বছর দুয়েক আগের কথা। আমি তখন প্রতিদিন গুলশান এক থেকে মোহাম্মদপুরের দিকে যে বাসগুলো যায় সেগুলোর নিয়মিত যাত্রী। একদিন দুপুরে যাত্রীবোঝাই এরকম এক বাসে দাড়িয়ে আছি। আশেপাশে যারা বসে কিংবা দাড়িয়ে আছে তাদের অধিকাংশই বয়সে তরুণ, এখানকার কলেজ বা ইউনিভার্সিটির ছাত্রছাত্রী। কানের মধ্যে ইয়ার ফোন দিয়ে মোবাইলে গান শুনছে, কিংবা কলকল করে আড্ডা দিচ্ছে। আ্মি যখন এইসব বাসে এই ছেলেমেয়েদের মাঝখানে থাকি তখন আমার নিজের এই বয়সটাকে অনুভব করতে পারি। এরা অনেক বেশী ইংরেজী বলে, ছেলেরা এবং মেয়েরা অনেক সহজভাবে গল্প করে এবং এরা বোধহয় একটু বেশীই প্রযুক্তি নির্ভর। তারপরও আমার রক্তের মধ্যে আমি ভালোলাগার একটা ঝনঝনানি টের পাই।
বাসে যারা দাড়িয়ে থাকে তাদের একটা চোখ থাকে বসে থাকা মানুষদের দিকে। কেউ যখন সীট থেকে উঠে দাড়ায় নেমে যাবার জন্য, তখন তার পাশে যে দাড়িয়ে থাকে সে চট করে জায়গাটা দখল করে ফেলে। আমার সামনের সীটের লোকটা এক সময় উঠে দাড়াল। আমি বসার প্রস্তুতি নিচ্ছি, এমন সময় হঠাৎ আমার পেছন থেকে একটা ছেলে আমাকে ধাক্কা দিয়ে খালি সীটটাতে বসে পড়ল। অবাক হয়ে আমি ওর দিকে তাকিয়ে থাকলাম। অল্প বয়স্ক একটা ছেলে। আশেপাশেই কোথাও পড়ে নিশ্চয়ই। কানের মধ্যে ইয়ারফোন লাগাতে লাগাতে সে আমার দিকে তাকিয়ে একটা বিজয়ীর হাসি দিল,"কোথায় যাবেন আংকেল?" আমিও হাসলাম একটুখানি, যতটুকু পারা যায়।
এই ঘটনা থেকে এখনকার অল্পবয়স্ক ছেলেমেয়েদের সম্পর্কে আমার একটা ধারনা তৈরী হয়ে যেতে পারত। কিন্তু ঘটনাটা এখানেই শেষ হল না। বাসটা চলতেই থাকল। একটু পরেই আরও একটা সীট খালি হল। এই সীটটার ঠিক পাশেই কম বয়সী আরেকটা ছেলে দাড়িয়ে আছে। ইচ্ছা করলেই বসতে পারে। কিন্তু সে বসল না। কিছুটা দুরে দাড়ানো বয়স্ক একজন লোকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তাকে বসাল। আমি একটু অবাক হলাম। কিছুক্ষণ আগের ঘটনার সাথে এই ঘটনাকে মেলাতে পারছিলাম না। এর কিছু পরে আমার সামনের জায়গাটা খালি হল। আমি ছেলেটাকে বললাম,"আপনি তো উনার জন্য জায়গা ছেড়ে দিয়েছেন, এখন এখানে বসুন।" ছেলেটা হেসে ফলল,"না আংকেল, আপনি বসেন। আরও অনেক সীট খালি হবে। আমি তখন বসব।"
আমি বসলাম এবং ভাবতে লাগলাম, আমাদের এই সমস্ত ছেলেমেয়েরাই একদিন এই দেশটাকে পাল্টে দেবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০১৩ বিকাল ৪:৩৩