবোনা। এগুলো করলে আপনাকে কষ্ট একটু বেশিই করতে হবে। বলবো এমন কিছু কাজ করতে যেগুলো করতে কষ্ট বলতে গেলে একেবারেই হবেনা।
মোবাইলে চার্জ দেবার পরে আপনি কি চার্জারটিকে সকেট থেকে খুলছেন? নাকি শুধুমাত্র মোবাইলটিকে চার্জার থেকে ডিসকানেক্ট করে চার্জারটিকে সকেটের সাথেই লাগিয়ে রাখছেন? জবাব যদি দ্বিতীয়টা হয় তবে আমি বলবো প্রথম প্রশ্নের মতো করে কাজ করতে। বিদ্যুতের সাশ্রয় হবে...
আইপিএস ব্যবহারে সতর্ক হোন। এখন ঘন্টায় ঘন্টায় লোডশেডিং হয়। আইপিএস ব্যবহার করে থাকলে ব্যাটারী ডাউন হতে বেশি সময় লাগবেনা। কয়েকদিন পর পর ব্যাটারী বদলাবেন? তার চেয়ে একটা কাজ করলেই পারেন। একটু বেশি টাকা খরচ করে কিনে ফেলুন একটা সৌরশক্তি দ্বারা চালিত আইপিএস। বর্ষাকালে কি করবেন ভাবছেন? ভাই, বর্ষাকালে লোডশেডিং এমনিতেই কমে যাবে। কারণ, তখন বিদ্যুতের ব্যবহার একটু কমবে।
ফ্যান লাইট ব্যবহারে একটু সতর্ক হোন। আমি এমন অনেক মানুষকেই দেখেছি যারা ফ্যান ছেড়ে রেখে গায়ে কম্বল দিয়ে ঘুমায়। কম্বলটাকে রেখে ফ্যান বন্ধ করে রেখে ঘুমান না? আমি বলছিনা গরমের মধ্যে ফ্যান বন্ধ করে রাখার জন্য। কাজটা করুন বৃষ্টির সময় অথবা শীতকালে। তাপমাত্রা যদি ২৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচে থাকে তাহলে আমি ফ্যান ব্যবহারের কোন কারণ দেখছিনা।
যারা এসি ব্যবহার করেন তারা আরো বড় ভূমিকা রাখতে পারেন বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে। আপনার রুমের তাপমাত্রা এসিতে ঠিক করে রাখা তাপমাত্রার সমান হবার পরে এসিটা বন্ধ করে দিন। আপনার রুমটি বেশ কিছুক্ষণ ঠান্ডা থাকবে। কিন্তু এসি বন্ধ করে রাখায় বিদ্যুতের সাশ্রয় হবে। রুমের তাপমাত্রা যদি সহনসীমার বাইরে চলে যায় তাহলে এসিটি আবার চালু করুন। বারবার অফ-অন করলে এসির সমস্যা হবার সম্ভাবনা থাকলে কাজটি দিনে দুই থেকে তিনবার করুন। তাতে বেশি ক্ষতি হবে বলে মনে হয়না। বর্তমানের প্রায় সব এসিগুলোই রিমোট কন্ট্রোল। বন্ধ করতে বেশি কষ্ট হবে বলে মনে হয়না।
