এই এপ্রিলে অসীম সাহসী শিক্ষক সাব্বিরের সাথে রাজশাহীতে তাঁর কর্মস্থলে পরিচয়। হাসতে হাসতে জানালেন, ডাক্তার সময় বেঁধে দিয়েছে। কী পরিমাণ মনোবল আর আত্মবিশ্বাস থাকলে একটা মানুষ মৃত্যুর সামনে অবিচল থাকতে পারে, এ সমীকরণ মেলাতে আমি হিমশিম খাই। প্রচণ্ড আবেগের বশে কীবোর্ড ধরি। সামহোয়্যারে প্রকাশের পর ‘সাব্বির’ নামটা আর রাজশাহীর এক নদীপারের স্কুলে সীমাবদ্ধ থাকেনা, হয়ে যায় এক অভিযানের নাম। শত শত শুভাকাংক্ষীর বদান্যতায় আমরা সাব্বির স্যারের জন্য কিডনি প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা করতে পেরেছি। মায়ের সাথে শরীরের এই অংগটি ভাগাভাগি করে সাব্বির এক দুঃস্বপ্নের পৃথিবী থেকে ছিটকে বের হয়ে এসেছেন। মৃদুলা-কে দু’বছরেই পিতৃহারা হতে হয়নি, এ আনন্দে দিনরাত কেঁদে বুক ভাসিয়েছেন। এ সবই আমাদের প্রাপ্তির কথা, অর্জনের কথা।
আজ তবে কেনো আবার সাব্বির স্যারের অনুরোধে আমাকে ব্লগ লিখতে হচ্ছে? কারণ, প্রতিমাসে সাব্বিরের চিকিতসার জন্য ৫০,০০০ টাকার সংস্থান করতে হচ্ছে। ক’মাস পর অবশ্য সেটা ৩০,০০০ এ নেমে আসবে। এভাবে চালাতে হবে একবছর। তারপর খরচ কিছুটা কমে আসবে। গতকাল তাঁর কাতর মুঠোফোন বার্তা আমাকে ধাক্কা দিলো – যে টাকা সঞ্চয় আছে তা দিয়ে আর দু’মাস চিকিতসা হবে। তারপর কী হবে আপা? প্লিজ আমার কথা সবাইকে বলুন।
দু’মাস পর কী হবে আমি জানিনা, সাব্বির জানেননা, তাঁর শুভাকাংক্ষীরা জানেননা। নাসির, পপি, জাকির-এমন মহতপ্রাণ বন্ধুরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে আগস্টে সাব্বিরের অপারেশনের পর থেকেই অনেক খাটুনি করে চলেছেন পরবর্তী অর্থ সংগ্রহের জন্য। যে জীবন ঈশ্বরের কৃপায় আর ‘ফেরেশতার মত মানুষদের’ অনুগ্রহে সাব্বির আবার ফিরে পেয়েছেন, তাকে বয়ে নিয়ে যেতে হলে নির্ভর করতে হবে ওষুধ, ইনজেকশন আর ক্রমাগত পরীক্ষা নিরীক্ষার উপর। তা করতে না পারলে ‘এতদিনের সব অর্জন বৃথা হয়ে যাবে’- সাব্বির স্যার আমাকে অনেকবার বিষয়টি বলেছেন। প্রতিমাসে কোনরকম ভাবে একটা আয়ের ব্যবস্থা হতে পারে এমন ব্যবসার খোঁজ দেয়ার জন্য পরিচিতজনের মাধ্যমে সবাইকে আহবান করেছেন। চাকুরি থেকে প্রায় নির্বাসিত সাব্বির, কোন অর্থের সংস্থান নেই ছয়জনের এই পরিবারটিতে, এমতাবস্থায় দৈনন্দিন খাওয়া পরার সাথে প্রতিটা সদস্যের নির্ঘুম রাত কাটছে যে চিন্তায় তা হলো-প্রতিমাসে ৫০,০০০ টাকা কীভাবে যোগাড় করা যায়। আকাশকুসুম কল্পনা বৈ ত নয়! প্রতিস্থাপনে পৌঁছুতে ব্যয় হয়ে গেছে সংগৃহীত সিংহভাগ। বাকী যেটুকু ছিলো তার সাথে জাকাতের কিছু অর্থ আর প্রবাসী দু’একজন বন্ধুর আনুকূল্য মিলিয়ে আরো তিনমাস হয়ত যাবে। তারপর শুধুই অন্ধকার। অন্তত এখনো আলোর দিশা দেখিনা।
সাব্বির অবুঝ নন। তিনি জানেন বাংলাদেশের মানুষ নিরন্তর ক্ষুধা, দারিদ্র্য আর অসহায়ত্বের সাথে যুঝে চলেছে। তেমন কারোই আহামরি কোন সামর্থ্য নেই তাঁকে বড়, মাঝারি, ছোট অংকের অর্থ দিয়ে সাহায্য করার। কারো কাছ থেকে জোর করে সেটা আদায়ও করা যায়না। এরকম অসংখ্য সাব্বিরের জন্য সাহায্য চেয়ে প্রতিদিন প্রচারমাধ্যমে সংবাদ আসছে। দুর্ঘটনা, রোগে-শোকে প্রতিদিন এমন অনেক সাব্বির অকালে ঝরে যাচ্ছে। তিনি তাই হাসতে হাসতে মরে যাওয়ার জন্য প্রস্তত হচ্ছিলেন।
