একটা ছয় কি সাত বছরের ছোট ছেলে, হেঁটে হেঁটে আসছে ছোট ছোট পদক্ষেপে
বয়সসুলভ চঞ্চলতা নেই, কিছু একটা ভাবছে - চেহারায় ফুটে উঠেছে ভাবালুতা।
ছেলেটা কি অতো ভাবছে?
সে কি ভাবছে, কে তাকে বেশি ভালোবাসে? বাবা না মা, নাকি দাদুভাই?
ছেলেটা কি ভাবছে যে সে বেশি সুখি নাকি পাশের বাসার অংকন ভাইয়া বেশি সুখি?
অংকন এর বড়ো বড়ো টয় সেট আছে, প্রতিবার ওর বাবা বিদেশ থেকে আসে আর
অংকন নতুন একটা টয় সেটের প্যাকেট খোলে।
ওকে ধরতে দেয়না - ও নাকি ভীষণ দুষ্ট, তাই কিছু দেওয়া যাবেনা।
ছেলেটাও নিত্যনতুন খেলনা পায়, বাবা এনে দেয়। তারপর কোলে তুলে চুমু দেয়।
ও যদি ভীষণ দুষ্টু হতো, তাহলে কি বাবা ভালোবাসতো এতো?
তবে কেন অংকন ভাইয়া, বাঁধন ভাইয়া আর তাসনীম আপু ওকে দুষ্টু বলে?
ও কি ইচ্ছে করে সেদিন বাঁধন ভাইয়ার মোমের রং ভেঙ্গেছিলো - ও তো জানতোনা যে
মোমের রং আর রংপেন্সিল এক না। ওর বয়স মাত্র সাড়ে ছয়!
অথচ ওকে বাঁধন আর তাসনীম আচ্ছামতো বকে দিলো, বললো ও নাকি লোভী।
সেদিন ছেলেটা বাসায় এসে অনেক কেঁদেছিল,ডুকরে ডুকরে কেঁদেছিল।
মা বারবার জিজ্ঞাসা করলো, বাবা জিজ্ঞাসা করলো,
দাদুভাই হইচই শুরু করে দিলো,
ছেলেটা বুঝলোইনা কিভাবে বুঝিয়ে বলবে ও কেন কাঁদছে।
ছেলেটা হেঁটে হেঁটে আসছে ছোট ছোট পদক্ষেপে।
দোতলার সিড়িঘর দিয়ে ঐ যে দারোয়ান আংকেল কে দেখা যাচ্ছে - বসে বসে ঘুমাচ্ছে।
ও আংকেলের কাছেই যাচ্ছে, একধাক্কা দিয়ে ঘুম ভেঙে দিবে, তারপর গল্প শুনবে -
আংকেলের গ্রামে নাকি ওর মতোন একটা ছেলে থাকে, সেই ছেলেটা আবার সাতার কাটতে পারে - সেই ছেলেটার গল্প।
ছেলেটা এবার দৌড়িয়ে সিঁড়ি ভাঙ্গছে, ওর এক্ষুণি নামা চাই।
দৌড়াতে গিয়ে ছেলেটা পড়ে গেল সিঁড়ি দিয়ে।
হঠাৎ শব্দে আমানত উল্লার ঘুম ভেঙ্গে যায়,
গেটে হর্ন বাজছে।
দুপুর তখন দুইটা বেজে তিরিশ।
জুন মাসের ভ্যাপসা গরম, নিরানব্বই সালের ২রা জুন।
আমানত উল্লাহ এতক্ষন স্বপ্ন দেখছিলো।
সোনার চামচ মুখে জন্মানো কোনো শিশু নয় সে,
সে একজন দরিদ্র দারোয়ান।