বাসার ১০০ওয়াট আর ৬০ওয়াটের বাল্বগুলো ব্যবহার করা বন্ধ করে দিন। এইসব বাল্ব বেশি দীর্ঘস্থায়ী হয়না। এনার্জী সেভিং বাল্ব ব্যবহার শুরু করুন। মাসে মাসে বাল্ব কেনার চেয়ে একবারে একটি এনার্জী সেভিং বাল্ব কিনলে এক বছর নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারবেন। নষ্ট হলে পাবেন নতুন বাল্ব। ওয়ারেন্টি থাকে বেশিরভাগ এনার্জী সেভিং বাল্বের সাথে। আর একটা সাধারণ ৬০ওয়াটের বাল্ব থেকে আপনি যে পরিমাণ আলো পান একটি ১৪ওয়াটের এনার্জী সেভিং বাল্ব থেকে সেই পরিমাণ আলো পাবেন! তবে যাদের সাধ্য নেই তারা ১০০ওয়াটের বাল্ব ব্যবহার বন্ধ করে ৬০ওয়াটের বাল্ব ব্যবহার করুন। বিদ্যুতের ব্যবহার তাতে একটু করে হলেও কমবে। সরকার নরমাল লাইটের বিনিময়ে এনার্জী সেভিং লাইট দেওয়ার একটা কাজ হাতে নিয়েছে। যদি পারেন তাহলে একদিন গিয়ে নরমাল লাইটগুলোকে দিয়ে এনার্জী সেভিং লাইট নিয়ে আসুন।।।
অকারণে কম্পিউটার অন করে রাখবেন না। রাত্রে ডাউনলোড দেবার প্রয়োজন হলে পিসির মনিটর স্পিকার সব অফ করে রাখুন। আর যদি সম্ভব হয় তাহলে যতোগুলো প্রোগ্রাম ডাউনলোডের সময় লাগবেনা সেগুলো সব বন্ধ করে রাখুন। মনিটর কিন্তু অনেক বিদ্যুৎ খায়। সুতরাং সেটিকে বন্ধ করে রাখলে বিদ্যুতের ব্যবহার একটু হলেও কমবে। কম্পিউটার বন্ধ করার পরে যদি পারেন মেইন সুইচটিকেও বন্ধ করে দিন।
অনেকের বাসায় একুরিয়াম আছে। একুরিয়ামের মাছের অক্সিজেন সরবরাহের জন্য সারাদিন একটা পাম্প চলে। একটু কমদামী পাম্প ঘ্যাড়ঘ্যাড় করে চলে আর বেশিদামী পাম্প নিঃশব্দে চলে। যেভাবেই চলুক না কেন একটু হালকা কম্পনের শব্দ কিন্তু সবার কানেই যায়। পাম্পটাকে বন্ধ করে রাখুন আধা ঘন্টা কিংবা এক ঘন্টার জন্য। আশা করি পাম্প ছাড়া এই অল্প সময়ে একুরিয়ামের মাছগুলোর কোনপ্রকার ক্ষতি হবেনা। কিন্তু আপনি বাচাতে পারবেন কিছু বিদ্যুৎ!!!
যারা স্কুল/কলেজ/ইউনিভার্সিটিতে পড়েন তাদেরকে অনুরোধ জানাবো ক্লাস শেষ হবার পরে বের হবার আগে রুমের সকল লাইট ফ্যান বন্ধ করে দিতে। এতে করে অনেক বেশী বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে। কারণ, প্রতিটি ক্লাসরুমে কমপক্ষে চারটি ফ্যান এবং চারটি করে লাইট থাকে। ভূলের কারণে যদি কখনো সেগুলোকে বন্ধ করা না হয় তাহলে প্রচুর বিদ্যুৎ নষ্ট হবে।।।
বাসা থেকে বের হবার সময় এবং ঘুমাতে যাবার আগে একবার দেখে নিন ঘরের অপ্রয়োজনীয় সব লাইট ফ্যান বন্ধ আছে কিনা।
বিদ্যুৎ নিয়েই অনেককিছু লিখে ফেললাম। এইবার পানি নিয়ে কিছু লেখি। পানির সাশ্রয়েও আমাদের করার আছে অনেক কিছু...
