somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সৈয়দ মেহেদী হাসান
পেশায় সাংবাদিক। ‘জল পরীর ডানায় ঝাপটা লাগা বাতাস’ (২০১৩), ‘সাদা হাওয়ায় পর্দাপন’ (২০১৫) দুটি কবিতার বই প্রকাশিত। তার লেখা নাটকের মধ্যে ফেরা, তৎকালীন, আদমের সন্তানেরা উল্লেখযোগ্য। লেখালেখির জন্য ২০১৫ সালে হত্যার হুমকি প্রাপ্ত হন।

কায়কাউসের ছেলে: ইতর প্রাণীর নারী বিদ্বেষনামা

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কবিতা একটি জাতির সবচেয়ে বড় সম্পদ।

হুমায়ুন আজাদ বলেছিলেন, ইতর প্রাণী বিশেষের প্রজনন ক্ষমতা বেশি। এর সাথে কবি ও কবিতার প্রয়োগিক একটি মিল আছে। কারন দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার যতটা, ইতর প্রাণী বিশেষের প্রজনন ক্ষমতা সমার্থক হলেও তদ্রুপ কবি বা কবিতা জন্মায় না। যুগে যুগে যেসব কবিতা জন্মেছে তা হয়ে গেছে প্রজন্মে গর্ভধারীণী। ফলে যারা কবিতা বোঝেন না তারাও অন্তত এটুকু জানেন কবিতা দেশ-জাতি ও সময়ের স্রষ্টা। একে সম্মান করতে হয়। আর এ জন্যই হয়তো নজরুল, রবীন্দ্র, জীবনানন্দ, সুফিয়া কামাল, শামসুর রহমানদের বিনা বাক্যে শ্রদ্ধা জানায়। এদের মত আরও অনেকে রয়েছেন যারাও মানুষের মনি কোঠায়।


আশাহতের কথা হল, মানুষজন আজকাল কবিদের ‘শিল্পের নবী’ মানছেন না। উল্টো আছাড় মারছেন। এর কারনও কবি। অর্থাৎ চক্রাকারে ঘূর্ণায়মান কবি স্রোত দিনে দিনে ইতর প্রাণী বিশেষে রুপ নিচ্ছে। ফলে নাম কামানো প্রকল্পে কবি হতে আসা দু-চার জনের কারনে সত্যিকার কবিরাও নাজেহাল, লাঞ্চিত ও হাস্যকার জীবে
পরিণত হচ্ছে। এ খেলা কতদিন চলবে জানি না।

জুন ২০১৫ প্রকাশিত হয়েছে সাইয়েদ জামিল এর বই ‘কায়কাউসের ছেলে’। এটিকে কবিতার বই কেন বলব সেটা আমার বোধগম্য নয়। যেহেতু প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘চৈতন্য’ দাবী করেছে এটি কবিতার বই সে কারনে আপতত বলতে হচ্ছে। প্রকাশক মোঃ জাহিদুল হক চৌধুরী রাজীব এর অনুরোধে বইটি সংগ্রহ করে পড়েছি। প্রকাশক দাবী করেছেন, সৃষ্টিশীলতার সাথে আছেন এবং সৃষ্টিশীল বইগুলোই তারা উৎপাদন করছেন। এই কথাটা ভদ্রলোক চেতনা বা অবচেতনে যে অবস্থায়ই বলুক হয়তো ব্যবসায়িক খাতিরে বলেছেন। কারন কায়কাউসের ছেলে বইটিতে সৃষ্টিশীলতা বলতে যা বুঝায় তা কিছুই নেই। এখানে যৌনাকাক্সক্ষায় আঙ্গার হয়ে যাওয়া কোন লম্বটের বাক্যবমি ছাড়া কিছুই পাইনি।


এটা যদি সৃষ্টিশীলতা হয় তবে বাবু রসময়গুপ্ত দোষ করল কি? প্রকাশকের উচিত হবে আদি সৃষ্টিশীল যৌন রসদগুলোকে রিপ্রিন্ট করা নয়তো যৌনতাগ্রস্থ যুবক সাইয়েদ জামিলকে সেসব পুস্তক-পুস্তিকা পুর্নপাঠের ব্যবস্থা করে দেয় যে, বাছাধন আরও পড়। অতঃপর যৌনতায় শিল্প আমদানী কর।


সাইয়েদ জামিল সম্পর্কে আমার খুব জানা-শোনা নেই। থাকতে হবে তেমটাও বোধ করি ঠিক না। সে লিখছে এটাই বড় পরিচয়।


যা হোক হাতে পেলাম কায়কাউসের ছেলে। প্রকাশনীর অটুট যত্নের ছাপ লেগে আছে পুরো বইটিতে। যখন পড়া শেষ করলাম, তখন মনে হল নারী-বিদ্বেষি জনৈক যুবকের কামনা-বাসনার নোংরা ডায়রি পড়েছি। তার চিন্তা চেতনা আর কট্টরপন্থিদের ফতোয়া উভয়ই এক দরজার মেহমান। এ ধরনের চিন্তা অন্তত কোন কবি করতে পারে সেটা ভাবা অযৌক্তিক।



বলে নেয়া ভাল, বকিতা কোন ফরমেটে, বা কবি কেমন ভাষা চয়ন করবে সেটার উপর কারও হাত নেই। তাই বলে তার চিন্তা আর লম্পট ধর্ষকের চিন্তা একতো হতে পারে না। কবি যদি শ্রেণী বিভেদ এমন পর্যায়ে তুলে দেন যা দেশের ভঙ্গুর সামাজিক অবস্থানকে আরও দুর্বল করে তুলবে সেটা কাম্য নয় কারও। সাইয়েদ জামিল সেটাই করেছেন। তার দর্শন ও দৃষ্টিতে নারী মানে ভোগ করার জীব। যাদের কোন অধিকার থাকতে নেই। যাদেরকে মানুষের কাতারে ফেলা যায় না।

