ব্লগে তাঁকে নিয়ে লেখার পর আমার দেশ পত্রিকায় ছাপানোর ব্যবস্থা করেন ব্লগার খোমেনী। কিডনি দিতে চান ব্লগার মেনন। অনেক সমবেদনা আর আস্থা নিয়ে পাশে দাঁড়ান অসংখ্য মানুষ। অবসরপ্রাপ্ত একজন প্রাথমিক শিক্ষক হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন সাব্বিরের সাথে ফোনালাপে, "আমি জানি আপনি কত কষ্টে আছেন। আমি আজ জীবনের শেষপ্রান্তে। সারাজীবন এই কষ্ট বয়ে নিয়ে চলেছি"। সিলেট থেকে একজন শিক্ষক আমাকে ফোনে জানান, তিনি নিজ উদ্যোগে দেশের ৫৭ টি প্রাইমারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে পত্রিকার লেখার কপি পাঠাবেন, যাতে সবাই অন্তত অনুভব করে শান্তি পায় যে শিক্ষকদের নিয়ে এখনো ভাবা হয়।
ঢাকার একজন ব্লগার ব্লগে পড়েই বড় একটা অংক পাঠিয়ে দেন সাব্বিরের কাছে। সিলেটের একজন ব্লগার নাম না প্রকাশ করার শর্তে টাকা পাঠিয়ে আমাকে মেইল দেন। ফেসবুক পেজ এবং ব্লগে দেখে আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ডেনমার্ক, ইতালি, সুইডেন, ইউকে থেকে অনেকে সাধ্যমত সাহায্য পাঠান। আমার সহপাঠী, সহকর্মীরা, অস্ট্রেলিয়ার বন্ধুরা হাত বাড়িয়ে দেন। জাপান থেকে আমার পরিচিত ভাইয়া তাঁর ইউনিভার্সিটিতে অর্থ সংগ্রহ করেন আবার অস্ট্রেলিয়ায় তাঁর চেনা গণ্ডিতে সবাইকে মেইলে জানিয়ে দেন। সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজের তিনজন ছাত্র নিজ উদ্যোগে অর্থ সংগ্রহ করে রাজশাহীতে সাব্বির ভাইয়ের হাতে তুলে দেন। জার্মানির একজন ব্লগারের মা নিজে দেখা করে সাব্বির ভাইকে সাহায্য দিয়ে আসেন।
দেশের এবং অস্ট্রেলিয়ার একাউন্ট মিলিয়ে আমরা এখন পর্যন্ত পেয়েছি ৪ লক্ষ টাকা। বন্ধুরা পরামর্শ দিচ্ছেন বড় কোন ইভেন্ট আয়োজনের। এটা ছাড়া বাকী আরো ১৬ লাখ সংগ্রহ করা যাবেনা। জানি, কিন্তু কীভাবে? আমি আমার পরিচিত সব মহলে সাহায্য চেয়ে যাচ্ছি। অস্ট্রেলিয়ার বাংগালীদের ওয়েবসাইটগুলোতে খবর প্রকাশের অনুরোধ জানিয়েছি। আমার অস্ট্রেলিয়ান শিক্ষকদের কাছে সাহায্য চেয়েছি এবং অনুরোধ করেছি পরিচিত মহলে ছড়িয়ে দিতে। বাংগালীদের অনুষ্ঠান হলেই সবাইকে মনে করিয়ে দিচ্ছি। আরো চেষ্টা চালাচ্ছি কোন দাতব্য সংগঠনের কাছে খবরটা পৌঁছে দেয়া যায় কিনা। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে অনেক আগে সাব্বির আবেদন করেছেন, এখন পর্যন্ত বোধহয় চিঠিটা কাগজের স্তুপের নীচেই পড়ে আছে। সাব্বিরের কান্না মহাপরিচালক মহোদয়ের কানে পৌঁছানোর জন্য আমি সাধ্যমত চেষ্টা করে যাবো। কোন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থেকে এখনো কোন সাহায্য বা আশ্বাস পাওয়া যায়নি।
আগামী পরশু টিস্যু আর ক্রস ম্যাচিং এর ফলাফল জানা যাবে। সাব্বিরের প্রতিরোধ ক্ষমতা এতই কমে যাচ্ছে যে তাঁর কাতর কন্ঠে "আপা, আর পারিনা" আমাকে অসহায় করে তোলে। আমি মিথ্যে সান্ত্বনা দেই, "আমরা পারবো সাব্বির ভাই, একটু সহ্য করে থাকেন"। সত্যিই কি আমরা পারবো? সাব্বির কোন নেতা নন, অভিনেতা নন, শিল্পী নন। তাঁর কোন ক্ষমতাবান মামা, চাচা নেই। তাঁর লেখা পড়ে বা নাটক দেখে পাঠক-দর্শকরা আপ্লুত হননা। তিনি কলাম লেখেননা, রাজনৈতিক বক্তৃতার ঝড়ও তোলেননা। তাঁর ইন্টারনেট, ইমেইল, ফেসবুকে কোন 'ফ্রেন্ড' নেই, ফ্যানও নেই। তিনি শুধুই একজন শিক্ষক। 'প্রাইমারি স্কুলের টিচার'। যাঁর একমাত্র কাজ দিনে সাত ঘন্টা ছাত্র পড়ানো আর মাস শেষে আট হাজার টাকা বেতন গুনে দেনাপাওনার হিসাব মেলানো। সেই সাব্বিরের জন্য কে আছে? তিনি শুধুই একজন নাগরিক। নিজেকে যিনি পরিচয় দেন 'তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিক'। এত সম্ভাবনার একটা দেশ আর এত বিশালপ্রাণ মানুষদের কাছে আমাদের, সাব্বিরের আকুতি আরো ১৬ লক্ষ টাকা। আমরা যারা মর্মাহত, আলোড়িত হয়েছি তারা আরেকটু বড় গণ্ডিতে সবাইকে জানিয়ে দেই, নিজে উপযাচক হয়ে অর্থ নিয়ে আসি। যারা এখনো আলোড়িত হইনি তারা একটু ভাবি 'বিন্দু বিন্দু জল' দিয়েই তো সিন্ধু হয়। শুধু আমরা যেন একটা মরণাপন্ন মানুষের আকুতিকে অবহেলা করে এড়িয়ে না যাই।
সাহায্য করতে ভিজিট করুনঃ
http://donatesabbir.wordpress.com/
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০১১ দুপুর ১:০০