কবিতা একটি জাতির সবচেয়ে বড় সম্পদ।
হুমায়ুন আজাদ বলেছিলেন, ইতর প্রাণী বিশেষের প্রজনন ক্ষমতা বেশি। এর সাথে কবি ও কবিতার প্রয়োগিক একটি মিল আছে। কারন দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার যতটা, ইতর প্রাণী বিশেষের প্রজনন ক্ষমতা সমার্থক হলেও তদ্রুপ কবি বা কবিতা জন্মায় না। যুগে যুগে যেসব কবিতা জন্মেছে তা হয়ে গেছে প্রজন্মে গর্ভধারীণী। ফলে যারা কবিতা বোঝেন না তারাও অন্তত এটুকু জানেন কবিতা দেশ-জাতি ও সময়ের স্রষ্টা। একে সম্মান করতে হয়। আর এ জন্যই হয়তো নজরুল, রবীন্দ্র, জীবনানন্দ, সুফিয়া কামাল, শামসুর রহমানদের বিনা বাক্যে শ্রদ্ধা জানায়। এদের মত আরও অনেকে রয়েছেন যারাও মানুষের মনি কোঠায়।
আশাহতের কথা হল, মানুষজন আজকাল কবিদের ‘শিল্পের নবী’ মানছেন না। উল্টো আছাড় মারছেন। এর কারনও কবি। অর্থাৎ চক্রাকারে ঘূর্ণায়মান কবি স্রোত দিনে দিনে ইতর প্রাণী বিশেষে রুপ নিচ্ছে। ফলে নাম কামানো প্রকল্পে কবি হতে আসা দু-চার জনের কারনে সত্যিকার কবিরাও নাজেহাল, লাঞ্চিত ও হাস্যকার জীবে
পরিণত হচ্ছে। এ খেলা কতদিন চলবে জানি না।
জুন ২০১৫ প্রকাশিত হয়েছে সাইয়েদ জামিল এর বই ‘কায়কাউসের ছেলে’। এটিকে কবিতার বই কেন বলব সেটা আমার বোধগম্য নয়। যেহেতু প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘চৈতন্য’ দাবী করেছে এটি কবিতার বই সে কারনে আপতত বলতে হচ্ছে। প্রকাশক মোঃ জাহিদুল হক চৌধুরী রাজীব এর অনুরোধে বইটি সংগ্রহ করে পড়েছি। প্রকাশক দাবী করেছেন, সৃষ্টিশীলতার সাথে আছেন এবং সৃষ্টিশীল বইগুলোই তারা উৎপাদন করছেন। এই কথাটা ভদ্রলোক চেতনা বা অবচেতনে যে অবস্থায়ই বলুক হয়তো ব্যবসায়িক খাতিরে বলেছেন। কারন কায়কাউসের ছেলে বইটিতে সৃষ্টিশীলতা বলতে যা বুঝায় তা কিছুই নেই। এখানে যৌনাকাক্সক্ষায় আঙ্গার হয়ে যাওয়া কোন লম্বটের বাক্যবমি ছাড়া কিছুই পাইনি।
এটা যদি সৃষ্টিশীলতা হয় তবে বাবু রসময়গুপ্ত দোষ করল কি? প্রকাশকের উচিত হবে আদি সৃষ্টিশীল যৌন রসদগুলোকে রিপ্রিন্ট করা নয়তো যৌনতাগ্রস্থ যুবক সাইয়েদ জামিলকে সেসব পুস্তক-পুস্তিকা পুর্নপাঠের ব্যবস্থা করে দেয় যে, বাছাধন আরও পড়। অতঃপর যৌনতায় শিল্প আমদানী কর।
সাইয়েদ জামিল সম্পর্কে আমার খুব জানা-শোনা নেই। থাকতে হবে তেমটাও বোধ করি ঠিক না। সে লিখছে এটাই বড় পরিচয়।
