আমাদের তেল তাদের বালির নীচে কেনো?
১.
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে মারাত্মক জীবন বিধ্বংসী অস্ত্রের (ডব্লিউএমডি) সন্ধান পাওয়া গেছে, এই অজুহাতে ইরাকে ইঙ্গ-মার্কিন হামলার অব্যবহিত পরেই কিছু রসিক ইঙ্গ-মার্কিন নাগরিক এই হামলার প্রতিবাদে প্ল্যাকার্ড হাতে মাঠে নেমেছিলেন। তাতে লেখা ছিল, "আমাদের তেল তাদের বালির নীচে কেনো?" জর্জ বুশ জুনিয়র আর টনি ব্লেয়ারদের এই যুদ্ধকালীন সময়ে বা যুদ্ধ পরবর্তীকালে আদৌ এমন কোনো মারাত্মক জীবন বিধ্বংসী অস্ত্রের (ডব্লিউএমডি) সন্ধান কেউ পেয়েছে কি না, তার খোঁজ আর কেউ সেভাবে রাখেনি, যেভাবে দিস্তার পর দিস্তা কাগজে গোয়েন্দা প্রতিবেদন নিয়ে মিডিয়ার মাধ্যমে সবাইকে সংবেদনশীল করে তোলা হয়েছিল।
মানে হলো - অজুহাতের কোনো অজুহাত লাগে না। মিডিয়াকে দিয়ে কোনো একটা বিষয় খাড়া করে দিলেই হয়। সত্যমিথ্যা যাচাই করা লাগে না। প্রয়োজন শুধু অনুগত মিডিয়া। তাতেই যেভাবে খুশি খবর পরিবেশন করা যায়, মানুষ হত্যাও করা যায়।
২.
খবরে দেখা গেল, কুড়িগ্রামে ইটভাটার গ্যাসে পুড়ে গেছে শতাধিক একর জমির ফসল। অদ্ভুত মনে হচ্ছে?
বিস্তারিত খবর দেখতে পারেন এখানে: goo.gl/h08rTX
কয়লা পুড়িয়ে মাত্র একটা ইটভাটা চালিয়েছে। তাতেই কুড়িগ্রামের শতাধিক একর জমির বোরো ধান পুড়ে গেছে।
খবর: কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের চৌধুরীপাড়ায় শাহীন ব্রিকস নামে একটি ভাটার ইট পোড়ানোয় সৃষ্টি হওয়া বিষাক্ত গ্যাস এক সপ্তাহ আগে রাতের আঁধারে ছেড়ে দেন ভাটার মালিক। কৃষিজমির পাশে অবস্থিত এ ভাটার গ্যাস অন্যান্য বছর ফসল ওঠার পর ছেড়ে দিলেও এ বছর ফসল না উঠতেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এতে করে ভাটার পাশের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পুড়ে গেছে চৌধুরীপাড়া, হাজিরডোবা ও বানির খামার গ্রামের প্রায় শতাধিক একর জমির পাকা ও আধাপাকা বোরো ধান। ধানের পাশাপাশি কচু ক্ষেত ও বরই বাগানের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় ভাটার মালিকের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন এলাকাবাসী। তাদের দাবি- নিয়মনীতি না মেনে কৃষিজমি ও বসতবাড়ির পাশে যত্রতত্র গড়ে ওঠা ইটভাটা বন্ধ করে দেওয়া হোক।
আমরা যদি এখনো না বুঝে থাকি প্রতিটা কাজের ক্রিয়াফল, তাহলে এই খবরের goo.gl/TL01Vg হেডলাইনটায় একটু নজর বুলিয়ে নিন: "Gujarat Cancelling 4 Gigawatt Coal Power Plant As India Moves Away From Coal"।
আজ থেকে চার দিন আগের http://www.independent.co.uk-এর goo.gl/15XpC5 খবরের হেডলাইনটা এমন: India cancelling huge coal power station because it wants to focus on renewable energy
"Country wants to become a solar power leader by 2030"
আবার smartinvestor.in গত ৮ এক খবরে goo.gl/Pmok6z অন্যদের মতোই বলেছে: "Gujarat drops 4,000-Mw coal power project"
খবরগুলো বিস্তারিত পড়ে জানা গেল, ভারত নিজ ভূখণ্ডে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিকল্পনা বাতিল করছে দেশটি। সম্প্রতি গুজরাট রাজ্যে প্রায় ৪ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে। পরিবর্তে রাজ্য সরকার সেখানে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা করছে।
ভারতের সংবাদমাধ্যম বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড এক প্রতিবেদনে জানায়, গত বছর গুজরাট স্টেট ইলেকট্রিসিটি করপোরেশন ৪ হাজার মেগাওয়াটের একটি প্রকল্প করার সিদ্ধান্ত নেয়। এতে খরচ হত প্রায় ২০ হাজার কোটি রুপি। কিন্তু জীবাশ্ম জ্বালানি কমিয়ে আনার বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্ত এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রকল্পটি বাতিল করেছে রাজ্য সরকার।
রাজ্য সরকার এখন বলছে, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিবর্তে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনে তারা আগ্রহী। সেই লক্ষ্যে চলতি বছর শুধু সোলার প্যানেল থেকেই আরো ১০ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
৩.
প্রশ্ন হলো, বিলাসিতা করার মতো কি কোনো পরিস্থিতিতে আমরা আছি যে, একটা সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে গেলে সেই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন স্থাপনা আমরা আরেক জায়গায় সরিয়ে নিতে পারবো? কিংবা আরেকবার কি কেউ এতো বিশাল পরিমাণ টাকা পয়সা খরচ করে আমরা এমন আরেকটা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন স্থাপনা তৈরি করার বিলাসিতা করতে পারবো?
বিজ্ঞজনেরা হয়তো বলবেন, হ্যাঁ, আমরা পারবো। তাদের কথার ভিত এটাই হতে পারে: বাংলাদেশ থেকে গত ১০ বছরে ৬ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে (goo.gl/FjMGJc)। সুতরাং টাকা কোনো ব্যাপার না।
ইরাক-যুদ্ধ নিয়ে কিন্তু ক্ষমা চেয়েছেন টনি ব্লেয়ার। খবর: goo.gl/98Z0zi
তবে মূল হোতা জর্জ বুশ জুনিয়র এখনো অনড় তার অবস্থানে: আমাদের তেল তাদের বালির নীচে কেনো?