রসায়নকে বিজ্ঞানের একটি পৃথক শাখা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে এর জনক জাবির ইবন্ হাইয়ানের অবদান আলোচনা করেই থেমে যেতে হয়েছিল গত পর্বে। বিজ্ঞানকে এগিয়ে নিয়ে যেতে তাঁর অবদান অনেক বড়, সন্দেহ নেই। কিন্তু, জ্ঞান-বিজ্ঞানের সাধনায় এ ছিল মুসলমানদের একেবারে প্রথম দিককার পদক্ষেপমাত্র। জ্ঞানসাধনার উৎকর্ষতায় কোথায় গিয়ে পৌঁছানো সম্ভব তা বিশ্বকে দেখাতে যেন বদ্ধপরিকর ছিলেন তারা। এর ধারাবাহিকতায় জাবিরের পরে এক্ষেত্রে আবির্ভূত হন যাকারিয়া আল রাজী। খৃষ্টীয় নবম শতকের চিকিৎসাবিজ্ঞানের এক পরম বিস্ময় এই আবু বকর মুহাম্মাদ ইবন যাকারিয়া আল রাজীর(محمد زکریای رازی; ৮৬৫-৯২৫) চিকিৎসাবিজ্ঞানে অতুলনীয় অবদানের কথা আমরা আগেই আলোচনা করেছি। রসায়নেও তিনি অবিস্মরণীয় অবদান রেখেছেন। তাঁর হাতেই বেশ কয়েকটি রাসায়নিক যন্ত্রপাতির উন্নয়ন সাধিত হয় যেগুলো এক সহস্রাব্দ পার হয়ে যাওয়ার পরে আজো ব্যবহৃত হয়। পাতন(Distillation) সহ কয়েকটি রাসায়নিক পদ্ধতি সম্পর্কে তাঁর পূর্ণ ধারনা ছিল যার সাহায্যে তিনি সালফিউরিক এসিড(Sulfuric Acid) পুনরায় আবিষ্কার করেন। রসায়নের উপরে তাঁর রচিত ১২টি গ্রন্থের মধ্যে ‘কিতাবুল আস্রার’(Book of Secret) খুবই বিখ্যাত। তিন অধ্যায়ে বিস্তৃত এই গ্রন্থে তিনি পরিচিত বস্তুসমূহের ভাল-মন্দ, ব্যবহার এবং এসব হতে উৎপাদনযোগ্য বস্তুর বর্ণনা সহ বিভিন্ন রাসায়নিক যন্ত্রপাতির আকার ও ব্যবহার উল্লেখ করেছেন। শুধু তাই নয়, বইয়ের শেষ অধ্যায়ে তিনি নানাবিধ রাসায়নিক পদ্ধতি(Chemical Techniques) সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। এরপরেই আসে তাঁর ‘কিতাবুল শাওয়াহিদ’(Book of Evidences) এর নাম।চিকিৎসাবিজ্ঞানে ‘কিতাবুল হাবী’(The Virtuous Life; الحاوي) এর যে স্থান, রসায়নে কিতাবুল শাওয়াহিদকেও সে স্থান দেয়া হয়ে থাকে। এত কিছুর পরেও, রসায়নে যে অনন্য অবদানের জন্য আল-রাজী অমর হয়ে আছেন তা হচ্ছে, পরীক্ষালব্ধ ফলাফলের ভিত্তিতে বস্তুসমূহের শ্রেনীবিভাগকরণ। রসায়নপাঠে সমধর্মী বস্তুসমূহের শ্রেনীবিভাগকরণ(Classification) কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা এ শাস্ত্রের শুরু দিকের শিক্ষার্থীও সম্যকরূপে অবগত।
আল রাজী কর্তৃক শ্রেনীবিন্যাসকৃত ছয়টি ভিন্ন বস্তুর নমুনা