যা হোক হাতে পেলাম কায়কাউসের ছেলে। প্রকাশনীর অটুট যত্নের ছাপ লেগে আছে পুরো বইটিতে। যখন পড়া শেষ করলাম, তখন মনে হল নারী-বিদ্বেষি জনৈক যুবকের কামনা-বাসনার নোংরা ডায়রি পড়েছি। তার চিন্তা চেতনা আর কট্টরপন্থিদের ফতোয়া উভয়ই এক দরজার মেহমান। এ ধরনের চিন্তা অন্তত কোন কবি করতে পারে সেটা ভাবা অযৌক্তিক।
বলে নেয়া ভাল, বকিতা কোন ফরমেটে, বা কবি কেমন ভাষা চয়ন করবে সেটার উপর কারও হাত নেই। তাই বলে তার চিন্তা আর লম্পট ধর্ষকের চিন্তা একতো হতে পারে না। কবি যদি শ্রেণী বিভেদ এমন পর্যায়ে তুলে দেন যা দেশের ভঙ্গুর সামাজিক অবস্থানকে আরও দুর্বল করে তুলবে সেটা কাম্য নয় কারও। সাইয়েদ জামিল সেটাই করেছেন। তার দর্শন ও দৃষ্টিতে নারী মানে ভোগ করার জীব। যাদের কোন অধিকার থাকতে নেই। যাদেরকে মানুষের কাতারে ফেলা যায় না।
যেমন:
(১) আমার নিজস্ব নারীটি উরুর বিপন্নতা মেলে ধরে জঙ্গলের দিকে’
(২) নারীর মনের ভেতর যে যৌন-খোলস আমাকে ধারন করতে চায় আমি তাকে ল্যাওড়া দেখিয়ে অবজ্ঞা করি
(৩) মদ ও মাগির যন্ত্রনা নিয়ে গালি দেই ফরহাদ মজহারকে।.......আমরা গোরুর দুধের চা খেয়েছি, কনডেন্স মিল্কের চা খেয়েছি; কিন্তু মানুষের দুধের চা খাইনি কখনো
(৪) ইচ্ছে হলে হাগি মুতি, ইচ্ছে হলে চুদি
(৫) পাশে ট্রেনের শব্দের মতো দেহ দোলাচ্ছে এক ঢুপসি মাগি
(৬) চলো বন্ধু, দেরি নয় আমরা একসাথে মদ খাবো, মাগি চুদবো।
উল্লেখিত লাইনগুলো যদি ভাল করে লক্ষ্য করা হয় দেখা যাবে নারীরা সাইয়েদ জামিলের কাছে কখনো ঢুপসি মাগি, কখনো মদ ও যৌনতার বিনোদন, কখনো নিজস্ব সম্পত্তি। কিন্তুু আসলেই কি নারী এমন? একবিংশ শতাব্দীতে এসেও কি নারী মানুষের মর্যাদা পায়নি? হতাশ হতে হয়। এই বই পড়ে আগামী প্রজন্ম কি শিখবে। যে কিশোর কায়কাউসের ছেলে পড়বে সেতো মনে করবে নারী মানে যৌনদাসী। ফলে শ্রদ্ধা-সম্মান ও ভালবাসার জায়গাটি উবে যাবে।
এভাবে নারী বিদ্বেষ ছড়ানোর নির্দিষ্ট কোন এজেন্ডা আছে কি নেই। তা এখনই স্পষ্ট নই। তবে এটুকু মনে হচ্ছে, সাইয়েদ জামিল নারীকে সম্মান দিতে জানে না বা শেখেনি। যারা নারীকে সম্মান জানাতে জানে না তারাতো মানুষ হতে পারে না। নারী বিদ্বেষি সাইয়েদ জামিলকে এখন মনে হচ্ছে ইতর শ্রেণীর কথা বলতে পারা কোন জীব, যে যৌন বিকারগ্রস্থ। সেই বিকারগ্রস্থের বুলি পুস্তক আকারে বাজারে ছেড়ে চৈতন্য সৃষ্টিশীলতার বিপরীতে দৃষ্টি কেড়ে নেয়ার অপপ্রয়াশ চালিয়েছে। এটা নিন্দনীয়। কারন জীবনানন্দের ভাষায় বলতে হয়, ‘সকলেই কবি নয়, কেউ কেউ কবি’। তেমনি ‘সব বই প্রসব করতে হয় না, কিছু বই প্রস্রাব করেও ভাসিয়ে দিতে হয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫০