শোনো, আর কখনো আমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবা না।
এটাই ছিলো ছড়ার শেষ কথা। নিজের দোষটা জানতে চেয়েছিলাম। না বলেই একটা ৪ বছরের সম্পর্কের ইতি টানল সে। বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছিলো আমি স্বপ্ন দেখছি। ঘোর কাটানোর জন্য দেয়ালে জোরে ঘুসি দিলাম। না জেগে আছি আমি! আসলেই জেগে আছি। সাথে সাথে কল দিলাম তাকে। ব্যস্ত আছে বলছে। টানা ২ ঘন্টা কল করলাম। সেই একই কথা বার বার বলা হচ্ছে নির্লীপ্তভাবে। ব্যস্ত আছে।
আমি শহরের এক সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। হলেই থাকি। কলেজে উঠার পরেই ছড়ার সাথে সম্পর্কের শুরু। রোমান্টিকতায় ভরপুর সম্পর্ক যাকে বলে। কলেজ শেষ করে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া ছিলো আমার কাছে আশীর্বাদস্বরূপ। একসাথে দিনের বেশির ভাগ সময় কাটানো, শহীদমিনার চত্ত্বরে বৃষ্টিতে ভেজা, পূর্ণিমায় একসাথে বসে চাঁদ দেখা বাদ যায় নি কিছুই। আমি ছিলাম পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষদের একজন। কিন্তু সেদিন হঠাৎ এক দুঃস্বপ্ন এসে পুরো জীবনটাকেই লন্ডভন্ড করে দিলো। ধৈর্য্য রেখেছিলাম। নিজের উপর আস্থা ছিলো। আশায় ছিলাম সে ফিরে আসবেই। চার বছরের সম্পর্ক একটা তো আর হুট করে চাইলেই ভেঙে ফেলা যায় না। কিন্তু আমি ভুল প্রমাণিত হয়েছিলাম। আমাকে অবাক করে দিয়ে ৪ দিন পরও সে ফিরে আসে নি। এরপর আমি নিজ থেকেই ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করেছিলাম।কিন্তু তাও বৃথা। নিজের উপর নিজের আস্থা হারিয়ে আমাকে অনেকটা চার্জবিহীন ফোনের মতই দেখাচ্ছিলো। হতাশ ছিলাম।খুব বেশি।
হলে কিছু বড় ভাইয়া ছিলেন। তাদের।সাথে ঘুরতে যেতাম মাঝেমধ্যে। গাজার আসরে দিনের বেশিরভাগ সময় বুঁদ হয়ে থাকা মানুষ তারা। গিয়েছিলাম মনটাকে হালকা করার জন্য। মনটা কিছুতেই শান্ত হচ্ছিলো না। আমি জানতাম না কেন সে আমাকে ছেড়ে চলে গেলো। তাকে ছাড়া ভাবতে পারছিলাম না কিছুই। তাই সেখানে গিয়ে বড় ভাইদের কথা মত প্রথম টান দিলাম গাজায়। বিড়ি খাওয়ার বদ অভ্যাসটা ছিলো তাই কোন সমস্যা ছাড়াই শেষ করলাম। হঠাৎ শরীরে অসাড়তা উপলব্ধি করলাম। চোখগুলো কেমন জানি ভারী হয়ে আসছিলো। অনেক দুরের আওয়াজ কানে বাড়ি খাচ্ছিলো। একেই বোধহয় বলে আসক্তি। সেই দিন থেকেই অন্ধকার জগতে পা বাড়ানো। সবে মাত্র শুরু ছিলো। এরপর নিয়মিত সেই আসরে যোগ দেওয়া। প্রথমে টিউশনটা হারালাম,পরে হারালাম বন্ধুদের। সব কষ্ট একসাথে গ্রাস করে বসে আমায়। কষ্ট মোচনের চেষ্টায় আরো খারাপ কিছুতে আসক্ত হওয়া। খুব তাড়াতাড়ি আরো খারাপের দিকে পা বাড়ানো।
আজ ৭৬ দিন হলো সে আমাকে ফেলে চলে গেছে। সাথে নিয়ে গেছে আমার সব সুখ রেখে গেছে স্মৃতিগুলো। যা শুধুই কাঁদায়। আবার সিগারেট ধরালাম। চিন্তা করছি ৭৬ দিন আগের কথা। মানুষের পরিবর্তন, হুহ। খুব বেশি সময় লাগে না। মাত্র ৭৬ দিনের আগের আমি আর আজকের আমির মিল নেই কোন। মিল না থাকাটাই স্বাভাবিক। আফসোস হয় কেন এই জগতে পা বাড়ালাম। শুধুই আফসোস হয়। আমি বুঝি অথচ কিছুই করতে পারি না। কিছুই না। চোখে পানি চলে আসে। কিন্তু সেই চোখের পানি দেখে কেও আর কাছে এগিয়ে আসে না। তাদের চোখে ফুটে ওঠে তীব্র ঘৃনা।
সম্পর্কটার শেষটা এমন না হলেও পারত। কোন কষ্ট থাকতো না যদি কোন দোষ থেকে থাকত। এই অবস্থা হতো না যদি বিচ্ছেদের কারণটা জানা যেতো। আমরা আসলেই স্বার্থপর। নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য কোন কারণ ছাড়াও অন্যকে কষ্ট দিতে পারি খুব সহজেই। যাকে কষ্ট দিচ্ছি তার অবস্থা কি হবে চিন্তাও করি না। সে মরলে মরুক বাঁচলে বাঁচুক তাতে আমাদের কিছুই যাই আসে না। যা হওয়ার হয় শুধু সেই অভাগারই হয়। আসলেই স্বার্থপর আমরা। আমরা সকলেই।
#কাল্পনিক জবানবন্দী
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মে, ২০১৬ সকাল ৯:০১