প্রাচীন পৃথিবীতে মাত্র চারটি মৌলিক বস্তুকে স্বীকার করা হোত আর তা হলো মাটি(Earth), বায়ু(Air), পানি(Water) এবং আগুন(Fire)। এই শ্রেনীবিভাগ যতটা না বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোন থেকে করা হয়েছিল, তার চেয়েও বেশী ছিল দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গী। আল-রাজী এর বিপরীতে দাঁড়িয়ে পরীক্ষালব্ধ ফলাফলের ভিত্তিতে পরিচিত বস্তুসমূহকে ছয়ভাগে ভাগ করেন। যেমন- লবনসমূহ(Salts;AL-AMLAH) পানিতে দ্রবীভূত হয়, ধাতূসমূহ(metals; AL-AJSAD) চকচকে, দাহ্যসমূহ(Spirits; AL-ARWAH) আগুনে পোড়ে ইত্যাদি। আজকের রসায়নের অগ্রগতির সাথে তুলনা করতে গেলে এই শ্রেনীবিন্যাসের কোন স্থান নেই- সত্য; কিন্তু, পরীক্ষালব্ধ ফলাফল(Experimental Results) বিশ্লেষনের মাধ্যমে বস্তুসমূহের পার্থক্যকরণের মূলনীতিটি বিভিন্ন বিজ্ঞানীর হাতে ধীরে ধীরে বিবর্তন এবং আধুনিকায়নের মাধ্যমে প্রায় এক সহস্রাব্দ পরে রুশ বিজ্ঞানী মেন্ডেলিফের(১৮৩৪-১৯০৭) হাতে পর্যায় সারনী(Periodic Table; ১৮৬৯) আবিষ্কার হওয়ার পেছনে অবদান রাখে আর একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, পর্যায় সারনী ছাড়া আধুনিক রসায়ন কল্পনা করা যায় না।
আধুনিক পর্যায় সারণী
জাবির এবং আল-রাজীর মধ্যবর্তী এক শতাব্দী সময়ে(৭৬৫-৮৬৫) রসায়নচর্চা কিন্তু বন্ধ ছিল না। এ সময়ে জুন্নুন মিশরী(?-৮৬০), আবু উসমান আমর্ ইবন্ বাহর্ আল জাহিয(الجاحظ;৭৮১-৮৬৯) এবং আলী ইবন্ ওয়াহ্শিয়া আল কালদানী আবুল মন্সুর মুয়াফ্ফাক্(أبو بكر أحمد بن وحشية) এর নাম উল্লেখযোগ্য। জুন্নুন মিশরী মূলতঃ আধ্যাত্মিক রসায়নের(আলকেমী) দিএক মনোনিবেশ করলেও অন্য দুজন বৈজ্ঞানিক রসায়নে অবদান রাখেন। মূতাযিলা সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা আল জাহিয প্রনীত ‘কিতাবুল হাইওয়ান’(Book of Animals) এবং আল কালদানী প্রনীত ‘কিতাবুল ফালাহ্ আন্ নাবাতিয়া’(Nabatean Agriculture) এক্ষেত্রে খুবই বিখ্যাত বই। আল-রাযীর পরে আসেন আবুল মন্সুর মোয়াফ্ফাক। মূলতঃ ঔষধবিজ্ঞানী এই ভদ্রলোক ‘কিতাবুল আব্নিয়া হাকায়েক আল আদ্বিয়া’তে সোডিয়াম কার্বোনেট(Sodium Carbonate), পটাশিয়াম কার্বনেট(Potasium Carbonate) সহ বিভিন্ন অম্ল(Acids) নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। রসায়নে আরেক মহীরুহ হচ্ছেন আবুল হাকিম মুহাম্মাদ ইবন্ আব্দুল মালিক আল-কাছি। একাদশ শতকের এই বিজ্ঞানী ‘আইনুস্ সানাহ্ ওয়া আইওয়ানুস্ সানাস্’(Essence of the Art and Aid of Worker) নামে একটি মাত্র গ্রন্থের জন্য রসায়নে অমর হয়ে আছেন। সাতটি ভিন্ন পরিচ্ছদে বিভক্ত এই সুবিশাল গ্রন্থে তিনি আল-রাযীর চেয়ে বিস্তারিতভাবে রাসায়নিক পরীক্ষায় প্রয়োজনী বস্তুসমূহের ধর্ম, ব্যবহার, অপ্রাপ্যতায় বিকল্প বস্তুর তালিকা, রাসায়নিক যন্ত্রপাতির প্রস্তুতি ও ব্যবহার আলোচনা করেছেন। রসায়নকে প্রনালীবদ্ধকরনে এই গ্রন্থের অবদান অনস্বীকার্য।