অনেকের মধ্যেই একটা বদঅভ্যাস আছে। বাথরুমে গিয়ে কলটাকে ছেড়ে রাখা। দাত ব্রাশ করার সময় বেসিনের কলটাকে ছেড়ে রাখা। কাপড় ধোয়ার আগে কল ছেড়ে দিয়ে বেশ কিছুক্ষণ পানির অপচয় করা। অনুরোধ করবো এই কাজগুলি করা থেকে বিরত থাকতে। অনেক পানি সাশ্রয় হবে।
মিডিয়ার ভূমিকা:::
বাঙ্গালীর একটা বদঅভ্যাস আছে। তারা সবকিছু ভূলে যায়। লাইট ফ্যান বন্ধ করাতো মামুলি ব্যাপার অনেকে খেতে পর্যন্ত ভূলে যায়! সকালে না খেয়ে ক্লাসে/অফিসে গিয়ে যখন দেখে পেটের মধ্যে ছুচো দৌড়াদৌড়ি করছে তখন তাদের হুশ আসে। "সকালেতো খেয়ে আসিনি!!!" এখন কথা হলো। পোস্টের মধ্যে যে এতো বড় বড় কথাগুলো লিখলাম এগুলোকে মনে রাখতে হিমশিম খেতে হবে মানুষকে। এটাই স্বাভাবিক। এখানেই ভূমিকা আসে মিডিয়ার।
এফএম রেডিও এবং টিভি চ্যানেলগুলো চাইলেই পারে জনসচেতনতা তৈরী করতে। যদি প্রতি এক/দুই ঘন্টা পর পর সকল রেডিও এবং টিভি চ্যানেলগুলো একবার করে বলে বিদ্যুৎ এবং পানির কলগুলো বন্ধ করে রাখতে বলে তাহলে তাদের বেশি সমস্যা হয় বলে মনে হয়না। প্রথম আলো এবং অন্যান্য পত্রিকাগুলো যদি প্রথম পাতায় ছোট্ট করে একটা বিজ্ঞাপনে ছোট্ট করে লিখে দেয় তাহলে তাদের্ও তেমন কষ্ট হবার কথা না। বরং সাধারণ মানুষ যখনি পত্রিকাটা দেখবে তখনই তাদের মনে পড়বে। "ইশ! রান্নাঘরের কলটাতো ছাড়া!!!"
এতে সহায়ত ভূমিকা রাখতে পারে সামহোয়ার ইন ব্লগের মতো ব্লগ সাইটগুলোও। ব্লগের ব্যানারের এক প্রান্তেই ছোট্ট করে লিখে দেওয়া যায় লাইট ফ্যান বন্ধ করে রাখার কথাগুলোকে। কি লেখা যায় তা পোস্টের শেষে লিখে দিচ্ছি। আপাতত আমি নিজেই একটা উদ্যোগ নেবো। আশা করবো ব্লগাররাও আমাকে সঙ্গ দেবেন। পোস্টের শেষের লেখাটিকে শিরোণাম বানিয়ে একটা পোস্ট দেবো। আর যেকোন একজন ব্লগার প্রতি এক ঘন্টা পর পর সেখানে গিয়ে একটি করে মন্তব্য করে আসবেন। একটা "." দিয়ে আসলেও চলবে। আপনার মন্তব্যের সঙ্গে সঙ্গে সেটা চলে আসবে "সাম্প্রতিক মন্তব্য" তালিকায়। চোখে পড়বে অন্যান্য ব্লগারদের। এটাইতো জনসচেতনতা সৃষ্টি। জনসচেতনতা সৃষ্টিতে ব্যবহার করুন বিভিন্ন মেসেঞ্জার এবং জনপ্রিয় সোস্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট ফেসবুককে।।।
যে কথাটিকে লেখা যায়: "ঘরের অপ্রয়োজনীয় সব লাইট ফ্যান বন্ধ আছেতো? কোথাও কোন কল ছাড়া নেইতো?? একবার একটু চেক করে দেখুনতো... বিদ্যুৎ এবং পানি সাশ্রয় করুন।।।"
অনেকদিন আগে একটা মুভিতে শুনেছিলাম, "কোন দেশ পারফেক্ট হয়না, তাকে পারফেক্ট বানাতে হয়। এই দেশটাকে বদলাতে হবেই। আমরা বদলাবো একে..." পোষ্টের শেষ করছি এই লাইনটার মাধ্যমেই।
সবাই ভাল থাকবেন...
-হ্যাপি ব্লগিং
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুলাই, ২০১০ রাত ৩:১৮