•••
দুই মিতা।
দুজনেই নামদার বাদশাহ।
একজন সমস্ত ভারতবর্ষের, আরেকজন পূর্ববঙ্গীয় সাহিত্যের । তাঁদের একজন লিখেছেন আরেকজনকে নিয়ে।
কি লিখেছেন? - এই বই প্রথাগত জীবনীও নয়, আবার গল্পও নয়। বরং এটা এক খেয়ালী কবির নিজস্ব জীবনবোধে সাম্রাজ্য চালানোর সুন্দর লেখচিত্র। নিজস্ব মুন্সীয়ানায় এই লেখচিত্র এঁকেছেন হুমায়ূন আহমেদ।
তাই এভাবেও বলা যায় যে, এই উপন্যাস স্রেফ মুঘল সম্রাট হুমায়ুনের নামদার জীবনবোধের গল্প নয়, বরং উপন্যাসিক হুমায়ূনের নামদার লেখনীর খাস নমুনাও বটে।
নামদার বাদশাহদ্বয়ের জগতে আপনাকে স্বাগতম!
•••
মর্ত্যের জীবনে মানুষের সবচেয়ে বড়ো প্রাপ্তি কি?
দুনিয়াবি বাদশাহী নাকি দ্বিকবিজয়ীর দিগন্তবিস্তৃত যশ?
অথবা ঈশ্বরিক মেধা ও তার প্রয়োগ?
সম্ভবত এসবের কিছুই না, বরং খুদাতা'লার অনুগ্রহ এবং মানুষের ভালোবাসা-ই কাদামাটির মানবের শ্রেষ্ঠ অর্জন।।
মির্জা হুমায়ূনের জীবন পরিপূর্ণ ছিলো এই দুই অনন্য উপহারে ।
সেকারণেই যুদ্ধ পরিচালনা কিংবা রাজকার্যে সিদ্ধহস্ত না হয়েও হুমায়ুন সারা ভারতবর্ষের পাদিশাহ হিসেবেই চোখ বুজতে পেরেছেন। বারবার জীবন ফিরে পেয়েছেন, মার্জারের সাতটি জীবনের মতো। শেরশাহ'র তরবারির নীচে দাঁড়িয়েও মুঘল ঈমাম খুতবা পাঠ করেছেন রাজ্যহারা হুমায়ুনের নামে, জীবন সংশয়ের প্রবল শঙ্কার মাঝেও লছমি বাঈ হুমায়ুনের সন্ধান দেয়নি দুর্ধর্ষ আফগানদের, ডুবন্ত হুমায়ুনকে রক্ষায় অবতার-রূপে হাজির হয়েছিলো নাজিম ভিস্তিওয়ালা। মহাবীর বাবুরের এই প্রিয় পুত্রের এক জীবনে সৌভাগ্য আর ভালোবাসার শেষ ছিলোনা।
•••
সম্ভবত এক দশক আগে, আমাদের বন্ধুদের মধ্যে কোনো একজনের জন্মদিনে সালমান উপহার হিসেবে এনেছিলো 'বাদশাহ নামদার' বইটা। অসাধারণ সুন্দর প্রচ্ছদ আর ব্যতিক্রমী নামের কারণে বইটার কথা মাথায় গেঁথে যায়। তারপর সুযোগের অভাবে এই দীর্ঘসময়েও পড়া হয়নাই। নিউমার্কেটে উদ্দেশ্যহীন ঘুরতে ঘুরতে গতসপ্তাহে বইটা কেনা হলো আর কাল সারারাত জেগে পড়ে শেষ করলাম। হুমায়ূন আহমেদের কলমে মীর্জা হুমায়ুনের জীবন ও জীবনবোধের যে প্রতিবিম্ব এখানে প্রকাশিত হয়েছে, সেটা বাংলা সাহিত্যের রত্নবিশেষ।
A must read!
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মার্চ, ২০২২ রাত ১১:২৬