somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বার্থপর

২২ শে মে, ২০১৬ সকাল ৮:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শোনো, আর কখনো আমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবা না।

এটাই ছিলো ছড়ার শেষ কথা। নিজের দোষটা জানতে চেয়েছিলাম। না বলেই একটা ৪ বছরের সম্পর্কের ইতি টানল সে। বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছিলো আমি স্বপ্ন দেখছি। ঘোর কাটানোর জন্য দেয়ালে জোরে ঘুসি দিলাম। না জেগে আছি আমি! আসলেই জেগে আছি। সাথে সাথে কল দিলাম তাকে। ব্যস্ত আছে বলছে। টানা ২ ঘন্টা কল করলাম। সেই একই কথা বার বার বলা হচ্ছে নির্লীপ্তভাবে। ব্যস্ত আছে।

আমি শহরের এক সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। হলেই থাকি। কলেজে উঠার পরেই ছড়ার সাথে সম্পর্কের শুরু। রোমান্টিকতায় ভরপুর সম্পর্ক যাকে বলে। কলেজ শেষ করে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া ছিলো আমার কাছে আশীর্বাদস্বরূপ। একসাথে দিনের বেশির ভাগ সময় কাটানো, শহীদমিনার চত্ত্বরে বৃষ্টিতে ভেজা, পূর্ণিমায় একসাথে বসে চাঁদ দেখা বাদ যায় নি কিছুই। আমি ছিলাম পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষদের একজন। কিন্তু সেদিন হঠাৎ এক দুঃস্বপ্ন এসে পুরো জীবনটাকেই লন্ডভন্ড করে দিলো। ধৈর্য্য রেখেছিলাম। নিজের উপর আস্থা ছিলো। আশায় ছিলাম সে ফিরে আসবেই। চার বছরের সম্পর্ক একটা তো আর হুট করে চাইলেই ভেঙে ফেলা যায় না। কিন্তু আমি ভুল প্রমাণিত হয়েছিলাম। আমাকে অবাক করে দিয়ে ৪ দিন পরও সে ফিরে আসে নি। এরপর আমি নিজ থেকেই ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করেছিলাম।কিন্তু তাও বৃথা। নিজের উপর নিজের আস্থা হারিয়ে আমাকে অনেকটা চার্জবিহীন ফোনের মতই দেখাচ্ছিলো। হতাশ ছিলাম।খুব বেশি।

হলে কিছু বড় ভাইয়া ছিলেন। তাদের।সাথে ঘুরতে যেতাম মাঝেমধ্যে। গাজার আসরে দিনের বেশিরভাগ সময় বুঁদ হয়ে থাকা মানুষ তারা। গিয়েছিলাম মনটাকে হালকা করার জন্য। মনটা কিছুতেই শান্ত হচ্ছিলো না। আমি জানতাম না কেন সে আমাকে ছেড়ে চলে গেলো। তাকে ছাড়া ভাবতে পারছিলাম না কিছুই। তাই সেখানে গিয়ে বড় ভাইদের কথা মত প্রথম টান দিলাম গাজায়। বিড়ি খাওয়ার বদ অভ্যাসটা ছিলো তাই কোন সমস্যা ছাড়াই শেষ করলাম। হঠাৎ শরীরে অসাড়তা উপলব্ধি করলাম। চোখগুলো কেমন জানি ভারী হয়ে আসছিলো। অনেক দুরের আওয়াজ কানে বাড়ি খাচ্ছিলো। একেই বোধহয় বলে আসক্তি। সেই দিন থেকেই অন্ধকার জগতে পা বাড়ানো। সবে মাত্র শুরু ছিলো। এরপর নিয়মিত সেই আসরে যোগ দেওয়া। প্রথমে টিউশনটা হারালাম,পরে হারালাম বন্ধুদের। সব কষ্ট একসাথে গ্রাস করে বসে আমায়। কষ্ট মোচনের চেষ্টায় আরো খারাপ কিছুতে আসক্ত হওয়া। খুব তাড়াতাড়ি আরো খারাপের দিকে পা বাড়ানো।

