গত রমজানের ঘটনা। আমি আর নওফেল স্যার চকবাজার গিয়েছি, ইফতার কিনব। আমি এর আগে আর কখনও যাইনি। নওফেল স্যারও সম্ভবতঃ না।
একটা সরু রাস্তা। তার দুই পাশে মার্কেট, দোকানপাট। পুরো রাস্তাটাই দখল করে বসেছে ইফতারের বাজার। অসম্ভব ঘিঞ্জি, হাঁটা যায় না।
নওফেল স্যার ধার্মিক মানুষ। প্রথমেই একটা মসজিদ খুঁজে বের করলেন। আসরের নামায পড়বেন।
মসজিদটা দোতালার ওপর। একটা লাম্বা সিঁড়ি বেয়ে আমরা উঠলাম। স্যার নামায পড়তে চলে গেলেন। আমি পাশের চত্বরে বসলাম। আমার পেছনে কাঠের লম্বা বাক্স। তাতে আমার স্যান্ডল সু আর স্যারের জুতা। আমি মাঝে মাঝে পেছনে তাকিয়ে দেখে নিচ্ছি, আমার জুতা ঠিকঠাক মত আছে কিনা।
স্যার নামায থেকে ফিরলেন। আমি পেছন ফিরে দেখলাম, স্যারের জুতা ঠিকই আছে।আমারটা নেই।
আমরা বেশ কিছুক্ষণ খোঁজাখুজি করলাম, একে ওকে জিজ্ঞেস করলাম, অনেকক্ষণ অপেক্ষা করলাম, তারপর স্যার বললেন, চলেন একজোড়া স্পঞ্জের স্যান্ডেল কিনে নেই।
কিন্তু সিড়ি দিয়ে নামার সময় অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখি, একপাশে আমার স্যান্ডল জোড়া পড়ে আছে। বাটার স্যান্ডেল, এরকম আরও কতই তো আছে, তবু স্যারকে বললাম। স্যার বলল, পড়ে দেখেন। পড়লাম। আমারটার মতই তো লাগে ! তবু......
পাশে একজন বৃদ্ধ পঙ্গু ভিক্ষুক বসে আছে। সে বলল, এক ছেলে কিছুক্ষণ আগে এই জুতা, পাশে রাখা একটা ইফতার ভরা পলিথিনের ব্যাগ আর একটা ছাতা তার কাছে রেখে ভিতরে নামায পড়তে গিয়েছে। তাকে বলেছে দেখে রাখতে। আমি কনফার্ম হলাম, এটা আমার স্যান্ডেল না। কেউ নিশ্চয়ই চুরি করা স্যান্ডেল বাইরে রেখে নামায পড়তে যাবে না।
স্যার বললেন, দাড়ান, দেখা যাক, ছেলেটা আসুক।
অনেকক্ষণ পরে, ভিক্ষুকটা বলল, ঐ যে উনি। তাকিয়ে দেখি, একটা ইয়াং ছেলে ইফতারের ব্যাগ আর ছাতাটা নিচ্ছে। তার পায়ে স্যান্ডেল। আমি এগিয়ে গেলাম, "এই জুতা কি আপনার ?" "নাহ" বলে ছেলেটা হাঁটা ধরল। আমি স্যারের দিকে গর্বিত ভঙ্গিতে তাকালাম। আমার স্যান্ডেল পাওয়া গেছে।
স্যার ডাকল, এই ছেলে, এই। কিন্তু ছেলেটা শুনছে না। স্যার চিৎকার করছেন, এই ছেলেটাকে ধরেন, ধরেন...ছেলেটা ততক্ষণে বাজারের মাঝখানে চলে গেছে। কিন্তু স্যারের চিল্লাচিল্লিতে লোকজন তাকে ধরে ফেলল।
স্যার সবাইকে পুরো ঘটনা বললেন। কিন্তু ছেলেটা কিছুই স্বীকার করছে না। আমরও কেন যেন মনে হচ্ছে, কোথাও কছু একটা ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। ছেলেট যদি জুতা চুরিই করবে, তাহলে সে তা ফেলে রেখে চলে যাচ্ছিল কেন ?
তখন ভিড়ের মধ্য থেকে কে যেন বলল, এই, তোর ব্যাগের মধ্যে কি ? ছলেটা বলল, ইফতার ! দেখলাম, পলিথিনের ব্যাগের ভিতর কতগুলি কাগজের প্যাকেট। একটার ভিতর থেকে ইফতার বের হয়ে এসেছে। লোকজন তবু নাছোড়বান্দা। " খোল, তোর ব্যাগ খোল। দেখি ভিতরে কি আছে।"
ছেলেটা চাচ্ছিল না, তবু জোর করেই ব্যাগ খোলা হল। কাগজের প্যাকেট থেকে যা বের হল, তার জন্য আমি ঠিক প্রস্তুত ছিলাম না।
ব্যাগের ভেতর চার জোড়া পুরনো জুতা ! সবগুলোই নাকি ওর মামাদের।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জানুয়ারি, ২০০৮ বিকাল ৫:৪৮