আমরাই তো তাঁকে স্বপ্ন দেখিয়েছি। আমরাই তো সাব্বিরকে ভালোবেসে হাত বাড়িয়েছি, তাঁর কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য দৈনন্দিন সঞ্চয় থেকে অর্থ দিয়েছি। ফোনে, সাক্ষাতে তাঁকে বেঁচে থাকার প্রেরণা যুগিয়েছি। এই আমরাই তো বিদেশ থেকে উড়ে গিয়ে সহমর্মিতা জানাতে, সাব্বিরের সান্নিধ্যে আসার জন্য, বিধ্বস্ত পরিবারটিকে সাহস যোগানোর জন্য হাসপাতালে ছুটেছি।
কান পাতলেই শুনতে পাই খালাম্মার অঝোর কান্না, “মা, আমার ছেলেকে যারা বাঁচিয়েছি তারা মানুষ নয়, ফেরেশতা। আমাদের কাছে এখনো স্বপ্নের মত মনে হয়। কীভাবে সবাই একটু একটু করে আমার ছেলেকে মরণের হাত থেকে ফিরিয়ে আনলো, আমার কাছে বাস্তব মনে হয়না”।" সাব্বিরের স্ত্রী আবেগের বশে দাঁড়াতে পারছিলেননা, কাঁপছিলেন-“আমরা মানুষকে কোনদিন অবিশ্বাস করবোনা আপা। আমাদের গোটা পরিবারকে জীবন ফিরিয়ে দিলো দূর দূরান্তের কত অজানা মানুষ। কীভাবে সবাই একটা অসম্ভবকে সম্ভব করে তুললো?” হয়ত উপন্যাসে, নাটকে দেখেছেন। কিন্তু মানুষের এমন মহানুভবতার সাথে সাব্বির পরিবার পরিচিত ছিলেননা। প্রথম যখন আমি তাঁকে ব্লগ, ফেসবুকে প্রচারণার কথা বলি, সাব্বির স্যার তাই অবিশ্বাসের করুণ হাসি হেসেছিলেন। কিন্তু এই আমরাই তাঁর সামনে মানবতার চর্চাকারী কিছু মানুষের অন্তরের পরিচয় দেখাতে সক্ষম হয়েছি। তাই তিনি মানুষের উপর অবিচল আস্থা নিয়ে সাহায্য প্রত্যাশা করে চলেছেন।
কথা হলেই আমাকে সকাতর অনুরোধ করছেন বাংলাদেশ বা বিদেশের কোন দাতব্য প্রতিষ্ঠানের কাছে সাহায্য চাওয়ার জন্য। কারণ ব্যক্তিবিশেষের পক্ষে এককালীন বড় অংক দেয়া হয়ত সম্ভব নয়। আমি তাঁর পক্ষ থেকে সবার কাছে অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি। দেখিনা, আমরা আরো একবার সাব্বিরের জন্য সমবেত হয়ে আরো কিছু অর্থ সংগ্রহ করতে পারি কিনা? অন্তত কয়েকটা মাস তাঁকে মৃত্যুচিন্তা আর দুঃস্বপ্ন থেকে রেহাই দিতে পারি কিনা? আমাদের নিজেদের এবং পরিচিত মহলের যোগাযোগ কাজে লাগিয়ে কোন বাণিজ্যিক বা দাতব্য প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বড় একটা সাহায্য পাওয়া যায় কিনা, আমরা কি একটু চেষ্টা করবো? অন্তত প্রতিমাসে এই পরিবারটিতে স্থায়ী একটা অর্থ সমাগমের ব্যবস্থা হয়, এমন কোন পরামর্শ, কৌশল নিয়ে আমরা কি সাব্বিরকে একটু আশার পথে হাঁটাতে পারি? সবার কাছে আমি সাব্বিরের কথাগুলো পৌঁছে দেয়ার জন্য বিনীত এই প্রস্তাব রাখলাম। যে স্বপ্নের দ্বারপ্রান্তে আসতে সাব্বিরকে এতটা পথ পাড়ি দিতে হলো, সে স্বপ্ন অধরাই যেন না থাকে- আমরা কি একটু ভাববো?
আপনাদের সুবিধার্থে সাহায্য পাঠানোর বিস্তারিত আবারো দিচ্ছিঃ
মোঃ সাব্বির রহমান (Md. Sabbir Rahman), সঞ্চয়ী হিসাব নং ১১২২১০৮০০১৪৪১৩, প্রাইম ব্যাংক, রাজশাহী।
অস্ট্রেলিয়া থেকে কেউ যদি সরাসরি ব্যাংকে পাঠাতে চান তবে আমার নীচের এই একাউন্টে পাঠাতে পারেনঃ
Commonwealth Bank
A/C Name: Rukhsana Tarannum Tajin
BSB: 062831
A/c No: 10327883
PayPal এর মাধ্যমে অর্থ পাঠাতে অনুগ্রহ করে নীচের লিঙ্কে PayPal বাটনটির সাহায্য নিনঃ
http://donatesabbir.wordpress.com/
সাব্বির ভাইকে নিয়ে মূল পোস্টঃ
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে নভেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:৪১