somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সহজ উপায়ে চিত্রনাট্য লেখা

১২ ই অক্টোবর, ২০১২ রাত ১২:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লেখাটি শুরু করার আগে কিছু কথা বলে নেওয়া প্রযোজন বলে মনে করছি। চলচ্চিত্র নির্মাণ বা চিত্রনাট্য রচনা.. এর কোনো নির্দিষ্ট ব্যকরন নেই। কারণ কোনো নির্মার্তাই তা তৈরি করে দেননি। আমরা যাকে চলচ্চিত্রের নন্দন তত্ত বলি সেটা শুধু বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতার দেখিয়ে দেওয়া কিছু পথ। তবে এর মানে এই নয় যে সেগুলোকে, আসমানী কিতাব মনে করে, বিশ্বাস স্থাপন করে যেতে হবে। তবে হ্যা, কিছু বিষয় অবশ্যই মেনে চলার মতন। যেমন ক্যামেরার অবস্থান, লাইটিং, শব্দ.. কারণ এগুলো নন্দন তত্তকে বিকোশিত করার পাশাপাশি বিজ্ঞানের অংশও বটে। তাই তা নির্ভর করে আপনি কি নিয়ে কাজ করছেন এবং কিভাবে কাজ করছেন তার ওপরে।

আমি নিজেকে পন্ডিত দাবি করি না। কারণ আমি পন্ডিত নই। চলচ্চিত্রের প্রতি অগাধ ভালোবাসা থেকেই এই বিশেষ 'কলা'টির প্রতি আগ্রহ তৈরি এবং পড়াশোনার শুরু্। তবে সেই পড়াশোনার একটা বড় অংশ হলো, মূলত বিখ্যাত নির্মাতাদের চলচ্চিত্র ভাবনা, দর্শন এবং তাদের সমসাময়িক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানা।

এই পড়াশোনার প্রথম থেকেই আগ্রহ তৈরি হয় চিত্রনাট্য রচনা নিয়ে। চিত্রনাট্য কি? এর একেবারে সহজ উত্তর হলো, আপনি যে নির্মাণটি করতে যাচ্ছেন, তার সম্পর্কে বিষদভাবে লিখে রাখা। এখন কথা হলো, নির্মাণ তো আপনিই করবেন, তাহলে লেখার প্রয়োজনটাই বা কোথায়? কারণ, আপনি যানেন আপনি কি নির্মাণ করতে চলেছেন এবং তা অবশ্যই আপনার মাথায় রয়েছে। না, লিখে রাখার প্রয়োজন অবশ্যই রযেছে। কারণ, চলচ্চিত্র বলেন বা নাটক, এর নির্মাণের প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত জটিল এবং বেশ কয়েকটি ধাপের মধ্য দিয়ে চলতে হয়, যা একা একজন পরিচালকের পক্ষে সবকিছু দেখে শুনে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে একজন পরিচালককে অবশ্যই অন্যের সাহায্য প্রয়োজন পরে। এই সাহায্যকারীদের অন্যতম প্রধান হলেন যিনি ক্যামেরা চালাবেন তিনি। দএরপর রয়েছেন যিনি সম্পাদণা করবেন, এছাড়া পরিচালকের সহকারীরাতো রয়েছেনই। এই চিত্রনাট্যটি হলো সেই মোক্ষম উপায় যা দিয়ে আপনি আপনার 'সাহায্যকারী'দের জানাতে পারছেন আপনি আসলে কি চাচ্ছেন।

শুধু তাই নয়, চিত্রনাট্য অভিনেতাদের জন্যও প্রয়োজন। কারণ প্রথমত এতে করে প্রত্যেক অভিনেতা শুরুতেই যানতে পারছেন এই বিশাল যজ্ঞে তার ভূমিকা কতোটুকু।

এবার আসি চিত্রনাট্যে আসলে কি থাকে? অবশ্যই আপনি যে গল্পটি চিন্তা করেছেন আপনার চলচ্চিত্রের জন্য সেটি সহজ ভাষায় কাগজের মধ্যে লেখাটাই হলো চিত্রনাট্য। কিন্তু চিত্রনাট্য মানে কি শুধুই কাহিনী? এর উত্তর একই সঙ্গে হ্যা এবং না। হ্যা এর জন্য যে, প্রথম অবস্থায় (চলচ্চিত্রের ইতিহাসের শুরুতে এবং এখনো অনেকেই এই রীতিটিই মেনে চলেন) শুধু মূল কাহিনীইটি থাকতো চিত্রনাট্যে। কাহিনীর বিন্যাস এবং চরিত্রের বিন্যাস। প্রথমেই বলে নেওয়া হতো, কাহিনীতে কয়টি চরিত্র আছে, তাদের নাম পরিচয়, বয়স। তারপর শুরু হয় দৃশ্য বিন্যাস। ধরা যাক, একটি দৃশ্যে তিনটি চরিত্র রয়েছে। সেক্ষেত্রে লেখা হবে অনেকটা এরকম,-
দৃশ্য এক, চরিত্র আলু পটল ও কুমড়ো। সময সকাল। তারপর এই তিন চরিত্র আলু, পটল ও কুমড়ো দৃশ্যে কি কি করছেন, কি কি বলছেন সহজ ভাষায় তার একটি বর্ননা। মনে রাখতে হবে, দর্শক যখন পর্দায় আপনার চিত্রনাট্যটির উপস্থাপন দেখবেন, তিনি যেন সহজেই এই তিন চরিত্রকে বুঝতে পারেন। তাই বর্ননা যতো সহজ ভাষায় হবে, ততই ভালো।

