শফিক রেহমান।
তিনি একজন ব্যতিক্রমী মানুষ।
আলোচিত, সমালোচিত, বিতর্কিত, আবার ভালোবাসায়-সিক্ত।
ব্যতিক্রমী উপস্থাপনা (সেটা ছাপা অক্ষরে হোক কিংবা সবাক মাধ্যমে), আর বৈচিত্রপূর্ণ কর্ম ও জীবনধারায় তিনি সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র।
৮০'র দশকের দুর্দান্ত যায়যায়দিন ম্যাগাজিন এর সাহসী সম্পাদক, ক্লাসিক আর্টশো লাল-গোলাপ এর আর্টিস্টিক প্রেজেন্টার, বাংলাদেশে ভালোবাসা দিবসের প্রবক্তা - এরকম বহু সুপরিচয়ে পরিচিত হলেও শফিক রেহমানের লেখক পরিচয়টা কিছুটা আড়ালেই থেকেছে সবসময়।
একারণে স্বাভাবিকভাবেই যাযাদি'র বাহিরে মি. রেহমানের অন্য কোনো লেখা পড়া হয়নি আমার। তাই হঠাৎ করে তাঁর 'রিপু কাহিনী' বইটা যখন হাতে পেলাম, আগ্রহ নিয়েই পড়লাম।
★★★
সম্ভবত, ৬০ থেকে ৮০'র দশক-ই মনুষ্য-ইতিহাসের স্বর্ণালী সময়। এইসময়ে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা যেমন জীবনকে সহজতর করেছে,একইসাথে তারহীনতার পূর্বযূগ হিসেবে মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্কের প্রাচীন উষ্ণতা বজায়ে থেকেছে। পাশাপাশি বাস করেও বিচ্ছিন দ্বীপে পরিণত হবার অভিশাপ তখনো মানুষকে স্পর্শ করেনি।
সেই ষাট এবং সত্তর এর দশকের শুরুতে পূর্ব বাংলার রাজধানী ঢাকা আর ঢাকা কেন্দ্রিক শহুরে মধ্যবিত্ত জীবনের লেখচিত্র হলো 'রিপু কাহিনী'।
'সাপ এবং সিঁড়ি', কিংবা 'সিজারিয়ান' - এই দুটো গল্পে যেমন রিপু নামক মরণাস্ত্রের সুপ্রাচীন ব্যবহারের কাহিনী-ই মিস্টার রেহমান সম্পূর্ণ নিজস্ব ভঙ্গিতে লিখেছেন, তেমনি 'ফ্লাইট পিকে ৪৫৭' গল্পে তৎকালীন অশান্ত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ঠিকই উঠিয়ে এনেছেন।
তবে পুরো বইয়ে আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে 'একটি চাঞ্চল্যকর সংবাদ'।
"রিপু কাহিনী'র কোন দিকটি আমাকে সবচেয়ে বেশি আকর্ষিত করেছে?"
-অর্ধশতাব্দীর পুরনো context এ বইটি লেখা হলেও এখানে শফিক রেহমান এর লেখনভঙ্গী আজকের সময়ে চেয়েও contemporary।
আর আফসোস হয়েছে উনার লেখার দুষ্প্রাপ্যতায়।
সবমিলিয়ে পূর্ববঙ্গীয়সাহিত্যের বৈচিত্রময় এক সংগ্রহ এই বইটি। বর্তমানে ছাপা অক্ষরে পাওয়া না গেলেও, pdf ভার্শন সহজপ্রাপ্য।
(ছবিঃ সংগৃহীত)
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই এপ্রিল, ২০২২ রাত ৯:২৮