যেমন:
(১) আমার নিজস্ব নারীটি উরুর বিপন্নতা মেলে ধরে জঙ্গলের দিকে’
(২) নারীর মনের ভেতর যে যৌন-খোলস আমাকে ধারন করতে চায় আমি তাকে ল্যাওড়া দেখিয়ে অবজ্ঞা করি
(৩) মদ ও মাগির যন্ত্রনা নিয়ে গালি দেই ফরহাদ মজহারকে।.......আমরা গোরুর দুধের চা খেয়েছি, কনডেন্স মিল্কের চা খেয়েছি; কিন্তু মানুষের দুধের চা খাইনি কখনো
(৪) ইচ্ছে হলে হাগি মুতি, ইচ্ছে হলে চুদি
(৫) পাশে ট্রেনের শব্দের মতো দেহ দোলাচ্ছে এক ঢুপসি মাগি
(৬) চলো বন্ধু, দেরি নয় আমরা একসাথে মদ খাবো, মাগি চুদবো।

উল্লেখিত লাইনগুলো যদি ভাল করে লক্ষ্য করা হয় দেখা যাবে নারীরা সাইয়েদ জামিলের কাছে কখনো ঢুপসি মাগি, কখনো মদ ও যৌনতার বিনোদন, কখনো নিজস্ব সম্পত্তি। কিন্তুু আসলেই কি নারী এমন? একবিংশ শতাব্দীতে এসেও কি নারী মানুষের মর্যাদা পায়নি? হতাশ হতে হয়। এই বই পড়ে আগামী প্রজন্ম কি শিখবে। যে কিশোর কায়কাউসের ছেলে পড়বে সেতো মনে করবে নারী মানে যৌনদাসী। ফলে শ্রদ্ধা-সম্মান ও ভালবাসার জায়গাটি উবে যাবে।


এভাবে নারী বিদ্বেষ ছড়ানোর নির্দিষ্ট কোন এজেন্ডা আছে কি নেই। তা এখনই স্পষ্ট নই। তবে এটুকু মনে হচ্ছে, সাইয়েদ জামিল নারীকে সম্মান দিতে জানে না বা শেখেনি। যারা নারীকে সম্মান জানাতে জানে না তারাতো মানুষ হতে পারে না। নারী বিদ্বেষি সাইয়েদ জামিলকে এখন মনে হচ্ছে ইতর শ্রেণীর কথা বলতে পারা কোন জীব, যে যৌন বিকারগ্রস্থ। সেই বিকারগ্রস্থের বুলি পুস্তক আকারে বাজারে ছেড়ে চৈতন্য সৃষ্টিশীলতার বিপরীতে দৃষ্টি কেড়ে নেয়ার অপপ্রয়াশ চালিয়েছে। এটা নিন্দনীয়। কারন জীবনানন্দের ভাষায় বলতে হয়, ‘সকলেই কবি নয়, কেউ কেউ কবি’। তেমনি ‘সব বই প্রসব করতে হয় না, কিছু বই প্রস্রাব করেও ভাসিয়ে দিতে হয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫০
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মি. চুপ্পুর পক্ষ নিয়েছে বিএনপি-জামাত; কারণ কী?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৬


বিএনপি গত ১৬ বছর আম্লিগের এগুচ্ছ কেশও ছিড়তে পারেনি অথচ যখন ছাত্ররা গণহত্যাকারীদের হটিয়েছে তখন কেন বিএনপি চু্প্পুর পক্ষ নিচ্ছে? অনেকেই বলছে সাংবিধানিক শুন্যতা সৃষ্টি হবে তার সংগে বিএনপিও... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এতো কাঁদাও কেনো=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৬




আয়না হতে চেয়েছিলে আমার। মেনে নিয়ে কথা, তোমায় আয়না ভেবে বসি, দেখতে চাই তোমাতে আমি আর আমার সুখ দু:খ আনন্দ বেদনা। রোদ্দুরের আলোয় কিংবা রাতের আঁধারে আলোয় আলোকিত মনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগারেরা প্রেসিডেন্ট চুপ্পুমিয়াকে চান না, কিন্তু বিএনপি কেন চায়?

লিখেছেন সোনাগাজী, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৪



**** এখন থেকে ১৯ মিনিট পরে (বৃহ: রাত ১২'টায় ) আমার সেমিব্যান তুলে নেয়া হবে; সামুটিককে ধন্যবাদ। ****

***** আমাকে সেমিব্যান থেকে "জেনারেল" করা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিকাহের পরিবর্তে আল্লাহর হাদিসও মানা যায় না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪




সূরা: ৪ নিসা, ৮৭ নং আয়াতের অনুবাদ-
৮৭। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নাই। তিনি তোমাদেরকে কেয়ামতের দিন একত্র করবেন, তাতে কোন সন্দেহ নাই। হাদিসে কে আল্লাহ থেকে বেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। পৃথিবীকে ঠান্ডা করতে ছিটানো হবে ৫০ লাখ টন হীরার গুঁড়ো

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:০২




জলবায়ূ পরিবর্তনের ফলে বেড়েছে তাপমাত্রা। এতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। তাই উত্তপ্ত এই পৃথিবীকে শীতল করার জন্য বায়ুমণ্ডলে ছড়ানো হতে পারে ৫০ লাখ টন হীরার ধূলিকণা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×