আজ ৭৬ দিন হলো সে আমাকে ফেলে চলে গেছে। সাথে নিয়ে গেছে আমার সব সুখ রেখে গেছে স্মৃতিগুলো। যা শুধুই কাঁদায়। আবার সিগারেট ধরালাম। চিন্তা করছি ৭৬ দিন আগের কথা। মানুষের পরিবর্তন, হুহ। খুব বেশি সময় লাগে না। মাত্র ৭৬ দিনের আগের আমি আর আজকের আমির মিল নেই কোন। মিল না থাকাটাই স্বাভাবিক। আফসোস হয় কেন এই জগতে পা বাড়ালাম। শুধুই আফসোস হয়। আমি বুঝি অথচ কিছুই করতে পারি না। কিছুই না। চোখে পানি চলে আসে। কিন্তু সেই চোখের পানি দেখে কেও আর কাছে এগিয়ে আসে না। তাদের চোখে ফুটে ওঠে তীব্র ঘৃনা।


সম্পর্কটার শেষটা এমন না হলেও পারত। কোন কষ্ট থাকতো না যদি কোন দোষ থেকে থাকত। এই অবস্থা হতো না যদি বিচ্ছেদের কারণটা জানা যেতো। আমরা আসলেই স্বার্থপর। নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য কোন কারণ ছাড়াও অন্যকে কষ্ট দিতে পারি খুব সহজেই। যাকে কষ্ট দিচ্ছি তার অবস্থা কি হবে চিন্তাও করি না। সে মরলে মরুক বাঁচলে বাঁচুক তাতে আমাদের কিছুই যাই আসে না। যা হওয়ার হয় শুধু সেই অভাগারই হয়। আসলেই স্বার্থপর আমরা। আমরা সকলেই।

#কাল্পনিক জবানবন্দী

সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মে, ২০১৬ সকাল ৯:০১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবি কখনো কখনো কিছু ইঙ্গিত দেয়!

লিখেছেন ডার্ক ম্যান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৭



গতকাল ভারতীয় সেনাপ্রধানের সাথে বাংলাদেশ সেনাপ্রধান এর ভার্চুয়ালি কথা হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের অফিসায়াল এক্স পোস্টে এই ছবি পোস্ট করে জানিয়েছে।

ভারতীয় সেনাপ্রধানের পিছনে একটা ছবি ছিল ১৯৭১ সালের... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রথম আলু

লিখেছেন স্নিগ্দ্ধ মুগ্দ্ধতা, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



লতিফপুরের মতি পাগল
সকালবেলা উঠে
পৌঁছে গেল বাঁশবাগানে
বদনা নিয়ে ছুটে



ঘাঁড় গুঁজে সে আড় চোখেতে
নিচ্ছিল কাজ সেরে
পাশের বাড়ির লালু বলদ
হঠাৎ এলো তেড়ে




লাল বদনা দেখে লালুর
মেজাজ গেল চড়ে।
আসলো ছুটে যেমন পুলিশ
জঙ্গী দমন করে!





মতির... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশে ইসলামি আইন প্রতিষ্ঠা করা জরুরী?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:০২



বিশ্ব ইসলামের নিয়মে চলছে না।
এমনকি আমাদের দেশও ইসলামের নিয়মে চলছে না। দেশ চলিছে সংবিধান অনুযায়ী। ধর্মের নিয়ম কানুন মেনে চললে পুরো দেশ পিছিয়ে যাবে। ধর্ম যেই সময় (সামন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি হাজার কথা বলে

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৩:৫৩

আগস্টের ৩ তারিখ আমি বাসা থেকে বের হয়ে প্রগতি স্মরণী গিয়ে আন্দোলনে শরিক হই। সন্ধ্যের নাগাদ পরিবারকে নিয়ে আমার শ্বশুর বাড়ি রেখে এসে পরদিনই দুপুরের মধ্যেই রওনা হয়ে যাই। আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×