দ্বাদশ শতকে রসায়নে প্রসিদ্ধি লাভ করেন আত-তুগরাই। রসায়নের উপর চারটি দারুন গ্রন্থ প্রণয়নকারী এই কবি ও বিজ্ঞানীর আসল নাম মুহাম্মাদ ইবন্ আব্দুস্ সামাদ্ আল ইস্ফাহানী(১০৬১-?)। ত্রয়োদশ শতকে রসায়নে নামকরা আলোচকদের মধ্যে আবদুল লতিফ্ দামেস্কী(১১৬২-১২৩৭), উমর ইবন্ আদিম্ হালাফী(১১৯২-১২৬২), আবুল হাসান আর রাহ্মাহ্(?-১২৯৪/৯৫) এবং ইবন্ কায়মুনা(?-১২৭৭/৭৮) এর নাম উল্লেখযোগ্য। তবে, এ সময়ের সবচেয়ে আলোচিত রসায়নবিদ হলেন আবুল কাসিম। ধাতববিজ্ঞানে তিনি পূর্ববর্তী বিখ্যাত বিজ্ঞানীদের মতবাদের ভুলগুলো ধরিয়ে দেন। এমনকি ইবন্ সীনার ধাতু সংক্রান্ত মতবাদকেও তিনি তাঁর ‘ইলমূল মুক্তাসাব ফি যারায়িতিজ্ জাহাব’(Knowledge Acquired Concerning the Cultivation of Gold) গ্রন্থে সাহসিকতার সাথে খন্ডন করেন।
চতুর্দশ শতকে রসায়নেও মুসলমানদের জ্ঞানচর্চার সূর্য অস্তাচলে ঢলে পড়ে। এর মাঝেও মিশরের আল জিল্কাদী(?-১৩৬০/৬১) এবং আবদুল্লাহ ইবন্ আলী আল কাশানীর নাম উল্লেখ করতেই হয়। জর্জ সার্টন(George Sarton) মৌলিক রসায়নের উপর আল জিল্কাদীর ১৫টি গ্রন্থের সন্ধান দিয়েছেন। অন্যদিকে আল কাশানী ছিলেন প্রায়োগিক(Practical) রসায়নের একজন বিশেষজ্ঞ। মৃৎপাত্র নিয়ে তাঁর ‘জাওয়াহিরিন আরাইস্’ গ্রন্থটি বেশ বিখ্যাত।
মৌলিক রসায়নে এই হচ্ছে মুসলমানদের অবদানের সংক্ষিপ্তসার। তবে, তাঁরা এই বিদ্যাকে শুধু তাত্ত্বিক(Theoritical) আলোচনাতেই বেঁধে রাখেন নি, বরং প্রায়োগিক দিকে এর ব্যবহারকে বিস্তৃত করেছেন। এরই ফলশ্রুতিতে কাগজ, সিরামিক ও মৃৎশিল্প, বিভিন্ন প্রকারের কাচ উৎপাদন এবং দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজে এর ব্যবহার, সাবান, সুগন্ধি, প্রসাধনী, পানীয়, গোলাবারুদ সহ নানান শিল্পের বিকাশ তরান্বিত হয়। উল্লেখিত প্রতিটি ক্ষেত্রেই মুসলমানদের নিজস্ব মৌলিক অবদান রয়েছে। এখানে কেবল কাগজ(Paper) এবং সাবান(Soap) নিয়ে আলোচনা করা হবে।
কাগজ ছাড়া আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান কি এখনো কল্পনা করা যায়? কাগজের আবিষ্কার ও ব্যবহার মানবসভ্যতার জ্ঞানের উন্নয়ন এবং প্রসারে যে ভূমিকা রেখেছে আর খুব কম প্রযুক্তিগত আবিষ্কারই সেই পরিমান ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে। খৃষ্টপূর্ব ৩৭০০-৩২০০ অব্দে প্রাচীন মিশরে কাগজ প্রথম আবিষ্কারের কথা জানা যায়। লেখালেখির কাজে প্যাপিরাসের(Papyrus) ব্যবহার জ্ঞানের জগতে কাগজের প্রথম পদক্ষেপ। খৃষ্টপূর্ব ৮০০ অব্দে প্যাপিরাসের পরিবর্তে আসে পার্চমেন্ট(Parchment)। এ সময়ে রোমেও এর সীমিত ব্যবহার সম্পর্কে জানা যায়। পরবর্তীতে চীনে (মোটামুটি খৃষ্টপূর্ব ১০০০ অব্দে) স্বতন্ত্রভাবে কাগজের আবিষ্কার হয়। আর ৭৫১ সালে কিরগিজ্স্তান(Kyrgyzstan) মুসলমানদের অধিকারে এলে দেড় হাজারেরও বেশী সময় ধরে সমগ্র মানব সভ্যতার অগোচরে থাকা এই প্রযুক্তি উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। মুসলমানদের অব্যাহত জ্ঞানচর্চা, বিদেশী গ্রন্থের অনুবাদ এবং পাঠাগারের প্রসার কাগজের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি করে। ফলে, পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বপ্রথম কাগজের উৎপাদন একটি আলাদা শিল্পে পরিণত হয়। কাগজের ওজনহ্রাস এবং মসৃনতা বৃদ্ধিতে এসময় অনেকদূর অগ্রগতি হয়। চীনের তুঁত গাছের বাকলের পরীবর্তে বাঁশের ছাঁচ, লিলেন, রেশম, সুতী কাপড় হেন বস্তু নেই যা কাগজ তৈরীতে ব্যবহৃত হয় নি। কাগজ তৈরীর যন্ত্রপাতিতেও আসে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। সম্রাজ্যের এখানে ওখানে (বাগদাদ, দামেস্ক, কর্দোবা) গড়ে উঠতে থাকে কাগজের কারখানা। সেখানে নানান ধরনের, নানান মানের এমনকি নানান রঙের কাগজ তৈরী হতে থাকে। মুসলিম স্পেন হতেই বাকি ইউরোপ কাগজের ব্যবহার শেখে। বিজ্ঞানের ইতিহাসের জনক জর্জ সার্টন তাই আক্ষেপ করেছেন কেন কাগজের বিশ্বব্যাপী গৃহীত নাম (Paper) আরবীর(الورق) পরিবর্তে ইংরেজী ভাষা হতে নেয়া হল! মুসলমানেরা সঠিকসময়ে মূদ্রনযন্ত্রের ব্যবহার আয়ত্ব করতে পারলে হয়তো এই আক্ষেপ থাকত না। তারপরেও কাগজের পরিমানবাচক শব্দ ‘রীম’(Ream= 500 sheets of Paper) শব্দটি আরবী রিস্মার(Rismar) হতে ল্যাটিন অপভ্রংশ রিজ্মা(Risma) হয়ে ইংরেজীতে গৃহীত হয়েছে বলে ধারনা করা হয়।
এরপরে সাবানের কথায় আসি। আজকের দিনে কাগজের মতই দৈনন্দিন কাজে সাবানের বিকল্প কিছু ভাবাই যায় না। এটি সর্বজনসিদ্ধ যে, পরিচ্ছন্ন জীবনযাপনের তাগিদ মুসলমানদের ধর্মীয় জীবনের অনুসঙ্গ। নিয়মিত হস্ত-পদ প্রক্ষালন(অযু) এবং ক্ষেত্রবিশেষে স্নান মুসলমানদের অবশ্য পালনীয় কর্তব্য। সাবানের ব্যবহার তাঁদের এই কাজটিকে সহজ করে তোলে। সাবানের আবিষ্কার মুসলমানরা করেছেন- এমন নয়। পরিষ্কার কাজে সাবানের মত বস্তুর প্রথম ব্যবহার সম্পর্কে জানা যায় খৃষ্টপূর্ব ২২০০ অব্দের ব্যাবিলনে। পরবর্তীতে ১৫০০ খৃষ্টপূর্বাব্দে মিশরে প্রানীজ চর্বি(Animal Fat) এবং উদ্ভিজ তেল(Vagetable Oil) সাবানের মত করে ব্যবহার করা হোত। ইউরোপে এর ব্যবহার সম্পর্কে জানা যায় প্লিনীর ‘প্রকৃতির ইতিহাস’ (Historia Naturalis) বই থেকে। ছাই এবং পশুর শক্ত চর্বি (Tallow) থেকে এ সময় সাবান(ল্যাটিন Sapo থেকেই ইংরেজী Soap) উৎপাদিত হোত। এসবই ছিল তরল(Liquid) সাবানের যুগ। মুসলমানেরা এসে প্রথম শক্ত সাবান(Solid Soap) তৈরী করেন এবং এর উৎপাদনকে একটি শিল্পের রূপ দান করেন। ফলে, সর্বপ্রথম সিরিয়াতে এবং এর পরে বিভিন্ন স্থানে সাবানের কারখানা প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে। আলেপ্পো, নাব্লুস প্রভৃতি স্থানের প্রস্তুতকৃত সাবান বিখ্যাত হয়ে উঠে এবং স্থানের নামেই সাবানগুলো(Aleppo Soap, Nabulsi Soap) পরিচিত হতে থাকে। মধ্যপ্রাচ্যে এখনো এই সাবানগুলো বেশ জনপ্রিয়। মুসলমানেরা সাবান প্রস্তুতিতে প্রধানতঃ উদ্ভিজ তেল (জলপাই তেল-Olive Oil), অ্যারোমেটিক তেল(Arometic Oil), তরল ক্ষার(Sodium Hydroxide), পটাশ(Potus), অ্যালকালি(Ashes), চুন(Lime) ইত্যাদি ব্যবহার করতেন। সে সময় বিভিন্ন রসায়নবিদের গ্রন্থে সাবান প্রস্তুতির বর্ণনা পাওয়া যায়। এক্ষেত্রেও আল-রাযী পিছিয়ে যান নি। তাঁর গ্রন্থেও সাবান প্রস্তুতির একটি নতুন পদ্ধতি পাওয়া যায়। যাই হোক, সপ্তম-অষ্টম শতকেই মুসলমানরা সাবান শিল্পকে উন্নতির চূড়ায় নিয়ে যান। অন্যদিকে, উত্তর ইউরোপ এর উৎপাদন এবং ব্যবহার আয়ত্ব করতে ত্রয়োদশ শতক পর্যন্ত অপেক্ষা করে। কাগজের মতই সাবানের ব্যবহারও মুসলিম স্পেন হতেই ইউরোপের অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে The Story of the Moors in Spain গ্রন্থে লেখক স্ট্যানলী ল্যান্পুলের(Stanley Lane Poole;১৮৫৪-১৯৩১) বর্ণিত একটি ঘটনার মজা ভাগভাগি করার লোভ সামলাতে পারছি না। মধ্যযুগের ইউরোপে যখন সাধারন মানুষ তো বটেই উপাসনালয়ের সন্ন্যাসীরা পর্যন্ত স্নানকে একটি অপবিত্র কাজ বলে গন্য করতেন(তিনি এক সন্ন্যাসিনীর কথা বর্ণনা করেন যিনি একাদিক্রমে ৬০ বছর স্বীয় আঙুলের অগ্রভাগ ব্যতীত শরীরের অন্য কোন অঙ্গকে পানির সংস্পর্শে আসতে দেন নি!), সে সময়েই মুসলমনদের প্রতিটি ঘরে আলাদা গোসলখানা তো বটেই শহরের বিভিন্ন স্থানে সরকারী খরচে গোসলখানা তৈরী হয়ে গিয়েছে। যাই হোক, আমাদের বাঙলা ভাষায় সাবান শব্দটি এর আরবী প্রতিশব্দ ‘সাবুন’(الصابون) থেকেই এসেছে।
নাবলুসের সাবান, আজো প্রস্তুত হচ্ছে
রসায়নে মুসলমানদের অবদানের কাসুন্দী আরো ঘাঁটা যেত। এই লেখার মূল উদ্দেশ্য বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদানের ঘটনাক্রমিক বিবৃতির মাধ্যমের আত্মপ্রসাদ অর্জন নয় বিধায় রসায়নের আলোচনা এখানে শেষ।
রসায়নবিদ্যার সাথে বিজ্ঞানের যে শাখা সমস্বরে উচ্চারিত হয় তার নাম পদার্থবিজ্ঞান(Physics)। রসায়নে মুসলমানদের অবদানের অবিস্মরণীয় অবদানের প্রতি লক্ষ্য রেখে এটা ধারনা করাই যায় যে, পদার্থবিজ্ঞানেও তাঁদের অবদান কম হবে না। আসলেই এ অবদান কম নয়। তবে, সে আলোচনা পরের পর্বের জন্য তোলা থাক।
চলবে.....
১. ভূমিকা পর্ব
২. বিজ্ঞানের দর্শন
৩. বিজ্ঞানের ইতিহাস
৪. মৌলিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে অবদান
৫. ব্যবহারিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে অবদান
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মার্চ, ২০১০ রাত ১১:৩৮