ওপরে কিন্তু 'না'ও বলেছিলাম। না বলার কারণটি হলো অবশ্য দিনে দিনে একেক জন পরিচালকের একেকভাবে চিত্রনাট্য লেখার কৌশল। যেমন সত্যজিত রায়, প্রথমেই লেখার পৃষ্ঠাটির মাঝ বরাবর ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত একটি রেখা টেনে পৃষ্ঠাটিকে দুই ভাগে ভাগ করে ফেলতেন। এক পাশে তিনি চরিত্র ও সময় উল্লেখ করে লিখে সংলা বা ঘটনা লিখে যেতেন। আরেক পাশে যেখানে এবং যে সময়ে ঘটনাটি ঘটছে, তার একটি ছবি একে ফেলতেন। যেমন সকালে ফেলুদা হাটতে বেরিয়েছেন। পাশেই তিনি ছবি একে ফেললেন, ফেলুদা কি পড়ে আছেন, সূর্যটা কোনপাশে, আশে পাশে কি ঘটছে এইসবের ফলে ক্যামেরায় কিন্তু বিষয়টি তুলে ধরতে কোনো সমস্যাই হতো না। কারণ লেখার পাশাপাশি পুরো বিষয়টির ছবিও যে তৈরি। কিন্তু আপনি তো আর সত্যজিত নন। তাই এভাবে চেষ্টা না করাই ভালো যদি না আপনার ছবি আঁকার হাত ভালো না হয়।

চিত্রনাট্যে আর কি থাকতে পারে? এর উত্তর সবকিছুই। এখন অনেক পরিচালকই, চিত্রনাট্যের শুরুতেই ক্যামেরার ফ্রেমিং বিষয়টি তুলে আনেন কাগজে। আর যদি আপনি নিজেই যদি নিজের চিত্রনাট্য পরিচালনা করতে চান তাহলে এই কাজটি আপনিও করে নিতে পারেন। দৃশ্য বর্ননার আগেই আপনি ক্যামেরা কোথায় বসাতে চান, কিভাবে বসাতে চান সে বিষয়ে লিখে ফেলুন। তারপর শুরু করুন কাহিনী লেখা।

এখন কথা হলো কাহিনী কিভাবে লিখবেন। প্রথম নিয়ম, একেবারে প্রথম সুত্র। কে কি বললো সব ভুলে যান। কাহিনী আপনার, এটাকে কিভাবে সাজাবেন তা সম্পূর্ণই নির্ভর করে আপনার নিজের ওপরে। তবে সহজ ভাবে যা করতে পারেন তা হলো, প্রথমে পুরো গল্পটাকে ভেবে নিন।কিভাবে শুরু করতে চান আর কিভাবে শেষ। দরকার হলে টুকটাক বিষয় লিখে ফেলুন। একটা নোট খাতা ও কলম হাতের কাছে রাখতে শুরু করুন। যখন যেটা মাথায় আসবে খসড়া লিখতে শুরু করে দিন। যখন মনে করবেন, হ্যা আপনার গল্প দাড়িয়ে গেছে, এক বোতল হুইস্কি বা ভদকা (এক্ষেত্রে চা ও কফিও পড়তে পারেন) নিয়ে বসু পড়ুন লিখতে। অবশ্য এই পানীয় আপনাকে সাহায্য করবে পুরোটা একনাগারে লিখতে (হয়তো অনেকেরই এর প্রয়োজন নাও পরতে পারে..) যদি মনে করেন, পানীয় ছাড়াই লিখতে পরবেন তো ভালো কথা...সবাই তো আর পারফেক্ট নয়..।

যারা একেবারেই নতুন, কখনো চিত্রনাট্য লেখেননি, কিন্তু লেখার খুব ইচ্ছা, তারা কিভাবে শুরু করবেন?? কোনো চিন্তা নাই। এটা এমন কোনো অসম্ভব বিষয় না রে ভাই। ওই যে বললাম আগে গল্পটা তো ভাবুন, মাথায় সাজান.. তারপর না কম্পিউটারে বসবেন লেখার জন্য। যদি মনে করেন, হ্যা, গল্পটা মাথায় রয়েছে, তাহলে তো অর্ধেক কাজ হয়েই গেছে। দৃশ্য লিখুন, নিচে লিখুন সময় এবং চরিত্র সমুহ (ওপরে তো বলেছি একবার), এবার লিখতে শুরু করুন। সংলাপ দিতে চান? লিখুন আলু তারপর কোলন দিন (:), দিয়ে লিখতে শুরু করুন সংলাপ। মাথায় রাখুন সহজ ভাষা.. সহজ ভাষা.. সহজ ভাষা...

যেহেতু আপনি চিত্রনাট্য লেখায় একেবারেই নতুন তাই প্রথম অবস্থায় অনুসরণ করুন সেই পুরনো ফর্মুলা... কোন ফুর্মলা?? একটি মাসুদ রানা হাতে নিন.. মাঝখানের যে কোনো একটি পৃষ্ঠা খুলুন.. পড়তে শুরু করুন। ভাল করে লক্ষ করুন, রানা কিভাবে কথা বলছে? আর তা কিভাবে লেখা হয়েছে বইয়ে... কিভাবে সাজানো হয়েছে কথপোকথন.. হ্যা, ঠিক এভাবেই আপনার চরিত্রগুলোর মুখে তুলে আনুন সংলাপ।

কি ভাবছেন?? গুলিয়ে যাচ্ছে?? এখনো কিছু কিছু বিষয়ে কনফিউশন?? আরে কোনো ব্যাপারই না। শুরু তো করুন.. হয়ে যাবে...
১৬টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×